দেশের আর সব ছাত্রদের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে মেধাবী ছাত্র সাম্য; মেধাবী বলা হচ্ছে এই কারনে যে সে উচ্চ মাধ্যমিকে এ+ পেয়েছিল,
স্বপ্ন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার। প্রতিযোগীতার ভিড়ে দেশের প্রখ্যাত ২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি এবং বুয়েট এ ভর্তির সুযোগ পেল না সে। ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন মনে তখনও উজ্জল। একে একে অন্য ৩টি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেল। ভাগ্যক্রমে প্রতিটিতেই অপেক্ষমান তালিকায়।
তাই পছন্দমতো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ সে পেল না।
তাতে কি? হতাশ হলো না সে। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তখনো সুযোগ রয়েছে। অবশেষে সাব্জেক্ট পছন্দ হল, টেলিকমিউনিকেশন এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,দিনাজপুর।
দিনাজপুর???? আর সকলের মতো সেও ভাবল,দেশের একেবারে প্রান্তে,অনেকটা স্বল্পন্নতো একটি জেলা। তাতে কি? জায়গায় কি আসে যায়,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তো;নিজেকে বোঝালো সাম্য।
সাত-পাচ ভেবে কুয়েট-রুয়েট-চুয়েটে চিভিল/মেকানিকাল বাদ দিয়ে ভর্তি হলো হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)-তে, উদ্দেশ্য টেলিকমিউনিকেশন এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ বি,এস,সি করা।
যথারীতি ভর্তি হয়ে পড়া-শুনা শুরু করল সে। বাবার অনেক টাকা থাকা সত্যেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াটাকেই অধিক শ্রেয় তার কাছে।
এখানে নেই কোনো গ্যাঞ্জাম,নেই কোনো যান্ত্রিকতা। প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটি পরিবার যেন। দেশের এক কোনায় থাকা সত্যেও ইন্টারনেট এর সাহায্যে সাম্য যোগাযোগ রাখে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সাথে। নিজেকে তৈরী করে নিচ্ছে সে প্রযুক্তির নতুন নতুন দিকগুলোর সংগে।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর সাংস্কৃতিক সঙ্গঠনের সঙ্গে কাটানো প্রাণোবন্ত সময়গুলো খুব দ্রুতই কেটে যেতে লাগলো তার।
এভাবে একে একে ৪টি বছর শেষ করে সাম্য এখন ঢাকা কেন্দ্রিক বাংলাদেশের রাজধানীতে। উদ্দেশ্য চাকুরী প্রত্যাশা।
আসল বিপত্তিটা বাধল এখন। ইন্টারভিউ বোর্ডে এমন কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হল যা সত্যিই অবাককর- হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,দিনাজপুরে!!!! এটা কি পাবলিক না প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়?
কতোজন প্রফেসর বা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আছেন?
তার সমস্ত রাগ গিয়ে পরতে লাগলো দেশের দায়িত্বশীল সরকার আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উপর। তার মনে হচ্ছে সরকার জায়গায় জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করছে নিজেদের নাম জাহির করার জন্য,সেটা পরিচালনার জন্য যথেষ্ট শিক্ষক থাক বা না থাক,তাতে কি,বিশ্ববিদ্যালয় তো প্রতিষ্ঠা হলো!
বাচ্চা পয়দা করে বাজারে ছেড়ে দিলাম,যেভাবে পারিস চল।
দরকার কি ভাই এতো খরচ করে কথিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার। অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে দেশে,আর এমনিতেই তো গরীবের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া যেন ১টা দুঃস্বপ্ন।
আর খুবই যদি নাম দেখানোর দরকার হয় কমলাপুর রেইলওয়ে কর্তিপক্ষের বেশ কিছু খালি জায়গা আছে। সেখানে ২-৪টা করে রুম করে বিশ্ববিদ্যালয় নামে চালালে মনে হয় মন্দ হবে না। আর যাই হোক,ঢাকার বুকে হওয়ায় পরিচিতি পেতে সুবিধা হবে।
সবশেষে একটাই আশঙ্কা, সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের মন থেকে যেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি থাকা ভালোবাসাটুকু নষ্ট না হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।