আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

........রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরী।

আমাদের মাইক্রোবাসটি সিগনালে এসে আটকিয়ে গেল। উত্তরার জসীম উদ্দীন রোডের মোড়। সকাল ৯টা । খানিক দুরে ১টা ছেলে পত্রিকা বিক্রি করতেছে। বয়স আনুমানিক ১২/১৪ বছর।

আমার নজরে আসলো ছেলেটার পা দুটি প্রায় অচল। লাঠির উপর ভর করে কোন রকমে নড়া চড়া করতে পারে। এভাবেই সে এক গাড়ী থেকে আরেক গাড়ী পত্রিকা বিক্রি করছে। এ ধরনের অক্ষমরা সাধারনত ভিক্ষাবৃত্তির পেশাই বেছে নেয়। এই ছেলেটির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখেই আমার নজর কাড়লো।

রুজী রোজগারের চেষ্টা প্রচেষ্টার দৃশ্যটি দেখে আমি মনের গভীরে বেশ খানিকটা ধাক্কা খেলাম। জানিনা এভাবে তার নুন্যতম দু’মুঠো ভাতের সংকুলান হয় কিনা । সহমর্মিতার হাত বাড়ানোর জন্য ১টি পত্রিকা কিনে কিছু টাকা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাছে না পেয়ে সেটাও সম্ভব হল না। এটি কোন ঘটনা না, যা উল্লেখ করার মতো।

কিন্তু কিছু খুব স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যে কিছু চিন্তার খোরাক থাকে। প্রতিদিন আমাদের আসে পাশে অসংখ্য মানুষ যারা অসহায়, অক্ষম ও দরিদ্র তারা ভিক্ষাবৃত্তির পেশা বেছে নিচ্ছে। কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ বা অনিচ্ছায়। ঢাকা শহরের কথাই শুধু বলি - আমরা কেউ জানিনা কি পরিমান মানুষ ভিক্ষাবৃত্তির সাথে জড়িত। যদিও কিছু দিন আগে একটি জরিপ হয়েছিল।

প্রতি ভিক্ষুককে ২৫টাকা দিয়ে তার নাম ঠিকানা সংগ্রহ করার জরিপ হয়েছিল। আদৌ তার কোন কার্যকারিতা আছে কিনা জানি না। যা হোক, আমরা প্রতিদিন চলার পথে এই অসহায় মানুষ গুলোকে ২টাকা বা ১০টাকা দিয়ে সাহায্য করে থাকি। আমরা ২টাকা বা ১০টাকা দান করি কেউ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বা কেউ আখেরাতে প্রতিদানের জন্য, যা ইসলামের নির্দেশনা বা কেউ মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতার কারনে। যাই হোক না কেন, এভাবে কি আমরা তাদের আসলেই কোন উপকার করতে পারছি, নাকি তাদেরকে এই পথকে আরো আঁকড়ে ধরে রাখতে সাহায্য করছি ? ২ টাকা বা ১০টাকা প্রতিদিন চলার পথে সাহায্য করলেই কি আমাদের দাযিত্ব শেষ হয়ে যায় ? আমার মনে হয়, মানুষ হিসাবে এভাবে দায়িত্ব শেষ করার কোন সুযোগ নাই।

পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম যোগ্যতা দিয়ে। এই সমাজে অসহায় অক্ষম মানুষও সেই একই আল্লাহর সৃষ্টি, যিনি আমাদের অনেককে অনেক যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটা মানুষের কয়েকটি মৌলিক চাহিদা রয়েছে - অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা। এই সব মৌলিক চাহিদা বা অধিকার গুলো পূরনের জন্যই মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বাস করে - রাষ্ট্র গঠন করে। রাষ্ট্রের অধীনে যারা বাস করে তাদের সবার মৌলিক অধিকার পূরনের নিমিত্তে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করার দায়িত্বও সরকারের উপর বর্তায়।

শারিরীকভাবে বা মানসিকভাবে যারা অক্ষম তাদের নেই কোন মাথা গোজার ঠাঁই বা নেই কোন একবেলা খাবারের ব্যবস্থা। এই সব লোকগুলো যখন প্রচন্ড রৌদ্রের মধ্যে উত্তপ্ত রাস্তায় গড়াগড়ি করে তখন আমরা তাদের কষ্টের মাত্রাটা কতটুকু উপলব্ধি করি ? তারা তো আমাদেরই সমাজের একটি অংশ, একই রাষ্ট্রের অধীন, একই সমান অধিকার সংরক্ষন করে - সাংবিধানিক আইনের দৃষ্টিতে। মানবধিকারে কি তাদের সাথে আমাদের কোন কম-বেশী আছে? নেই। মানবধিকার নিয়ে যারা বা যে সব সংগঠন কাজ করে তারা ঐ সব মানুষগুলোকে নিয়ে কি কোন কথা বলে ? তারাও বলে না । রাস্তার উপর গড়াগড়ি খাওয়া মানুষগুলোর মানবধিকার কি বেশী ক্ষুন্ন হচ্ছে না ? তাদের দু’মুঠো খাবার পাবার অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের ছিল।

কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এসব অধিকার নিয়ে কেউ কথা বলেন না । এই অক্ষম-অসহায় মানুষগুলো নিয়ে সরকারের জরুরী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরী। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.