আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রীয় বেঈমানরা চিহ্নিত হবে কে

বাঙালির গৌরবময় ইতিহাস সুপ্রাচীন। সাং¯ৃ‹তিক ঐতিহ্য, বর্ণিল লোকজ রীতি- প্রথা, উৎসব- পার্বণে জাতীয় ঐক্যমত ও সার্বজনিন দৃষ্টিভঙ্গি বাঙালির উন্নত ও উদার মন-মানসিকতার পরিচয় বহন করে আসছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ তথা সব ধর্মের মানুষের একত্রে মিলেমিশে সমাজবদ্ধভাবে বসবাস সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সহজ সরল জীবন যাপন অথচ দৃঢ় সংগ্রামী মনোবৃত্তি বাঙালির নিজস্ব পরিচয়। জাতি হিসেবে বাঙালি সবসময় মাথা উচু করে চলেছে।

বাঙ্গালীর হাজার বছরের গৌরবের ইতিহাস ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বাঙালির পুরনো সে গৌরবের ইতিহাস প্রতিনিয়ত ফিকে হয়ে যাচ্ছে। দেশে বিদেশে বাঙালি জাতি এখন দুর্নীতিগ্রস্থ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। ঢেকে যাচ্ছে বাংলাদেশের চিরপরিচিত সেই সব বীরত্ব গাথার গল্প। বঙ্গীয় এ ব-দ্বীপ অঞ্চলটি দারিদ্রক্লিষ্ট জনপদ হিসেবে সে সময়ের শাসকগোষ্ঠীর কাছে পরিচিত ছিল।

খ্রীষ্টিয় ৭৫০ সালের পাল শাসনের সময় থেকে বাংলার যে ইতিহাস জানা যায় সেখানেও অত্র অঞ্চলে খুব বেশি ধনী শ্রেণীর বসবাস ছিল না। তবে হিন্দু শাসক গোষ্ঠী সিংহাসনে আসীন থাকায় মুসলিমদের তুলনায় হিন্দুদের অবস্থা স্বচ্ছল ছিল। কৃষিই ছিল প্রধান পেশা। শস্য-শ্যামলা এ ভূখন্ডে সোনার ফসল ফলতো। গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান আর নদীতে মাছের কোন অভাব ছিলনা।

তাই নগদ টাকার অভাব অনটন থাকলেও মানুষকে খাদ্যের জন্য হাহাকার করতে হয়নি। অর্থের জন্য চুরি করতে হয়নি। ভিক্ষার জন্য অন্য দেশের কাছে হাত পাততে হয়নি। কৃষি কাজে যে ফসল ফলত তাই দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। দূর্বৃত্তপনা করতে হতনা।

পর্যায়ক্রমে এদেশ জমিদার শাসকদের হাত থেকে ব্রিটিশ শাসনের আওতাভূক্ত হয়। বাঙালি বেঈমানদের বিশ্বাসঘাতকতায় এদেশের মানুষকে চরম মূল্য দিতে হয়, স্বাধীন বাংলা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়। অতপর প্রায় দু’শ বছর গোলামী করার পর ভারতীয় উপমহাদেশ ব্রিটিশদের হাত থেকে নিস্তার পায়। তবুও বলব এ দু’শ বছর বাংলাকে ব্রিটিশদের গোলামী করতে হলেও বাঙালির সম্মানহানী হয়নি। বরঞ্চ এসময়ে বেনিয়া শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই উপমহাদেশের জনগন সীমিত শক্তি নিয়ে এই জনপদে যে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তার তুলনা চলে না।

বাঙালার নারীরাও এ সংগ্রামে ছিল সমান অংশীদার। কিন্তু ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে মীরজাফর নামে যে বিশ্বাস ঘাতকের জন্ম হয়েছিল যার ফলে এদেশকে প্রায় দু’শ বছর পরাধীন থাকতে হয়েছিল, কালে কালে তাদের তৎপরতা সক্রীয় থেকে যায়। ফলে ব্রিটিশদের শাসন-শোষন-নির্যাতন এতো দীর্ঘ হয়। ব্রিটিশরা ছেড়ে যাওয়ার পর দেশ ভাগাভাগির সময় এ ভূখন্ডের মালিক হল পাকিস্তান । দু’শ বছর বাংলার যৌবনটাকে লুটে পুটে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর অবশিষ্টটুকু শুষে নেয়ার দায়িত্ব পড়ল পাকিস্তানি শাসকদের হাতে।

’৪৭ থেকে ’৭১, এ অল্প সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে পূর্ব পাকিস্তানের (পরবর্তী নাম বাংলা) রতœভান্ডার, শস্যভান্ডার, নারী-শিশু-বুদ্ধিজীবী, মেধা-মনন, সব-ই লুন্ঠিত হতে থাকল কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালির মর্যাদাকে লুন্ঠিত করতে পারলো না। তথাপি পাকিস্তানি শাসকের নিষ্ঠুর শৃংখলে আবদ্ধ থাকলেও বাঙালির আত্মগৌরব বিশ্ব দরবারে সমুজ্জল ছিল। বাঙালার মুক্তিকামী মানুষের প্রতিবাদ-সংগ্রাম বিশ্বের দরবারে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল। দীর্ঘদিন পরাধীন জাতি হিসেবে অন্যের শাসনের অধিনে থাকলেও বাঙালির আত্মসম্মানের স্থানটুকু মজবুত ছিল। বাঙালি একটি চোরের জাতি একথা কেউ কোন দিন বলতে পারেনি।

দীর্ঘ নয় মাসের মরণপণ যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। হানাদার পাকিস্তানিদের বিদেয় করে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সেই দিনটিতে এদেশের মানুষ নিজেদের ভেবেছিল শত্রুমুক্ত। সে সময়ে সর্বজন স্বীকৃত বাঙালির একমাত্র নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন পশ্চিম পাকিস্তানের নির্জন সেলে বন্দি। মৃত্যুর প্রহর গুনছে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী দেশ স্বাধীনের পর তাকে স্ব-সম্মানে অক্ষতভাবে এদেশে ফিরিয়ে দেয়।

বস্তুত তারা শেখ মুজিবের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করেনি। ভৌগলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনা করলে বলা যায় এদেশ শত্রুমুক্ত করার জন্য নয় মাস সময় প্রয়োজন হতো না। এ ভূখন্ডে যুদ্ধ করে টিকে থাকার মতো কোন সুবিধাই তাদের ছিল না। তা ছাড়া এদেশের হাতে গোনা কিছু লোক ছাড়া সকলেই ছিল মুক্তিযোদ্ধা অথবা মুক্তিযোদ্ধার সহযোগী। পাক হানাদার বাহিনী এদেশের গ্রাম-গঞ্জের পথ ঘাট চিনত না।

কে মুক্তি সেনা, কে সাধারণ মানুষ, কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে বুদ্ধিজীবী আর কে মেধাবী পুরুষ এ সবের কিছ্ইু জানতোনা। তাদের এসব চিনিয়েছে বাঙালিরাই। মীরজাফরের ভ্রুণ কিছু কিছু বাঙালির শরীরে প্রবিষ্ট হয়ে রয়েছে। তারা একযুগ থেকে একযুগে, এক কাল থেকে আরেক কালে বংশ বিস্তার করে চলেছে। কিছু সংখ্যক কুলাঙ্গার বাঙালির কারণে মুক্তিযুদ্ধে এতো বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি ঘটেছে, এতো ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে, এতো মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠিত হয়েছে, এ দেশ স্বাধীন হতে এতো সময় লেগেছে।

কিছু সংখ্যক তথাকথিত বাঙালির সহায়তা না পেলে হয়তো এসবের কিছুই ঘটতো না, ধারনা করা যায় পাকিস্তানি হানাদারদের অল্প সময়েই আত্মসমর্পন করতে হত। এদেশের সেই অপশক্তি সবসময়ই সক্রিয়। এদেশ স্বাধীন হলেও শত্রুমুক্ত হয়নি। এদেশের মাঝেই ঘাপটি মেরে বসে আছে এদেশের শত্রু। বাঙালিরাই বাংলার মহানায়ককে হত্যা করেছে, হত্যা করেছে আরও একজন জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতিকে, এরাই দেশের শত্রু।

বাংলাদেশে এখনও গণতন্ত্র কায়েম হয়নি। স্বাধীন দেশে মানুষের স্বাধীনতা নেই। অধিকার আদায়ের জন্য প্রতি মুহুর্তে ভাইয়ের হাতে ভাইকে খুন হতে হচ্ছে। সরকারও প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নিতে খুন-গুমের আর অপহরণের রাজনীতি বেছে নিয়েছে। ক্ষমতাই এখন মূল লক্ষ্য।

ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমবর্ধমান সহিংসু আচরণ ও বিদেশী রাষ্ট্রের তাবেদারী চরম আকার ধারন করেছে। হঠকারী রাজনৈতিক কর্মসূচী ও পাল্টা কর্মসূচীতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। ক্ষমতার মসনদ পাকা পাকি করতে হেন কাজ নেই যা করা হচ্ছে না। এ সুযোগে দেশের শত্রুচক্রটি অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকার ক্ষমতা সামলাতে প্রশাসন, আইন শৃংখলা এবং রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে মনোনিবেশ করতে পারছে না।

ফলোশ্রুতিতে দেশের শত্রু ও দুর্নীতিবাজরা দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেলেও রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিটির দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ফলে একদিকে যেমন দৃঢ়চেতা, দেশপ্রেমী বলিষ্ট নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না, তেমনি দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে দেশের শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করতে পারছেনা। তাই সাধারণ জনগনকেই এখন দায়িত্ব নিতে হবে এদেশ রক্ষায়। জনগনকেই এখন এগিয়ে আসতে হবে রাষ্ট্রীয় বেঈমানদের খুঁজে বের করতে। কিছু সংখ্যক বেঈমান-বিশ্বাসঘাতকদের কারণে বাংলাদেশকে ক্রমশ পিছনের দিকে হাটতে হচ্ছে।

দেশের অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের আন্দোলন-সংগ্রাম লেগেই রয়েছে। অথচ একটু ভেবে দেখার কারো অবসর মিলছে না যে এখন আমরা কার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আর আমাদের সামনে প্রতিযোগিতায় কোন সে অপশক্তি দাড়িয়ে আছে। এদেশ আমাদের, আমরা সবাই বাঙালি, দেশে একটি প্রতিষ্ঠিত শাসনতন্ত্রও রয়েছে।

জনগণ নিরপেক্ষভাবে ভোট দিয়ে যার হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে তিনি শপথ বাক্য পাঠ করে সংবিধান অনুযায়ী দেশ চালাবেন। কিন্তু এদেশে শাসনতন্ত্র অনুযায়ী কিছুই হয়না। সবাই শাসনতন্ত্রের উর্ধ্বে থেকে দেশে রাজত্ব কায়েম করতে চায়। যে দল ক্ষমতায় আসে তার সুবিধা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করে নেয়। দলের এবং দলের কর্ণধারের সুবিধামত দেশ চলে।

বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব যেদিন থেকে বাঙালির হাতে পড়েছে সেদিন থেকেই এদেশের শাসন ব্যবস্থায় দূর্নীতি ঢুকে গেছে। বাংলাদেশের সুনাম ভূলুন্ঠিত হতে শুরু করেছে। দিনে দিনে এমন অবস্থা হয়েছে যে বাংলাদেশ দূর্নীতিতে সারাবিশ্বের মধ্যে লাগাতারভাবে চ্যম্পিয়ন হতে শুরু করেছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয় এখন চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত, প্রতারক ও ব্যর্থ দেশ হিসেবে। সর্বশেষে পদ্মা সেতুর ঘাপলায় বিশ্বব্যাংক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ কত নিচে নামতে পারে।

স্বাধীনতার সুফল কী তাহলে এই অপমান? জাতি এ অসম্মানের বোঝা আর কতকাল বয়ে বেড়াবে? বাঙালি তার আবহমানকালের গৌরব আবার কবে ফিরে পাবে এ প্রশ্ন এখন খুব বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই সময় এসেছে রাষ্ট্রীয় বেঈমানদের খুঁজে বের করার। যতদ্রুত তাদের চিহ্নিত করা যাবে ততই মঙ্গল এ জাতির জন্য, অন্যথায় এদেশ ধ্বংস হতে সময় লাগবে না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.