আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ধামাচাপা রাষ্ট্রীয় ভাবে

শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কথা অনেক শুনেছি । সত্যি কথা বলতে কি ছোটবেলায় শাক দিয়ে মাছ অনেকবার ঢেকেছিও, ভাইবোনের সঙ্গে একসাথে খেতে বসে । তাই বলে কিন্তু মাছ হারিয়ে যায়নি । আমার বড় ভাই তার ক্ষমতা ও বুদ্ধির জোরে মাঝে মাঝে আমার ভাগের মাছটা উধাও করে দিলে আমার লঙ্কা কান্ডের তান্ডবে তা আবার আমার কাছে ফিরে আসতো যদিও সবসময় পুরোটা ফেরত পেতাম না কারন সে তা দখল করার সাথে সাথেই মাঝে মাঝে ভাগ বসিয়ে দিত, আর ফেরত দেওয়ার সময় বলতো কোনটা নিবি । আমি দেখতাম তার মাছটা সে আগেই খেয়ে ছোট করে ফেলেছে তাই বড়টাই আমার চাই ।

সে সুবোধ বালকের মত একটা হাসি দিয়ে আমার মাছটা ফেরত দিত, সে হয়তো ভাবতো যাক তার দুষ্টমির সুফল কিছুটা পেল । ছোট ছেলে হিসেবে বাবা-মা আমার কথার গুরুত্ব সবসময় দিলেও এই ক্ষেত্রে শুধু মনে মনে হাসতো আর তাদের খাবার মাঝেই তারা ব্যস্ত থাকতো যেন তারা আমার লঙ্কা কান্ডের শুধুই নিরব সাক্ষী ।
আজকের এই সময়ে সর্বত্রই যখন দেখছি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মহৎসব তখন আমিও আমার পুরনো স্মৃতিগুলো দিয়ে আজকের ঘটনাগুলো ধামাচাপা তথা ঢাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি । যদিও আমার স্মৃতির পরিসর ছোট এবং ঘটনা স্বল্প সংখ্যক সেখানে গতকালের আজকের এবং আগামীকালের ঘটনাগুলো যেন একের পর এক প্যারালালি ঘটেই যাচ্ছে । আমি ক্লান্ত, এভাবে ঢাকতে ঢাকতে আমি যেন গতকাল আজ ও আগামীকালের কাছে পরাজিত ।

রাষ্ট্র আজ আর আমার মত পুটি মাছের কথা মনে রাখে না বা ভাবে না, সে আজ হাঙ্গর হয়ে রুইকাতলা ঢাকতেই যেন সদা ব্যস্ত ।
প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র আজ নতুন নতুন ঘটনা প্রসব করছে যেগুলো কারো কাছে অবাক, কারও ঘাতক কারও কাছেই আবার তা খোরাক । ইদানিং এই ঢাকা-ঢাকির কাজ গুলো রাষ্ট্র নিজেই নিয়ে নিলেও দুচারটি ঘটনা কিছুতেই আমার মাঝে থেকে পুরোপুরি ঢাকতে পারেনি । বরাবরই রাষ্ট্রের পক্ষে আমি আছি বলেই হয়তো সবার মত রাষ্ট্রের ভিতরে ঘটে যাওয়া এত ঘটনা আমিও বেমালুম ভুলে গেছি । লেখালেখি আমার পেশা নয় নেশা, তাই এই শ্রেনীর লোকজন আবার রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের কাছে অতি তুচ্ছ ।

তবুও যে দু-চারটি ঘটনা রাষ্ট্র এখনও আমার মাঝে থেকে ঢাকিয়ে দিতে পারেনি তা কেন জানি আমার কাছে পীড়াদায়ক মনে হচ্ছে এবং ভাবনার রাজ্য সদা হাবুডুবু খাওয়াচ্ছে । আমার আমিকেই হালকা করাই শুধু আজ আমার উদ্দেশ্য । আমার মত আরও অনেকেই থাকলেও জানি তারাও তাদেরকেই নিয়ে ভাবছে ।
ঘটনা ১:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের হত্যা মামলার ৪আসামি পুলিশের উপস্থিতিতে আদালতের কাঠগড়া থেকে পালিয়ে গেছে। দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক তাদের জামিন বাতিল করলে তারা আদালত থেকে পালিয়ে যান।


ঘটনা ২: ময়মনসিংহের ত্রিশালে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন জেএমবি আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে ময়মনসিংহ আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে প্রিজনভ্যানে বোমা হামলা ও গুলি চালিয়ে আসামিদের ছিনতাই করে একদল লোক । এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন এক পুলিশ সদস্য আহত হয় আরও দুইজন । প্রথম ঘটনায় রাষ্ট্র যন্ত্র ঘুমন্ত কারন হয়তোবা জুবায়ের হত্যার মূল আসামিরা রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের চালক বলে । দ্বিতীয় ঘটনায় যন্ত্র কিছুটা সক্রিয় কারন রাষ্ট্র তাদের জঙ্গী হিসেবে তথা রাষ্ট্রের বিপক্ষ শক্তি হিসেবেই ভাবে ।

যার পরিনাম বা ফল আমরা ভোগ করছি ইতিমধ্য একজন জঙ্গি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার মাঝে । রাষ্ট্র এদের বিরুদ্ধে পুরোপুরি সক্রিয় , এদের কারও কারও বউ বা শ্বশুর আত্মীয় স্বজন কারও যেন রেহাই পাওয়ার কোন পথ নেই ।
মুখ বন্ধ করে রাখা ছাড়া ইদানিং পথ চলা বড্ড কঠিন । তাই সবার কাছে আমি যেন শান্ত শিষ্ঠ হয়ে গেছি । লেখালেখি নেশা বলেই হয়তো দু চার কথা বলার সাহস পাচ্ছি ।

একটি রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ আদালত পাঙ্গন থেকে আসামি পালিয়ে গেল রাষ্ট্রযন্ত্র তার বিরুদ্ধে এখনও মেরুদন্ড খাড়া করে দাড়াতে পারেনি । জেএমবি ধরতে সর্বত্র যৌথ অভিযান চলছে, ছাত্রলীগ ধরতে কোন অভিযান চলছে কি? কাঠগড়া থেকে আসামি পালিয়ে গেল কার ইশারায় বা কাদের দুঃসাহসে। আমি বিশ্বাস করি হত্যা মামলার আসামি আর যাই হোক ধোয়া তুলসি পাতা নয় । তারা যদি ধোয়া তুলসি পাতাই হতো তাহলে কখনো কাঠগড়া থেকে পালানোর দুঃসাহস দেখাতো না । আমার ভাবতে বড় অবাক লাগে যখন দেখি যাদের লেখাটাই পেশা তারা এই বড় একটা ঘটনাকে এড়িয়ে যায় বা এড়িয়ে যেতে বাধ্য হয় বড় কোন ঘটনার অন্তরালে ।

খুঁজে পাইনা একটি ঘটনার মাঝে আরেকটি ঘটনার অন্তমিল । আমার দেশটা এভাবেই যেন প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলছে ঘটনার স্বপক্ষে ঘটনার জন্ম দিয়ে । রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা প্রতিনিয়ত ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ভাবে । আমি বা আমরা যেমনটা চাই তেমনটা কেন হয় না, আমরা কেন আমাদের মেরুদন্ড খাড়া করার দুঃসাহস দেখাতে পারি না রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলোকে আস্থায় রেখে । রাষ্ট্র কি এভাবেই এগিয়ে চলছে সদা সর্বদা আমাদের পিছনে ফেলে????

মুহাম্মাদ আবদুল গাফফার
ইমেইল:

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.