গত দুইটি পর্বে আমি গর্ভবতী মায়ের সেবা নিয়ে আলোচনা করেছি ,আজও তার ধারাবাহিকতায় লিখছি । ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে আমাকে সংশোধনের সুযোগ দিবেন । ১ম পর্ব ২য় পর্ব গর্ভকালীন সময় কতদিন পর পর ডাক্তারের কাছে যাবেনঃ গর্ভধারণের প্রথম ৭ মাসে প্রত্যেক মাসে ১ বার, পরবর্তী ২ মাসে ১৫ দিন পর পর এবং শেষের মাসে সপ্তাহে ১ বার করে প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত একজন গর্ভবতী মহিলার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত৷ কিন্তু আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এতবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়৷ একারণে অন্তত পক্ষে ৪ বার একজন গর্ভবতী মহিলাকে সেবা কেন্দ্রে অথবা ডাক্তারের কাছে আসাতে হবে৷ নিম্নলিখিত ৪ বার স্ব্যাস্থ্য কেন্দ্রে আসতে হবে (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী ) ১ম ভিজিট - প্রথম ১৬ সপ্তাহ (৪ মাসের) মধ্যে ২য় ভিজিট - ২৪-২৮ সপ্তাহ (৬-৭ মাসের) মধ্যে ৩য় ভিজিট- ১ম মাস পর (৮ মাসের)মধ্যে ৪র্থ ভিজিট- ৩৬ সপ্তাহ (ঌ মাসের) দিকে গর্ভাবস্থায় ইনজেকশন নেওয়া গর্ভধারণের পর ৫ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এক মাসের ব্যবধানে দুটি টি. টি ইনজেকশন নিতে হয়৷ গর্ভকালীন বিপদজনক লক্ষণঃ * চোখের পাতা, জিভ, দাঁতের মাড়ি, হাতের তালু ফ্যাকাশে হয়ে গেলে৷ সব সময় ক্লান্তি অনুভব করলে এবং ঘনঘন শ্বাস নিলে বা শ্বাসকষ্ট হলে * সন্তান প্রসবের আগে ব্যথাহীন বা ব্যথাসহ যে কোনও অতিরিক্ত রক্তস্রাব শুরু হলে * উচ্চ রক্তচাপ (১৪০/ঌ০ মিলিমিটার পারদ চাপের চেয়ে বেশি হলে) * অতিরিক্ত মাথাব্যথা হলে, ঝাপসা দেখলে এবং চোখে অস্পষ্ট দেখলে * গোড়ালি, হাত, মুখ ফুলে গেলে * শরীরে খিঁচুনি হলে অথবা অজ্ঞান হয়ে গেলে৷ * জন্ডিসে চোখ হলদেটে হয়ে গেলে এবং প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ বা লালচে হয়ে গেলে * মাত্রাতিরক্তি বমি করলে * প্রচন্ড জ্বর (স্থায়ী জ্বর, ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে)-৩ দিনের বেশি থাকলে * তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা করলে * যোনিপথ দিয়ে কোন তরল পদার্থ বের হলে * নির্দিষ্ট তারিখের ৩ সপ্তাহ বা তারও আগে পানি ভেঙে গেলে (গর্ভকালের ৩৭ সপ্তাহের আগে) * প্রলম্বিত প্রসব (প্রসবকাল ১২ ঘন্টার বেশী), * বাধাপ্রাপ্ত প্রসব হলে * বাচ্চার অস্বাভাবিক অবস্থান থাকলে * প্রসবের সময় গর্ভস্থ বাচ্চার নাড়ী কিংবা হাত-পা বেরিয়ে যাওয়া * যৌনিপথের ঘন সবুজ স্রাব৷ * প্রসবের অনেকক্ষণ পরও গর্ভফুল না পড়া * প্রসবোত্তর অত্যাধিক রক্তস্রাব প্রসবকালে * যৌনিপথ বা জরায়ুর মুখ ব্যাপকভাবে ছিঁড়ে যাওয়া * জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়া (ক্রমাগত প্রচণ্ড ব্যথা এবং অতিরিক্ত রক্তস্রাব) পরামর্শ যদি কোনও মহিলার গর্ভকালীন অবস্থায় উপযু©ক্ত লক্ষণসমূহ দেখা দেয় তবে তাকে দ্রুত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷ একারণে সকল গর্ভবতী মায়ের জানা উচিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বা হাসপাতাল কোথায় এবং কীভাবে যেতে হবে৷ গর্ভবতী মায়ের আলট্রাসনোগ্রাফি গর্ভকালীন আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবহার অনেক বছর ধরে চলে আসছে৷ গর্ভবতীর জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি একটি অতিপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা এবং গর্ভকালীন যে কোন সময়ে এ পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে৷ গবেষণায় দেখা গেছে, আলট্রাসনোগ্রাফি গর্ভকালীন সময়ে নিরাপদ৷ স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফির প্রয়োজনীয়তা : গর্ভাবস্থায় কখন আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে, এ ব্যাপারে রোগীর ডাক্তার বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের মতামতই গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রধানত তিনটি পর্যায়ে গর্ভবতীর আলট্রাসনোগ্রাফি করা উচিত- প্রথম পর্যায় : মাসিক বন্ধ হওয়ার আট সপ্তাহের মধ্যে৷ যদিও মাসিক বন্ধ হওয়ার পঁাচ-ছয় সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়৷ এ পর্যায়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করার কারণগুলো হচ্ছে- * গর্ভধারণ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া * গর্ভধারণের নিশ্চিত সময় বের করা * গর্ভধারণ স্বাভাবিক অর্থাত্ জরায়ুর মধ্যে না অস্বাভাবিক অর্থাত্ জরায়ুর বাইতে তা জানা * গর্ভস্থ সন্তান একটি, যমজ বা ততধিক কি না তা জানা * জরায়ুর ভ্রূণের এক ধরনের টিউমার অর্থাত্ মোলার প্রেগনেন্সি কি না তা নির্ধারণ * গর্ভধারণকালে উপসর্গগুলোর মতো তলপেটের কিছু টিউমার এবং হরমোন নিঃসৃতকারী কিছু ডিম্বাশয়ের টিউমার নিরূপণের জন্য৷ * জরায়ুর এক ধরনের টিউমার যা স্বাভাবিক গর্ভধারণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে৷ যেমন - মায়োমা বা ফাইব্রয়েড আছে কি না তা নির্ণয় করা৷ দ্বিতীয় পর্যায় : গর্ভধারণের ১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে - *গর্ভধারণের সঠিক সময় নির্ধারণ *গর্ভস্থ সন্তান একটি, যমজ বা ততধিক কিনা তা নির্ধারণ৷ *গর্ভস্থ সন্তানের কোনও জণ্মগত অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা নির্ণয় করা৷ *গর্ভফুলের সঠিক অবস্থান জানা৷ গর্ভফুল স্বাভাবিক অবস্থানের চেয়ে নিচে অবস্থান করলে যেসব গর্ভবতীকে উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন গর্ভবতী বলা হয়৷ তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বনের জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি জরুরি৷ *মায়োমা বা ফাইব্রয়েড আছে কিনা তা নির্ণয় করা৷ তৃতীয় পর্যায় : গর্ভধারণের ৩২-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে- *গর্ভস্থ সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় গর্ভস্থ সন্তানের কোনও জণ্মগত ত্রুটি বা অস্বাভাবিকতা নির্ণয় যা আগের আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় ধরা পড়েনি৷ *গর্ভস্থ সন্তানের মাথা ও পা স্বাভাবিক অবস্থানে আছে কিনা তা দেখা৷ *গর্ভফুলের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয়৷ *গর্ভফুলের মধ্যস্থিত তরল পদার্থের পরিমাণ জানা৷সম্ভাব্য জটিলতা যেমন- মায়োমা বা ফাইব্রয়ের এবং ডিম্বাশয়ের টিউমার ইত্যাদি নিরূগুরুত্বপূর্ণ৷ তাই সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে শুধু তা জানার জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি করা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ আলট্রাসনোগ্রাফির জন্য আগাম প্রস্তুতি মায়ের প্রস্রাবের চাপ থাকতে হবে৷ এ জন্য পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে রোগীকে চার-পাঁচ গ্লাস পানি বা অন্য কোনও পানীয় পান করাতে হবে৷ আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার আগে রোগী যেন প্রস্রাব না করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ শেষ কথা একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, গর্ভকালে মাসে কিংবা প্রস্রবের আগে প্রতি ডাক্তারের সঙ্গে প্রতি সাক্ষাতেই আলট্রাসনোগ্রাফি করা জরুরি নয়৷ যদি না না গর্ভবতীর কোনো জটিলতার আশঙ্কা থাকে৷ এ বিষয়ে সংস্লিষ্ট চিকিত্সকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে৷ অনেক মায়েরই জানতে ইচ্ছে হয় তার জঠরে কিভাবে সন্তান বড় হচ্ছে ,তাতো আসলে দেখা যায় না, তবে জিওগ্রাফী চ্যানেলে প্রায়ই দেখায় ।আমি ব্লগে এইরকম একটি লেখা পেলাম তাই শেয়ার করছি মায়ের জঠরে আমাদের বেড়ে উঠা আশা করব আপনারা ব্লগটি থেকে ঘুরে আসবেন । এরপর আশা করি প্রসব সংশ্লিষ্ট ও প্রসব-পরবর্তী সেবা নিয়ে লেখা দিব।আশা করি ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।ভালো থাকবেন সবসময় । কৃতজ্ঞতাঃ http://forum.daffodil-bd.com/index.php?PHPSESSID=un3gaa7h4fvsdv3p2isiv90m80&topic=460.msg507#msg507 http://www.somewhereinblog.net/blog/khnivhuta/29653397
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।