কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! -তুমি কি জানো তুমি কতটা নীচ? তোমার মেন্টালিটির সাথে একটা সাইকোপ্যাথের মেন্টালিটির তেমন কোন পার্থক্য নেই, এটা কি তুমি জানো?
-জানি।
-তুমি মানুষ না। তুমি অন্য কিছু। পশু টাইপ। অথবা তার চেয়েও খারাপ।
-জানি।
-তোমার সাথে সংসার করা সঙ্গত কারণেই আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। আর এর সাথে আরও কিছু ব্যাপার জড়িত। আশা করি এতদিনে তুমি সেটা বুঝে গেছ।
-হুম গেছি।
-আমি আজই জামালপুর চলে যাচ্ছি। ডিভোর্স লেটার সময়মত পেয়ে যাবে।
-আচ্ছা।
-নাজমুল, তুমি সবকিছুতে এত উদাসীন কেন? বিকারহীন কেন?
-এমনি।
-তুমি কি কখনই সিরিয়াস হবে না?
-না।
-যদি কখনও নিজেকে চেঞ্জ করতে পারো তাহলে আমায় খবর দিও। আমার হৃদয়ের এক কোণে এখনও তোমার জন্য ছোট্ট একটা জায়গা আছে। কতদিন থাকবে জানি না।
-হুম।
-তুমি কি কখনই আমার সাথে পূর্ণাঙ্গ একটা বাক্য উচ্চারণ করবে না?
-না।
দিনা চলে গেছে। রেখে গেছে ধূসর কিছু স্মৃতি। সোনালী কিছু স্মৃতি। লালচে স্মৃতি। নীলচে স্মৃতি।
কালচে স্মৃতি। সবই ঠিক ছিল, ভজকট পাকিয়ে দিল একটা ছোট্ট মেসেজ। দিনার কলিগ আরমানের মেসেজ। মেসেজের ভাষা অকথ্য। দিনার শরীরের গোপন কোন লোভনীয় বস্তু নিয়ে স্মৃতিচারণ।
দুপক্ষ থেকেই সম্মতি না হলে এমন মেসেজ দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
নাজমুল দিনাকে একটা কথাও জিজ্ঞেস করেনি। দিনা এমন করতেই পারে। চার বছরের দাম্পত্যে নাজমুল এই পর্যন্ত সতেরোবার পেনাইল ফ্র্যাকচারের স্বীকার হয়েছে। একবার পেনাইল ফ্র্যাকচার মানে দুই মাসের রেস্ট, নো সেক্স।
দিনার শরীর বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। ঘরে ভাঙ্গাচুরা স্বামী থাকলে মেয়েরা হ্যান্ডসাম কলিগের সাথে অনেক কিছুই করতে পারে। তাই নাজমুল আর কিচ্ছু বলে নি। কোন রাগারাগি করে নি। কোন কিচ্ছু ভাঙ্গে নি।
কাউকে চড় মারে নি। কাউকে ডিভোর্সের ভয় দেখায় নি।
কিন্তু, ঠিক সেদিন থেকেই, শুরু হয়েছিল তার প্রতিশোধের খেলা। দি গেইম। মাইন্ড গেইম।
নাজমুল সেই দিন থেকে দিনার সাথে কখনও একটা পূর্ণ বাক্য বলে নি। এই কয়েকমাসে তার মুখ থেকে একটানে নিঃসৃত হওয়া সবচেয়ে লম্বা শব্দসমষ্টি ছিল – “হুম অনেক ভালো”।
দিনা সহ্য করতে পারে নি। আরমানের সাথে তার কিছুই হয় নি। দিনা অনুমান করতে পারে নাজমুল তার মেসেজ দেখেই এমন করছে, অথচ আরমানের সাথে সে কয়েকদিন শুধু বাইরে খেয়েছে মাত্র, আর কিছু না।
তার আর আরমানের মধ্যে তেমন কিছু নেই। আরমান একটা হাবলা ক্যাবলা, প্লেবয় টাইপ। সবসময় নিজেই এসে তার পিছু ঘুরঘুর করত। আর একজন কলিগের সাথে কয়েকদিন বাইরে খাবার মধ্যে তেমন খারাপ কিছু নেই।
আরমানকে চার্জ করেছিল দিনা, আরমান মুখ কাচুমাচু করে বলেছিল সেদিন রাতে নাকি তার খুব একাকী লাগছিল, প্রচণ্ড মন খারাপ ছিল, এজন্য লুপ্তবিবেক হয়ে সে বানিয়ে বানিয়ে দিনাকে নিজের বউ কল্পনা করে ওরকম একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল।
দিনা আরমানকে বাসায় এসে নাজমুলের সামনে ক্ষমা চাইতে বলেছিল, আরমান রাজি হয় নি।
নাজমুলকে আরমানের ব্যাপারটার ব্যাখ্যা দিয়েছিল দিনা। ভেবেছিল নাজমুল এখন আর তাকে ভুল বুঝবে না। কিন্তু জবাবে শুধু একবার হেসেছিল নাজমুল। সেই বক্র হাসি দিনার মেয়েলি হৃদয়কে কেটে ছিঁড়ে শতখণ্ড করে ফেলেছিল।
মেয়েরা সব সহ্য করতে পারে, বিশেষ মানুষের অবহেলা সহ্য করতে পারে না। আর বিশেষ মানুষটাও এমন কিছু না, বছরের আট মাসই ভেঙ্গেচুরে বিছানায় পড়ে থাকে। সুতরাং দিনার ক্ষোভ জমতে জমতে পাহাড়সম হয়েছে। পাহাড়সম ক্ষোভ স্রোতস্বিনী হয়ে দিনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে গেছে। দিনা আর সহ্য করতে পারে নি।
দিনা চলে গেছে।
নাজমুল এখন একা একা বিছানায় শুয়ে থাকে। মাঝে মাঝে Children Of Bodom এর গান শোনে সে। তার ফ্রিজে খাবার পচে। তার বিছানায়া তেলাপোকা নাচে।
নাজমুল পড়ে থাকে মরার মত। তার শিশ্নের ক্ষত আস্তে আস্তে শুকায়।
***
“নিখিল বাংলাদেশ সাইকো সমিতি”র বাৎসরিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছে নাজমুল। সে গত দশ বছর যাবত এই সমিতির একজন সদস্য। একজন গর্বিত সদস্য।
প্রতি বছর এই সমিতি একজনকে বর্ষসেরা সাইকো ঘোষণা করে। বর্ষসেরা সাইকোকে একটা সার্টিফিকেট, এক লাখ টাকা এবং এক বোতল সরিষার তেল উপহার দেয়া হয়।
নাজমুল আশাবাদী, এবার সে পুরষ্কার পাবেই পাবে। পিওর সাইকোরাই শুধু এই পুরষ্কার পায়। নাজমুল একজন পিওর সাইকো।
আরমান তার বন্ধু। আরমানও এই সাইকো সমিতির সদস্য। দিনার সাথে ঢলাঢলি, খেতে যাওয়া, মেসেজ পাঠানো – সবই আরমান করেছে নাজমুলের পরামর্শে। দিনাকে মানসিক কষ্টে ফেলার জন্য এটা ছিল নাজমুলের সিম্পল একটা ট্রিক, আরমান ছিল তার সহকারী মাত্র।
নাজমুল একজন বিশুদ্ধ সাইকো।
সে অবশ্যই এ বছরের পুরষ্কার পাবে। গত বছরের সেরা সাইকো চুন্নি সাহা নিজ হাতে তার গলায় সম্মানসূচক মেডেল পরিয়ে দেবেন।
অবশেষে এল সেই কাঙ্ক্ষিত ক্ষণ। সাইকো লিজেন্ড মখা কলমবীর উঠে দাঁড়ালেন। মাইকের সামনে গিয়ে মাইকের তার ধরে অনর্থক কিছুক্ষণ লাড়াচাড়া করলেন তিনি।
লাড়াচাড়া কাজটা করতে তার খুব মজা লাগে।
অবশেষে মখা গম্ভীর কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, “আমাকে জানানো হয়েছে, এবারের বর্ষসেরা সাইকো হচ্ছে...”
নাজমুলের উৎকর্ণ হয়ে মখার দিকে তাকিয়ে আছে। এক লাখ টাকা দিয়ে সে কি করবে? খেয়ে ফেলবে? কুচি কুচি করে কেটে ফেলবে? পুড়িয়ে ফেলবে? নাকি অন্য কিছু?
“...দিনা জামান”।
নাজমুল অবাক হয়ে স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছে। দিনা গুটিগুটি পায়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নাজমুলের শিশ্নে ব্যথাটা হঠাৎ করেই একশগুণ বেড়ে গেল।
দিনা বলল, “ধন্যবাদ সুধীজন...আমি আজ অনেক আনন্দিত...গত চার বছরে আমি নিরলসভাবে আমার স্বামীকে পেনাইল ফ্র্যাকচারের শিকার হতে বাধ্য করেছি...ট্রিকটা খুব সিম্পল...সেক্সের সময় আপনি শরীরের ভর নির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করলে সহজেই এটা করতে পারবেন...আশা করি মেয়ে সাইকোরা সবসময় আমাকে মনে রাখবে...সাইকোগিরি জিন্দাবাদ!”
সাইকোদের কষ্ট পেতে হয় না। তবু নাজমুলের মনে কষ্ট। বড় কষ্ট।
(হাসান মাহবুব ভাইয়ের “নিখিল বাংলাদেশ সাইকো সমিতি” নামক গল্পটা পড়ে ভাবলাম, গল্পটার একটা ডেরিভেটিভ টাইপ কিছু লিখি না কেন? সেই ভাবনা থেকেই লেখাটার শুরু, কিন্তু আমার ধারণা গল্পটাকে আলাদা একটা গল্প হিসেবে কাউন্ট করা যাবে নিঃসংকোচে।
সাইকোগিরি জিন্দাবাদ। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।