আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐতিহ্যের, আদর্শের, প্রত্যাশার লীগ এবং কয়েকটি প্রশ্ন

প্রশ্ন-০১ : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালে (৬৫ বছর); বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে ১৯৪৯ সালে (৬৪ বছর) আর আওয়ামী যুবলীগ ১৯৭২ সালে (৪০ বছর) প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী রাজনীতির এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই তাদের বর্তমান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দলের তুলনায় বয়োজ্যেষ্ঠ। সুস্থ ও গঠনমূলক রাজনীতির ধারা মানলে আওয়ামী রাজনীতির বর্তমান কাণ্ডারিরা এই তিনটি সংগঠনের মাধ্যমেই উঠে আসার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে কি? এখন একটা তথ্য-পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে কেমন হয়, "বিগত চারটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের শতকরা কত ভাগ উপরোক্ত রাজনীতর ধারা মেনে এসেছেন আর কত ভাগ নেহায়েৎই হাইব্রিড আওয়ামী লীগার?" প্রশ্ন-০২ : এক সাক্ষাৎকারে আহমদ ছফা বলেছিলেন, “আওয়ামী লীগ যখন জিতে তখন শেখ হাসিনা তথা কিছু মুষ্টিমেয় নেতা জিতেন, আর আওয়ামী লীগ যখন হারে গোটা বাংলাদেশ পরাজিত হয়। ” ১৯৯১-১৯৯৬, ১৯৯৬-২০০১, ২০০১-২০০৬, ২০০৮-বর্তমান - এই শাসনামলগুলোর কোনটিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ লীগের কি পরিমাণ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন সে ব্যাপারে কারো কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে বা কারো জানা আছে? আমার ধারণা, লীগের জয়ের সুফল লীগের নেতাকর্মীরাও সেভাবে নিতে পারে না; আপাতভাবে তাদের টেণ্ডার-চাঁদাবাজি সংশ্লিষ্টতা দেখলে যেটাকে অন্যরকম মনে হয়।

তাই লীগ বিরোধীদলে থাকাকালীন অবস্থার চেয়ে সরকারে থাকা অবস্থাতেই লীগকর্মীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন বলে ধারণা করি। কারণ লীগের লাভের গুড় সালমান এফ রহমান, লোটাস কামাল, আবুল হোসেন আর অথর্ব উপদেষ্টাদের ভোগেই চলে যায়; শুধু দায়টাই বর্তায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঘাড়ে- যারা কিনা জামাত-শিবিরের মতো দল থেকে আর্থিক নিশ্চয়তা পান না; রুটিরুজির তাগিদে অপরাজনীতিতে জড়ান এবং মোট লুটপাটের তুলনায় নগণ্য অংশ নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে গিয়েও দোষের ভাগে অগ্রগণ্য হন। সেই সাথে নেতৃত্বে আসার সুযোগও জোটে না এই ত্যাগী লীগারদের কপালে। তারা আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে মার খান, পুলিষের ডাণ্ডাবেড়ি পরেন, জেল খাটেন; কিন্তু নেতৃত্বে আসেন সুবিধাবাদী আর চীনপন্থি, রুশপন্থী, পিকিংবাদী, মাও-মার্কস-লেলিন-স্টয়িকবাদীরাই (সবেধন নীলমণি ওবায়দুল কাদের বাদে)। তাহলে হালসময়ে রাজনীতির মাঠে লীগারদের ভূমিকা কি? খেলোয়াড় না খেলার বস্তু? প্রশ্ন-০৩ : ফটিকছড়িতে নির্বিচারে নৃশংসভাবে লীগের নেতাকর্মীরা খুন হয়েছেন, কারো কারো লাশ মিলেছে, বেশিরভাগই গুম হয়ে গেছেন।

বুয়েটের দ্বীপ বারোদিন ধরে হাসপাতালে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে আছেন। তাকিমের কি অবস্থা এখন কে জানে? মারা গেছেন সিলেটের অরুণ, জগতজ্যোতি; মারা গেছেন ইমরান হোসেন। একের পর এক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের কর্মীরা মারা যাচ্ছেন। কেউ শোক প্রকাশ করছেন, কেউ কেউ গর্বে বুক ফুলাচ্ছেন তার ভাইদের এই আত্মত্যাগ দেখে। কিন্তু আসল কথাটি কেউ বলছেন কি? লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় লীগারদের এই মৃত্যু কি শোকের, গর্বের নাকি লজ্জার? তাহলে কোনটি সত্য বলে ধরে নেব- ‘লীগ তার নিজের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা দিতেই ব্যর্থ, অসমর্থ; জনগণের আর কি নিরাপত্তা দিবে’ নাকি ‘লীগ কৌশল অবলম্বন করতে গিয়ে নিজের নেতাকর্মীদের উৎসর্গ করছে’? প্রশ্ন-০৪ : মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের আওয়ামী লীগার মূলত দুই প্রকারের।

এক প্রকার আওয়ামী লীগাররা আওয়ামী লীগ করে বলে নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বলে জাহির করে। অন্য প্রকার আওয়ামী লীগাররা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে বলে, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে বলে আওয়ামী লীগ করে। প্রথম প্রকারের লীগাররা রাজনীতি বলতে বোঝে স্বার্থনীতি। এরা অন্ধভাবে দলের সমর্থনে কথা বলে নিজের আনুগত্য জাহিরে ব্যস্ত থাকে, সময়মত স্বার্থের জন্য দলের ক্ষতি করে এবং দলকে সঠিক পথে রাখতে কোনরূপ বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারে না। অন্যপ্রকারের লীগাররা রাজনীতি বলতে বোঝে দেশনীতি।

এরা দলকে ভালোবাসলেও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, "ব্যক্তি অপেক্ষা দল বড়, দল অপেক্ষা দেশ। " তাই এরা প্রায়ই দলের সমালোচনা করে অনেকের বিরাগভাজন হয়। কিন্তু দল সঠিক পথে রাখার গুরুদায়িত্বটি এরাই পালন করে। কিন্তু বাংলাদশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রথমোক্তরা লাভবান এবং শেষোক্তরা বরাবরই বঞ্চিত। তবু বর্তমানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে দাবী আদায়ে আওয়ামী লীগ নামক দলটি যখন পরিণত হয়েছে একমাত্র অপশনে, তখন কারা ‘ডমিনেট’ করছে বাংলাদেশের প্রবীণ এই রাজনৈতিক সংগঠনে? -------------------------------------- এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই ঠিক করবে আগামী দিনে বাংলাদেশের গতিপথ অথবা গতিপথ বদলে দেয়া লড়াইয়ের সূচনা।

প্রিয় প্রজন্ম, তৈরি থেকো। জয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা। __________________________________________ পথের প্রান্তে নয়, পথের দু'ধারে আমার গন্তব্য ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.