বাঁধার দেয়াল ভেঙ্গে মোরা এগোবোই পর্যটন নগরী সিলেটে দেখার মত অসংখ্য মনোমুগ্ধকর দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যে কোন পর্যটকের জন্য সিলেট হতে পারে পর্যটনের চমৎকার গন্তব্য। প্রাকৃতিক স্থানের কথা বলতে গিয়ে সবাই সিলেটের ঐতিহ্য ক্বীন ব্রিজের কথা ভুলে যান। পৃথিবীতে দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই কিন্তু ক্বীন ব্রিজের মত ঐতিহাসিক জিনিস দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ব্রিজটি সিলেট শহরের প্রবেশ দ্বার।
ব্রিজটির তৈরির ইতিহাস হচ্ছে,
‘’গত শতকে তিরিশের দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি সিলেট সফরে আসেন। তাঁর স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটির নির্মাণ হয় এবং ব্রীজটির নামকরণ হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামানুসারে‘’।
এই ব্রিজটির পাশেই রয়েছে বিখ্যাত আলি আমজাদের ঘড়ি। ঘড়িটিকে অনেকেই লন্ডনের বিখ্যাত বিগ বেনের সাথে তুলনা করে থাকেন।
বিশাল ঘড়িটি ইতিহাসের অনেক বিষয়ের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ক্বীন ব্রিজের নির্মাণের ইতিহাস হচ্ছে,
‘’আসাম প্রদেশের গভর্ণর মাইকেল ক্বীন সিলেট সফরে আসার জন্য সুরমা নদীতে ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কারণ তখন আসামের সাথে সিলেটের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। ফলে, রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এবং নির্মান শেষে ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়’’।
ব্রিজটি এখন সব যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত নয়।
কিছু হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারে। ব্রিজটি অনেক উচু বিধায় রিকশা চলাচলের ক্ষেত্রে ঠেলার প্রয়োজন হয়। যারা ঠেলার কাজের সাথে যুক্ত তাদের সংখ্যা ৭০ থেকে ১০০ জন হবে। যাত্রীবাহী রিকশার থেকে ৫ টাঁকা এবং মালবাহী রিকশা থেকে ১০ টাঁকা নিয়ে থাকেন। এই ক্বীন ব্রিজ অনেকগুলো গরিব মানুষের উপার্জনের উৎস।
একটি রিকশাকে ব্রিজের অর্ধেক তুলতে পারলেই ৫ বা ১০ টাঁকা আয় হচ্ছে তাদের। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও ক্বীন ব্রিজের রয়েছে গর্বের ইতিহাস,
‘’১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়; যা স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে মেরামত করা হয় ও হালকা যান চলাচলের জন্য ব্যবহৃৎ হয়। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ব্রীজের বিধ্বস্ত অংশটি কংক্রীট দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয় এবং তৎকালীন নৌ বাহিনীর প্রধান রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান সংস্কারকৃত ব্রীজটি উদ্বোধন করেন; ফলে পুনরায় এটি দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। ‘’
বিদেশীদেরকে আমরা শুধু প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখাতে চাচ্ছি কিন্তু আশানুরুপ ফল পাচ্ছি না। কারন তাদের দেশেও তো প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
যা নেই তা হচ্ছে ক্বীন ব্রিজ। গভীর রাত ব্যতীত সারাক্ষন ক্বীন ব্রিজ থাকে লোকে লোকারণ্য। প্রাকৃতিক স্থানের চেয়ে আমাদের ঐতিহ্যের গুরুত্ব সবার কাছেই বেশী। সে দেশের পর্যটকই হোক অথবা বিদেশি পর্যটকই হোক।
তথ্য সুত্রঃ উইকি পিডিয়া
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।