সুনীল গংগোপাধ্যায়ের “ছবির দেশে কবিতার দেশে” বইতে পড়েছিলাম , ফরাসী দেশে প্রতিটা বইয়ের দোকানে পাঠকের পড়ার জন্য একটা পাঠকক্ষ থাকে । কোন পাঠক চাইলে কোন বই না কিনেও সারাদিন বসে বসে যে কোন বই পড়তে পারে । আবার দোকানদারও কোন বই বিক্রি না হলেও খুশি ,কারন বই বিক্রি হওয়া মানেই বইটি হাত ছাড়া হয়ে যাওয়া। বইয়ের এমন সমঝদার বিক্রেতা -পাঠক মনে হয় আর কোন দেশে নেই ।
আমাদের দেশে এখনো সেরকম পাঠক-বিক্রেতা তৈরি হয়নি ।
দোকানী চায় যেকোন ভাবে হোক পাঠককে বই গেলাতে , অপরদিকে পাঠক খুঁজে জনপ্রিয় লেখকের বই –তাও আবার দুয়েকটা । ফলে যারা মুলত সত্যিকারের পাঠক তারা পড়ে যান বিপদে । একুশে বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর কোথাও কোন বই পাওয়ার উপায় নেই । ব্যবসায়িক ক্ষতির আশংকায় কোন নতুন বইও প্রকাশ হয়না ।
একুশ এলেই লেখকের লেখা আর প্রকাশকের প্রকাশনায় বই বেরুনো শুরু হয় ।
মাঝখানে “চিন্তা ” বিষয়টা উধাও হয়ে যায় । ফলে আমরা ছাপার অক্ষরে লেখা কয়েক হাজার বই পাই কিন্তু চিন্তাশীল ও মননশীল বই পাই হাতে গোনা কয়েকটা । বংকিমচন্দ্রের মতে একটি বই লেখে কিছুদিন ফেলে রাখা উচিত আরো বছর দুয়েক পরে তা প্রকাশ করা উচিত ।
হয়তবা সত্যিকারের পাঠকদের কথা মাথায় রেখেই ঐতিহ্য প্রকাশনী শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরির সামনে আয়োজন করেছে বই উৎসবের । রাস্তায় পোস্টার দেখে ঐতিহ্যের বই উৎসবে গেলাম ।
আমি গিয়েছি মুলত কমিশনে কম দামে কিছু বই পাওয়ার আশায়,৭০% পর্যন্ত বিশাল কমিশন । গিয়ে দেখলাম প্রচুর পাঠক-ক্রেতা ,বিক্রিও ভালো । আশা করব ৩১ শে জুলাই ঐতিহ্য প্রকাশনীর পর অন্য কোন প্রকাশনী উৎসবের আয়োজন করে এর ধারাবাহিকতা বছর জুড়ে অব্যাহত রাখবে ।
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা বই পড়লাম ,আর প্রথম আলো- ঐতিহ্য আয়োজিত ছোটদেররচনা প্রতিযোগিতার দুটো সংকলন কিনলাম । এ নিয়ে কারো হাসি ঠাট্টা করার কিছু নেই ।
খেলার মাঠহীন শহরে বন্দী খাঁচায় , টিভি আর কম্প্যুটার গেমসকে সাথী করে বেড়ে উঠা আগামী দিনের শিশুদের চিন্তাভাবনা কেমন - তা জানতেই মুলত এই শিশু সংকলন কেনা । আমি কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকার শিশুদের পাতার ক্ষুদে লেখকদের মুগ্ধ পাঠক ।
যে ডাঊশ সাইজ়ের বইটি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম তার নাম “জয়বাংলা ” । এটিও একটি সংকলন । ১১ই মে ১৯৭১ থেকে ২৪শে ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত মুখপ্ত্র ।
এখানে মুলত সরকারের বিবৃতি আর মুক্তিযোদ্ধাদের সফল অভিযানের খবরগুলো আছে । পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের নৃশংসতা ,গনহত্যার খবর তেমন একটা নেই । হয়তবা মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল চাংগা রাখার জন্যই সে খবরগুলো ছাপা হতো না । সংকলন টিকে কাউকে কিনতে দেখিনি । বর্তমান প্রক্ষাপটে ’৭১ সালের সংগ্রাম পত্রিকার সংকলন কেউ বের করতে পারলে তা যে হু হু করে বিক্রি হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই ।
আমিও ’৭১ এর একটা সংগ্রাম পত্রিকার সংকলনের অপেক্ষায় আছি ।
সংকলনে বহু খবরের ভীড়ে মাঝে মাঝে বেশ বড় করে চাদপুরের জনৈক গনেশ সাহার মেঘনা বিড়ির বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়ার মত । বড় বড় অক্ষরে মুক্তিবাহিনীকে উৎসাহব্যঞ্জক দুয়েকটা লাইনের পর তার বিড়ির বিজ্ঞাপন । পরবর্তিতে এই গনেশ সাহা ও তার মেঘনা বিড়ির কি পরিনতি হয়েছিল তা জানতে ভীষন ইচ্ছা করে ।
উৎসব প্রাংগনে হঠাত করে আভির্ভুত হলেন শ্রদ্ধেয় লেখক, প্রফেসর আনিসুজ্জামান ।
বহুদিন উনার কোন লেখা কোথাও পাচ্ছি না । বইও মনে হয় তেমন একটা লেখেন না । সন্ধ্যার আলো-আধারিতে ছবিটা মনে হয় ভালো আসেনি ।
পাদটীকা ঃ ঢাকার কাটাবনে প্রতি শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইয়েরমেলা বসে । মেলা উদ্বোধন করেছিলেন রাজশাহীর বইপ্রেমী পলান সরকার ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।