সরকারের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কারণে এবার ঈদ ছিল মানুষের উৎসবমুখর।
এবার সারাদেশে ঈদ উrসব পালিত হয়েছে আনন্দময় পরিবেশে। অন্য বছরের মতো এবারের ঈদে জনজীবনে দুর্ভোগ ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য, যানবাহন_ সবই ছিল ঈদ উrসবে মাতোয়ারা মানুষের অনুকূলে। এজন্যই সব শ্রেণী-পেশার মানুষ অনেক স্বস্তিতে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতে পেরেছে।
এর মধ্য দিয়ে ঈদের পুরো সময় মানুষের মধ্যে আনন্দের জোয়ার ছিল স্বভাবতই অন্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি।
সারা বছরের চেয়ে ঈদ উrসবের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হয় গ্রামমুখী মানুষকে। নিরাপদে গ্রামে যেতে পারবে কি না, প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে কোন আশঙ্কায় পড়তে হবে কি না_ এনিয়ে এক ধরনের আশঙ্কা ঘরমুখো মানুষের মধ্যে কাজ করে। এজন্য সবাই ভয়ে ভয়ে শহর থেকে গ্রামের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও ছিল স্বাভাবিক। যানজট নিরসনেও দেখা গেছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটা ব্যতিক্রম। ছোটখাট বিচ্ছিন্ন ২/১টি ঘটনা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা, খুন, ছিনতাই, মলম পার্টির দৌরাত্ম্য ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা পদক্ষেপের কারণে এবার ঈদে পুরো পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি ছিল খুবই ভালো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য ঢাকায় এক ধরনের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছিল। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) দুই হাজার সদস্যসহ সার্বক্ষণিক পুলিশি টহল অব্যাহত ছিল। রাজধানীর সায়েদাবাদ, কমলাপুর, গাবতলী, সদরঘাট ও মহাখালীসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এ ব্যবস্থা নেয়ার ফলেই দুষ্কৃতকারীরা বড় ধরনের কোন অপতৎপরতা চালাতে সাহস পায়নি।
দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছিল ঈদ এলেই প্রধান রপ্তানিমুখী শিল্প গার্মেন্টসে অস্থিরতা শুরু হয়। মালিক পক্ষ সময়মতো বেতন-বোনাস পরিশোধ করে না বলে কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ এবং সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এবার সেসব ছিল না বললেই চলে। সময়মতো বেতন-বোনাস দেয়ায় শ্রমিকরা অনেক স্বস্তিতে ঈদ পালন করতে পেরেছে।
অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার বাজারে জিনিসপত্রের দাম ছিল সাধারণ মানুষের সহনীয়।
বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি মনিটরিং টিম পুরো রমজানের মাস কাজ করেছে। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটতে পারেনি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদ বাজারে তাদের বেচাকেনা অন্য বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। বড় মার্কেটগুলোতে নীরব চাঁদাবাজিও কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে বলে ঈদ বাজারে নিরাপত্তার কোন অভাব বোধ করেনি অধিকাংশ মানুষ। এর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বেশিসংখ্যক মানুষ ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেটগুলোতে ভিড় করেছেন।
ফলে বেচাকেনাও ভালো হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
ঈদে প্রতি বছর একটি পরিচিত দৃশ্য হিসেবে দেখা যায় যানবাহন নিয়ে ঘরমুখো মানুষের চরম দুর্ভোগ। কিন্তু এবার যানবাহনের জন্য দুর্ভোগ ছিল খুবই কম। ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি প্রতিবছর মানুষকে যেভাবে দুর্ভোগে ফেলে এবার তেমনটি দেখা যায়নি। প্রথম দু'একদিন ট্রেনের সময়সূচিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হলেও যোগাযোগমন্ত্রীর দ্রুত পদক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
ঈদের একদিন আগে ট্রেনের যাত্রী প্রায় ছিল না বললেই চলে। ফলে ট্রেনে চড়তে ভোগান্তির যে চিরাচরিত দৃশ্য তা এবার ছিল না। একই চিত্র দেখা গেছে বাস স্টেশনগুলোতে। যাত্রীদের মধ্যে বাস না পাওয়ার ক্ষোভ ছিল না খুব একটা।
ঈদের আগেই বদলে যায় ঢাকার চিরচেনা দৃশ্য।
ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষ ভিড় করে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে। কিন্তু খুব স্বাভাবিকভাবেই এসব পরিবহনের যাত্রীরা অনায়াসেই তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পেঁৗছে। আর এর সঙ্গেই ফাঁকা হয় রাজধানী। ঈদের দু'দিন আগ থেকেই কোথাও কোন যানজট তো ছিলই না বরং যাত্রীর অভাবে নির্ধারিত সময়ের চেয়েও পরে বাস ছেড়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই যাত্রীরা পেঁৗছে যায় তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
অন্যান্য বছরের মতো হুড়োহুড়ি করে ট্রেন, বাস কিংবা লঞ্চে ওঠার দৃশ্য এবার দেখা যায়নি। এছাড়া কোথাও কোন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে ঈদের আগে ঢাকা ও কুমিল্লা রোডে কিছুটা যানজট ছিল।
রাজধানীবাসীর চোখেমুখে দেখা গেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। যে বাসে তিল ধারণের জায়গা থাকতো না সেখানে খালি বাস নিয়েই রওনা হতে হয়েছে বাস চালকদের।
এতে বাসচালকরা কিছুটা নাখোশ হলেও খুশি ছিল সাধারণ যাত্রীরা। রিকশা ও বাসে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই তাদের ইচ্ছামতো ঘুরে বেরিয়েছেন। রাজধানী ঢাকার যেসব স্থানে সারা বছর যানজট, হইচই ও যাত্রীদের সঙ্গে বচসা লেগেই থাকত, সেই চিরচেনা রাস্তাগুলোয়ও দেখা গেছে অচেনা দৃশ্য। এছাড়া যানজটের জন্য বিখ্যাত যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, পল্টন, জিরো পয়েন্ট, কাকরাইল, মালিবাগ মোড়, মহাখালী, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ ও মগবাজার মোড়ে ছিল না যানজটের ছিটেফোঁটাও।
তবে রাজধানীর বিপণি বিতানগুলোতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।
চান রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়। যারা এতদিন মার্কেটে আসার সময় পাননি তারাও মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করেছেন। অনেক অভাবী ও দরিদ্র লোককে দেখা গেছে ফুটপাতের দোকান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় ঈদের মার্কেট করতে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও বিপণি বিতানগুলো সার্বক্ষণিক ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নখদর্পণে। পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বয় করে এসব স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
তবে অভিযোগ রয়েছে পুলিশ সদস্যরা সড়ক ও মহাসড়কে টহল জোরদার করলেও রাজধানীর অলিতেগলিতে তাদের দেখা যায়নি।
ঘরমুখো মানুষ ঈদ উদযাপন শেষে আবার রাজধানীতে আসতে শুরু করেছে। রাজধানী আবার তার চিরচেনা রূপ নেবে।
পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, গণতান্ত্রিক সরকারের নির্দেশমত পুলিশ নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে এবার রমজান ও ঈদের সময় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে। এখনো দায়িত্ব পালন অব্যাহত আছে।
জনগণ নিরাপদে ও স্বস্তিতে বাড়ি গেছে ও ঈদ উদযাপন করেছে। জনগণ সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। ছোটখাট বিচ্ছিন্ন ২/১টি ঘটনা ছাড়া এবার কোন বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। সুতরাং এটা সরকারের সাফল্যের এক মাইল ফলক ছাড়া আর কিছু বলার অবকাশ থাকে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।