আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হইয়া ‘দুই কোটি ডিম’ আমদানির অনুমতি কী সরকারের চরম অসহায়ত্বই প্রমাণ করে না? ভুলপথে চলিলে সরকারের অসহায়ত্ব বাড়িবেই।



ঢাকাস্থ তেজগাঁও বাজারের কতিপয় ডিমের আড়তদার কী বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের চাহিতেও ক্ষমতাধর? অথচ উহাদের নাই কোনো মন্ত্রণালয়। নাই প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বিকল্প কিছু। কিন্তু সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অথবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয় মন্তকের সমস্ত কৌশলের চাহিতে কিছু ডিমওয়ালা আড়তদারের কারসাজিই যেনো প্রভূত শক্তিধর বলিয়া প্রতিপন্ন হইতেছে। জানা গিয়াছে, বর্তমান চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকায় ডিমের বাজার ঘিরিয়া উঠিয়াছে সিন্ডিকেট। রাজধানীর তেজগাঁও ডিমের পাইকারি বাজার হইতে ঐ চক্র পুরো দেশের ডিমের মূল্য নির্ধারণ করিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করিতেছে প্রকাশ্যে।

ফলে এক মাস আগেও ডিমের হালি ২৮ হইতে ২৯ টাকায় উঠে। তেজগাঁওয়ে প্রতিরাতে ঐ চক্র ডিমের মূল্য ইচ্ছামতো নির্ধারণ করিয়া থাকে। প্রতি রাতে ঐ বাজারে কমপক্ষে ৩০ লাখ পিস ডিম বেচাকেনা হইতেছে। সারাদেশের খামারিদের কাছ হইতে ডিম সংগ্রহ করিয়া আনিয়া ওই বাজার হইতে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ফলে ডিমের বাজার ইচ্ছা করিয়া অসি'তিশীল করা হয়।

অথচ খামারিরা জানান, ডিমের মূল্য বৃদ্ধি পাইলেও খামারিরা উপকৃত হন না। কারণ ঐ বর্ণিত মূল্য খামারিদের কাছে পৌঁছে না। খামারিদের একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের মূল্য ধরিয়ে দেওয়া হয়। মূল্যবৃদ্ধির পুরোটাই করে আড়ত মালিক সমিতির লোকজন। প্রশ্ন হইতেছে আড়তদারদের মূল্য নির্ধারণ উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই কেনো? চার পাঁচটি আড়তদারের উপরও কী সরকার তাহার নিয়ন্ত্রণ খাটাইতে পারিতেছে না? তাহা হইলে কীসের তাহারা সরকার? আর্মি, র‌্যাব, পুলিশ, এসবি, ডিবি, সিআইডি এনএসআই, ডিজিএফআই এতোসব বাহিনী দিয়া- সরকারের কী উপকার? সরকারইবা এতসব বাহিনীর কী কর্তৃত্বের দাবিদার? অতীতের মতো এইসব বাহিনী কী তবে বর্তমানে পলাশীর আম্রকাননের ন্যায় মীরজাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হইয়াছে? নাকি সরকারের নেহায়েত নিষ্ক্রিয়তা এবং চরম উদাসীনতা ও পরম গাফলতির পূর্ণ সুযোগ উহারা লইয়াছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর দিবার দায়বদ্ধতা সরকার অনুভব না করিলেও ‘জনগণের জন্য যেই সরকার’ সেই সরকার কিন্তু ক্রমে ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন হইয়া পরিতেছে।

কেবল ডিম সিন্ডিকেট নয়, চিনি, তেল, চাল, ডাল কোথায় নাই সিন্ডিকেট নামধারী গুটিকতক মুজদদারদের দৌরাত্ম্য? প্রবাদ রহিয়াছে. ‘ছাগল নাচে খুঁটির জোরে; প্রবাদের আলোকেই প্রশ্ন ঘনীভূত হয় এইসব সিন্ডিকেট নামধারীরা এতো সাহস, স্পর্ধা, সুযোগ পায় কোথা হইতে? এইসব প্রশ্ন যে এখন কেবলই সঞ্চালিত হইতেছে তাহা নহে বরং সংক্ষুব্ধ মনোভাব পুঞ্জীভূত হইতেছে যে, সরকারেরই দুর্নীতিবাজ মন্ত্রক অথবা মহলের সাথে ভাগাভাগির আপোসরফার পরিণামেই এই সিন্ডিকেট প্রক্রিয়া বহাল তবিয়তে চলিতেছে। সেই কারণেই মীরজাফর বাহিনীর ন্যায় সরকারের গোটা বাহিনীকেই নির্বাক ও নিষ্ক্রিয় করিয়া রাখা হইতেছে। ক্ষতির ক্ষতি যাহা হইতেছে; অথবা ‘মরার উপর খড়ার ঘা’- যে দশা হইতেছে; উহা তো নিরীহ জনগণের। তাহাদের তুষ্টার্থে সরকার এখন ভিন দেশ হইতে আমদানি করিবার সুযোগ করিয়া দিয়া; উহাকেই সিন্ডিকেট ভাঙ্গিবার চরম ব্যবস্থা হিসেবে প্রকাশ করিয়া আত্মপ্রসাদের ঢেকুর তুলিতেছে। শুধু সিন্ডিকেটই নয়, আমদানিকারকদের হইতেও একটা বড় অঙ্কের কমিশন প্রাপ্তি ইহার আরেকটি কারণ বটে।

স্মরণ করা যাইতে পারে কিছুদিন পূর্বে এই আলুর দেশেরও সরকার সিন্ডিকেট ভাঙ্গিবার বাহানা দিয়া আলু আমদানি করিবার অনুমতি দিয়াছিল। আর তাহার পরে সেই আলু পচিয়াছে এবং পচিতেছে ক্ষেত হইতে হিমাগার পর্যন্ত সবখানে। বলাবাহুল্য, সরকার যেভাবে চলে তাহাকে ‘চিলে কান নিয়াছে’ বলিয়া তাহার পেছনে ছোটার মতোই। দূরদর্শীতা, প্রজ্ঞতা, সততা সরকারকে এখনোও অবধি পরিচালিত করিতে পারে নাই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়াছে, গত পহেলা নভেম্বর এবং ২রা নভেম্বর মেসার্স কেএমআই ইন্টারন্যাশনাল ও বিজয় ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে দুইটি কোম্পানিকে এক কোটি পিস করিয়া মোট দুই কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়।

বলাবাহুল্য, সরকারের এই ধরনের অদূরদর্শী এবং খামখেয়ালী সিদ্ধান্ত সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ভীষণভাবে হতাশ করিয়াছে। বর্তমানে ডিমের বাজার শুধু সি'তিশীল রহিয়াছে বলিলে ভুল হইবে। কেননা মূল্য এতোটাই হ্রাস পাইয়াছে যে, সাধারণ খামারিরা তাহাদের উৎপাদন খরচের টাকাটাও ঘরে তুলিতে পারিতেছে না। পাইকারি বাজারে এখন ডিম বিক্রি হইতেছে মাত্র ৪.৮০ টাকা হইতে ৪.৯০ টাকায়। যেখানে উৎপাদন খরচ পড়ে সাড়ে ৫ টাকা।

অর্থাৎ প্রতিদিন খামারিকে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনিতে হইতেছে। এহেন পরিসি'তিতে বিদেশ হইতে ডিম আমদানির সরকারি সিদ্ধান্ত দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে। উল্লেখ্য, পরিকল্পনা কমিশনের একটি সমীক্ষা হইতে জানা গেছে, ২০১১ সালে ডিমের চাহিদা হইতেছে ৭ শত ২০ কোটি পিস। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হইবে ৬ শত ৮৩ কোটি পিস। আগামী বছর ডিমের ঘাটতি দাঁড়াইবে প্রায় ৮২ কোটি পিস।

প্রসঙ্গত বলিতে হয় বিদেশীদের স্বার্থ সরকারের দ্বারা পুরাটাই চরিতার্থ হইয়াছে। বার্ড ফ্লু’র নামে এই দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে ধ্বংস করা হইয়াছে। ধ্বংস করা হইয়াছে পঞ্চাশ হাজার পোল্ট্রি শিল্প। অথচ ঐসব পোল্ট্রি শিল্প চালু থাকিলে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা করিলে প্রয়োজনের পুরাটাই এই দেশেই উৎপাদন হইতে পারিতো। কিন্তু বিগত সরকারের ভুলপথে চলিবার কারণেই আজকে এতো কোটি কোটি ডিম বিদেশ হইতে আমদানি করিতে হইতেছে।

বলিবার অপেক্ষা রাখে না যে, যে কোনো সরকারেরই উচিত অতীত সরকারের ভুলপথে চলিবার পরিণাম হইতে শিক্ষা লাভ করা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেডের ও রানার কাপ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা গত পরশু প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে সাক্ষাৎ করিতে গেলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুবসমাজকে বদভ্যাস ও মাদকাসক্তি রক্ষায় খেলাধুলার প্রসার ঘটাইতে হবে। ” বলাবাহুল্য, কে না জানে খেলোয়াড়রাও এখন আশঙ্কাজনক হারে মাদকাসক্ত হয়ে পড়িয়াছে। এমনকি কথিত বিশ্বকৃতি ফুটবল খেলোয়াড়দের মাঝেও এই প্রবণতার কমতি নাই। কথিত জনপ্রিয় বিশ্বকাপ ফুটবলার ম্যারাডোনা পর্যন্ত মাদকের কারণেই বহিষ্কৃত হইয়াছিল।

ইহা ছাড়া বেইজিং অলিম্পিকে রৌপ্য জয়ী, ইউক্রেনের ল্যুডমিলা ব্লনস্কার, জার্মান প্রতিযোগী ক্রিস্টিয়ান আলমাস, ফ্রান্সের ফুটবল স্ট্রাইকার নিকোলাস আনেলকা, যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস খেলোয়াড় ওয়েইন ওডেসনিকসহ আরো অনেক বিশ্বমানের খেলোয়াড় চরম মাদকাসক্ত বলিয়া ধরা পড়িয়াছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.