আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজ্ঞানের খাতা- ৯: পটেটো চিপস আবিষ্কার।

বুদ্ধিজীবী হতে ডিগ্রী লাগেনা। লেখার খাতা খুলে বসেছিলাম বিজ্ঞানের বিখ্যাত আবিষ্কারের কথাগুলো লিখে রাখার জন্য। সেখানে পটেটো চিপসের আবিষ্কার কি লেখার মত কোন বিষয়! হঠাৎ মনে হলো কোন আবিষ্কার ছোট নয়। নাট-বোল্ট স্ক্রু আবিষ্কার হয়েছিলো বলে আজ আমরা বিশাল কাঠামো স্বাচ্ছন্দে দাড় করাতে পারছি। আমার আজকের বিষয় মানুষ প্রথম কিভাবে পটেটো চিপসের সন্ধান পেলো।

বেশী বেশী আলু খান, ভাতের উপর চাপ কমান। আলু বাঙালী জীবনের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে আছে। আলু আমাদের মাছের বিকল্প, মাংসের বিকল্প, নিরামিশে মিলেমিশে আছে। ঝালে, ঝোলে, ভাজিতে কোথায় আলুর ব্যবহার নেই। পৃথিবীতে চালের পর দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য শষ্য হচ্ছে আলু।

আলু থেকেই তৈরী হয় পটেটো চিপস। আপনি বলতে পারেন, দ্যাখো গাধাটা বলে কি? পটেটো চিপস আলু থেকে হবে নাতো কি ধানের খড় থেকে হবে! বাংলাদেশে কয়েকজাতের আলু পাওয়া যায়। যথাঃ- গোল আলু, মিষ্টি আলু, শাক আলু, মেটে আলু। সাদা গোল আলু থেকে তৈরী হয় পটেটো চিপস। ১৭০০ সালের দিলে ফ্রান্সে মোটা করে কাটা আলু ভাজা বেশ জনপ্রিয় হয়।

ফ্রান্সে তখন আমেরিকার রাষ্ট্রদূত থমাস জেফারসন, তিনি ফেন্স ফ্রাই এর প্রেমে পড়ে যান। দেশে ফেরার সময়ে তিনি ফ্রেন্স ফ্রাই এর রেসিপি বা প্রস্তুত প্রণালী সাথে করে নিয়ে যান। মন্টিসেল্লোর অতিথিদের তিনি ফ্রেন্স ফ্রাই খাইয়ে মুগ্ধ করেন। এরপর পুরো আমেরিকায় ফ্রেন্স ফ্রাই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ১৮৫৩ সালের বসন্তের এক সন্ধ্যা।

নিউ ইয়র্কের সারাগোটা স্প্রিংসের অভিজাত রিসোর্টগুলোতে পর্যটকের উপচে পড়া ভীড়। মুন লেক লজ রেস্টুর্যারন্টে ডিনারের টেবিলে একজন গেস্ট ফ্রেন্স ফ্রাই এর টুকরা অতিরিক্ত পুরো বলে অভিযোগ করে অর্ডার বাতিল করেন। রেস্তোরায় তখন শেফের দ্বায়িত্বে ছিলে জর্জ ক্রাম নামের একজন নেটিভ আমেরিকান। ক্রাম আরো পাতলা করে কেটে ভেজে ফ্রেন্স ফ্রাই তৈরী করে আনলেন। কিন্তু তাতেও সেই গেস্টের মন ভরলো না।

সে ফিরিয়ে দিলো। ক্রাম কিচেনে ফিরে গেলো। যতটা সম্ভব পাতলা করে আলুর স্লাইস কাটলো। তারপর সেটা ভেজে তাতে লবন ছিটিয়ে দিলো। এত পাতলা করলো যাতে গেস্ট ফর্ক দিয়ে এটা তুলতে না পারে।

তাতে হিতে বিপরীত হলো। গেস্ট এই নতুন আইটেম খুব পছন্দ করলো এবং পরের দিন আবার অর্ডার দিলো এই বিশেষ আলু ভাজা খাওয়ার জন্য। অনেক অনুরোধ আসতে থাকলো ক্রামের পটেটো চিপসের জন্য। এরপর রেস্তোরার মেনু কার্ডে সারাগোটা চিপস বলে স্পেশাল একটা আইটেম যুক্ত হলো । [img|] Click This Link ১৮৬০ সালে ক্রাম সারাগোটা লেকের কাছেই মাল্টা এভিনিউয়ে তার নিজের রেস্তোরা চালু করলেন।

তখনকার সময়ের বিত্তশালী ব্যক্তি বর্গ যেমন উইলিয়াম ভ্যান্ডারবিল্ট, কর্নেলিয়াস ভ্যান্ডারবিল্ট, জয় গোল্ড, হেনরি হিলটন ছিলো তার নিয়মিত খদ্দের। ত্রিশ বছর রেস্তোরা চালানোর পর ১৮৯০ সালে রেস্টোরাটি বন্ধ করে দেন। ৯২ বছর বয়সে ১৯১৪ সালে জর্জ ক্রাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজকের দিনে আমরা কুড়কুড়ে মুড়মুড়ে প্রান পটেটো চিপস খাচ্ছি অথচ জর্জ ক্রামের নাম আমরা কজনই বা জানি। সময়ের নায়কেরা এভাবেই বিস্মৃত হয়ে যায়।

১৮৯৫ সালে ক্লিভল্যান্ডের উইলিয়াম ট্যাপেনডন প্রথম বাসায় পটেটো চিপস তৈরী করে পার্শ্ববর্তী মুদি দোকানগুলোতে বিক্রির জন্য সরবরাহ করতেন। তার বাসাতেই তৈরী হয় পৃথিবীর প্রথম পটেটো ফ্যাক্টরি। ১৮৫৩ সালে জর্জ ক্রামের হাতে আবিষ্কৃত হওয়া পটেটো চিপস এখনো আমেরিকানদের প্রিয় স্ন্যাকস। অতলান্তিকের জলরাশি পেরিয়ে পটেটো চিপস এখন বাঙালী শিশু কিশোরের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। আপনি কি কখনো পটেটো চিপস খেয়েছেন? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.