আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজ্ঞানের গল্প



মূল : আজিজ নিছিন (তুর্কী) আরবী থেকে অনুবাদ : ফায়সাল বিন খালিদ কফির দোকানে একজন লোক ঢুকলেন। সবাই তার দিকে তাকালো। কেউ ছালাম-মারহাবা কিছুই বলল না। তবে একজন পানি পানে মগ্ন উটের মত মাথা নিচু করে রেখেই তাকে ছালাম দিল : -মারহাবা হামিদ আগা। -মারহাবা।

-ঘটনা কি রশি ছেড়া সাড়ের মত হাপাচ্ছ যে ! হামিদ আগা সেই বুড়োর দিকে ফিরে বলল : -শাইশ আলী ! আল-হামদুল্লিাহ, সেই অভিশপ্ত জিনিসটা থেকে রেহাই পেলাম। খোদা তোমার কোটি কোটি শুকরিয়া !! -তাই নাকি ? মারহাবা, মারহাবা !! মনে হচ্ছে ব্যাংকের ঋণ শোধ করে দিয়েছ। -আরে ধুরো... ব্যাংকের ঋণ নিয়ে কে এত মাথা ঘামায় ? ট্রাক্টর নামের সেই লাশটা খালাশ করে এলাম... বুড়োদের অর্ধঘুমন্তের চোখের মত চোখগুলো পুরোপুরি খুলে গেল, নুয়ে থাকা মাথাগুলো সোজা হয়ে গেল। সবাই নড়ে চড়ে বসল। অনেকে বেতের চেয়ারগুলো টেনে নিয়ে হামিদ আগার পাশে গিয়ে বসল।

-তাই নাকি !! -পুরাপুরি বেঁচে গেছ ? -খুলে বল হামিদ আগা। -হা.. পুরোপুরি বেঁচে গেছি। খোদা তোমার লাখো শুকরিয়া.. আমাকে এই পর্যন্ত বাঁচায়া রাখছ। সবার কৌতুহল তেতে উঠলো। সবাই চেয়ার টেনে হামিদ আগার আরো কাছে গিয়ে বসল।

- সে অনেক লম্বা কাহিনী... আমার ছেলে যখন প্রেকটিক্যাল শেষ করে বাড়ি ফিরে এল তখন একদিন সে আমাকে বলল ‘বাবা এর মধ্যে তো আমি গাড়ি চালানো শিখেছি। এখন আমরা কি একটা ট্রাক্টোর কিনতে পারি না ?’ আমার মেয়ে আর জামাইকে তো তোমরা জান। দুই জনই শহরে শিকতা করে। সেই সময় গ্রীস্মের ছুটিতে তারাও গ্রামে বেড়াতে আসছিল। জামাই ও মেয়েও উঠে পড়ে লাগল ‘বাবা ট্রাক্টর কিনে ফেল’।

আমি তাকে বললাম ‘কি দরকার মা ! সাড় দুটো দিয়েই তো আমাদের বেশ চলে যাচ্ছে’। তারপর কি হল জান ? হায় খোদা !.. তারা আমাকে গাঁইয়া এবং অনাধুনিক ভাবতে শুরু করল। এমনকি আমার মেয়ে কেলেন্ডারের একটা পাতা ছিড়ে এনে বলল ‘দেখ বাবা এখন ১৯৫৫ সাল চলছে। তার মানে হচ্ছে আমরা বাস করছি দুই হাজার শতকে। বুঝতে পারছ ?’ জামাই তো প্রত্যেক বেলা খাবারের পর রীতিমত বক্তৃতা দিতে লাগল ‘আমরা বাস করছি যন্ত্রের যুগে।

এই যুগে সাড় দিয়ে জমি চাষ করা রীতিমত অপরাধ’। আমার ছেলে বিস্তর হিশাব নিকাশ করে বলল ‘দেখ বাবা যে জমিটা সাড় দিয়ে নিড়াতে তোমার এক মাস লাগবে, ট্রাক্টর দিয়ে আমি তা অনায়াসে এক সাপ্তায় নিড়িয়ে দিব। তাপর দেখবে তোমার হাতে চুমো দেওয়ার লোকের অভাব হবে না। তারা অনেকে তাদের জামি নিড়ানোর জন্য ট্রাক্টর ভাড়া চাইবে। তাতে আমার মনে হয় এক বছরেই আমরা ট্রাক্টরের দাম তুলে ফেলতে পারব।

’ এইভাবে সবাই মিলে তারা আমার উপর হামলে পড়ল। ছেলে চুপ করলে মেয়ে শুরু করে, তার শেষ হলে তার জামাই বক্তৃতা আরাম্ভ করে। ট্রাক্টরের সপ েনানা যুক্তি দিয়ে তারা আমাকে প্রায় কাবু কলে ফেলল। তারা বলল, সাড় তো এক মস্ত সোসা ও পেটুক প্রাণী। কাজ করুক আর না করুক তার খাবার চাই।

শীত-গ্রীস্ম সবসময় খাবে। কিন্তু ট্রাক্টরকে দুই কাপ বেনজিন পান করাও তাতেই হবে। জমি উল্টে ফেলবে। আর কিছু খাওয়াতে হবে না। এভাবে আমি একেবারে নি:সঙ্গ হয়ে গেলাম।

দেখলাম আমি যাই বলি তা তাদের কাছে পানসা মনে হয়, মুখে রুচে না। তারা বলল, সাড়ের অসুখ বিসুখ হয়, মরে যায়, বুড়ো, দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু লোহার ট্রাক্টর কখনো বুড়ো হয় না, অসুস্থ বা কান্ত হয় না। কান্তিহীনভাবে রাত দিন কাজ করে যেতে পারে... আমাকে সবচেয়ে বেশী অবাক করল যে ব্যাপারটা তা হচ্ছে, আমার বুড়িও তাদের দলে যোগ দিল এবং ট্রাক্টরের সপ েতার মুখ থেকে বৃষ্টির মত কথা ঝড়তে লাগল : ‘এভাবে আর কত দিন চালাবে ? মুছা শাইশ, মুহাম্মাদ আগা... সবাই তো ট্রাক্টোর কিনে ফেলেছে... দিন-রাত ট্রক্টরের হামদ-নাত শুনতে শুনতে আমার মাথা ধরে গেল। শুনে গেলাম।

বেশী কিছু বললাম না। কিন্তু খোদার কছম আমার বুড়ীও যে এভাবে ট্রাক্টরের প ে চলে যাবে সেটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। ‘মিহদারও তো একটা ট্রক্টর কিনল, এভাবে ঘাড়ে হাত পেচায়া রাইখা কি ভাবতাছ ? এমনকি মিমিশ হুসাইন তো নাকি ট্রাক্টর কিনেছে। ’ বিশ্বাস কর, কলজায় খুব লাগল.. খোদার কছম ! -তারপর কি হল হামিদ আগা ? -খোদার কছম সব কিছুর পরও ট্রাক্টর কিনার আমার কোন ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু গ্রামের মাষ্টার মশাই আমাকে উৎসাহিত ও আশ্বস্ত করে বললেন ‘আরে হামিদ আগা, একটা ট্রাক্টর আশিটা ঘোড়ার শক্তি রাখে... জানেন এর মানে কি ? এর মানে হচ্ছে তা পাহাড় উপড়ে এবং পাথর পিশে ফেলতে সম এবং তা অনুর্বর একটা জমিকে নিমিষে সত্যিকার জান্নাতী বাগিচা বানিয়ে ফেলতে পারে।

’ এই সব বকবক, ঘ্যাঙনর ঘ্যাঙনর শুনতে শুনতে পরাণ আমার নাকের আগায় এসে ঠেকল। বাধ্য হয়ে সম্মত হলাম। বললাম ঠিক আছে তাহলে তাই হোক... আল্লাহর হাওলা, গ্রামের সবার যখন ট্রাক্টর আছে এমনকি মিমিশ হুসাইনও যখন ট্রক্টরের মালিক তখন আমি আর একা পড়ে থাকব কেন ? তাছাড়া ব্যাংকগুলোও নাকি এর জন্য ঋণ দিচ্ছে ... তারা বলল, ছোট, মাঝারি এবং বড় এই তিন মাপের ট্রাক্টর পাওয়া যাচ্ছে। ছেলে বড়টা কিনার প। ে মেয়ে বলল ‘বাবা কিনছই যখন তখন বড়টাই কিন’ আমার পণ্ডিত জামাই কুয়োতে বালতি ফেললেন : ‘ট্রাক্টর কিন্তু মানুষ জীবনে একটাই কিনে’।

এরপর বুড়ী আর চুপ থাকে কিভাবে। সে বলল ‘তুমি কি গ্রামের মানুষের সামনে আমাদের ছোট করতে চাও ? যে ভাবেই হোক আমি বড় ট্রাক্টর চাই’। অবশেষে বড়টা কিনারই সিদ্ধান্ত হল এবং সবাই মিলে গেলাম ট্রাক্টর কিনতে। দোকানের ম্যানেজারটা ছিল খুব ভাল লোক। সে আমাদের জিজ্ঞাসা করল, আপনাদের জমি কতটুকো ? আমি বললাম আশি দোনাম।

সে বলল, তাহলে আপনাদের সবচেয়ে ছোট সাইজেরটা নিলেই হবে, বরং হয়ে আরো অনেক বেশী হবে। এই ট্রাক্টর আট’শ দোনাম জমি চাষ করত সম’। কিন্তু হায় খোদা !! বিশ্বাস কর আমি অনেক চেষ্টা করেও আমার ‘দল’টাকে রাজি করাতে পারলাম না। তারা বলল ‘ওর কথা বিশ্বাস কর না, ও আমাদের ঠকাতে চাইছে। ’ অগত্যা বললাম, ঠিক আছে যদি তাই হয় তাহলে বড়টাই কিনা হোক।

ম্যানেজার বললেন, ঠিক আছে এখন চার হাজার লেরা নগদ দিতে হবে। বাকি টুকো তিন দফা কিস্তিতে পরিশোধ করবেন। ফিরে এসে টাকা জোগারের ধান্ধা শুরু করলাম। লোকে এখন আমাকে ‘হামিদ আগা’ বলে। আমার কাছে এই পরিমাণ টাকা নেই, এই কথা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না জানতাম।

তাই কাউকে বলিও নাই। সাড় দুইটা নিয়ে গেলাম বাজারে। উহহহ, হায় খোদা !! তোমরা কৃষক, জানই কেমন লাগার কথা। আমার কলিজা পুড়ে যাচ্ছিল। ছাই রঙ্গের সাড়টা পানি ভরা চোখে আমার দিকে তাকায়া রইল।

মাইট্টা সাড়টা আমার হাত চাটতে লাগল... হায় খোদা ! যাইহোক, সাড় দুইটা তিন হাজার লেরায় বেঁচে দিলাম। বাকি এক হাজার ঋণ নিলাম ব্যাংক থেকে। ওয়াদা মত তারা ঋণ দিয়ে দিল খুব সহজেই। দোকানে গিয়ে পাহাড় সম বিশাল এক ট্রাক্টর কিনে আনলাম। তারা বলেছিল দুই কাপ বেনজিনেই হবে।

কিন্তু আমার ছেলে পুরো ট্যাংকি পুরে তেল নিল। নীল রঙ্গ দিয়ে ট্রাক্টরের সামনে চোখ আঁকল, সতর্ক বাণী লিখল এবং বুক ফুলিয়ে চালকের আসনে গিয়ে বসল। আমরা সবাই পিছনে চড়ে বললাম, আল্লাহু আকবর ... সন্ধার সময় ট্রাক্টরের চড়ে আমরা গ্রামে পৌঁছলাম। নির্বিঘ্নে ও সগর্বে ট্রাক্টর নিয়ে সারা গ্রাম একটা চক্কর দিলাম। গ্রামের মানুষ জানতে পারল আমরা ট্রাক্টর কিনেছি এবং ট্রাক্টর কিনার ধুম পড়ে গেল গ্রামে।

সবাই ট্রাক্টর কিনতে লাগল এমনকি তিন দোনাম জমির মালিক ইউসুফও, নানা জনের কাছ থেকে ধার নিয়ে মাহাজনদের কাছ থেকে ফসল বিক্রির অগ্রিম টাকা নিয়ে, একটা ট্রাক্টর কিনে আনল। এরপর থেকে সন্ধা হলেই দেখা যেত, জমি থেকে ঝাকে ঝাকে ট্রাক্টর ছুটে আসছে গ্রামের দিকে। সন্দেহ নেই ট্রাক্টর চালনায় আমার ছেলের উস্তাদি দেখে গ্রাম সুদ্ধ মানুষ মুগ্ধ হয়ে গেল। বুক ফুলিয়ে চালকের আসনে বসে ও যখন ট্রাক্টর চালাত তখন তাকে দিগ্বিজয়ী ঘোড়সাওয়ারের মত লাগত। একবার তো ও বেশ কায়দা করে মিমিশের জমিতে পড়ে থাকা বড় একটা কাছিমকে ট্রাক্টরে ধাক্কা মেরে পথের নিয়ে আছড়ে ফেলল।

সবাই বাহ্‌বা বাহ্‌বা !! করে উঠল। আগের মত শনিবারে সবাই শহরতলির সিনেমা হলে সিনামা দেখতে যেতে লাগল। কিন্তু ট্রাক্টর কিনার পর সবাই ট্রাক্টরে চড়ে সিনামা দেখতে যেত। ছিনামা চলা কালে দেখা যেত হলের সামনে সাড়ি সাড়ি ট্রাক্টর দাঁড়িয়ে আছে। সিনামা শেষে গ্রামে ফিরার সময় শুরু হত ট্রাক্টর রেস এবং সেই প্রতিযোগিতায় আমার ছেলে বরাবর বেশ ওস্তাদি দেখিয়েছে।

উহ্‌ ও যখন মোছে তা’ দিয়ে চালকের আসনে গিয়ে বসত এবং সবাই ছাড়িয়ে ট্রাক্টর নিয়ে ভোঁ------ ছুট দিত সেই দৃশ্যটা যদি তোমারা দেখতে !! কিন্তু একদিন সিনামা দেখে ছুটাছুটি করে ফেরার সময় হতভাগা একটা ট্রাক্টর এসে আমাদেরটার উপর আছড়ে পড়ল এবং হঠাৎ বাতি নিভে গিয়ে ট্রাক্টরটা থেমে গেল। পায়ে হেটে আমরা বাড়ি ফিরলাম। পর দিন আমার ছেলে শহরে গেল। ট্রাক্টরের কি হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারলাম না। কিন্তু ফিরে এসে ছেলে বলল, তার একটা যন্ত্র ভেঙ্গে গেছে এবং সেটা শহরে পাওয়া যাচ্ছে না।

-তারপর কি হল হামিদ আগা ? -তাপর দুটি সাড় ভাড়া নিলাম এবং সাড় লাগিয়ে ট্রাক্টরকে শহরে নিয়ে গেলাম। সেখানে কাজ হল না। গেলাম পৌর অফিসে সেখানেও নেই ওই হতচ্ছড়া লোহার টুকরাটা। বললাম যতটাকাই লাগুক ওটার ব্যবস্থা করুন। কিন্তু কিছু করার নেই।

তোমরাই বল এটা কোন কথা হল ? ওত টুকোন একটা লোহার টুকরার জন্য পাহাড়ের মত এই ট্রাক্টরটা থেমে থাকবে ? ছেলে বলল, এর একটা সুরাহা করতেই হবে। সে ইস্তাম্বুল যাবে। ভাল কথা । কিন্তু গেল তো গেলই। তারপর অনেক দিন তার আর কোন খোঁজ নেই।

-তাপর কি হল ? -তারপর আর কি হবে। গ্রামের সবাই চাষ করতে লাগল আর আমারা হা করে তাকিয়ে থাকলাম। ছেলের ফেরার অপো করতে লাগলাম। হাতে টাকাও ছিল না যে সাড় কিনব। অগত্যা দুইটা সাড় ভাড়া করে চাষ শুরু করলাম।

অবশেষে একদিন ইস্তাম্বুল থেকে ছেলের চিঠি এল। সে জানাল যে, অনেক খোঁজাখুজির পর সে ওই লোহার টুকরাটা পেয়েছে। কিন্তু খোঁজাখুজি করতে করতেই তার সব পয়সা শেষ। তাই তার জন্য এক হাজার লেরা পাঠাতে হবে। ছুটে গেলাম ব্যংকে।

তারপর ছেলে ‘মিতলিকে’র (তুর্কী পয়সা) সমান একটা লোহার টুকরা নিয়ে ফিরে এল... হায় খোদা এতটুকোন একটা লোহার টুকরার জন্য এক হাজার লেরা দিলাম !! বহু ঘুড়াঘুড়ির পর একজন মিস্ত্রির সাথে বনিবনা হল এবং সে এসে ওই লোহার টুকরাটা ট্রাক্টরের গায়ে লাগানোর পর ট্রাক্টর আবার চলতে লাগল। আল-হামদুলিল্লাহ !! কিন্তু আল-হামদুলিল্লাহ বলে আর কি হবে। তত দিনে শীত এসে পড়েছে। এখন আর ট্রাক্টর দিয়ে কি করব। খালি গোয়াল ঘড়ে মাইট্টা সাড়টার স্থানে ট্রাক্টরটা বেঁধে রাখলাম।

এর মধ্যে ব্যাংকের সুদ এবং ট্রাক্টরের প্রথম কিস্তি আদায়ের সময় ঘনিয়ে এল। কি করার ? হাতে নগদ টাকা নাই, বেঁচার মতও কিছু নাই। হায়রে স্বাদের ট্রাক্টর !! এদিক সেদিক থেকে ধার নিয়ে এবং মহাজনদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে প্রথম কিস্তি শোধ করলাম। এরপর শীত গড়িয়ে গ্রীস্ম এল। ছেলেকে বললাম, চল বাবা ! তোমার ওস্তাদি কিছু দেখাও এবার।

চাষে নেমে পড়লাম। শুরুটা ভালই হল। কিন্তু একদিন েেতর মাঝখানে হঠাৎ ট্রাক্টরটা থেমে পড়ল। আবার কি হল এই হতভাগাটার ? কেউ বলতে পারে না। যোগাযোগ করলাম পৌর অফিসের সাথে।

বিশেষজ্ঞ এলেন এবং দেখেশোনে বললেন ‘দাঁত ভেঙ্গে গেছে’। বললাম ভাল কথা, লাগিয়ে দিন। সে বলল, এটা এখানে পাওয়া যায় না। আরে হারামি এটা কোন কথা হল ?!! তাপর সেই হারামী বিশেষজ্ঞটা কি বলল জান ? বলে, আপনারা আরেকটা ট্রাক্টর কিনে তার দাঁত খুলে এটাতে লাগিয়ে দিন.. ভাবতে পার ?? তবে এ বিপদ আমার একার ঘাড়ে পড়ে নাই। গ্রামের সবার প্রায় একই দশা।

গ্রামে গিয়ে দেখ, যেখানে তাকাবে দেখবে েেতর উপর পড়ে আছে একটা মরা ট্রাক্টর, লোহার লাশের স্তুপ। হায়রে আমার সাড়.. আমার ছাই-মাইট্টা সাড় !! বলতো সাড়ই ভাল ছিল না ? সারা দিন কাজ করত। কোন প্রতিবাদ করত না। কাম না থাকলে ওগুলোর সাথে আদর-সোহাগ করে ভালই সময় কাটাতাম। তাছাড়া সাড় বাইচা থাকলে তোমার উপকার করবে মরলেও করবে।

কিন্তু ট্রাক্টর তো আর সাড় নয় যে, সময় ঘনিয়ে আসছে টের পেলে জবে করে দিয়ে মাংস খাবে, চামড়া বেঁচে দিবে। এর মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তি আদায়ের সময় এল। নিরুপায় হয়ে অফিসে গিয়ে বললাম আমি এই ট্রাক্টর বেঁচে দিতে চাই। এই কথা শুনে তারা েেপ গেল। বলল, আমরা কি পুরোনো-নষ্ট ট্রাক্টর বেঁচা কেনার কারবার করি ?? হায় খোদা !! লোক মুখে একজন ট্রাক্টর মিস্ত্রী খবর জানতে পারলাম।

ছেলেকে বললাম, খচ্চরের বাচ্চা নেহ তোর ট্রাক্টরের স্বাদ মিটা। ছেলে আযনায় সেই মিস্ত্রীর কাছে গেল। মিস্ত্রী নাকি হেসে বলল, ‘রুগী না দেখেই কি ব্যাবস্থাপত্র দিব ?’ ছেলে ফিরে এসে দুই সাড়ের ঘাড়ে চাপিয়ে রুগী নিয়ে আযনার উদ্দেশ্যে রওনা হল। পনরো দিন পর ট্রাক্টর আযনায় গিয়ে পৌঁছল। মিস্ত্রী পরীা করে বলল, ভেতরে পাথরের কণা ঢুকে তার দাঁত ভেঙ্গে গেছে।

সাড়াতে পাঁচ শ’ লেরা লাগবে। ছেলে খবর পাঠাল। কি আর করার। দুই দোনাম জমি বেঁচে পাচ শ’ লেরা পাঠালাম ছেলের কাছে। সাড়িয়ে ট্রাক্টর নিয়ে ছেলে গ্রামে ফিরে এল।

সে দিন মেয়ে ও মেয়ে জামাই গ্রামে বেড়াতে আসছিল। আমি বললাম, হতভাগাটার জন্য তো অনেক টাকা গেল। চল আজ এটায় চড়ে সবাই মিলে সিনামা দেখে আসি। কিন্তু ছেলেকে সাবধান করে দিয়ে বললাম, গাঁধার বাচ্চা এটা কিন্তু রেসের ঘোড়া না। সাবধানে চালাবি।

কিন্তু কে শোনে কার কথা। সে লাফিয়ে ট্রাক্টরের পিঠে চড়ে জোড়ে স্টার্ট দিল। কিন্তু একটু দূর যাওয়ার পরই এক ধরনের ঘোৎ ঘোৎ শব্দ করে ট্রাক্টর থেমে গেল। ‘কি হল আবার ? গাধা কোথাকার তোকে বললাম না সাবধানে চালাতে। এটাকে কি ঘোড়া পাইছ ? এটা হইল মাতাল কাফের গো বানানো মেশিন... গাধা !!’ এভাবে আবার বসে গেল ট্রাক্টর।

অনেক চেষ্টা তদবির করেও তাকে ওঠানো গেল না। এই জায়গায় যদি আমার সেই ছাই রঙ্গা সাড়টা হত তাহলে এক হেই ওওও ডাকে ও ওঠে পহাড়া জমি মাথায় তুলে ফেলত। মেয়েকে বললাম, এখন কত সাল চলছে মা ? ১৯৫৫ ? জামাইকে বললাম, জামাই আমরা এখন কোন শতকে বাস করছি, দুই হাজার শতকে তাই না ? সাড়েরা কি দুই হাজার শতকে হিসাবটা জানে ? এখনও তো একটা সাড় এক আটি খর খেয়ে দিন-রাত কাজ করে যায়, জমি নিড়ায়, ধান-ফসলের গাড়ি টেনে নেয়। -তাপরপর কি ঘটল হামিদ আগা ? -তারপর আর কি হবে... তৃতীয় কিস্তি আদায়ের সময় হল এবং পানির দরে দশ দোনাম জমি বিক্রি করে দিলাম। এটা কোন কথা হল, আঙ্গুলের সমান একটা লোহার সোলা ভেঙ্গে যাবে আর তা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না ? হায়রে ট্রাক্টর !! জান এখন আমি েেত গেলে দেখি জায়গা জায়গায় লোহার সোলা, তামার পাত, লোহার টুকরা পড়ে আছে।

ভাল মত চাষ করা যায় না। খোদা রা করুক। কি যে হবে। লোক মুখে শোনলাম, নব নির্বাচিত ধাতব শিল্প মন্ত্রী আমাদের গ্রাম পরিদর্শনে আসছেন। তাকে গিয়ে বললাম ‘মন্ত্রি সাহেব এখন আমরা কি করব ? এটা কোন যুক্তির কথা যে, পয়সার সমান একটা লোহর টুকরা পাহাড় সম একটা ট্রাক্টরকে থামি দিবে, লাশ বানিয়ে েেত ফেলে রাখবে ?” -কি বললেন মন্ত্রী ? -অনেক কথা বললেন, যার বেশীর ভাগই আমি বুঝি নাই।

বললেন, আদিম সময়ে মানুষ ছিল পাথরের যুগে কিন্তু এখন মানুষ বাস করছে লোহার যুগে। মানে যন্ত্রের যুগে। যন্ত্র শিল্পের উন্নতি-অবনতি বিচার করেই একটা দেশের আধুনিকতা ও বিজ্ঞানসম্মততা বিচার করা হয়। আমি বললাম, কিন্তু এর নামই কি বিজ্ঞান ও আধুনিকতা ? আমাদের তেগুলোতে এসে দেখে যান, সব খানে পড়ে আছে রাশি রাশি ট্রাক্টরের লাশ। কেন ? দাত ভেঙ্গে গেছে, লোহার একটা টুকরা পাওয়া যাচ্ছে না ? এই সব যন্ত্রের যদি বিকল্প নাই থাকে তাহলে এই সব আমাদের দেশে আপনারা আনলেন কেন ? -তারপর মন্ত্রি কি বললেন ? -তিনি বললেন : ‘আমরা আমরিকার সাথে যোগাযোগ করেছি।

অচিরিই এই সব যন্ত্রাংশ এসে পৌছবে। আর কোন সমস্যা থাকবে না। তাছাড়া আপনারা দোয়া করবেন, আমরা নিজেরাই এই সব যন্ত্র নির্মাণের জন্য একটা ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠা করছি। আর কিছু দিন অপো করুন, যন্ত্রের বৃষ্টি নামবে। ’ আমি বললাম : আমরা কৃষক মানুষ বৃষ্টির জন্য অঠ


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.