"জীবনবোধ মানুষকে তার রূপ-রস-রঙে ভরে তোলে কানায় কানায়, জীবনকে দেখবার প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৃথিবীটাকে মোচড় দিয়ে বদলে দিতে চায়" ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে কোচিং ব্যবসায়ের অন্যতম অগ্রণী Saifur's-এর একটি বিজ্ঞাপন, যেখানে এই প্রতিষ্ঠানে Spoken, phonetics, writing ইত্যাদি কোর্স করার পর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পাত্রের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা দেখে তার কন্যা সন্তানকে বিয়ে করার বিষয়ে এক ব্যক্তির জবানে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে। এই ধরনের বিকারগ্রস্ত কিন্তু মনস্তাত্ত্বিকভাবে খুবই কার্যকর চটকদার বিজ্ঞাপনগুলোর বিষয়ে সচেতন দৃষ্টি ফেরানো প্রয়োজন। এ জাতীয় নিম্ন শ্রেণীর বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে Saifur's প্রায় এককভাবে অগ্রণী ভূমিকায় আছে। বর্তমানে আবার নতুন উপদ্রব হিসেবে শুরু হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া (ইউএসএ) নামক এক ভূঁইফোঁড় তথাকথিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রচার-সন্ত্রাস। এ বিষয়ে তাদের প্রচারণাও অনেকটা Saifur's-এর মতোই।
ঔপনিবেশিক আবর্জনায় পূর্ণ চিন্তাভাবনাকে পুঁজি করে চালানো হচ্ছে অবাধ বাণিজ্য। এবং লক্ষণীয় যে এখানে ব্যবসায়টা সম্পূর্ণভাবে চলছে শিক্ষার একটি মাধ্যমের পণ্যায়ন ঘটিয়ে। Saifur's একটি কোচিং সেন্টার এবং ইউএসএ অ্যাকাডেমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও উভয়টিই শিক্ষার পণ্যায়নের ধারণাটাকে জোরদার করার জন্যই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বহুজাতিক প্রসাধনী দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন বর্ণবাদী চিন্তাকাঠামোর ওপর ভর করে তাদের পণ্যের প্রসার ঘটায় উপমহাদেশে, খাদ্য ও শিশু-খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমনিভাবে বিভ্রান্তিকর এবং অতিরঞ্জিত তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মনোজগতে প্রভুত্ব এবং ব্র্যান্ড-বিশ্বস্ততার একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করে, ছবির এই প্রতিষ্ঠানটিও তেমনি চরম ছ্যাঁচড়ামিপূর্ণ কথাবার্তার মাধ্যমে সস্তা জনপ্রিয়তার ওপর দাঁড়িয়ে ঘটিয়ে চলেছে তাদের 'পণ্য' গ্রাহকের বিস্তৃতি।
বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার এবং এইসব বিজ্ঞাপনে কী ধরনের ভাষা ও তথ্য ব্যবহৃত হবে সে বিষয়ে সরকারের কোনো নীতিমালা নেই।
বোধহয় এ জাতীয় কোনো কিছুর অস্তিত্বের প্রয়োজনও তারা অনুভব করে না। এই সুযোগে Fair & Lovely, Horlicks, Complan, Saifur's-এর মতো আরো অজস্র দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদক বিজ্ঞাপনের বাতাবরণে ধাপ্পাবাজিপূর্ণ, মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, বর্ণবাদী, বস্তাপঁচা, ঘিলুপঁচা বক্তব্য এবং ধারণার প্রচার ও প্রসার ঘটিয়ে যাচ্ছে অনেক দিন যাবত। বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক মহলেও এ বিষয়ে কোনো কথাবার্তা অথবা আলোচনা হতে শোনা যায় না। এসব বিষয়ে ছুঁৎমার্গ বজায় রেখে তারা স্বকীয় দুর্গের অভ্যন্তরে আভিজাত্যের শিরস্ত্রাণ পরিধান করে থাকেন। এই বিজ্ঞাপনগুলোতে ব্যবহৃত বক্তব্য এবং ভাষা যতোই চটুল, কপট, অশালীন অথবা বর্ণবিদ্বেষপূর্ণ হোক না কেন আমাদের শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণী সমাজের অভিভাবকদের এক রকম প্রশ্রয় এবং আদিখ্যেতা এগুলোকে কেন্দ্র করে লক্ষ করা যায়।
যেহেতু পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পণ্যায়নের সর্বোচ্চকরণের মধ্য দিয়েই বস্তু বা ধারণার সার্থকতা নির্ণীত হয় সেহেতু এই ঘৃণ্য প্রচারণার স্বরূপ উপলব্ধির প্রচেষ্টা অনুপস্থিত নাগরিক সমাজে। কিন্তু স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হতে সক্ষম প্রগতিশীল কর্মীদের মধ্যে এ বিষয়ে স্থবিরতা কাম্য নয়। জ্বালাও-পোড়াও ধরনের আন্দোলন নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিকভাবে এগুলো যেমন নিজেদের বিনষ্ট অধিকারে নিয়ে যাচ্ছে চেতনার অনাবাদি জমিন, তার বিপরীতে পাল্টা মতাদর্শিক লড়াই চালু হওয়া আজ নিতান্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে এ সমাজে। এই লড়াইয়ের মশাল নিয়ে এগিয়ে আসার দাবি প্রগতিশীল তরুণ সমাজের কাছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।