সোনার হরিণের খোঁজে
দৌড় দৌড় দৌড়
খোঁজ খোঁজ খোঁজ
সেই বাল্যকাল থেকে ছুটে বেড়াচ্ছি আমরা কোন এক সোনার হরিণের খোঁজে। শিশুকাল পার হয় কৈশোর আসে নতুন সোনার হরিণ চোখেতে ভাসে দৌড়োই তার পিছনে পিছনে। কৈশোর পার হয়ে আসে যৌবন সোনার হরিণগুলো যেন চোখের সামনে দিয়ে ধাপাধাপি করে ছোটে। যৌবনের উন্মাদনায় ছুটে চলি সোনার হরিণের পিছে। প্রৌঢ়ত্ব আসে জীবনে, সোনার হরিণের ধরা যেন কষ্ট হয়ে ওঠে, থেমে থাকে না ছুটে চলা; কি যেন এক নেশার ঘোরে অধরা সোনার ওই হরিণের পিছে।
বার্ধক্য এসে দরজায় কড়া নাড়ে, মৃত্যু এসে দাঁড়ায় সমুখে তবু যেন ধরতে হবে সোনার হরিণটিরে একবারে জন্য হলেও। ছোটা শেষ হয় সাড়ে তিন হাত মাটির তলায় এসে।
মানুষ আমরা ছুটে চলেছি কোন এক সোনার হরিণের পিছে জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু অবধি তবু না পারিলাম তারে ধরিতে। আসলে সোনার হরিণ ধরা যায় না, সে থাকে আমাদের মনের ভেতর কোন এক গহীন কোনে ঘর বেঁধে। মানুষের শুধু শুধুই ছুটে চলা সোনার হরিণের পিছে।
এক একজনের সোনার হরিণ এক এক রকম হয়ে থাকে –
কারো সোনার হরিণ দুবেলা দুমুঠো ভাতের অন্বেষণে, যেন উদরপূর্তি করে খেতে পারে পরিবার পরিজন সহ নিজে।
যারা কষ্টে থাকে ক্রমাগত তাদের সোনার হরিণ কষ্ট থেকে কোনভাবে ছুটে পালিয়ে বের হয়ে যেতে, কষ্টকে পিছে ফেলে।
যারা দুঃখে কাতর ক্রমাগত সুখ নামক সোনার হরিণের পিছে ছোটে, যেন ধরে ফেলবে রেসের দৌড়ে সুখ নামক সোনার হরিণটিরে।
ধনী মানুষ স্বপ্ন দেখে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার পাহাড়, রাশি রাশি গাড়ী বাড়ির লাইন লেগে থাকা তার চারিদিক ঘিরে।
প্রেমিক নামক রেসের ঘোড়া ছোটে সোনার হরিণ নামক এক প্রেমিকার ভালোবাসার ডাকে।
খেলা পাগল দর্শক ছোটে খেলা দেখতে টিকিট নামক এক সোনার হরিণের পিছে, একশ টাকার টিকিট কিনে পাঁচ হাজার টাকা মূল্যে।
সোনার হরিণ যেন এক স্বপ্নে দেখা রেসের ঘোড়া, এক একজন এক একদিকে ছোটে তার স্বপ্নের সোনার হরিণের পিছু পিছু তাকে একবার ছুতে কিংবা ধরে নিজের করে নিতে।
লেখকদের সোনার হরিণ তাঁদের স্বপ্ন দেখায় অন্যরকম করে -
গল্পকার স্বপ্ন দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা শরৎ চন্দ্রের মত কোন একটি শ্রেষ্ঠ গল্প লিখবে বলে;
ঔপন্যাসিক স্বপ্ন দেখে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের “নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে”, “অলৌকিক জলযান”, “ঈশ্বরের বাগান” এর মত এক মহা ট্রিলজি লেখবে বলে;
ছড়াকার স্বপ্ন দেখে সুকুমার রায়ের মত বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ছড়াকার হতে;
নব্য কবির স্বপ্ন থাকে জীবনানন্দ দাস, সুকান্ত, কাজী নজরুল কিংবা পল্লী কবি জসিমউদ্দিন হতে;
প্রবন্ধ লেখক স্বপ্ন দেখে একটি প্রবন্ধের লেখনীতে মানুষের মনের যত কালিমা আর পাপগুলি সব ধুয়ে ফেলে দিয়ে নর্দমার জলে মানুষ নামক দানবকে মানুষ করে দিতে।
নিরাকার ঈশ্বর যেন কোন এক দূর আকাশে বসে হাসে, মানবের ছোটাছুটি দেখে যায় নিঃস্পৃহ চোখে। যেন সোনার হরিণের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন তিনি সমগ্র পৃথিবী জুড়ে, স্মিত হাসি মুখে দেখে যান মানুষ নামক তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির ছুটে চলা সোনার হরিণের পিছে।
বোকা মানুষগুলো বুঝতে পারে না সোনার হরিণ ছড়িয়ে আছে তার আশেপাশে চারিদিকে, শুধু অদৃশ্য রূপে চড়ে বেড়ায় মানুষকে ধোঁকা দিতে। কিংবা সোনার হরিণ নামক কোন কিছুর অস্তিত্বই নেই কোথাও, সে আছে শুধু মানুষের কল্পনায়, স্বপ্নের ঘোরে মানুষ তাকে ধরতে চায়।
এইতো আমার সোনার হরিণ ধরতে আমি যাই
কাছে গিয়ে দেখি আমি সোনার হরিণ নাই
জন্ম থেকে ধরব বলে সোনার তীর ছুড়ি
শরবিদ্ধ সোনার হরিণ কোথায় গেল মরি
মানুষ হয়ে জন্ম আমার সোনার হরিণ চাই
কবরেতে গিয়ে বুঝি সোনার হরিণ নাই
হাত বাড়িয়ে চারিদিকে সোনার হরিণ খুঁজি
সোনার হরিণ বাস করে মনের ভেতর বুঝি।
অতৃপ্তির ডানা মেলা মানুষ যেন হতে চায় ইকারাস
অথচ তৃপ্তির ভেতরেই আছে সোনার হরিণের বসবাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।