লেখাটি শনিবার পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছে। সামুর পাঠকদের জন্য Copy Paste করা হলঃ
মানুষ এ পৃথিবীতে এত দুঃখ-কষ্টে থাকে যে, সে নিজেই তাই আবিষ্কার করেছে নানা রকম উৎসবের, পালা-পার্বণের। কথাটা আমার নয়, এক বিখ্যাত দার্শনিকের। মানুষের এ সামাজিক উৎসবের আবিষ্কার নাকি বিজ্ঞানীদের মহান সব আবিষ্কারের চেয়েও অনেক বড় আবিষ্কার। ঈদ কি সেই রকম একটি উৎসব?
আনন্দ ভাগাভাগি করলে তা দ্বিগুণ হয়।
ঈদের আনন্দ তো আমরা সবাই মিলে ভাগাভাগি করি, তাই সে আনন্দ দ্বিগুণ, তিন গুণ, চতুর্গুণ হয়ে আসে আমাদের কাছে প্রতি বছর।
কিন্তু আনন্দের আসল মানুষটাই যদি না থাকে, তাহলে একটা পরিবারের আনন্দ বহু গুণে বেড়ে উঠবে কীভাবে? সেরকম একটা মানুষকে খুব মিস করছি আমরা এবার ঈদে। যে এবার কোনো ঈদসংখ্যায় লেখেনি। যে কোনো চ্যানেলে নিজের নাটক পরিচালনা করেনি। যে তার দুই শিশুপুত্র নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে এবার ধানমন্ডির কোনো মসজিদে ঈদের জামাত পড়তে যাবে না।
সেই মানুষটা কখনো টিভির কোনো সাক্ষাত্কারে যেত না। একবার শুধু একটা ঈদের অনুুষ্ঠানে গিয়েছিল সম্ভবত সেটা জুয়েল আইচের কোনো ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠান ছিল বলেই...। সেখানে সে তার ছেলেবেলার ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একটা ঘটনা বলেছিল...।
‘... বাবা ঈদে তার মেয়েদের জন্য ফ্রক কিনে এনেছেন। কিন্তু ছেলে হুমায়ূনের জন্য আনেননি।
সেই বাবা ধনী ছিলেন না বলেই সম্ভব হয়নি সবার জন্য কেনা। তা ছাড়া তার মেয়েদের প্রতি তিনি একটু বেশি পক্ষপাতিত্ব ছিলেন। কিন্তু ছেলের মন খারাপ দেখে ঈদের আগের দিন রাতে আবার বেরোলেন। এবং ঈদের একটা লাল শার্টের কাপড় কিনে ফিরলেন। কাপড় কেনা হয়েছে বটে, কিন্তু শার্ট বানানো তখন আর সম্ভব ছিল না।
তাতে কী? ছোট্ট কাজল সে কাপড় কাঁধে ফেলে বেরিয়ে পড়ল সেই রাতেই বন্ধুদের দেখাতে যে, তারও ঈদের কাপড় আছে। আহা শিশুরা কতই না অবুঝ...। ’
আমার বাবা ৫০ বছর বয়সে শহীদ হয়েছিলেন...। তার ছেলের ভাষায়, ‘ফিনিক ফোটা জোছনায় বলেশ্বরী নদীতে তার লাশ ভেসে গিয়েছিল সেই ১৯৭১ সালের মে মাসের এক রাতে...। ’ সেই বাবা নিশ্চয়ই এখন সব দেখছেন! কে জানে তিনি হয়তো তার কাজলকে নিয়ে ভাবছেন... ‘তুই লাল শার্টের কাপড় ফেলে এখন সাদা কাফনে মুড়ে শুয়ে আছিস কেন বোকা?... ফিনিক ফোটা জোছনা... উথাল-পাতাল হাওয়া... শ্রাবণের ঝড়-বৃষ্টি এসব তাহলে আর কে দেখবে? ’... হায় মানবজীবন এত ছোট কেন? সে বলত, কচ্ছপ হাজার বছর বাঁচে আর মানুষ কেন এত কম বাঁচবে?... আর কী আশ্চর্য!... আমার পল্লবীর বাসার বাইরে একটা বড় অ্যাকুরিয়াম আছে, সেখানে দুটো কচ্ছপ ছিল।
’ তারা তার মৃত্যুর দুই দিন পর ২১ জুলাই মারা গেল কোনো কারণ ছাড়াই চুপচাপ... কেন? সবাই বলে কাকতালীয় ব্যাপার এ মহাবিশ্বের সৃষ্টিই একটা পরম্পরা কাকতালীয় ঘটনাবিশেষ। তাই বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘কোইনসিডেন্টাল ইউনিভার্স’... হয়তো তাই হবে!
সেদিন এক রিপোর্টার আমার মায়ের কাছে এসে জানতে চাইল, শোকাতুর হুমায়ূনভক্তদের কাছে তার বলার কিছু আছে কি না? আমার শোকাহত মা কিছুই বললেন না। আমি মায়ের হয়ে বললাম, ‘হুমায়ূন আহমেদ একজন আনন্দপ্রিয় মানুষ ছিলেন, সব আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতেন... সে যেই হোক না কেন... কাজেই ঈদের আনন্দ তার জন্য থেমে থাকবে কেন? তার হিমুরা, শুভ্ররা তার মিসির আলী... সবাই আনন্দ ভাগাভাগি করে ঈদের আনন্দকে শত সহস্র গুণে বাড়িয়ে নেবে। তাকে সবার আনন্দের মধ্যে ধরে রাখতে হবে। রবার্ট ফ্রস্টের কবিতায় সে নিজেই বলত, ‘মাইলস টু গো বিফর আই স্লিপ... ’
হ্যাঁ... তাকে নিয়েই আমরা এগোব, এগোতে হবে।
কারণ আমরা জানি এমন কোনো রাত নেই, যার ভোর হবে না; এমন কোনো দুঃখ নেই, যা একদিন ফিকে হয়ে আসবে না...! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।