বাংলার আলো-জলে ধূলো মেখে বেড়ে ওঠা মুক্তি
"সুন্দর মনের থেকে সুন্দর শরীর অনেক বেশী আকর্ষণীয়। কিন্তু ভন্ডরা বলেন উল্টোকথা। "
- হমায়ন আজাদ স্যারের প্রবচনগুচ্ছ বইটির তিন নং প্রবাদ এটি।
আকর্ষণ ব্যাপারটা একান্তই ব্যক্তিগত। সকালের স্নিগ্ধ গোলাপ কাউকে আকর্ষন করে , সে হয়তো জানেই না শীতের ভোরে বকুল তলার ঘ্রাণ কতটা আকর্ষণীয়।
আর যে ভোর রাতে বকুল তলায় যায় নিয়মিত সে কি ওই স্বর্গীয় সুবাসমাখা টপটপ বৃষ্টির ফোটার মতো ঝরে পড়া বকুলের স্বাদ ভূলতে পারে কখনো !
পারে না। ফুলবাবুকে হয়তো সে বকুল কখনোই টানে না। টাকা দিয়ে কিনে আনা লাল গোলাপ অনেক আকর্ষণীয় তার কাছে। গোলাপ ও বকুল দুটোই আমার কাছে সুন্দর। তবে দুটো দু রকম।
সুন্দর মন ও সুন্দর শরীর কি খানিকটা সেরকম নয়! কোনটা কার কাছে বেশী আকর্ষণীয় হবে তা নির্ভর করে ব্যক্তি মানুষের উপর। ফ্রয়েড দ্বিধাহীনভাবে শরীর চাইবে আর প্লেটো চাইবে মন।
শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসিতে সেই হাবসী দাসকে উপহার হিসেবে দেয়া হয় মহলের সবচেয়ে সুন্দর ওআকর্ষণীয় নারীকে। কিন্তু এক সামান্য হাবসী গোলাম তার খ্যাতনামা সুন্দর নারীর প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষন বোধ করেনি। হাবসীর আকর্ষন জমে আছে এক দাসীর নির্ঝরিনী হাসির শব্দে।
এক সাওতাল প্রেমিকের গল্প জানি আমি। যে কিনা তার প্রেমিকার জন্য একরাতে চল্লিশটি বুনো শুয়োর শিকার করার বাজিতে একা গভীর রাতে গহীন বনে যেতে রাজি হয়েছিল জীবনের ঝুকি নিয়ে।
বেটে - কালো - মোটা মেয়েটার সুন্দর শরীর ছিল না। কিন্তু আমার সাওতাল বন্ধু তার ভিতর নির্মল কোন সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছিল নিশ্চই...যা হুমায়ন আজাদ পেতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপক হবার সুবাদে তার চারপাশ পরিবেষ্টিত থেকেছে হাজারো নারীর রূপের মেলায়।
তারকাছে হয়তো সুন্দর শরীরের মূল্য অনেক বেশী কারণ সুন্দর মন অনুধাবন করার মতো সময় তার ছিল না, ফ্রয়েড দ্বারা প্রভাবিত অনেক গুণীজনের মতোই তিনি ছিলেন রূপ পূজারী। তার লেখা বিভিন্ন উপন্যাসে এর প্রমান মেলে। সুন্দর দেহের প্রতি তিনি মুগ্ধ হয়েছেন কখনো প্রেমিক বেশে আর কখনো তার উপন্যাসের রাজাকারের চরিত্রের মাধ্যমে। যেমনটি শামসুল হক করেছেন তার উপন্যাসের চরিত্রের মাধ্যমে।
অধিকাংশ মানুষের মতো হয়তো আজাদের কাছেও নারীর খাঁজ-ভাঁজ-রূপ-রস ও উন্নত অবয়বই শুধুমাত্র মূল্যায়িত হয়েছে।
এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে যারা সুন্দর শরীরকেই শুধুমাত্র আকর্ষনের মূল মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করে না তাদের কে ভন্ড বলার অধিকার তাঁকে কে দিয়েছে?????
প্রবচনগুচ্ছের ৩ নং প্রবাদে তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন তার নিজের মনের কথা। সন্দেহ নেই এটা তার দুর্দান্ত সততা কিন্তু ২য় লাইনে এসে " ভন্ডেরা বলেন উল্টো কথা " বলে কি তিনি নিজেও খানিকটা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে গেলেন না!!!প্রতিক্রিয়াশীলদের তীব্র ঘৃণা নিয়ে যে মানুষটি চলে গেলেন অসময়ে, তিনি কি জানতেন যে তিনিও তাদের মতোই ছিলেন খানিকটা। (বলতে কষ্ট হল, কিন্ত এটা সত্য, আর প্রতিক্রিয়াশীলতা মানেই শুধু ধর্মান্ধতা নয় )। মানুষের মুখের সামনে ভন্ডামির কুলুপ আটকানোর জু জু দেখিয়ে তিনি স্তব্ধ করে দিয়েছেন আপামর জনতাকে।
তিনি মানুষকে মেনে নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছেন তার বলা বচন। আজাদের মত প্রভাবশালী মানুষের সংঞ্জায় কেউ ভন্ড হতে চাইবে না। এমনকি অধিককাংশ মানুষই তা বিচার করে দেখারও চেষ্টা করবে না। আজাদ এভাবেই আটকে দিয়েছেন আমাদেরকে, প্রজন্মের চিন্তাধারাকে ধাবিত করেছেন একমুখী করে।
আজাদ তার ইচ্ছাকে অন্যের উপর চাপিয়েছেন সুকৌশলে।
অতি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। অবশ্য তিনি যে সব কাজ করেছেন তার কোন তুলনাই দেয়া যাবে না কারো সাথে, এক কথায় অতুলনীয়।
একথা খোদ শয়তানও স্বীকার করবে।
তবে তিনি নিজেও যে ছিলেন তীব্রমাত্রার প্রতিক্রিয়াশীল সে কথা কয়জন স্বীকার করবে....!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।