"চারপাশে সবই দেখি, বুঝি, জানি ও কী করা দরকার আর কোনটা বর্জন করা দরকার, কিন্তু করি না। " কমবেশি আমাদের সবারই এই অবস্থা। দেখা যাক কিছু 'করা' যায় কিনা। ব্লগ লেখা সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা শূন্য এবং তেমন পড়াও হয় না। কী মনে করে আজ রেজিস্ট্রেশন করলাম এবং কিছু লেখার চেষ্টাও করছি।
“তরুণ কণ্ঠ” শিরোনামটা নিজের কাছে এখন কেমন জানি ভারি আর মেকি লাগছে। লেখা হয়তো সবসময় সেই স্রোতে নাও বইতে পারে তবে চেষ্টা করবো (খুবই নগণ্য চেষ্টা) আমাদের দেশের তরুণরা (আমি যদিও ‘ব্যক্তিস্বাতন্ত্রে’ বিশ্বাসী তবে এখানে সামগ্রিক অর্থে ব্যবহৃত) কী ভাবছে, কেন ভাবছে, তাদের এটা ভাবা সমীচীন কিনা (মানদণ্ডটা বিষয়সাপেক্ষে দেশ ও সমাজের উপর নির্ভরশীল) এবং প্রাসঙ্গিক আরো কিছু তুলে ধরার।
এই ঈদ লগ্নে কাঠখোট্টা কোন ব্যাপার নিয়ে লিখতে চাচ্ছি না। তবে সম্প্রতি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে আমি যারপরনাই হতাশ। খুব বেশিদিন আগে নয় আমিও নিজেকে ছোট বলতে পারতাম এবং সেই ছোটবেলায় বিটিভিই ছিল বাসার একমাত্র চ্যানেল।
সেখানে সবচেয়ে বিরক্তিকর অনুষ্ঠান ছিল কিছু টক শো। নাম-ধাম মনে নেই তবে আর কিছু দেখার সুযোগ না থাকায় সেটাই দেখতে হতো বলে কিছু কিছু ব্যাপার মাথায় রয়ে গেছে। যেমন ধরুনঃ- যখন কেউ কারো প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে কিছু বলছে তখন সম্বোধনটা ছিল এরকম- “একটি মহল” অথবা “মুষ্টিমেয় কিছু লোক” অথবা “একটি দল”।
আর এখন ডজনখানেক বাংলা চ্যানেলে ভুরি ভুরি টক শো হয়। সবগুলো সম্পর্কে বলা সম্ভব নয় তাই যেটা চোখে পড়েছে সেটাই বলি- নেতা কিংবা লোকটির নাম আমি বলবো না, চ্যানেলেরও না, আমি শুধু বলবো- একটা স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচারিত হবে এমন একটা শোতে এমন সরাসরিভাবে কোন রাজনৈতিক দলের কিংবা ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ করে এমন নির্লজ্জভাবে পরনিন্দা করতে দেখে খারাপই লেগেছিল।
“এ বলে কি?”- টাইপ অভিব্যক্তি ছিল আমার তখন।
অনেকে হয়তো বলবেন- টিভি? রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মাইক্রোফোনে, বিশাল মঞ্চে দাঁড়িয়ে আরো বিশাল জনতার সামনে নেতারা যেভাবে খোলাখুলি একজন আরেকজনের মুণ্ডুপাত করছে সেখানে টিভি তো কোন ছার! হুম, ঠিকই বলেছেন।
আমি কিন্তু কেন বলছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র... বহুদলীয় ব্যবস্থা... এক পার্টি আরেক পার্টির নামে গঠনমূলক- অগঠনমূলক অনেক কিছুই বলবে (‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’য় তো আর হস্তক্ষেপ করা যায় না)- কিন্তু সেই বলায় কি একজন জননির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে শালীনতা কিংবা একটুখানি মার্জিত রুচির পরিচয় দেয়া যায় না?
এখনো হয়তো অনেকে বলবেন- আরে যাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সময়টাই কেটেছে নেতা/নেত্রীদের পিছনে ঘুরে ঘুরে আর পরীক্ষা পাশ হয়েছে ফোনে ফোনে এদের আবার একে অপরের প্রতি শালীনতা কি? হুম, ঠিকই বলেছেন।
না, শালীনতার শিক্ষা যে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই হয় আমি কিন্তু তা বলছি না- আরো প্রাথমিক পর্যায়ের একটা প্রতিষ্ঠান আছে যেটার কথা আমি বলছি না কারণ আমি ধরে নিচ্ছি সেখান থেকে তারা হয়তো দূরে ছিলেন অথবা প্রভাব বিস্তার করার মত প্রভাব সেই প্রতিষ্ঠানের ছিল না।
হ্যাঁ, আমি পরিবারের কথা বলছি।
ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ। আপাতদৃষ্টিতে এটাই ঊর্ধ্বক্রম মনে হয়। কিন্তু চারপাশে তাকিয়ে দেখুন- সমাজ থেকে পরিবার বড় অথবা দেখা যায় দেশ থেকে ব্যক্তি বড় হয়ে যায়। দোষ নেই যদি যেটাকে উতরে যাবার কথা নয় সেটা যদি উপেক্ষিত না হয়।
কিন্তু উতরে গেলে তাই হয়, উপেক্ষিত হয়- “আমার নেতা যা বলবে আমি তাই করবো, কোন কিছু ভাববো না, কার ক্ষতি হলো- কার লাভ হলো কিছুই না, আমি একটা পার্টির কর্মী- দেশের কি লাভ-ক্ষতি হলো সেটাও আমি দেখবো না। ” এটার কারণও স্পষ্ট- “নেতার কথা অমান্য করে আমি তো আমার উপরে উঠার চেইন টা হারাতে পারি না। ”
পুঁজিবাদ-ভোগবাদ আরো কত ‘বাদ’ জিনিস যে আমাদের রক্তে রক্তে ঢুকে গেছে! করার আছে অনেক কিছুই কিন্তু তার সবকিছুর শুরুই আমার মতে ‘নিজ’ থেকে... ‘আপনা’ থেকে। আমি যদি আমাকে পরিবর্তন না করি- আমার দ্বারা পরিবার কিংবা পরের জিনিসগুলোর বাহ্যত পরিবর্তন আসলেও সেগুলো এক সময় না এক সময় আমাকেই হানা করবে।
সবকিছুরই একটা ‘তৃণমূল’ (শব্দটা ব্যক্তিগতভাবে কেন জানি আমার পছন্দের) পর্যায় আছে।
উন্নয়ন কিংবা সংস্কারের তৃণমূল পর্যায়টা আমার মতে- ব্যক্তি!
সকলের মাঝে নিজেকে পরিবর্তনের ধারণাটা প্রবেশ করানোই এখন মুখ্য। দেখা যাক কতটুকু করা যায়।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।