আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিরাপত্তা কর্মীদের ঈদ!

আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই ফারহান হাবীব, ঢাকা : ঈদে নাড়ির টানে সবাই ঢাকা ছাড়ছেন। কতই না ঝক্কি ঝামেলার মধ্য দিয়ে বাড়ি ফিরবেন এই শহরের অধিকাংশ মানুষ। ব্যস্ত এ নগরী ক্ষণিকের জন্য হলেও ফাঁকা হবে। আবার অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করবেন ঢাকাতেই। তিলোত্তমা ঢাকায় কে আছে অথবা কে নেই সে হিসেবে না গিয়ে একদল লোক দিনরাত পরিশ্রম করে আমাদের এই প্রিয় শহরকে রাখবেন নিরাপদ।

যাদের একটাই চিন্তা, যেন সবাই নির্বিঘ্নে ঈদ করতে পারে। কথা বলছিলাম আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদের নিয়ে। তাদের কাছেই জানতে চাই পরিবার-পরিজন ছাড়া কি করে ঈদ পালন করবেন। পল্টন এলাকায় কথা হয় আর্মড ফোর্স ব্যাটেলিয়ানের সদস্য বাসেদের সাথে। বাসেদ জানান, ঈদের দিন জাতীয় ঈদগাহে আমার ডিউটি।

কিন্ত ঈদের নামাজই পড়তে পারমু না। সবাই নামাজ পড়বো আমি চাইয়্যা চাইয়্যা দেখমু। ছোট্ট বেলার ঈদের কথা স্মরণ করলেন তিনি। বললেন কত কথা। আর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন 'এখন আর কিছুই নাই'।

কথার এক ফাঁকে মায়ের কথা বলতেই চোখ ছলছল করে ওঠে বাসেদের। কথা না বাড়িয়ে বিদায় নিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে। রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সিদ্দিক জানান, মানুষের নিরাপত্তা দেয়া আমাগো দায়িত্ব। আমরাও যদি গ্রামে চইলা যাই তাইলে নিরাপত্তা দিবো কে? আমরা ঈদ না করলেও সবাই নিশ্চিন্তে ঈদ করতে পারতাসে এটাই আমাগোর শান্তি। সব নিরাপত্তা কর্মী যে ছুটি পায় না তা ঠিক না।

তবে কইতে গেলে ১০০ জনে ৮০ জনই ছুটি পায় না। আর বাসাবাড়ি বা প্রাইভেট কম্পানিতে যারা কাজ করেন হেগো তো ছুটিই নাই, বলেন সিদ্দিক। ঈদে বাড়ি যেতে মন চায় কিনা জানতে চাইলে সিদ্দিকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ হাসান বলেন, ভাই বাড়ি যাইতে কার না মন চায়? বাড়িতে সবাইরে রাইখা আইসি। ঈদের দিন মাইডারে দেখতে খুব মন চাইবো। তখন খুব খারাপ লাগবো।

তিনি আরো বলেন, ভাই পৃথিবীটা নিষ্ঠুর। কেউ আমাগো কথা চিন্তা করে না। সারাদিন রোজা রাইখা রোদের মধ্যে কাজ করতেসি কেউ আইসা একটু ইফতার করায় না। এতে দুঃখ নাই। ঈদের দিন যদি কেউ একটু সেমাই খাওয়াইতো তাও কষ্টটা সার্থক হইতো।

তবে প্রতি ঈদের মতো এবারও ডিএমপির পক্ষ থেকে রাজধানীতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তখন হয়তো সহকর্মীদের সাথে মিশে আনন্দ ভাগাভাগি করবেন আর কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলে থাকবেন সব কষ্ট। সেকান্দার গত ৫ বছর ধরে পল্টনের একটি বাড়িতে দারোয়ান হিসেবে আছেন। তিনি জানান, ঈদের পর বাড়ি যামু। ঈদে কোন ছুটি নাই।

পুরা বাড়ি প্রায় খালি তাই চাইলেও যাইতে পারমু না। তবে বউ-বাচ্চা নিয়া ঈদ করতে পারলে ভালো লাগতো। বাড়ি যেতে না পেরে খারাপ লাগছে কিনা জানতে চাইলে সেকান্দার দুঃখ করে বলেন, গরিবের আবার ঈদ! যে মুহূর্তে আমরা অধিকাংশ মানুষ এই শহর ছাড়ছি, প্রিয় মুখগুলো কাছে পেয়ে আনন্দে মেতে উঠছি। অথবা বন্ধুকে কাছে পেয়ে পুকুর পাড়ে বসে ছোট্ট বেলার স্মৃতি রোমন্থন করছি। ঠিক সেই সময়, কোন এক চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে অথবা এটিএম বুথের সামনে বসে এমন অনেক বাসেদ, সিদ্দিক আর সুমনরা তাদের "থ্রিনটথ্রি রাইফেল" কাঁধে নিয়ে শূন্য ঢাকায় খুঁজে ফিরবেন ফেলে আসা দিনগুলো আর প্রিয় মানুষের মুখ।

শূন্য এ শহরের শূন্যতা আর তাদের দীর্ঘশ্বাস যেন মিলেমিশে হয়ে যাবে একাকার। তবু তাদের একটাই ইচ্ছা, আমাদের এ নগরী যেন থাকে নিরাপদে টাইমস ওয়ার্ল্ড ২৪ .কম এ ১৯ আগস্ট ২০১২ তেে প্রকাশিত রিপোর্ট.......... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.