মিনা রাজু বড় হয়েছে । তারা এখন প্রসূতির যত্ন জানে, শিক্ষার গুরুত্ব বোঝে এবং স্যানিটেশন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে ।
তারা দু'জনেই মেধাবী - হরলিক্স খেত না, কচুশাক খেত । ডিম কম থাকলে ভাগাভাগি করে পায় । মিনা একটু কুসুম বেশি পছন্দ করে তবুও রাজুকে দিয়ে দেয় ।
'অপত্যস্নেহ' বলে যে একটা কঠিন শব্দ আছে সেটা মিঠু পর্যন্ত জানে ! মুরগি রান্না হোলে মিনার মা, মিনার বাবাকে একটা রান দিতেন । আর একটা মিনা বা রাজু খেত । রাজু যখন নারী অধিকার শব্দদ্বয় শোনে, তখন থেকেই এ ব্যাপারটা ধরে ফেলেছিল । তাই তার মাকে তার ভাগের রান অফার করতো । ব্যাপারটা ওদের বাবা বুঝে ফেলেন ।
এরপর থেকে রান ভাগাভাগিতে মিনা রাজুদের পরিবার আদর্শ হিশেবে গ্রামে নাম করেছিল ।
মিনা এখন সালোয়ার কামিজ পড়ে । হিজাব পরতো আগে । টেলিভিশন-এ হিজাব পড়া আত্মঘাতী বোমাবাজ দেখে স্বেচ্ছায় সে হিজাব ছেড়েছে । আশেপাশের অনেক কলেজেই এখন হিজাব নিষিদ্ধ ।
যেহেতু মিনা-রাজুরা ছোট থেকেই শিক্ষার আলো পাওয়া, পুষ্টিকর খাবার পেয়েছে, তাই হিজাব-তাড়ানো-এনজিও আসার আগেই তাদের পরিবার বস্তুবাদী হয়ে গেছে ।
মিনা-রাজু কোচিং-এ পড়েনি কখনো । কোচিং নিষিদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই ওদের পরিবার কোচিং বিরোধী । মিনার বাবা মিনা আর রাজুকে নিয়মিত জাফর ইকবাল স্যারের লেখা বই উপহার দেন । মিনাদের স্কুলের একজন শিক্ষক গোপনে কিছু ছাত্রকে পড়াতো, মিনা-রাজু, মিঠুর সহায়তায় তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে ।
মিঠু সেই আগের মতোই আছে । বয়স বেড়েছে যা, এই আর কী । আগের মত চঞ্চলতা নেই তার ।
মিনার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া । ডাক্তার হয়ে গ্রামের লোকের সেবা করা ।
ভালো ছাত্রী সে, এসএসসি-এইচএসসি দুই পরীক্ষাতেই সোনালী পাঁচ ।
রাজু এবার এসএসসি দিলো । গ্রামের স্কুল থেকে । এবার কলেজে যাবে। ভবিষ্যতে কী করবে ঠিক করেনি ।
পাশের পাড়ার রুনার দিকে ইদানীং তার দৃষ্টি বারে বারে যাচ্ছে ।
মিনা খবর পেয়েছে, মেডিকেল কলেজগুলোতে এবার ভর্তি পরীক্ষা নেবে না । ফর্ম জমা পড়েছে। রেজাল্ট পত্রিকায় দেবে । অন্যান্য কলেজ-ভার্সিটির ভর্তি শেষ ।
তার রেজাল্ট ভালো, মহিলা কোটা আছে । মহিলা কোটার কথা বলে রাষ্ট্র তো নিজেই নারীর অপমান করছে - নারীরা কি আর মহলে থাকে নাকি ? চিন্তা করতে করতে মিনা রেগে ওঠে ।
২.
দৈনিক ইত্তেফাক-এ রেজাল্ট দেখে মিনা চমকে ওঠে । নেই ? না, সত্যিই নেই !
নিজের অ্যাপ্রন পরা ডাক্তার আপা রূপে কল্পিত ছবিটা ভেঙ্গে পড়লো । শিক দেওয়া জানালার বাইরে তাকালো সে ।
ঐ যে পাগলি - ওকে চিকিৎসা করতে চেয়েছিলো সে । চোখের জল মুছে সে মা-বাবার ঘরে গেলো । এরা দু'জন এবং দাদি - খুব কষ্ট পাবেন । মিঠুও বুঝেছে মনে হলো । চুপ করে আছে কেমন বেচারা টিয়াটা ।
৩.
মিনার মাধ্যমিক স্কুলের স্যার বিশ্বাস করতে পারছেন না । স্কুলের কাজে ঢাকা যেতে হবে তাই মিনার ব্যাপারটার কী রহস্য - জানবেন বলে ঠিক করলেন । ঢাকায় সচিবালয়ে তাঁর কিছু ছাত্র আছেন । পিজি-তেও কিছু অধ্যাপক ছাত্র আছে ।
তবে খোঁজ করতে যেয়ে গোপাল স্যার পরলেন বিপাকে ।
তাঁর ছাত্ররা একবার জনপ্রশাসণে পাঠায় আবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় । সব মন্ত্রণালয়ে তো আর তাঁর ছাত্র নেই । তবে তাঁকে রেফার করলে ঐ আমলারা খাতিরই করে, গোপালবাবুর ভালো লাগলো । এখনও লোকজন তবে শিক্ষকদের সম্মান করে ! কে বলে আমলারা শুধু ঘুষই খায় আর এসি অফিসে বসে ঘুমায় ? মিথ্যা অপবাদ ।
গোপালবাবু খাতির পেলেন বটে, কিন্তু কাজ হলো না ।
কেউ বলতে পারলো না কীভাবে কে সুযোগ পাবে আর কে পাবেনা সেটা ঠিক করা হয়েছে । লটারি করা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করায়, এক সাবেক ছাত্র না-সূচক মাথা নাড়লেন । তবে ফিসফিস করে এটাও বললেন যে, লটারিও আজকাল লটারি থাকে না । পিজির এক সহযোগী অধ্যাপক সাবেক ছাত্র স্যারের কানে কানে বললেন, ''স্যার । মানি ! মানি !'' এ ছাত্রটি আবার চিকিৎসক নেতা ।
এবার যা একটু বুঝলেন শিক্ষক । ভাবলেন, মিনা মানি পাবে কই ?
৪.
গোপাল স্যার ফিরে আসার দিনই পত্রিকায় আবার ভর্তি পরীক্ষা হবে মর্মে খবর বেরুলো । গোপাল স্যারও হতভম্ব হয়ে গেলেন। ব্যাপক সমালোচনার মুখে আর আদালতের ধাতানি খেয়ে কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়াটাকেই শ্রেয় মনে করছেন । আগের ফল বাতিল ।
নতুন করে ভর্তি-পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করানো হবে ।
মিনা সিদ্ধান্ত নিলো, সে ভর্তি পরীক্ষাই দেবে না । যারা ভাত মুখে তোলার সহজ পথটা ছেড়ে মাথার পিছন ঘুরিয়ে খায়, তারা আধুনিক চিকিৎসার বদলে ওঝাগিরিই শেখাবে ! মিনার বাবা-মা-দাদি, এমনকি গোপালবাবুও যুক্তির অসারতা ধরতে পারলেন না । মিঠুও শুনে মাথা ঝাঁকালো । ঠিক ।
ঠিক ।
রাজশাহী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।