মীনা আর রাজু।
মীনা মেডিকেল স্টুডেন্ট আর রাজু নন-মেডিকেল।
'মেডিকেলের পড়াশুনা সহজ' এই বলে রাজু মীনাকে প্রায়ই 'পোক' করতো।
একদিন রাতে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে আগামীকাল সকাল থেকে মীনার ক্লাস,পড়াশুনা রাজু করবে। আর রাজুর টা মীনা।
স্রেফ একদিনের জন্য।
পরদিন মীনা সক্কালে রাজুকে ঘুম থেকে তুলে কমিউনিটি আইটেমের পড়ায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে বললো। পাবলিক হেলথের ডেফিনিশন সঠিকভাবে একবার রিডিং পড়তেই রাজুর লেকচারে যাওয়ার সময় হয়ে গেল।
চোখ ডলতে ডলতে রাজু ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। কাধের ব্যাগটাকে তার কাছে মনে হলো ইটভর্তি বস্তা, খুলে দেখে দুইটা বই।
তাতেই এতো হেভি ওয়েট!
৭.৩০ থেকে ৯.৩০ টানা দুই ঘন্টা ঢুলু ঢুলু চোখে দুইটা লেকচার শুনে রাজু ভাবলো এবার বুঝি একটু সস্তি পেলাম।
ওমা, একি! নাস্তা করে সবাই আবার দৌড় লাগালো ওয়ার্ডের দিকে। অগত্যা রাজুকেও যেতে হলো।
ওয়ার্ডের ক্লাসে বসার কোন ব্যবস্থা নেই। নিজের পায়ের উপর দাড়িয়ে থাকতে থাকতে রাজুর পা যেন অবশ হয়ে আসতে লাগলো।
এর মাঝে ফ্লোরে রোগী, পায়ের নিচে রোগী, রাস্তায় রোগী, একটু পর পর রোগীর অ্যাটেন্ডেন্সের ধাক্কা। ভাল করে দাড়ানোর উপায়ও নেই। এভাবে চললো ঘণ্টা দুয়েক।
রাজু মনে মনে ভাবলো ওয়ার্ডের ক্লাস শেষে বাড়ি চলে যাবে। তার পক্ষে আর ক্লাস করা সম্ভব নয়।
দুই ঘণ্টা ঠায় দাড়িয়ে থেকে তার ব্যাক পেইন শুরু হয়েছে,রুমের নরম বিছানা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
কিন্তু বাড়ি চলে গেলে তো মীনার কাছে বাজিতে হেরে যাবে ভেবে টিউটোরিয়াল ক্লাসে ঢুকলো রাজু।
টিউটোরিয়াল ক্লাসে ম্যাডাম এসে আগামী আইটেম 'স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও উহার শ্রেণীবিভাগ' এর উপর আধা ঘণ্টা বয়ান দিলেন। রাজুর ক্ষুধার্ত পেট আর ক্লান্ত শরীরের সাথে এইসব পড়াশুনা মাথায় তালগোল বাধিয়ে দিলো।
এরপর ম্যাডাম দুজন করে আইটেম নেওয়ার ঘোষণা দিলেন।
মীনার শর্ত অনুযায়ী রাজু আইটেম না দিলেও পড়তে থাকবে এবং সর্বশেষ যে আইটেম দিবে সে বের হলে তখন রাজু বাড়ি ফিরবে।
অবশেষে দুপুর আড়াইটার দিকে রাজু বাড়ি ফিরতে সক্ষম হলো।
দুপুরে খাওয়ার সময় মীনার সাথে কথা হলো রাজুর।
রাজু মীনাকে জানালো আসলেই তার অনেক কষ্ট হইছে আজকের সব ক্লাস শেষ করতে।
'আজকের ক্লাস শেষ হইছে তোমাকে কে বললো? সন্ধ্যায় আবার ওয়ার্ডে যেতে হবে।
'
মীনার এই কথা শুনে ওয়ার্ডে ঘন্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকার বিভীষিকাময় মুহূর্ত মনে হতেই এবং আজকেই আবার ওয়ার্ডে যেতে হবে এ কথা চিন্তা করতেই রাজু মূর্ছা গেল।
জ্ঞান ফিরলে মীনা রাজুর কাছে গিয়ে সান্ত্বনা দিলো,''তোমার পড়াশোনাও কঠিন রাজু। ''
''তোমার পড়াশুনা অনেক বেশি কঠিন, মীনা। '' রাজু কাঁপা গলায় উত্তর দেয়।
শেষ দৃশ্যে মিঠু বলে ওঠে,''পঁড়াশোনা মাত্রই কঁঠিন ব্যাপার! পঁড়াশোনা মাত্রই কঁঠিন ব্যাপার!''
ধন্যবাদ ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।