কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ আরাফাত থেকে মুজদালিফার পথে ও মুজদালিফাতে রাত্রিবাস
আরাফাতের ময়দান থেকে মুজদালিফা তেমন একটা দুরে না ৫/৬ কিলোমিটার হবে । তবে রাস্তায় গাড়ীর জ্যাম এর কারণে অনেক সময় লেগে যায় ।
আরাফাত থেকে ভাল বাস পাওয়া যায়নি । মনে হয় নন এসি বাস বা এসি ভাল কাজ করছিল না । সূর্যাস্তের বেশ পর আমরা রওয়ানা হলাম। মাগরেব ও এশা মুজদালিফাতে গিয়ে পড়তে হয় । মুজদালিফার মায়দানে প্রচন্ড ঠান্ডা ।
রাত প্রায় ১১ টার পর আমরা পৌছালাম । ২ বাসের যাত্রীরা আলাদা হয়ে গেল। অন্ধকার ঠান্ডা অচেনা জায়গা সব মিলিয়ে অন্য রকম অবস্থা। এহরামের কাপড় পড়া, এক রাস্তার পাড়ে নামলাম সেখান থেকে নীচে পথের উপর থাকার জায়গা নীচে কংকর ও পিচের রাস্তা। ঠান্ডায় জমে যাবার দশা, দাঁত কপাটি লাগে গা কাঁপে ।
হজ্জ ম্যাট এর ব্যবহার এখানে অতি প্রয়োজনীয়। ম্যাট বিছালাম বাকী সব কাপড় এহরামের কাপড়ের উপর দিয়েও শীত কমেনা। প্রথম কাজ হলো ওজু করা দুরে টয়লেট অচেনা পথ । ওজু করে পথ হারিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরলাম । আম্মু ও মানসুরাকে এক জায়গায় শোয়ার ব্যবস্থা করে দিলাম ।
ঠান্ডা বাতাসে ওঁনারা কাৎ হয়ে গেছেন । আম্মু একটু অসুস্থ । খাবার কোথাও নেই ক্ষিধা লেগেছে । হঠাৎ খবর পেলাম দুরে ভাত ও কারী দিচ্ছে হাজীদের জন্য। সেখানে গিয়ে ৩ প্লেট খাবার আনলাম ।
আম্মু ও মানসুরা খেলনা । গরম ভাত শব্জী দিয়ে ভালই লাগল ।
মাগরিব ও এশা পরে ৭টা করে কংকর জোগাড় করলাম তারপর শুয়ে পড়লাম । ঠান্ডায় ঘুম আসেনা । দোয়া দুরুদ পড়ছি ।
রাত ৪ টা ৩০ এর দিকে ঘুম ভেংগে গেল । ছোট ভাই ফোন করল আমেরিকা থেকে। আম্মুর অবস্থা কাহিল । আমি ঠকঠক করে কাঁপছি । হাড় হাড্ডি সব কাঁপছে ।
বাথরুম ও ওজু করতে গেলাম । ল¤¦া লাইন । তবে গরম পানি আছে । কাপড় এ ছিটা লাগছে আল্লাহ মাফ করে দিবেন । ফজরের নামাজ আমরা লোকালভাবে জামাতে পড়লাম ।
সকাল হয়নি তখনও । আলো উঠার পর ময়দান ছেড়ে মিনায় যেতে হয়। মাওলা ভাই সকালে এসে আমাদেরকে আমাদের তাঁবুর দিকে নিয়ে রওয়ানা করল । আম্মুর পায়ের ব্যাথার কারণে আস্তে আস্তে হাঁটছেন । ব্যাগ বেশী হয়ে গেছে ।
অনেক পথ হেঁটে আমরা তাঁবুতে পৌছালাম । শীত যেন উধাও রাতের শেষে । ভাগ্য ভাল আমরা আমাদের তাঁবুর বেশ কাছেই ছিলাম। মীনায় এসে মনে হলো একটু আস¦স্থ হলাম । তবে মুজদালেফার জন্য ক্যাম্পিং এর তাঁবু পাওয়া যায় ।
ওগুলো ১ টা কিনলে আমরা সুন্দরভাবে থাকতে পারতাম । ভবিষ্যতে আল্লাহ তৌফিক দিলে ইনশায়াল্লা সে ব্যবস্থা করা যাবে । মুজদালিফার রাত্রি শেষে সকাল হলো । হে আল্লাহ তুমি সহায় আমিন।
৩০ ডিসে¤¦র ২০০৬ (শনি বার), আরাফাত ও মুজদালিফায় রাত কাটিয়ে মীনায় আবার ফিরে আসলাম একই তাঁবুতে ।
সকাল ৬ টার দিকে মাওলা ভাই আমদেরকে মুজদালেফা থেকে মিনার তাঁবুতে নিয়ে আসল । মুজদালিফা থেকে হেঁটে সকাল বেলা মিনার তাঁবুতে এসে পৌছালাম। আবার আগের জায়গায় । এখানে এখন ২ রাত ৩ দিনের মত থাকতে হবে । সকাল বেলা ফযরের নামাজ পড়ে রেডি হলাম বড় শয়তানকে পাথর মারার জন্য ।
হালকা বিস্কিট খেয়ে রেডি হলাম জমরাতে পাথর মারতে যাওয়ার জন্য । রাতে ৭ টা পাথর কালেক্ট করেছিলাম । যেতে যেতে ০৯৩০ বেজে গেল । বড় শয়তানকে পাথর মারলাম ভীড় ছিল । নীচ তলাতে পাথর মারলাম আমরা ৭ জন ।
সহনীয় ভীড় । আলহামদুলিল্লাহ । ১১১০ এ তাঁবুতে এলাম । লাঞ্চ করলাম । ৪ রিয়েল দিলাম চুল কাটার জন্য ।
দুপুর বিকাল জোহর ও আছরের কছর নামাজ পড়লাম মাগরেবের পর পাথর কুড়াতে গেলাম । জমরায় পাথর মারার পর মসজিদে খায়ফ এ ২ রাকাত নামাজ পড়লাম । তারপর রাতে ঘুম দিলাম । দিনটা ভালই কাটল আল্লাহর রহমতে ।
আগে যখন মিনায় ছিলাম তখন দিনের বেলা হেঁটে হেঁটে ওই জায়গাটার এন্ট্রি পয়েন্ট দেখে এসেছিলাম ।
এরপর দলের ৫ জন রওয়ানা হলাম । আমি ২১ টা পাথর নিলাম ৩ জনের । আম্মু ও মানসুরা আজ গেলনা আগে শুনেছে পাথর মারতে গিয়ে পিষে মারা যায় তাই অনেকে ভয়ও পেয়েছে । বিসমিল্লাহ বলে রওয়ানা হলাম । ইহরাম এর কাপড় পড়া ।
হাঁঁটতে হাঁটতে পথ শেষ হয়না শেষ পর্যন্ত নীচের টানেল দিয়ে জমরাতে পৌছালাম। এটাই পাথর মারার স্থান । এখন অত্যন্ত সুন্দর করেছে । স্তম্ভ চওড়া হয়েছে । অনেকগুলো এন্ট্রি ও এক্সিট আছে ।
তারপরও মানুষ উত্তেজিত হয়ে পাথর মারে । আজকে দেখলাম একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় পাথর মারা যায় । আজ বড় শয়তানকে পাথর মারা হলো ৭টা । তারপর আবার হেঁটে মীনায় এলাম । নুর মোঃ কাকা ১১টার দিকে কোরবানের খবর দিল, ১ টার দিকে চুল চেঁছে ফেললাম তারপর গোসল করে ইহরাম এর কাপড় খুলে ফেললাম।
আলহামদুলিল্লাহ । হজ্জ এর একটা পর্যায় শেষ । বিকেল বেলা ঘুরতে বের হলাম মিনার আশে পাশে । এর মধ্যে চা কিনে খাওয়া চলল । তাবুতে মোয়াল্লেমের দেওয়া খাওয়া দাওয়া মাঝারী মানের ।
দেশ ভেদে টাকা ভেদে অবস্থান, খাওয়া, আলাদা । সবাই কার্ড দেখিয়ে ভেতরে ঢুকে । বাইরের লোকজন আসা নিষিদ্ধ। ২/১ বার গোয়েন্দা চেকও হলো। বাইরের কেউ অনুমতি ছাড়া হজ্জ করতে এসেছে কিনা দেখার জন্য ।
নামাজ কলেমা ইবাদাত তাঁবুর ভেতরেই।
৩১ ডিসে¤¦র ২০০৬ (রবি বার) , সকাল ০৯৩০ এর দিকে পাথর মারার জন্য আমরা ৬/৭ জনের গ্র“প বের হলাম । আজ ২১টা করে পাথর মারতে হবে ৩ শয়তানকে । বড়, মাঝারী, ছোট, ৫ কিঃ মিঃ রাস্তা । পথে মাঝে মাঝে পানি খেলাম ।
ট্যাপ আছে ঠান্ডা পানির । আল্লাহর রহমতে ৩ শয়তানকে ভালভাবেই কংকর মারলাম। তারপর পাথর মারা শেষ করে ফেরার পথে আলবাইক থেকে চিকেন কিনলাম। এরপর নতুন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁঁটতে পথ হারালাম । পথে ১ জনকে হারিয়ে ফেললাম।
কোক কিনা হলো পথে দোকান থেকে । রোদের তাপ বেশ ছিল । তাঁবুতে এসে গোসল ও রেষ্ট । বিকেলে ছবি তুললাম কিছু , আজ রাতে মক্কা গিয়ে হজ্জের তাওয়াফ । রাতে সব প্যাক করে ১১ টার দিকে বাসে উঠলাম জনপ্রতি ১০ রিয়েল দিয়ে বাস ভাড়া করলাম আমরা মক্কা পৌছালাম রাত ১২ টায় ।
আবার মক্কায় ফিরে আসতে ভাল লাগল । এরপর জিনিষপত্র হোটেলে রেখে হজ্জের তাওয়াফ করলাম । শেষ করতে করতে ৪ টা বেজে গেল । সাথে সাঈ ও আছে । এর পর রুমে এসে একটু ঘুমালাম ।
সকালে আবার মক্কা থেকে মিনায় গিয়ে ২য় দিনের পাথর মারতে হবে শয়তানকে । আজ আমিই যাব । যাক আল্লাহ ভালভাবে সবকিছু শেষ করতে সাহায্য করলেন আমিন ।
০১ জানুয়ারী ২০০৭ (সোম বার) , ০৯৩০ এ উঠলাম। তারপর ১০ টায় অযু করে মিনায় পাথর মারতে গেলাম ৪ জন।
২০ রিয়েল করে জনপ্রতি ভাড়া, মাইক্রোবাস নিয়মিত যায় মক্কা থেকে। আল্লাহর রহমতে শান্তিমত পাথর মারলাম । আলবাইক থেকে চিকেন নিলাম । এর পর বিভিন্ন ট্রাক থেকে গিফ্ট নিলাম, পানি ও প্যাকেট। তারপর টানেল দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মক্কা শরীফে পৌছালাম ।
বাসায় এসে গোসল করলাম ফ্রেস হলাম । তারপর লাঞ্চ করে আছর নামাজ। মাগরেব ও এশা মক্কা টাওয়ারে পড়লাম মানসুরার সাথে। বিকেলে আছর এর নামাজ হেরেমের চত্বরে পড়লাম।
শয়তানকে পাথর মারা -মিনা থেকে
মীনা ক্যাম্প
মুজদালিফা থেকে মীনায় আগের তাঁবুতে আসলাম ।
আগের জায়গায় । সকালে নাস্তা খেলাম । চা কিনে আনলাম বাইরে থেকে । এহরাম এর কাপড় পড়া । ৭/৮ টার পর জমরাতে পাথর মারার জন্য আমরা কয়েকজন তাঁবু থেকে বের হলাম ।
আজ বড় শয়তানকে ৭টা পাথর মারতে হবে । তারপর কোরবান করে মাথা মুন্ডন করে এহরাম এর কাপড় খুলতে হবে । ৫/৬ জন মিলে বের হালাম সবাই একত্রে পাথর মারার জন্য যাচ্ছে । সূর্য হেলে পড়ার আগে মারতে হবে । বেশ অনেক পথ ৪/৫ কিলোমিটার হবে ।
প্রচন্ড ভীড় । আস্তে আস্তে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি । দুই তিনটা রাস্তা পাড় হয়ে অবশেষে জমরার নীচ তালার টানেলে ঢুকলাম । হাজীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে জমরা এখন ১০ তালা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে । আপাতত দুই তালা সম্পূর্ণ হয়েছে ।
সম্পূর্ণ আলাদা পথে ১ তালা ও দোতলার হাজীরা সেখানে যায় । কারো সাথে দেখা হবার বা জায়গা বদলের সম্ভাবনা নেই । আস্তে আস্তে আগাচ্ছি । একজন আরেক জনের হাত ধরে রেখেছি ।
জমরা, মীনা
হঠাৎ পাথর মারা শুরু হলো ।
সবাই যেন আবেগ তাড়িত । কাছাকাছি যারা তাদের মাথার উপর পাথর লাগছিল পেছনে থেকে যারা পাথর মারছিল । আমরা দেখলাম দুই প্রান্তে ফাঁকা এবং ঐখানে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে পাথর মারা যায় । ততক্ষণে আমার ৩ জনের জন্য ২১ টা মারা শেষ । পরবর্তী দিনগুলোর জন্য এটা কাজে লাগবে।
তারপর ফিরে আসছি ।
মসজিদে খায়ফ
আসার পথে মসজিদে খায়ফ এ ২ রাকাত নামাজ পড়লাম । এটা জমরার কাছে । পাথর মারার জায়গা বেশ প্রশস্ত । শয়তান স্তম্ভের সাইজ অনেক বড় হয়েছে এবং অনেক লোক এখন একসাথে পাথর মারতে পারে ।
বেশী চাপ হলে দুই দিকে সরে যাওয়ার সুযোগও আছে । মোট কথা এখন আল্লাহর রহমতে শান্তিমত পাথর মারা যায় । তবে আতংক ছড়ানো হয় যে পাথর মারতে গেলে মারা যায় তাই অনেকে নিজে যায় না কাউকে দায়িত্ব দিয়ে দেয় । আসলে কাজটা এখন বেশ সোজা । ১১-১০ এর দিকে তাঁবুতে পৌছালাম শুনলাম যে আমাদের কোরবানী ১১ টায় হয়েছে ।
মোবাইল এ নুর মোঃ কাকার থেকে খবর পেলাম । দুপুরে খেয়ে ৪ রিয়েল দিয়ে মাথা কামালাম। তারপর গোসল করে ইহরাম এর কাপড় খুললাম । এখন থেকে প্রায় সব কিছু আমাদের জন্য হালাল । দুপুরে নামাজ পড়ে বিকেলে একটু ঘুরলাম আশপাশের এলাকা ।
পরের দিনের জন্য পাথর কুড়ালাম ২১ টা করে ৩ জনের ৬৩ টা । রাতে গল্প দোয়া দুরুদ নামাজ । দিনটা কেটে গেল একরকম। পরদিন ভোরে ফযরের নামাজ পড়লাম তাঁবুতে । তারপর নাস্তা খেয়ে আমরা আস্তে আস্তে রেডি হলাম দুপুরের পর পাথর মারতে হয় আমরা রওয়ানা হলাম ।
আজ মানসুরা সাহস করে বলল আমাদের সাথে যাবে, ওকে সাথে নিলাম । হাঁটতে হাঁটতে বেচারী প্রায় টায়ার্ড। পথে ২/১ বার দাড়িয়ে কল থেকে পানি খেলাম আজও নীচ তলায় গেলাম । মানসুরা ও আমরা একসাথে থেকে ভালভাবে পাথর মারলাম । ভীড় তেমন বেশী ছিল না ।
আমাদের একটু সময় লাগল কারণ আমাদের দলের ২/১ জনকে হারিয়ে ফেলেছিলাম । পরে ফেরার পথে আলবাইক থেকে চিকেন ফ্রাই কেনা হলো । পথ হারালাম একবার । সঠিক তীর/এ্যারোমার্ক না দেখে আগালেই পথ হারানো সহজ। আবার ঘুরে ফিরে নিজেদের পথে আস্তে আস্তে চিকেন খেতে খেতে তাঁবুর দিকে রওয়ানা হলাম ।
পথে কোক খাওয়ালো একজন সাথীভাই। জোহর, আছর, মাগরিব ও এশা সব তাঁবুতে। আজ আমাদের কাফেলার সবাই ঠিক করল রাত ১২ টার পর মক্কা চলে যাবে এবং কাল মক্কা গিয়ে তাওয়াফে এফাদা ও সাঈ করবে। এগুলো হজ্জের অংশ । রাতে বাসে করে মক্কা এলাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হলো ।
যা আগে লিখেছি । এই দিন তাওয়াফে অজস্র মানুষ সোবহানাল্লাহ এত মানুষ কোথা থেকে যে আসে । তবুও জায়গা হলো । আল্লাহ ভুমিকে প্রশস্ত করে দেন । পরদিন ঘুম থেকে উঠে ১১/১২ টার দিকে রওয়ানা হলাম আমরা ৩/৪ জন ।
হেরেম শরীফ এর পাশে মীনা যাওয়ার জীপ, মাইক্রো ইত্যাদি আছে । আমরা জনপ্রতি ২০ রিয়েল দিয়ে উঠলাম মাইক্রোতে। মাইক্রো নতুন এক জায়গায় থামল । আমরা সেখান থেকে জমরাতে গেলাম । সুন্দরভাবে পাথর মারা সুসম্পন্ন হলো।
আমিন । ফেরার পথে সিদ্ধান্ত নিলাম টানেল দিয়ে হেঁটে ফিরব । তীর চিহ্ন ধরে টানেলের খোঁজে চলছি । পথে পানি ও তবরুক বিতরণ চলছে কিছু নিয়ে নিলাম । টানেলের পথ বেশ সুন্দর ।
এপ্রোচ আছে, উপরে টিনের ছাউনি এরপর টানেলের পথ । বেশ কয়েক মাইল ল¤¦ায় । টানেল এর শেষ প্রান্তে এসে একজন জুস খাওয়ালো। হাজীদের জন্য তবরুক। রসুল (সঃ) এর বাড়ীর কাছে এসে টানেল শেষ ।
জমজম এর পানি খেলাম নামাজ পড়লাম। টানেলকে আরবীতে নাফাক বলে । দুইটা মুখের কারণে । মুনাফিক থেকে নাফাক । রুমে এসে গোসল ।
আল্লাহর রহমতে হজ্জের সব করণীয় কাজগুলো সুসম্পন্ন হলো । হে আল্লাহ তুমি সহায় । আমিন ।
০২ জানুয়ারী ২০০৭ (মঙ্গল বার) ,সকালে নামাজ বাইরে পড়লাম ভেতরে মানুষ এর অনেক চাপ। দুপুরে জোহরের নামাজ হেরেম শরীফে পড়লাম।
২/৩ দিনের কাযা নামাজ পড়লাম। আছর রাস্তায় পড়ে একটু মার্কেটিং করা হলো । মাগরেব ও এশা মক্কা টাওয়ারে পড়লাম। এশার পর ডিনার করে মার্কেটিং করতে বের হলাম। বেশ কিছু জায়নামাজ ও অন্যান্য গিফ্ট কেনা হলো ।
রাত ১২ টায় ঘুমালাম। বায়তুল্লাহ দেখা হলো আজ।
০৩ জানুয়ারী ২০০৭ (বুধ বার) , সকালে বাইরে ফযরের নামাজ তারপর ঘুমালাম । কিছু গোছানো হলো ফিরতি ভ্রমনের জন্য । দুপুরের যোহর মক্কা টাওয়ারে ।
এশার পর ব্যাগগুলো গোছালাম ।
০৪ জানুয়ারী ২০০৭ (বৃহস্পতি বার) , ফজরের নামাজ রাস্তায় পড়লাম । ৯ টায় আমরা বিদায়ী তাওয়াফ করতে রওয়ানা হলাম । ১০:৪৫ এ শেষ হলো । অনেক মানুষ।
নাস্তা চা ও পরোটা খেলাম কিনে । আমি হোটেলে না গিয়ে মাতাফ এ বসে গেলাম । কাবার দিকে তাকিয়ে দোয়া করলাম। জোহর সেখানে পড়লাম আলহামদুলিল্লাহ । আছর রাস্তায়, মাগরেব রাস্তায় ও এশা মক্কা টাওয়ারে।
রাতে ইনশায়াল্লাহ মুভ হবে ১২ টার দিকে । ১ টার দিকে জানলাম ফ্লাইট কেন্সেল ।
০৫ জানুয়ারী ২০০৭ (শুক্র বার) , সকালে ফযর রুমে । ঘুমালাম অনেকক্ষণ । নাস্তা ও লাঞ্চ এক সংগে বিরিয়ানি দিল।
যোহর মক্কা টাওয়ারে । আছর, মাগরেব রাস্তায় । এশা মক্কা টাওয়ারে । রাতে ১০৩০ সবাই মিলে বায়তুল্লাহ গেলাম। কাযা নামাজ ও আল্লাহর ঘর দেখে ১২ টায় রুমে ।
ঘুমাতে ঘুমাতে ১ টা বেজে গেল । দিন বাড়াতে এবাদত হলো । হে আল্লাহ আমরা আপনার হেফাজতে । আজ সন্ধ্যায় বৃষ্টি হলো । মাগরেব নামাজের সময় ও এশাতে ।
মাগরেব রাস্তায় পড়াতে আমরা হালকা ভিজলাম ।
০৬ জানুয়ারী ২০০৭ (শনি বার), যোহর, আছর মক্কা টাওয়ারে পড়লাম । মাগরেব ও এশা মসজিদে পড়লাম । তারপর রুমে এসে ঘুম। দিনটা ভাল ভাবেই কাটল আল্লাহর রহমতে ।
০৭ জানুয়ারী ২০০৭ (রবি বার), আজ আব্বুর মৃত্যু বার্ষিকী । সকালে ফযর ,তারপর জান্নাতুল মোআল্লাম এ গেলাম । ৮ নং প্লট ৬৯ নং কবর । যিয়ারত করলাম । তারপর তাওয়াফ করলাম ।
দুপুরে নামাজ বাইরে পড়লাম । আছর দোতলায় । কাবা দেখে রুমে এলাম । কিছু মার্কেটিং করলাম আজ । শুনলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্য জেদ্দা যেতে হবে।
মাগরেব এর পর লাগেজ গুছানো হলো । রাতে বাইরে নামাজ । এশার পর দুর থেকে কাবা দেখে দোয়া করলাম ।
০৮ জানুয়ারী ২০০৭ (সোম বার), জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার কথা রাত ১০ টার দিকে । মালপত্র অনেক হয়ে গেছে ৩/৪ টা বাসে আমরা যাচ্ছি ।
মালপত্র উল্টাপাল্টা বাসে উঠেছে । যাক ১১-৩০ এ রওয়ানা হলো শেষ পর্যন্ত । শেষ রাতে জেদ্দা এয়ার পোর্টে । প্রচন্ড বাতাস ঠান্ডা । ভোরে ফজরের নামাজ পড়লাম ।
চা আনতে অনেক দুর যেতে হলো । আনতে আনতে ঠান্ডা । বিমান কবে আসবে তা অনিশ্চিত । সবারই কাশি ও ঠান্ডা লেগে গেল । সকালে নাস্তা দিল বিমান থেকে দিয়েছে।
হাজীরা ঝগড়া করছে মোয়াল্লেমের সাথে। বসে রইলাম সারা সকাল । দুপুরে কুপন দিয়ে খাওয়া । দুর থেকে খাওয়া নিয়ে আসলাম । পছন্দমত খাওয়া আগেইশেষ ।
মানুষের স¦ার্থপরতা দেখলাম । মাওলা হাজীদের টাকা নিজের মত নিয়ে নিতে চায় । আমারটা দিয়ে দিলাম আল্লাহর ওয়াস্তে । এও এক আজব কারবার ।
বিকেলের দিকে মালপত্র বিমান এর হাওলা করে দিলাম ।
ওজন কিছুবেশী ছিল । ২/৩ জন মিলে এ্যাডজাষ্ট করে দিলাম । রাত ১০ টার দিকে আছর পড়ে মসজিদে (এয়ারপোর্টের নামাজের এলাকা) মোবাইল চার্জ করছি । এ সময় বোর্ডিং এর ঘোষণা হলো । বাথরুম থেকে ওযু করে রওয়ানা হলাম ।
৪০০ যাত্রীর বিশাল লাইন পথে বসে গেলাম । ইমিগ্রেশন নিয়ে নানান দুর্ভোগ তিন চার ঘন্টা অপেক্ষা । আমি সবার শেষে । বিমান ছাড়ে ছাড়ে অবস্থা । আমাদের এখনো ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার হয় নাই ।
বিশ্রী অভিজ্ঞতা। হাজীদের এত কষ্ট হাজীরাও মারামারি করে ঢুকতে চায় এ ওর আগে যেতে চায় । সব মিলিয়ে এক অনাসৃষ্টি । যাক এসব পার হলাম । ১টা কোরান দিল আকবরীয়া হজ্জ এর জন্য ।
বিমানেও আমরা প্রায় শেষ গ্র“প। সামনে জায়গা হলো, আবার দেশের পথে । মধ্যখানে প্রায় দেড়মাস আল্লাহর পবিত্র ভূমি মক্কা মদিনাতে কাটানোর সৌভাগ্য দিলেন আল্লাহ । আমিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।