আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশের বাজেটের টাকায় যুক্তরাষ্ট্রে আনন্দভ্রমণ!

আমি নিজের মাঝে খুজে পেতে চাই আমার আমাকে। যেতে চাই বহুদূর। পুলিশের বাজেটের টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল। এ ভ্রমণে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। পুলিশের বাজেটের টাকায় এ ধরনের সফরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব।

সম্ভাব্য সফরকারীদের দাবি, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ যেন আরও বেশিসংখ্যক লোক পাঠাতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করতেই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। কিন্তু ভ্রমণের উদ্দেশ্য বিষয়ে নথিতে বলা হয়েছে, ‘জাতিসংঘ সদর দপ্তর পরিদর্শনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফর’। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জাতিসংঘ থেকে এ বিষয়ে কোনো আমন্ত্রণপত্র আসেনি। নিজেরাই এ ধরনের প্রস্তাব তৈরি করেছেন। এ সফর মূলত ‘আনন্দভ্রমণ’।

সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রসচিব এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিপক্ষে মতামত দিয়ে বলেছেন, এ সফর অত্যাবশ্যকীয় নয়। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী এ প্রস্তাবে সুপারিশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এ বিষয়ে সরকারি আদেশও জারি হয়েছে। পুলিশ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজ ১৭ জুন দলটি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবে। এ দলে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ও তাঁর একান্ত সচিব (পিএস) হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ছায়েদুল হক, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম ও মহিউল ইসলাম।

এ ছাড়া ব্যক্তিগত খরচে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীও তাঁদের সঙ্গে যাচ্ছেন। ২২ জুন সফর শেষ হওয়ার কথা। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শান্তিরক্ষা মিশনে যাতে বেশি লোক পাঠানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনার জন্যই আমরা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছি। ’ তিনি বলেন, ‘কোন খাত থেকে টাকা ব্যয় হবে আমার ঠিক জানা নেই, তবে বোধ হয় পুলিশের ভ্রমণ খাত থেকে। আমি না গেলেও চলে।

কিন্তু আইজিপি তো এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট (কনসার্ন)। তাঁর তো যেতেই হবে। এ সফর পুলিশ সদর দপ্তরই আয়োজন করেছে। ’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার স্ত্রী সব সময় আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত খরচে বিদেশ ভ্রমণে যায়। ’ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয় যে কাজের জন্য এ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে, সে কাজেই এ টাকা ব্যয় করার নিয়ম।

এ ছাড়া পুলিশের ভ্রমণ বাজেটের টাকা কোনোভাবেই এ ধরনের সফরে ব্যয় হতে পারে না। কাজের প্রয়োজনে পুলিশের টিএ বা ডিএ এর জন্য এ খাতে বরাদ্দ থাকে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত কমিটির সভাপতির জন্য পুলিশের বাজেট থেকে ভ্রমণের অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। জানতে চাইলে সাবেক অর্থসচিব আকবর আলি খান প্রথম আলোকে জানান, সংসদীয় কমিটির সভাপতির টিএ বা ডিএ তাঁদের সংসদের সরকারি বাজেট থেকেই হওয়া উচিত। পুলিশ বাজেট থেকে তাঁদের কোনো সফরে যাওয়া ঠিক নয়।

এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী বা আইজিপি কীভাবে এ ধরনের সফরে যাচ্ছেন, সে বিষয়টি সরকারের দেখার বিষয়। সূত্রমতে, ৩ জুন জারি হওয়া এ-সংক্রান্ত সরকারি আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিদর্শন দলের যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রয়োজনীয় ব্যয় পুলিশ বাজেটের ভ্রমণ ব্যয় খাত থেকে নির্বাহ করা হবে। প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব ও পুলিশ সদর দপ্তরের দুই পুলিশ সুপার বিধি মোতাবেক অগ্রিম টাকা ওঠাতে পারবেন। তাঁদের বিদেশে অবস্থানকাল কর্তব্যকাল হিসেবে গণ্য হবে। অনুমোদিত সময়ের অতিরিক্ত সময় তাঁরা বিদেশে অবস্থান করতে পারবেন না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশের দুজন সাবেক আইজি নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, পুলিশের বাজেট থেকে এভাবে প্রতিমন্ত্রী, আইজি ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিদেশে সফরে যেতে পারেন না। পুলিশের বাজেট থেকে প্রশিক্ষণ বা ভ্রমণ বা যেকোনো আয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই যাওয়া উচিত। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী বা তাঁর পিএসের ভ্রমণ খরচ মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকেই হওয়া উচিত। জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমি মনে করি না এর কোনো “নিউজ ভ্যালু (সংবাদমূল্য)” আছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়।

’ তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ বাজেট থেকে আগেও হাজার হাজার সফরের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.