গ্রীকদের দেবতা স্বর্গের রাজা জিউস। একদিন এক ভোজসভায় সমস্ত দেব দেবীকে তিনি নিমন্ত্রন করলেন। কিন্তু বাদ পড়লেন একজন। তিনি হচ্ছেন অশান্তির দেবী। অশান্তি দেবী খুন্ন হলেন।
আড়াল থেকে দেবতাদের সভায় তিনি একটি সোনার আপেল ফেলে দিলেন, আর আপেলটির গাঁয়ে লিখে দিলেন ‘সবার চেয়ে যে সুন্দরী এ আপেলটি তার জন্য। ‘
এখন দেবীদের মধ্যে ছিলেন তিনজন পরমা সুন্দরী- হীরা, অ্যাথিনি আর আফ্রোদিতি। তিনজন ই দাবি করলেন আপেলটি। শেষে যখন নিজেদের মধ্যে মিমাংসা হল না তখন তারা নেমে এলেন পৃথিবীতে। ট্রয় এর রাজপুত্র প্যারিস- পরম সুন্দর পুরুষ বলে তার অসম্ভব খ্যাতি।
পাহাড়ের উপর বসে তিনি পিতার মেষ পাহারা দিচ্ছিলেন। তিন দেবী এসে বিচারের ভার দিলেন তার উপর।
কিন্তু সেই সঙ্গে তিনজন ই নানা রকম লোভ দেখাতে ছারলেন না। হীরা দেব্রাজ জিউস এর পত্নী, তিনি লোভ দেখালেন ক্ষমতার। অ্যাথিনি লোভ দেখালেন জ্ঞান ও বিদ্যার।
আর অ্যাফ্রদিতি? তিনি লোভ দেখালেন ভালবাসার। বললেন, “ ক্ষমতা আর বিদ্যা দিয়ে কি হবে প্যারিস, আমাকে যদি তুমি সব সেরা সুন্দরী মেনে নিয়ে আপেলটি দাও তা হলে আমি পৃথিবীর সব সেরা সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব। “
প্যারিস আর দ্বিরুক্তি না করে অ্যাফ্রদিতি কেই দিয়ে দিলো আপেলটি। ফলে আফ্রদাইত যেমন তার উপর খুশি হলেন তেমনি দুজন গেলেন ভীষণ রেগে গেলো। তারা ঠিক করলেন প্যারিসকে এর শাস্তি দিতে হবে।
গ্রীস দেশে স্পার্টা রাজ্য, তার রাজা মেনেলাস। তার স্ত্রী হেলেন ছিলেন তখন পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। আফ্রদাইত এর চক্রান্তে প্যারিস স্পার্টা রাজের অতিথি হলেন, তারপর একদিন সুযোগ বুঝে হেলেন কে নিয়ে পালিয়ে এলেন নিজের দেশ ট্রয় এ।
গ্রীকরা এ অপমান সহ্য করতে রাজি হল না। মেনেলাসের দাদা আগামেমনন ছিলেন গ্রীসের সম্রাট।
তিনি গ্রীসের সমস্ত রাজাদের একত্র করলেন। সদলবলে ট্রয় আক্রমন করলো গ্রীকরা। অবরোধ করে রাখল প্রাচীর ঘেরা শহর।
শুরু হল যুদ্ধ। বিখ্যাত ট্রয় যুদ্ধ।
এই নিয়েই লেখা হোমারের ইলিয়াড কাব্য। ট্রয় এর আরেক নাম ইলিয়াম। ট্রয় এর অধিবাসীদের বলা হত ট্রোজান। দশ বছর ধরে যুদ্ধ চলল। হাজার হাজার গ্রীক ও ট্রোজান নিহত হল।
তাদের মধ্যে ট্রোজানদের বীর সেনাপতি হেকটর এবং গ্রীক দের শ্রেষ্ঠ বীর অ্যাকিলিসও ছিল। কিন্তু জয় পরাজয় নিস্পত্তি হল না। তারপর হঠাত একদিন গ্রীকরা লড়াই ছেড়ে দিয়ে দেশে ফেরার জন্য জাহাজে গিয়ে উঠলো। নগরের বাইরে যুদ্ধের মাঠে পড়ে রইলো একটা প্রকাণ্ড কাঠের ঘোড়া।
ট্রোজানরা ভাবল গ্রীকরা বুঝি ঘোড়া ফেলে পালিয়েছে।
বিজয়ের নিশান হিসেবে মহা সমারোহে তারা সেটা তেনে নিয়ে এলো শহরের মধ্যে।
আসলে সেটাই ছিল গ্রীকদের একটা কৌশল। ওই বিরাট কাঠের ঘোড়াটা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে তার পেটটা ছিল ফাঁপা আর তার মধ্যে লুকিয়ে ছিল বাছাই করা যত গ্রীক সৈন্য। রাত দুপুরে যখন সমস্ত ট্রোজানরা উতসব কোলাহলে মত্ত, তখন ওই গ্রীক সৈন্যরা চুপি চুপি ঘোড়ার ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে নগরের ফটক খুলে দিলো।
অন্য গ্রীক সৈন্যরা সত্যি সত্যি জাহাজে চড়ে পালায় নি, তারা কাছে পিছেই লুকিয়ে ছিল।
ফটক খুলতেই তারা দলে দলে নগরের মধ্যে ঢুকে পড়লো।
তারপর?? তারপর আর কি, শুরু হল হত্যাকাণ্ড, লুটপাট। আগুন জ্বালিয়ে সমস্ত শহর পুরিয়ে ধ্বংস করে দিলো তারা।
এইভাবে শেষ হল দশ বছরের ট্রয় যুদ্ধ। হেলেনকে উদ্ধার করে গ্রীকরা ফিরে এলো নিজেদের দেশে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।