লিখে খাই, সবার ভাল চাই
অন্ধকারে ঢিল ছুড়লে যা হয়, তা-ই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অন্ধকারেই ঢিল ছুড়লেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সরকার আর বিরোধীদল যখন মুখোমুখি তখন প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রস্তাব দিলেন। বললেন, অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপিও আসতে পারে। এজন্য তাদের সংসদে বিল আনতে হবে।
প্রশ্নটা এখানেই? প্রধানমন্ত্রী তাহলে এতদিনে বুঝেছেন যে তিনি তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে ঠিক করেননি। আর বোঝার কারণেই তিনি নতুন করে প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও এ প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তিনি অন্তর্বর্তী নয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারই চান। প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী নেত্রী যা-ই বলুন, জনগণ কিন্তু বলছে অন্য কথা।
গতকালই এক আড্ডায় চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছিল এ নিয়ে। পক্ষ-বিপক্ষে তুমুল যুক্তি। পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন এক বৃদ্ধ। তিনি বললেন, বাবারা তোমরা যত যুক্তিই দাও না কেন আসল কথা কিন্তু অন্য। তিনি গান ধরলেন ‘চাঁদের গায়ে দাগ লেগেছে আমরা ভেবে করবো কি? চাঁদের গায়ে দাগ লেগেছে...।
’ আধ্যাত্মিক এ গানের মর্মার্থ কি জানি না। তবে এটা বুঝি যে চাঁদ নিষ্কলঙ্ক। চাঁদের গায়ে দাগ লাগানো হয়েছে। সেটা কিভাবে আধ্যাত্মিক জগতের মানুষেরা বলতে পারবেন। এখন দেশে আওয়ামী লীগকে নিয়ে যে একটা আধ্যাত্মিক খেলা চলছে এটা বুঝতে বাকি নেই বাবা।
বৃদ্ধ বলতে লাগলেনÑ সেই স্বৈরাচারী এরশাদ বলো আর গণতন্ত্রের খালেদা বলো দু’জনের গায়েই কিন্তু দাগ লেগে আছে। এরশাদ যেমন ’৮৬-এর নির্বাচন করে, খালেদা তেমন ’৯৬-এর ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে নিজেদের শরীরে দাগ লাগিয়েছিলেন। এর গন্ধ এখনও মানুষের নাকে লাগছে। এ গন্ধ থেকে একমাত্র মুক্ত হলো আওয়ামী লীগ। আর এই দাগমুক্ত আওয়ামী লীগকেই একটি মহল দাগ লাগানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ কিভাবে এ ফাঁদে পা দিচ্ছে এটা ভেবেই চিন্তিত হই। বৃদ্ধ বললেন, বাবা তোমরা যা-ই বলো না কেন, আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনা শেষ মুহূর্তে এসে হলেও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পারবেন। আর সে সময় তিনি সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন। তিনি এরশাদ কিংবা খালেদার মতো ভোটারবিহীন নির্বাচন বলেন আর বিতর্কিত নির্বাচন বলেন সেদিকে পা বাড়াবেন না। তিনি বিএনপির মতো বড় একটি দলকে বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করবেন না।
যে নির্বাচন তার দল আওয়ামী লীগের গায়ে দাগ লাগিয়ে দেয়। আর এ দাগ লেগে গেলে এখন যেমন জোর গলায় বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টিকে দোষারোপ করতে পারেন, তখন সেটা পারবেন না। কারণ, তখন আওয়ামী লীগও নিজের শরীরে দাগ লাগিয়ে তাদের দলভুক্ত হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন হলোÑ আওয়ামী লীগ এটা চায় কি চায় না? বৃদ্ধ বললেন, তোমারা এখানেই থামো। দেখ কি হয়? চাঁদের গায়ে দাগ লেগেছে, তোমরা ভেবে করবে কি? চাঁদের গায়ে দাগ লেগেছে....।
গান গাইতে গাইতে বৃদ্ধ চলে গেলেন তার পথে। আড্ডায় ফের মনোযোগ সবাই। বৃদ্ধ কি ঠিক বলেছেন? একজন বললেন, হয়তো ঠিক। নয়তো নয়। তবে, প্রধানমন্ত্রী যে অন্ধকারে ঢিল ছুড়েছেন এটা ঠিক।
লন্ডনে বিবিসির হার্ডটকে বসে তিনি যে কথা বলেছেন, তাতে মনে হলো সহজ কথা যায় না বলা সহজে। প্রধানমন্ত্রী বলতে পারতেন, আমরা এ প্রস্তাব দিলাম। বিরোধী দল রাজি থাকলে সংসদে বিল আনবো। সবাই মিলে পাস করাবো। আর বিরোধী দল যদি অন্য কোন ফর্মুলার সরকার চায় সেটা সংসদে এসে বলুক।
আমি কথা দিচ্ছি নতুন করে আবার সংবিধান সংশোধন করা হবে। তাহলে কথা সহজ হতো। পেঁচিয়ে কথা বলার মধ্যে কি এমন মজা আছে তা বুঝি না। একজন বললেন, ঠিক বলেছিস। এক রাতে আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের বাসায় গেলাম।
ভাই আমাকে দেখে খুব খুশি। ভাবীকে বললো, ও আজ আমার সঙ্গে খেয়ে যাবে। ভাল কি আছে রাঁধো। ভাবী সে মতে রাঁধতে গেলেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রান্না শেষ।
ভাবী ডাইনিং টেবিলে সব সাজিয়ে আমাদের ডাকলেন। ভাই আমাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলেন। মাছ, মাংস আরও কত কি? খেতে বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে গেছে। চারদিকে অন্ধকার।
পাশের টেবিলে ভাই বসা, তাকেও দেখা যাচ্ছে না। মিনিট খানেক অপেক্ষার পর ভাই ডাকলেন, কই তুমি? মোমবাতি দাও। দিয়াশলাই পেয়েছো? ওপাশ থেকে কোন রা নেই। এভাবে ভাই তিন-চার বার জিজ্ঞাসা করার পর কোন জবাব পেলেন না। এবার ভাই ক্ষেপে গিয়ে বললেন, কি দিয়াশলাই পেয়েছো? এবারও কোন জবাব নেই।
কই মরে টরে গেলে নাকি? এবার ভাবী উত্তর দিলেন, কেন মাথা নেড়ে না করছি দেখো না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।