আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইফতারির আধা কেজি জিলাপি্ ও ১৬০ কি.মি. ড্রাইভ…

আজ সকালে ঘুম থিকে উঠেই কেন যেন মনে হল ইফতারিতে জিলাপি খাই না বহুদিন। আসলে এই রোজায় জিলাপি খাওয়াই হয় নি। ইদানিং ইফতারির ধরনটাই গেছে বদলে। প্রতিদিন একটা ছোট আনারসের জুস আর একটা Snickers কিনে ড্রয়ারে রেখে দেই। ইফতারের সময় হলে ডেস্কে বসেই কাজ করতে করতে ইফতার শেষ।

ইফতারের কোন আলাদা সময় এখানে পাওয়া সম্ভব নয়। এ অফিসে মুসলিম বলতে আমি আর শ্রিলঙ্কান এক মেয়ে। তাকেও দেখি এ রকম ভাবেই ইফতার করতে। আর যেদিন বাসায় থাকি সেদিন ইফতার আর ডিনার এক সাথে। ঢাকার মত আয়োজন করে ইফাতার করা আর হয়ে ওঠে না।

অবশ্য যাদের বউ পোলাপান আছে তারা ছুটির দিনে একটু আয়োজন করে ইফতার করে। কিন্তু আমার মত একা মানুষের জন্য ইফারের এত আয়োজন বাহুল্য মনে হয়। কিন্তু আজ কেন যেন এক পিস জিলাপির জন্য মনটা বড়ই আনচান আনচান করছে। কিন্তু সমস্যা হল কাছে পিঠে কোথাও জিলাপি পাওয়া সম্ভব না। কাছেপিঠে মানে ৫০-৬০কি.মি. এর মধ্যে আমার জানা মতে কোথাও জিলাপি পাওয়া যায় না।

সিডনীতে বেশ কিছু এলাকা আছে যেগুলো বঙালী প্রধান এলাকা, যেমন – রকডেল, লাকেম্বা , ইস্টলেক। এ সব এলাকায় রোজার মাসে জিলাপী পাওয়া যায়। কিন্তু আমি থাকি সিডনী সিটি থেকে একটু দুরে। জি.পি.এস. এ দেখলাম ইস্টলেক পর্যন্ত দুরত্ত ৮২ কি.মি. তার মানে যাওয়া-আসা ১৬৪ কি.মি., কম পক্ষে ৩ ঘন্টা। একবার মনেহল, একপিস জিলাপির জন্য এই দুরত্ত পাড়ি দেয়ার কোন মানে হয় না।

আমি মোটেই ভোজন রসিক নই। আমি আক্ষরিক অর্থেই খাই বেচে থাকার জন্য, তিনবেলা নিয়ম করে সাদামাটা কিছু খেতে পারলেই আমার দিন চলে যায়। কিন্তু আজ কি যেন হয়েছে, কিছুতেই গাঢ় ঘিয়ে ভাজা এক টুকরো জিলাপির ছবি মন থেকে যাচ্ছে না। সকাল সাকাল ঘরের কিছু কাজ করলাম, কাপড় ধুতে মেশিনে দিলাম, কিছু থালা বাটি ধুলাম। কিন্তু জিলাপির গন্ধ, জিলাপির কুড়মুড়ে স্বাদ আর মিষ্টি রসের কথা ঘুরেফিরে মনের মধ্যে ঘুরতে থাকল।

মনে হচ্ছে আজ এক টুকরো জিলাপি না খেতে পেলে দুনিয়াতে নিশ্চই কোন ঘোর অনর্থ হয়েই যাবে। এক সময় আর পারলাম না গাড়ীর চাবিটা নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। ৩ ঘন্টা ড্রাইভ করে আধাকেজি জিলাপী কিনে আনলাম, সাথে কিছু খেজুর। এই মাত্র বাসায় এসে পৌছলাম। আধাকেজি জিলাপী ৮.০০ ডলার, গাড়ীর তেল খরচ ২০.০০ ডলার(আনুমানিক), হাইওয়েতে টোল ১২.০০ ডলার, মোটমাট ৪০.০০ ডলারের জিলাপি।

এক সময় এই জিলাপী কত সহজ লভ্যছিল। ঢাকায় আমাদের বাসার গলির মোড়েই খুব বিখ্যাত একটা দোকান ছিল, যেখানে ঘিয়ে ভাজা মোটা মোটা লাল লাল কুড়মুড়ে রসালো জিলাপী পাওয়া যেত। কত রকমের জিলাপী –তেলে ভাজা, ঘিয়ে ভাজা, হালকা ভাজা , কড়া ভাজা, মোটা জিলাপী, সরু জিলাপী আহা কত জিলাপী..। আজ সত্যিই বাসার ইফতার খুব মনে পড়ছে। ছোলা , মুড়ি, বেগুনী, পিয়াজি, হালিম, পেপের শরবত, খেজুর, আলুর চপ, কাবাব আর এক পিস জিলাপী।

বেসির ভাগই মায়ের হাতে বাসায় বানানো। আহা…। এখন ৪:৪০ বাজে। আজ এখানে ইফতার ৫:১৯ এ। সামনে এক গ্লাস জুস আর একটি প্লেটে কিছু খেজুর আর আধাকেজি জিলাপি নিয়ে বসে আছি।

কখন ইফতার হবে… সবাইকে রমজান মোবারক… ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.