বুদ্ধিজীবী হতে ডিগ্রী লাগেনা। আধুনিক সভ্যতার কৃতিত্ব কাকে দেয়া যায়? আগুনকে? চাকাকে? নাকি বিদ্যুৎ কে? তর্কবাজরা এটা নিয়ে বিতর্ক করুক। আসুন আমরা পাশ কাটাই। বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক সভ্যতা অকল্পনীয়। রাতের আঁধারে আমাদের ঘরে চাঁদের আলোর বান নামে এই বিদ্যুতের কল্যাণে।
বৈদ্যুতিক বাতির কল্যাণে। বৈদ্যুতিক বাতি কে আবিষ্কার করেছেন। চোখ বন্ধ করে বলা যায় আলেসান্দ্রো ভোল্টা। আপনি নিশ্চয়ই ফিক করে হেসে ফেলেছেন। কারণ উত্তরটা আপনার জানা।
সঠিক উত্তর হচ্ছে, টমাস আলভা এডিসন। আমার আজকের আলোচনায় মহান এই ব্যক্তিটির কথা আসবে। আসবে বিদ্যুতের কথা, বৈদ্যুতিক চেয়ারের কথা। তাহলে শুরু করা যাক।
চিত্রঃ টমাস আলভা এডিসন
মধ্যযুগে তলোয়ারের কোপে শিরোঃচ্ছেদ করে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হত।
অনেক জায়গায় হাত পায়ে পেরেক ঠুকে ক্রসে ঝুলিয়ে রাখা হত মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত। যিশু খ্রিস্ট কে যেমন ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুদন্ডের আরো বিবিধ বিধান চালু করেছিলো বিভিন্ন দেশ। তবে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মারার সিস্টেম বেশী ফলো করা হত। এক সময় মানুষ আবিষ্কার করল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা আসলে একটূ ধীর এবং কষ্টকর পদ্ধতি।
১৮৮৬ সালের শুরুর দিকের কথা। নিউ ইয়র্ক রাজ্য সরকার মৃত্যদন্ড কার্যকরের বিকল্প কোন পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য একটি আইনি কমিশন গঠন করলেন।
বিজ্ঞানী এডিসিনের বিদ্যুৎ কোম্পানীর নাম “দ্যা এডিসন জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানী”। তারা ডিসি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতেন। এডিসনের প্রতিদ্বন্দী ছিলেন এসি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জর্জ ওয়েস্টিংহাউজ।
যে বিদ্যুৎ প্রবাহ সর্বদা এক দিকে প্রবাহিত হয় তাকে বলা হয় ডাইরেক্ট কারেন্ট বা ডিসি। অন্যদিকে যে বিদ্যুৎ প্রবাহ একটি নির্দিষ্ট বিরতিতে দক পরিবর্তন করে উভয় দিকে প্রবাহিত হতে পারে তাকে বলা হয় এসি বা অল্টারনেটিভ কারেন্ট।
চিত্রঃ জর্জ ওয়েস্টিনহাউজ
ডিসি জেনারেটর থেকে কয়েক মাইল দূরের গ্রাহককে এডিসন সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। এই সীমাবদ্ধতার কারণে এডিসন প্রতিদ্বন্দীতায় ওয়েস্টিনহাইজের কাছে পিছিয়ে পড়ছিলেন। এডিসন নতুন প্রচারণা শুরু করলেন যে এসি বিদ্যুতের ব্যবহার নিরাপদ নয়।
তিনি তার মতের সপক্ষে প্রমান দিতে ১৮৮৭ সালে ওয়েস্ট অরেঞ্জ, নিউ জার্সিতে জনসম্মুখে একটি প্রদর্শণির ব্যবস্থা করলেন। একটি ধাতব পাতের সাথে ১০০০ ভোল্টের ওয়েস্টিনহাউজের এসি জেনারেটর যুক্ত করলেন এবং তার উপর দিয়ে ডজন খানেক প্রানী হাঁটতে বাধ্য করলেন। নিরীহ প্রানীগুলো তড়িৎপৃষ্ট হয়ে মারা গেলো। সেই দিন প্রেসগুলো ছাপানোর জন্য একটা মজার টপিকস পেয়ে গেলো। বিভৎস এইভ বৈদ্যুতিক মৃত্যুকে তারা সঙ্গায়িত করলেন ইলেক্ট্রোকিউশান হিসেবে।
চিত্রঃ সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ।
১৮৮৮ সালের ৪ঠা জুন, নিউ ইয়র্ক এর আইন পরিষদ দেশের মৃত্যুদন্ডের নতুন পদ্ধতি হিসেবে “ইলেক্ট্রোকিউশান” কে পাশ করালেন। প্রকৌশলীরা এসি ডিসি দুই ধরণের চেয়ারের নকশা করলেন। একটি কমিটি নির্বাচন করা হলো চেয়ার নির্ধারণের জন্য। এডিসন ব্যাপক প্রচারণা চালাতে শুরু করলেন যাতে মৃতুদন্ড কার্যকরের জন্য এসি চেয়ার ব্যবহার করা হয়।
তার বিশ্বাস ছিলো যে বিদ্যুতে মানুষের মৃত্যু হয় সেই ধরণের বিদ্যুৎ ভোক্তারা গৃহে ব্যবহার করতে চাইবেন না।
হ্যারল্ড ব্রাউন একজন নামকরা আবিষ্কারক। তিনি সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক পোস্ট পত্রিকায় চিঠিপত্র কলামে একটা লেখায় লিখেছেন যে, একজন তরুন যুবক এসি বিদ্যুত বাহী টেলিগ্রাফের তার স্পর্শ করার মারা গেছেন। এডিসন ব্রাউনকে ভাড়া করলেন গবেষণার জন্য। হ্যারল্ড এবং তার সহকারী ড. ফ্রেড পিটারসন এডিসনের জন্য একটি বৈদ্যুতিক চেয়ার নির্মান করলেন।
এডিসন এই চেয়ার দ্বারা জনসম্মুখে প্রমাণ করতে সমর্থ হলেন যে ডিসি বিদ্যুতে প্রানী কষ্ট পায় ঠিক কিন্তু মারা যায় না অন্যদিকে এসি বিদ্যুৎ প্রানীকে দ্রুত মেরে ফেলে।
পিটারসেন ছিলেন চেয়ার নির্বাচনকারী সরকারী কমিটির প্রধান। তাই কমিটি যখন ঘোষণা করলেন মৃত্যুদন্ডের চেয়ার হবে এসি বিদ্যুতের তখন খুব বেশী কেউ অবাক হলেন না। বরং সেটাই স্বাভাবিক ছিলো। এডিসন একজন প্রতিভাধর বিজ্ঞানীই ছিলেন না সেই সাথে ছিলেন ঝানু ব্যবসায়ী।
১৮৮৯ সালের ১লা জানুয়ারী প্রথম বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। ওয়েস্টিনহাউজ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিলেন। তারা কারাকর্মকর্তাদের কাছে এসি জেনারেটর বিক্রির প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিলেন। তারা প্রথম ইলেক্ট্রিক চেয়ারে মৃত্যদন্ড প্রাপ্ত আসামীর পক্ষে নিজেদের খরচে আপিল করেন। তারা এই মৃত্যুকে নিষ্ঠুর এবং অস্বাভাবিক হিসেবে অভিহিত করেন।
এডিসন এবং ব্রাউন প্রমান করতে সমর্থ হন যে ই মৃত্যুদন্ড অন্য পদ্ধতির চেয়ে কম কষ্টকর। নিউ ইয়র্ক রাজ্য আপিলে জয় লাভ করে। দীর্ঘদিন মানুষ ইলেক্ট্রোকিউশানকে ওয়েস্টিনহাইজ বলত।
সময়ের আবর্তে খুব দ্রুত প্রমাণিত হয় যে এসি টেকনোলজি ডিসি টেকনোলজির চেয়ে অনেক আপডেট, আর সেজন্য এসি বিদ্যুতের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে। জয়তু এডিসন, জয়তু ওয়েস্টিনহাউজ।
চিত্রঃ বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার দৃশ্য
চিত্রঃ বৈদ্যুতিক তারে কাজ করছেন একজন বিদ্যুৎ কর্মী।
চিত্রঃ ভাইকিং
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।