“আমাকে যদি জেলখানায় পাঠানো হয় কখনো, সঙ্গে একটা সাবান নিব”।
“সাবান?”
“হ্যাঁ। আমাকে একবেলা খাবার দিক্,কিচ্ছু বলবো না। রোজ রাতে পুলিশ এসে পেটাক্, কিচ্ছু বলবো না। নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের করবে!করুক্!কিন্তু যদি এক টুকরা সাবান ওরা আমাকে না দেয়, লুকিয়ে রাখবো ধারালো ব্লেড!প্রথম সু্যোগে ধমনি কাটবো।
অথবা বন্দিদের সাথে ষড়যন্ত্র করে হাংগামা বাঁধিয়ে দেব। ভীষণ হাংগামা!পুলিশ ব্যস্ত লাঠি চা্র্জে, সেই ফাঁকে দেয়াল টপকে দোকানে যাব। একটা সাবান ভিক্ষা চাইব”।
“অদ্ভুত মানুষ আপনি! করবেন কী সাবান দিয়ে?”
“হাত ধোব। ঘন্টায় পাঁচবার হাত ধুই আমি।
দেখেন না,কেমন কুঁচকানো হাত আমার! বুড়াদের হাতের মতোন!”
“কেন এত ঘন ঘন হাত ধোন? জীবাণু ধ্বংস?”
“না, পাপ ধুই। হাত দুইটা অনেক পাপী। অ-নে-ক!”
“কিসের পাপ?”
“তাকে একটা চড় মেরেছিলাম!”
“কাকে?”
“যাকে খুব ভালবাসতাম, তাকে। ওর উপর অনেক রাগ ছিল আমার। অনেক রাগ!অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলেও মাথায় রক্ত উঠে যেত।
দুই বছরের প্রেমের সময় এক ফোঁটা শান্তি দেইনি মেয়েটাকে। একদিন তো চড় মেরে বসলাম। মাথার ঠিক ছিল না। অনেক জোরে চড় মেরেছিলাম। ফর্সা গালে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ পড়ে গিয়েছিল।
কেমন একটা লাল ছাপ! দেখলে মনে হত আরো মারি………আরো মারি……”
“তারপর?”
“অনেক মানুষ ছিল সেখানে। সবাই হাঁ করে তাকাচ্ছিল। বুঝলেন, চড়টা মারার পর ও না আমাকে কিচ্ছু বলে নাই। একটা শব্দও না! মনে হয় এত অবাক হয়েছিল, কথা বলতেও ভুলে গিয়েছিল। এরপর অবশ্য আর কোনদিন আমার সাথে দেখা হয়নি তার।
কথাও হয়নি। সেই শেষ দেখা………অপমানে চলে গেল মেয়েটা। আর ফিরেও তাকায়নি। কক্ষনো না”
“আর কোন খবর পাননি তার?”
“অনেক ধুমধাম করে ওর বিয়ে হয়েছিল। শুনেছি, আমেরিকায় থাকে।
অনেক সুখে আছে। ফুটফুটে একটা মেয়েও হয়েছে। অথচ কথা ছিল আমি সুখে থাকব। ঐ থাপ্পরটা সেদিন না মারলে, ও কখনো চলে যেত না। অনেক ভাল মেয়ে ও।
কখনো আমাকে রেখে যেত না। আমার সাথে ওর বিয়ে হত। কত সুখে থাকতাম! পরির মতো একটা ছোট্ট মেয়ে থাকত আমার!হলুদ ফ্রক পরে বাবা বাবা বলে পুরা ঘরে টলমল করে হাঁটতো। আর আছাড় খেত……আবার হাঁটত……আবার আছাড় খেত……আমি তখন ওর আঙ্গুল ধরে ঠিক ঠিক হাঁটতে শেখাতাম। কিন্তু কিচ্ছু হল না।
আমি কুত্তার মতো এখন একলা একলা ঘুরি রাস্তায় রাস্তায়। আর আমার এই হাত দুইটা নেড়ি কুত্তার ঘিনঘিনে লেজের চেয়েও নোংরা!একটা আস্ত কুত্তার বাচ্চা আমি!”
আমার সহযাত্রী একটু থেমে নিঃশ্বাস নেয়। পকেট থেকে বের করে একটা গোলাপি প্যাকেট। আর ব্যাগ থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতল। জানালা দিয়ে মাথা বের করে।
হাত ভিজিয়ে প্যাকেটের সাবান বের করে ঘষতে থাকে। সাদা ফেনার উপর রঙহীন পানি ঢালে। কয়েকটা বুদবুদ বাতাসে উড়ে যায়। রুমাল দিয়ে খুব মনো্যোগের সাথে হাত মুছে। শুকনো হাত নাকের কাছে এনে খানিকক্ষণ সাবানের গন্ধ শুঁকে।
তখন আমার তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ হতে থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।