আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি হিসেব প্রণব মুখার্জিকে অভিনন্দন । বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হওয়া চারটিখানি কথা নয়। বাঙলা ভাষাভাষী মানুষদের জন্য এ এক বিরল সম্মান। তবে এই পদে বসে তিনি বাঙালিদের, বিশেষ করে বাংলাদেশি বলে আমরা যারা পরিচিত তাদের কথা মাথায় রাখবেন তো? নড়াইলের জামাইবাবুকে নিয়ে আমাদের এই যে এত উচ্ছ্বাস তা তিনি মনে রাখবেন তো? নাকি ভারতের পুর্ববর্তী রাষ্ট্রপতিদের মতো শুধু সৌজন্য পালনেই ব্যস্ত থাকবেন?
প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সাথে ভারতের বেশকিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের আজও কোন সুরাহা হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মানুষ সবসময় তার ন্যায্য হিস্যাটাই চেয়েছে।
কিন্তু ভারত সরকারের কাছ থেকে আমরা হতাশা ছাড়া কিছু পাইনি। পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কাছেও আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন দিলেও মমতা দিদিই আমাদের দাবির বিরোধিতা করেছেন। তার বিরোধিতার কারণেই আটকে গেছে তিস্তা নদীর পানিচুক্তি। তাই প্রণব বাবু রাষ্ট্রপতি হয়ে আমাদেরকে কি একটু আশার আলো দেখাবেন?
প্রণব মুখার্জীকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কুটনৈতিক বন্ধু হিসেবে ধরা হয়।
তবে এই বন্ধুত্বের খাতিরে যে বাংলাদেশ অনেক কিছু পেয়েছে তা কিন্তু নয়। ভারতের সাথে ট্রানজিট, টিপাইমুখ বাঁধ, তিস্তার পানি বণ্টন এবং সীমান্তে হত্যা এই বিষয়গুলো সবচেয় বেশি আলোচিত হয়েছে এই সময়ে। এবং নানা ধরনের বানিজ্য চুক্তিও আছে এর মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত সরকার সব কিছুতেই কেন যেন গোপনীয়তা অনুসরণ করছে। যার ফলে দু দেশের জনগনের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে।
যা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করছে। এই অস্পষ্টতা সরিয়ে স্বচ্ছতা আনতে প্রণব মুখার্জির কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক।
ভারত উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলেও নিজেদের স্বার্থে তারা এক চুলও নড়তে নারাজ। এমন এক অবস্থানে দাঁড়িয়ে প্রণব বাবু কি আমাদের নানা চাওয়া পাওয়া পুরণ করতে পারবেন? বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এখন একটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা করার কিছু নেই।
কিন্তু যেটা আলোচ্য সেটা হলো দু দেশের কুটনৈতিক পর্যায়ে নানান প্রতিশ্রুতির পরও সীমান্তে হত্যা আজও বন্ধ হয়নি। তিনি কি পারবেন এই হত্যালীল বন্ধ করতে? অবশ্য খবদারির এই বিশ্ব রাজনীতিতে এমন হত্যা না চালালে খবরদারিটা জমে না।
দুই বাংলার সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে প্রণব মুখার্জি বিরাট ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু কথা হচ্ছে ভারতের বলিউডের যে বিশাল বাজার বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা খুব সহজ না। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালে কয়েকবারই বাংলাদেশে এসেছেন।
নানান আশ্বাস দিয়ে গেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়েছে বলে মনে হয় না এর দায়টা কি বাংলাদেশের কুটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের দুর্বল নীতি অনুসরণ নাকি তাদের অতিমাত্রায় নিজের স্বার্থ দেখার চিরায়ত নীতির তা সময়ই বলে দিবে।
এই উপমহাদেশে রাষ্ট্রপতি পদটা অনেকটা সৌজন্যমুলক। তাই এই পদে থেকে অনেক কিছু করতে চাইলেও তা সবসময় করে ওঠা সম্ভব হয় না। ভারতের রাজনীতিতে এবং একই সাথে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসে প্রণব মুথার্জির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
কুটনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর একমাত্র পুত্র সন্তান রাহুলকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনের জন্য প্রণব বাবুকে হয়তো এই আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পর একটি সম্মনসূচক আসনে সৌজন্যমুলক ভাবেই তাঁকে বসানো হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়।
তবে সে দেশের রাজনৈতিক কৌশল যাই হোক আমরা আশা করব ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি যেন আমাদের ‘ন্যায্য’ দাবিগুলোর দিকে নজর দেন। দু দেশের চলমান সংকট এবং অবিম্বাস দূরীকরণে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।
কারণ বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করতে চায় ভারত তার চিরকালের বন্ধু কখনো শত্রু নয়। ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে এই আমাদের চাওয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।