প্রণব মুখার্জী যে কারণে এসেছিলেন
দিল্লি থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা :
[ ভোরের কাগজ ৯ আগস্ট ২০১০ ]
ভারতীয় নেতা প্রণব মুখার্জী ঢাকা সফরের সিদ্ধান্ত হঠাৎই নেন। দুজন বাংলাদেশী মন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর প্রণব মুখার্জী ঠিক করেন যে তিনি ছুটির দিন শনিবারে নিজস্ব বিমানে কয়েক ঘণ্টার সফরে ঢাকায় এসে ‘ক্ষুব্ধ’ হাসিনা সরকারকে কয়েকটি বড় ধরনের প্রতিশ্র“তি দিয়ে যাবেন।
দিল্লির সরকারি মহলের বিশ্বাস যে মিত্র রাষ্ট্রের যা করণীয় ভারতের প্রতি সে আচরণ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত বাংলাদেশ যা চায় তা করতে কালক্ষেপণ করছে। হাসিনা সরকার সে জন্যই ক্ষুব্ধ।
এ পর্যায়ে বাংলাদেশের কিছু বড় দাবি-দাওয়া পূরণ না করলে হাসিনা সরকারের মনোভাব বদলানো যাবে না।
প্রণব মুখার্জী ভারতের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের একজন বড় নিয়ামক হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে নানা বিষয়ে ভারতীয় সংসদে বিরোধী দল সরকারি দলকে চাপের মুখে রেখেছে। প্রণব মুখার্জীকে সেখানে থেকে এ অবস্থার মোকাবেলা করা খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ মনমোহন সিং সরকারে তিনিই মূল ‘চানক্য’।
তবুও ঢাকার আবহাওয়া পাল্টাবার জন্যই প্রণব মুখার্জীর এই সফর। সরকারি লাক্সারি জেটে বসেই প্রণব মুখার্জী এই সফরের ‘হোম ওয়ার্ক’ শেষ করেছেন। নেপালে বাংলাদেশী পণ্যবাহী ট্রাক যাবার অনুমতি, আট মিলিয়ন বাংলাদেশী তৈরি পোশাক শুল্কমুক্তভাবে রপ্তানির চুক্তি নবায়ন, ফেনীতে ব্রিজ, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ মেট্রিক টন গম রপ্তানি, ত্রিপুরা ও মিজোরাম সীমান্তে স্থল শুল্ক স্টেশন স্থাপন, মেঘালয় সীমান্তে দুটি সীমান্ত হাটসহ আরো কয়েকটি প্রতিশ্র“তি পূরণের সংবাদ দিয়ে গেলেন।
এরপরও ভারত আরো যা করবে তার প্রতিশ্র“তি একান্তে হাসিনা সরকারকে দিয়ে গেলেন প্রণব মুখার্জী। ছিটমহল নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যা বাংলাদেশের পক্ষে হবে তা শিগগিরই ভারত নিতে চলেছে।
শুল্কমুক্তভাবে আরো বাংলাদেশী পণ্য আমদানির ব্যাপারে ভারত বছরখানেকের কম সময়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়েও বছরখানেকের মধ্যে
সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত হয়তো পশ্চিম বাংলার রাজ্য সরকারকে নির্বাচনের পরে নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশের অনুকূলে এ ব্যাপারে চুক্তি হলে কংগ্রেস পশ্চিম বাংলায় সমস্যায় পড়তে পারে।
বাংলাদেশের প্রতি প্রণব মুখার্জীর গভীর অনুরাগ আছে।
বেশির ভাগ বাংলাদেশী নেতাকে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় চিনেছিলেন। তখন তিনি কংগ্রেসের একজন সাধারণ এমপি ছিলেন। স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে তিনি বাংলাদেশী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তিনি তার নিজের ভাষায় বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে একটা আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পরে তিনি ভারতে তার দুই কন্যার অভিভাবকের ভূমিকা নিয়েছিলেন।
আজো এ পরিবারের সঙ্গে তার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। ’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রণব মুখার্জীর বৈঠকটি আনুষ্ঠানিকতা ছাড়িয়ে পারিবারিক হয়ে উঠেছিল। এমনটিও জানা যায় ভারতীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের দাবি-দাওয়ার পক্ষে মুরুব্বিয়ানা করেন। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি দাবির বিপক্ষের গোষ্ঠী আছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রণব মুখার্জী না চাইলে সে গোষ্ঠীর কথা সম্পূর্ণরূপে উড়িয়ে দিতে পারেন না।
তা সত্ত্বেও অনেক ব্যাপারে প্রণব মুখার্জী বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেন।
ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দায় ভারতবর্ষের গার্মেন্টস সেন্টার তিরুপুর প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। তা সত্ত্বেও শুল্কবিহীন বাংলাদেশী গার্মেন্ট আমদানি করার পক্ষে তিনি অবস্থান নিয়েছেন।
ভারতীয় রাজনীতির সিদ্ধান্ত প্রণেতারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরো গভীর করতে চান। মনমোহন সিং সরকার মনে করেন এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শাসক দল কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশ রিলেশন গড়ে তোলা যাবে না।
বাংলাদেশের যে কোনো রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকুক না কেন সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার পক্ষে মত দিচ্ছেন তারা।
ভারত চায় এখন থেকে যা সিদ্ধান্ত আসবে সেটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। ভারতীয় রাজনৈতিক সূত্র থেকে জানা যায়, এ সম্পর্কে দুদেশের মানুষেরই স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা থাকবে, এটাই ভারত সরকারের ইচ্ছা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।