আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিমান্ড

শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৩ গুঞ্জন আর শঙ্কা ছিল আগেই। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশকে অভিহিত করেছিলেন একটি বৃহৎ কারাগার হিসেবে। তিন মাস ধরে অঘোষিতভাবে বন্দি ছিলেন নিজ কার্যালয়ে। তার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছিলেন ক্ষমতাসীনরা। ক্ষমতাসীনদের ঘোষণা সত্য প্রমাণ করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে।

১১ এপ্রিল সকালে আমার দেশ কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পৃথক তিনটি মামলায় তাকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। নিজেদের দাবি অনুযায়ী আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে গ্রেপ্তার করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। মাহমুদুর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেয়ার আলটিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের একাংশ।

তিন মাস ২৮ দিন ধরে আমার দেশ কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বরাবরই বলে আসছিলেন সরকার তাকে গ্রেপ্তার করতে চায়। গত ৫ই ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পর নতুন করে আলোচনায় আসেন মাহমুদুর রহমান। শুরু থেকেই গণজাগরণ মঞ্চকে ‘ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’ বলে আসছিলেন তিনি। সামপ্রদায়িক সহিংসতার উস্কানির অভিযোগে গণজাগরণ মঞ্চ তাকে গ্রেপ্তারের দাবি করে।

তাকে গ্রেপ্তারে দুই বার আলটিমেটাম দেয়া হয় গণজাগরণ মঞ্চ থেকে। এসব অভিযোগে ফেব্রুয়ারি মাসেই তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় চারটি ও রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। ২৬শে ফেব্রুয়ারি এ দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারে বাধা নেই, আইনগতভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার: বর্তমান সরকারের আমলেই এর আগে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান।

২০১০ সালের ১লা জুন মধ্যরাতে দৈনিক আমার দেশ কার্যালয় থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা দেয়া হয়। পত্রিকাও বন্ধ করা হয় সেই অভিযোগে। ৪৭ দিন বন্ধ থাকার পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আবারও আমার দেশ প্রকাশিত হয়। তবে মুক্তি পাননি মাহমুদুর রহমান।

তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় আদালত অবমাননার মামলা। ২১শে এপ্রিল ২০১০ সালে আমার দেশে ‘চেম্বার মানেই সরকার পক্ষে স্টে’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি আদালত অবমাননার শামিল দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রিয়াজউদ্দিন খান ও কাজী মাইনুল হাসান মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মাহমুদুর রহমান সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন। ওই মামলায় ২০১০ সালের ২রা জুন আপিল বিভাগ তাদের আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতে হাজিরার আগেই তাকে অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ মামলায় তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। প্রধান বিচারপতি মো. ফজলুল করিমের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দিয়েছিলেন। বিচারের আগের আড়াই মাসসহ সাড়ে ৯ মাস কারাভোগ করেন মাহমুদুর রহমান। ডিবি কার্যালয়ের সামনে মায়ের অপেক্ষা গ্রেপ্তারের পরপরই মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টো রোডে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে।

সেখান থেকে বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় একটি মাইক্রোবাসে করে নেয়া হয় সিএমএম আদালতে। ওই সময় মিন্টো রোডে ছেলেকে দেখার জন্য ডিবি কার্যালয়ের সামনে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন মাহমুুদুর রহমানের মা মাহমুদা খাতুন। সকাল ১০টা থেকে এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন তিনি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ছেলেকে দেখতে না পেরে ফিরে যান তিনি। মাইক্রোবাসটি সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএম আদালতের দেয়াল ঘেরা হাজতখানা চত্বরে।

সেখানেই গাড়িতে বসিয়ে রাখা হয় তাকে। বেলা ৩টা ২০ মিনিটে তাকে তোলা হয় আদালতে। আদালতের বাইরের অবস্থা একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে করে মাহমুদুর রহমানকে বেলা ৩টার দিকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় নেয়া হয়। এর আগে থেকেই আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করতে থাকেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা। তারা সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।

মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানান তারা। তাকে হাজতখানায় নেয়ার পর কিছু সময় নীরব থাকেন আইনজীবীরা। হাজতখানা থেকে বের করে শুনানিতে হাজির করার সময় আবার উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা। তারা আদালতের করিডোরেও সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। শুনানি শেষে মাহমুদুর রহমানকে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার পর শান্ত হয় আদালত চত্বর।

মাহমুদুর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তার হয়েছেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যম অধ্যাদেশের (প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অর্ডিন্যান্স) আলোকে নয় প্রচলিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনেই আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, গত বছরের ২৪শে ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় দায়ের করা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ সংলাপ সংক্রান্ত মামলায় তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে তারপর মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ এদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্যরা এ পরামর্শ দেন।

বৈঠকে একই নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সারা দেশে যারা হরতাল, দুর্বৃত্তায়ন করছে তাদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক থাকতে বলেছেন। এসব সহিংস কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকায় কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রীও কমিটির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। কমিটির সদস্য মজিবুল হক বৈঠক শেষে বলেন, বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেই ভাল নয়।

যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের পরে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নেই। রেললাইন উপড়ে ফেলা হচ্ছে। মানুষ ও পুলিশ মারা যাচ্ছে। পুলিশকে দিয়ে এভাবে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা আর সম্ভব হবে না। এ জন্য পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

এদিকে বৈঠকে হরতালবিরোধী আইন করার প্রস্তাব উঠলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাতে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, এমন সিদ্ধান্ত হবে যুগোপযোগী। এ ধরনের আইন পাস করা যেতে পারে। একই সঙ্গে হরতাল সহিংসতা চলতে থাকলে জনস্বার্থে তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। মো. ছায়েদুল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে এডভোকেট সানজিদা খানম, মজিবুল হক চুন্নু অংশ নেন।

এছাড়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিরোধী দলীয় এমপিদের প্রতিবাদ এদিকে দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় এমপিরা। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সংবাদপত্র ও সম্পাদকের ওপর এহেন ন্যক্কারজনক ঘটনা ১৯৭২-৭৫ সালের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।

তারা বলেন, আমার দেশ পত্রিকা বাংলাদেশের বস্তুনিষ্ঠ, সাহসী ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অনন্য ভূমিকা রেখেছে। মাহমুদুর রহমান একজন দেশপ্রেমিক, মেধাবী, সাহসী সাংবাদিক। ভারতের আধিপত্যবাদ, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, দুর্নীতি, ফ্যাসিস্ট আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হওয়ার কারণে তিনি সরকারের রোষানলের শিকার হয়েছেন। সরকার তাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা ১০ম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় এমপিরা অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করছি।

বিবৃতিতে বিএনপি দলীয় এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানু, শাম্মী আক্তার, নিলুফার চৌধুরী মনি, রাশেদা বেগম হীরা স্বাক্ষর করেন। গণতন্ত্রের মহাসঙ্কট ডেকে আনার ষড়যন্ত্র: বি. চৌধুরী এদিকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ‘আমার দেশে’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ বিরোধীদলীয় নেতাদের মুক্তি দাবি করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের আচরণ দেখে মনে হয়, সরকার একদলীয় বা একজোটীয় নব্য বাকশালীয় পদ্ধতি কায়েমের চেষ্টা করছে। মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তার আমি উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত এবং শঙ্কিত হয়েছি। সাম্প্রতিককালে বিএনপির শীর্ষস্থানীয়সহ মধ্যম সারির হাজারো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিরোধীদলীয় রাজনীতিকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।

শীর্ষ নেতাদের পাইকারি হারে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো এবং সেই সঙ্গে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেশে গণতন্ত্রের মহাসঙ্কট ডেকে আনার ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। বি. চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের শুভাকাঙক্ষীদের পক্ষে এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমি সরকারের এই ভুল পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করছি। আশা করি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের খাতিরে এসব অগ্রহণযোগ্য পদ্ধতি প্রত্যাহার করে সরকার সকল বিরোধীদলীয় নেতাদের মুক্তি দিয়ে গণতন্ত্রের পথ সুগম করবে।

তিনি বলেন, স্কাইপ ঘটনায় জড়িত বিচারপতি যেখানে তার নিজ মুখে ঘটনা স্বীকার করেছেন এবং সেজন্য পদত্যাগ করেছেন সেখানে তা প্রকাশ করার অপরাধ কি? একই ভাবে সরকার যে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে কটূক্তিকারী ৫-৬ জনকে খুঁজে বের করেছে, ‘আমার দেশ’ পত্রিকা সেই ধরনের সংবাদ আগে জনসমক্ষে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে। দেশের আইনে সত্য প্রকাশ করার বাধা নেই বলেই জানি। এই ধরনের অপরাধের জন্য মামলা করাই কি যথেষ্ট নয়? তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে সরকার ও আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখা দাবি করছি। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের ওপর চরম আঘাত: শত নাগরিক এদিকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, গণতন্ত্র, বাক, ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে দলিত-মথিত করেছে এ সরকার। সত্য প্রকাশের দায়ে আবারও দেশের সংবাদপত্র জগতের অকুতোভয় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হাস্যকর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করেছে।

আমরা দৃঢ়চিত্তে তীব্র ভাষায় এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। কারণ এই গ্রেপ্তার গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের ওপর চরম আঘাত। তারা বলেন, আমরা মনে করি- মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে সরকার প্রকাশ করেছে তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় মোটেই বিশ্বাস করে না। তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন-পীড়নের মাধ্যমে ভিন্নমত স্তব্ধ করে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতাকেই পাকাপোক্ত করতে চায়। কিন্তু সরকারের এই অসহিষ্ণু ও নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের ফলে দেশে সংঘাত, সংঘর্ষ ও সহিংসতা উস্কানি পাবে।

আমরা এই অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট আচরণ পরিহার করে ন্যায়-নীতি, আইন ও নৈতিকতার পথে সরকারকে ফিরে আসতে আহ্বান জানাই। নইলে দেশ ও জাতির সমূহ সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ, ডা. এমএ মাজেদ, প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিঞা, বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ, কবি আল মাহমুদ, মোহাম্মদ আসাফউদদৌলাহ, ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, ড. এসএমএ ফায়েজ, ড. মাহবুব উল্লাহ, খোন্দকার মুশতাহিদুর রহমান, খোন্দকার মাহবুব হোসেন, ড. ইউসুফ হায়দার, ড. সদরুল আমিন, ড. তাজমেরী এসএ ইসলাম, রিয়াজউদ্দিন আহমদ, ড. আজহার আলী (রা.বি.), ড. আমিনুল ইসলাম, ড. আবদুর রহমান সিদ্দিকী (রা.বি), ড. ইনাম উল হক, ড. হাসান মোহাম্মদ (চ.বি), ড. সিদ্দীক আহমদ চৌধুরী, ড. মনির আহমদ চৌধুরী, ড. রেজাউল করিম (খু.বি), ডা. জাফর উল্লাহ ও আবদুল হাই শিকদার। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির নিন্দা দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গ্রেপ্তার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি। গতকাল নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ফরহাদ মজহার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের সময় কাপড় পরিধানের সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি।

চরম দুর্ব্যবাহর করা হয়েছে তার সঙ্গে। এমনকি পত্রিকা অফিসের ফটো সাংবাদিক ও কর্মচারীদের পিটিয়েছে পুলিশ। বিবৃতিতে ফরহাদ মজহার বলেন, একটি পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্র মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত করেছে। সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অগণতান্ত্রিক আচরণের সমালোচনা করেছে পত্রিকাটি। বিশেষ করে রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিক ও মানবিক অধিকার হরণকারী ভয়াবহ নির্যাতক ভূমিকার দিকগুলো তুলে ধরেছে।

সেই পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনরা প্রমাণ করলো তারা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের দুশমন। তিনি আরও বলেন, আমরা যে কোন নাগরিকের মত প্রকাশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের নিন্দা করি এবং মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করি। খেলাফত আন্দোলনের বিক্ষোভ আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে খেলাফত খেলাফত রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরে বিক্ষোভ সমাবেশে করেছে। গতকাল বিকালে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের আমীর মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ বলেন, সরকার দেশকে জুলুমের রাজ্যে পরিণত করেছে।

সত্য কথা লিখলে বা বললে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। ইসলাম, ঈমান ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। তিনি আমার দেশের সৎ সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা প্রত্যাহার এবং পত্রিকাটি বন্ধ করার সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হামলা-মামলা নির্যাতন করে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। তিনি জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি করে বলেন, অন্যথায় সরকারের বিরুদ্ধে জনগন ফুঁসে উঠবে। দলের মহানগর আহ্বায়ক মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহকারী মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ফখরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী ও হাফেজ মাওলানা আবু তাহের।

মিরসরাই সোবহানিয়া দরকার শরিফের পীর মাওলানা আবদুল মোমেন নাছেরী মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তারের নিন্দা করেন। সরকার নাস্তিকদের পরিবর্তে নবীপ্রেমিকদের বিচার শুরু করেছে: ইসলামী ঐক্যজোট ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা বলেছেন, শাসক গোষ্ঠী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকারকে হরণ করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারই অংশ হিসেবে নির্ভীক কলমযোদ্ধা, আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ড ও শাহবাগ কেন্দ্রীক নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করার কারণেই তাকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

গতকাল লালবাগ দলীয় কার্যলায়ে জোট চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। তারা বলেন, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সরকার নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে চায়। কিন্তু তাদের এ অশুভ চক্রান্ত বুমেরাং হবে। মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারে কাজী জাফরের নিন্দা আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান একজন সত্যবাদী ও স্পষ্টবাদী সম্পাদক।

কোন ওয়ারেন্ট ছাড়া একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা আইনের শাসনের পরিপন্থি। এর মাধ্যমে সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রই ফুটে উঠেছে। ডিকাব-এর নিন্দা আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্ট এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব)-এর সভাপতি ইমরান আলম ও সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ। গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা বলেন, একজন সম্পাদককে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়ার ঘটনা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অগ্রহণযোগ্য। সরকারের এ পদক্ষেপ গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার ওপর বড় ধরনের আঘাত।

মাহমুদুর রহমানকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যে কোন নির্যাতন থেকে সুরক্ষা এবং অবিলম্বে মুক্তি দিতে ডিকাব নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। সূত্র :- Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.