আমি সত্যে অবিচল।
একটি দৈনিক পত্রিকায় কৌতুকটা পড়েছিলাম রকম, এক এজাহারকারী এবং পুলিশ অফিসারের কথোপকথন:
এজাহারকারী: আমার যে আংটিটি চুরি হয়েছে বলে সেদিন এজাহার করেছিলাম, সে আংটিটা পাওয়া গেছে। ভুলে আমার স্ত্রী ওটা আলমিরার নীচের ড্রয়ারে রেখেছিল।
পুলিশ অফিসার: কিন্তু আপনার এজাহারের ভিত্তিতে আমরা ইতিমধ্যে ৪৩ জনকে গ্রেফতার করেছি, এবং তার মধ্যে রিমান্ডে ১৩ জনই স্বীকার করেছে যে আপনার সেই আংটিটা ওরাই চুরি করেছে। ’
রিমান্ডের বিষয়টি এ গল্পের মতোই কেমন যেন বাস্তব হয়ে উঠছে।
পুলিশ রিমান্ডের বা পুলিশী হেফাজতের বিষয়টি যে কারনে আইনে স্বীকৃত হয়েছে, প্রয়োগিক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সে কারণটি ছাড়াই আসামীকে যখন তখন রিমান্ডে নেয়ার প্রবনতা তথা এর অপপ্রয়োগের বিষয়টি।
আমাদের দেশের ঘৃন্য অপরাধীদের অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তার কথা অস্বীকার করার জো নেই-এটা সত্য। কিন্তু তাই বলে সন্দেহজনক ব্যক্তির জন্যেও এ ধরনের রিমান্ডের কথা তো কল্পনাও করা যায় না। আজকাল পুলিশ ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় যে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেই আদালতে রিমান্ড প্রার্থনা করে বসে। এটা এখন একটা রেওয়াজ হয়ে দাড়াচ্ছে যেন।
রাজনৈতিক বা নেতানেত্রীর কানেকশান থাকলে তো পোয়াবারো। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ম্যাজিষ্ট্রেসীর অনভিজ্ঞতার কারনে রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর হতে দেখা যায়। পুলিশ ১৫দিনের চাইলে ম্যাজিষ্ট্রেট ৭ দিন দেন, ৭ দিনের চাইলে ৩ দিন, তিন দিনের চাইলে ১ দিনের দেন। পুলিশ প্রেয়ার করলেই রিমান্ড মঞ্জুর করতে হবে এর কি কোন মানে আছে? কোন ব্যক্তিকে সন্দেহ হলেই পুলিশ ৫৪ ধারায় ধরে নিয়ে আসে। কিন্তু পুলিশের এই সন্দেহেরও একটা যুক্তিগ্রাহ্য কারণ থাকতে হয়, যার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন।
পুলিশের এই ৫৪ ধারার ক্ষমতা নিয়ে ইতিমধ্যে সারা দেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। মন্ত্রী মিনিষ্টাররা বড় ভালো ভালো তত্ত্ব কথা শুনিয়েছেন। কিন্তু যা লাউ তা এখনো কদুই রয়ে গেছে। পুলিশ রিমান্ডের কথা কিতাবে যা লেখা রয়েছে, তার বাস্তব প্রয়োগ কি তাই? রিমান্ডে আনা হয় আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য উদ্ধারের জন্যে। আর এটা করতে কোনভাবেই আসামীর উপর নির্যাতন করা আইন কখনো কোনভাবেই অনুমোদন করে না।
কিন্তু বাস্তবে ঘটছেটা কি? পুলিশ রিমান্ড মানেই এখন যেন আল-গারিব। কেউ কেউ বলেন, রিমান্ড মানেই ডিমান্ড, এটা পুলিশের এক ধরনের বানিজ্য সুবিধা মাত্র। আইনের আড়ালে এই বে-আইনী কাজটির বিরুদ্ধে আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীরা সোচ্চার হতে হতে এখন কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি সরকার পুলিশের পোষাক পরিবর্তন করে দিয়েছেন, যাতে পুলিশ সম্পর্কে জনগনের মানসিকতার খানিকটা পরিবর্তন হয়, যদিও কয়লা ধুলে-, যাক, এবার একটা কেচ্ছা শুনাই। পথ হারিয়ে এক পাদ্রি আফ্রিকার গহীন বনে ঢুকে পড়েছেন।
সেখানে তাকে নরমাংস ভোজী জংলীরা ধরে ফেলল। পাদ্রি ভীষন মুষড়ে পড়লেন, কেননা তিনি নিশ্চিত, একটু পরেই এরা তাকে টুকরো টুকরো করে খেয়ে ফেলবে। কাঁচা নরমাংস এদের প্রিয় খাবার। নেচে গেয়ে অনুষ্ঠান করেই নরমাংস ভোজ করে এরা। জংলীরা পাদ্রিকে চ্যাং দোলা করে তাদের সর্দ্দারের কাছে নিয়ে গেলো।
জংলীদের সর্দ্দার পাদ্রিকে অভিবাদন জানালেন ইংরেজীতে। পাদ্রি ভীষন অবাক হলেন এবং খুশীও। এই গহীন জঙ্গলের জংলীর মুখে ইংরেজী বুলি? পাদ্রিকে এরূপ অবাক হতে দেখে জংলী সর্দ্দার বলল, অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি অক্সফোর্ড থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি। পাদ্রি যারপরনাই খুশী হয়ে বললেন, তাহলে নিশ্চয় তোমার রুচি বদলেছে?
‘ নিশ্চয় ।
এখন আমি কাঁটা চামচ দিয়ে খাই। ’
আমাদের পুলিশ বাহিনীর পরিবর্তনও কি এরকম নয় কি?
পোষাকে কি আর পরিবর্তন আসবে? এটা হতে হবে ট্রেনিং, শিক্ষা এবং আইন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানের ভিত্তির উপর। কি বলতে কি বলছি, আমাদের দেশে তো এখনো চলছে টাকার অংকের উপর পুলিশের বদলী বা পোষ্টিং-এর যুগ। ধান বানতে শিবের গীত গাওয়া আমার অভ্যাস। তাই রিমান্ডের মতো সিরিয়াস বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দু দুটো চুটকি শুনিয়ে ফেললাম।
আসলে রিমান্ডের আইনকে অমান্য করেই রিমান্ডের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বিধায় সেই অনাদিকাল থেকেই এই শব্দটি মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। আমার প্র্যাকটিসিং সময়ে কোন আসামীর রিমান্ডের প্রার্থনা থাকলে বা রিমান্ড মঞ্জুর হলে সেই আসামীর আত্মীয়-স্বজনের চোখে মুখে যে আতঙ্ক দেখি, তা একজন মানুষ হিসাবে আমাকে পীড়া দেয়। হত্যা, ডাকাতি, এসিড-এর অপরাধ ছাড়া আর কোন ক্ষেত্রেই কি রিমান্ড মঞ্জুর করা উচিত? বিজ্ঞ জনেরা ভেবে দেখবেন। আমি আমার অনুভুতি প্রকাশের
নিমিত্তে এ লেখাটার অবতারনা করেছি মাত্র। কোন তত্ত্ব কথা বলার জন্যে নয়।
আজকাল পুলিশী হেফাজতে হরহামেশাই মানুষ মরছে। রুবেল, টিটো, জাহাঙ্গীর, টিপু ...কটা নাম বলবো? এক সময় এটা ছিল এক আতঙ্কের নাম। আর এখন মহা আতঙ্কের।
আরেকটা গল্প বলেই লেখাটা শেষ করি। আন্তর্জাতিকভাবে পুলিশের কর্মদক্ষতার পরীক্ষা হচ্ছে।
একটা হরিণ বনের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে রাশিয়ার পুলিশ দলকে বলা হলো হরিণটাকে খুঁজে আনো। তারা ১১ দিন চেষ্টার পর হরিণটাকে খুঁেজ নিয়ে এলো। হরিণটা আবার ছেড়ে দিয়ে বৃটিশ পুলিশ দলকে বলা হলো খুজে আনো। তারা ৭ দিনের মাথায় হরিণটা খুঁজে নিয়ে এলো। হরিণটাকে আগের মতোই বনে ছেড়ে দিয়ে আমেরিকার পুলিশ দলকে বলা হলো, খুঁজে আনো।
তারা ৫ দিনের মধ্যে হরিণটাকে খুঁজে নিয়ে এলো। সবশেষে এলো বাংলাদেশের পালা। বাংলাদেশের পুলিশ দল মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ধরে নিয়ে এলো, তবে হরিণ নয়, একটা জলজ্যান্ত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। পরীক্ষাকারী দল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি ধরে নিয়ে এলে? বাংলাদেশের পুলিশ দলের জবাব, জ্বী হুজুর, এটা আপনাদের ছেড়ে দেয়া সেই হরিণ।
-কিভাবে বুঝলে?
-খুব সোজা, বনে ঢুকতেই ওটাকে পেয়ে ধরে ফেললাম।
রিমান্ডে নিলাম। আর যতক্ষন না ও স্বীকার করেছে, সে-ই ঐ ছেড়ে দেয়া আপনাদের হরিণ, ততক্ষণ রিমান্ড চলল। আমাদের রিমান্ডের মুখে ও ঠিকই স্বীকার করে নিয়েছে, সে-ই আপনাদের ছেড়ে দেয়া সেই হরিণ, বিশ্বাস না হলে ১৬৪ ধারায় ওকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।