আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খসড়া ডিরেক্ট সেলিং আইন সাংঘর্ষিক ও জনস্বার্থবিরোধী বামাকার গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

আমি আলমগির আমি বাংলা ব্লগ পড়েত ভালবাসি আমাকে লিখা পাঠােবন খসড়া ডিরেক্ট সেলিং আইন-২০১২ সাংর্ঘষিক ও জনস্বার্থবিরোধী। ওই আইনে জনস্বার্থ প্রতিফলিত হয়নি। আইন পাস হলে ডিরেক্ট সেলিং নামে প্রতারণা আরো বাড়বে। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোম্পানি। এ জন্য ডিরেক্ট সেলিং আইনকে যথার্থ করতে প্রচলিত কনজুমার আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আরো যুগোপযোগী করতে সংসদীয় কমিটি এবং পার্লামেন্টের ভূমিকাকে আরো ব্যাপক ও জোরালো করতে বক্তারা আহ্বান জানান।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল (বামাকা) আয়োজিত 'খসড়া প্রণীত ডাইরেক্ট সেল-২০১২' বাস্তবায়নে সরকারের করণীয় শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বামকার চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রহিম খানের সভপতিত্বে আলোচনা করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ, বাংলাদেশ ডিরেক্ট সেলিং অ্যাসোসিয়েশনের (প্রস্তাবিত) প্রেসিডেন্ট ও ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল আমীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রেজিয়া বেগম, বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর মহাসচিব অ্যাডভোকেট ড. শাহজাহান, বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক, আজিজ কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মো. রফিক, পিপলস ফোরামের চেয়ারম্যান চাষী এনামুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের (বামাকা) মহাসচিব ড. ফরিদ উদ্দিন ফরিদ। মোহাম্মদ রফিকুল আমীন বলেন, বাংলাদেশে এখন সমালোচিত ও সবচেয়ে ভুল বোঝাবুঝির বিষটির নাম হচ্ছে ডিরেক্ট সেলিং। তিনি বলেন, ডিরেক্ট সেলিং আইনের নামে এমন কোনো আইন করা উচিত নয় যা দেশের মানুষের জন্য অমঙ্গলজনক।

খসড়া ডিরেক্ট সেলিং আইনকে তিনি অপূর্ণাঙ্গ ও জনস্বার্থবিরোধী হিসেবে অভিহিত করে বলেন, আইনটি তৈরি করার সময় ডিরেক্ট সেলিং বিষয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয় হয়নি। এমনকি বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ ডিরেক্ট সেলিং কোম্পানি ডেসটিনিকে পাশ কাটিয়ে ডিরেক্ট সেলিংবিরোধী ভিন্নমতাবলম্বীদের নিয়ে ওই আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যার কারণে আইনটি একদিকে সাংঘর্ষিক, অন্যদিকে জনহিতকর নয়। রফিকুল আমীন অভিযোগ করে বলেন, খসড়া আইনটি তৈরির আগে সংশ্লিষ্টরা আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজনীয়তা দেখাননি। অথচ বিষয়টির সঙ্গে ডেসটিনির ১ কোটি ক্রেতা-পরিবেশকের স্বার্থ জড়িত। তিনি বলেন, আমাদের ডাকা না হলেও জনস্বার্থে আইনের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি, পরামর্শ দিয়েছি।

কিন্তু রহস্যজনক কারণে ডিরেক্ট সেলিং আইন নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, সমগ্র খসড়া আইন পর্যালোচনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, ডিরেক্ট সেলিংয়ের জন্য ওই আইনটি পারফেক্ট নয়। তিনি আরো বলেন, ওই আইনের ১৭/ক ধারায় পিরামিডসদৃশ বিপণন নিয়ে যে কথা বলা হয়েছে, তা যদি পাস হয় তবে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোসহ অন্তত ১৫-২০ হাজার কোম্পানি বন্ধ করে দিতে হবে। এখানে ভাষাগত অনেক বিষয় সংশোধন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। রফিকুল আমীন বলেন, ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসায় পণ্য ডেলিভারির পর আর কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয় ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে।

এখানে গ্রাহক শব্দটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসায় কোনো গ্রাহক শব্দের অস্তিত্ব নেই। এখানে ক্রেতা-পরিবেশকের মধ্যে সম্পর্ক, যা পণ্যের বিনিময়ে শেষ হয়ে যায়। শাস্তির বিধান সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা হাস্যকর। পণ্যের বিনিময়ে যদি লেনদেন হয় তবে কিসের শাস্তি_ প্রশ্ন করেন তিনি। ওই খসড়া আইনে অনেক ঘাপলা রয়েছে জানিয়ে রফিকুল আমীন বলেন, ডিরেক্ট সেলিংয়ে মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন এমন সব এজেন্ট বা পরিবেশকের জন্য ওই আইনে কোনো বিধান রাখা হয়নি।

অথচ মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন, অনেক ক্ষেত্রে তারা ক্রেতাদের ভুল বুঝিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন; কিন্তু আইনে ওই অপরাধের কোনো শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। রফিকুল আমীন বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছরে মানুষের সঙ্গে অনেক সেক্টর প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ম্যান পাওয়ারসহ বিভিন্ন সেক্টরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ডিরেক্ট সেলিংয়ে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। তবে কেন এটাকে নিয়ে তদন্তের নামে বাড়াবাড়ি করে ৪৫ লাখ ক্রেতা-পরিবেশক ও ডেসটিনির সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে_ এ প্রশ্ন করেন তিনি। দুদক প্রসঙ্গে রফিকুল আমীন বলেন, তারা (দুদক) পরিষ্কার করে আমাকে বলে দিয়েছে, ডেসটিনির এমএলএম ব্যবসা নিয়ে একটি অভিযোগও আমাদের কাছে নেই।

তারা ডেসটিনি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস সোসাইটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে মাত্র। তিনি বলেন, এমএলএম ব্যবসার সঙ্গে ডেসটিনির এ সকল প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো নন-ডিরেক্ট সেলিং কোম্পানি। ডিরেক্ট সেলিংয়ের ওই খসড়া আইনে শিক্ষক ও ছাত্ররা ব্যবসা করতে পারবে না বলা হয়েছে, যা মানবাধিকার হরণের শামিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। রফিকুল আমীন বলেন, জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিলে মাত্র ৫ বছরের জেল হবে বলে খসড়া আইনে বলা হয়েছে।

এটা পাস হলে কাল থেকে পানের দোকানদারও এমএলএম ব্যবসা খুলে বসবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি। সার্বিকভাবে আইনটি জনস্বার্থবিরোধী হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ডিরেক্ট সেলিং বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা বা যে কোনো বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অবশ্যই ডিরেক্ট সেলিং বিষয়ে একাডেমিক জ্ঞান আহরণ করা আবশ্যক। তা না হলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। এ জন্য খসড়া আইন নিয়ে ডিরেক্ট সেলিং কোম্পানি এবং যারা ডিরেক্ট সেলিং বোঝেন এমন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে আইনটি আরো ব্যাপকভাবে স্টাডি করার আহ্বান জানান রফিকুল আমীন। আলোচনায় বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, ধূমপান করলে ৫০ টাকা জরিমানা_ এমন ইয়ার্কি মারা আইন থেকে বিরত থাকা উচিত।

দেশের আইন প্রণয়নের জন্য পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচন করে জনগণ। অথচ সংসদ সদস্যরা তাদের প্রধান কাজ বাদ নিয়ে টিন/গম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আমলারা একটা আইন তৈরি করে দেয় আর সংসদে এমপিদের হ্যাঁ বলা ছাড়া আর কিছু বলার থাকে না। আমলানির্ভর আইন প্রণয়ন থেকে বের হয়ে পার্লামেন্টকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার আহ্বান জানান আব্দুর রউফ। ডিরেক্ট সেলিং আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমলারা যে আইনটি তৈরি করে দেয়, তা কখনো জনস্বার্থে যায় না বরং তাদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

শেষপর্যন্ত তা বাস্তবে কোনো কাজে আসে না। ড. রেজিয়া বেগম বলেন, আইনটি জনগণের জন্য বোধগম্য করা উচিত। খসড়া আইনে অনেক জটিল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এমএলএম না হয়ে এমএলএস (মাল্টি লেভেল সিস্টেম) হওয়া উচিত ছিল। ভোক্তা অধিকার আইনের মাধ্যমে খসড়া ডিরেক্ট সেলিং আইনকে আসা উচিত হবে বলে মনে করেন রিজিয়া।

ড. তুহিন মালিক বলেন, জনস্বার্থের দিকগুলো বিবেচনা করে আইনটি করা উচিত। আবুল হোসেন বলেন, খসড়া আইনে ডিরেক্ট সেল শব্দটির স্থলে সেলস হলে ভালো হতো। এ ছাড়া বহুস্তর বিপণন না বলে বহুস্তরের মাধ্যমে বিপণন বলা উচিত বলে মন্তব্য করেন। এ ছাড়া ১৭/ক ধারায় পিরামিড নিয়ে যে কথা বলা হয়েছে, তা সাংঘর্ষিক বলে এটা পরিবর্তনের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. আব্দুর রহিম বলেন, সময়ের প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করা জরুরি।

কিন্তু এমন কোনো আইন করা উচিত হবে না যা জনস্বার্থরিরোধী। জনগণের উপকার করতে যেয়ে যেন অপকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ডিরেক্ট সেলিং আইন নিয়ে অনুষ্ঠানের বক্তাদের অভিমত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল তুলে ধরবে বলে জানান তিনি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।