ভালোবাসার ঊর্বশী বুকে লেখা আছে এক নাম- সে আমার দেশ, আলগ্ন সুন্দর ভূমি- বিমূর্ত অঙ্গনে প্রতিদিন প্রতিরাত জেগে ওঠে তার উদ্ভাসিত মুখ
গল্প-উপন্যাসের(?) খসড়া-১/ শেখ জলিল
নিজেকে নায়ক ভাবতে কার না ভালো লাগে? কম-বেশি সবার মনেই থাকে আমার আমিত্বকে বড় করে দেখানোর বাসনা। ছোটবেলায় মা-বাবার কোলে শুয়ে রূপকথার গল্প শুনেছি অনেক। শুনতে শুনতে হয়ে গেছি দাতা হাতেম তাই বা ডালিম কুমার। বড় হয়ে বই পড়া শিখে গল্প বা উপন্যাস পড়তে গিয়েও একই অবস্থা। আরও একটু বড় হয়ে সিনেমা দেখে সকল সিনেমার নায়ক ভাবতাম নিজেকে।
নাটক-সিনেমা দেখে নিজেকে নায়ক এখনও ভাবি, তবে একটু পরিমিতবোধে, ভাবনার অগোচরে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি- যার গল্প শোনাবো আপনাদের, সে কাহিনীর নায়ক হবো আমি নিজেই। মানে, আমার লেখা এ গল্প জগতের একচ্ছত্র নায়ক আমি। বাদ বাকি সবাই হবে পার্শ্বচরিত্র।
গল্পের নায়ক মানে এই আমি একটু বাউন্ডুলে স্বভাবের।
পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগ নেই। বয়স হবে ১৮ কিংবা ২০। মা-বাবা অনেক আশা নিয়ে দূরের শহরে উচ্চশিক্ষায় পাঠিয়েছে আমাকে। কিন্তু পড়াশোনায় আকর্ষণ নেই আমার। মনে আমার কবি কবি ভাব, সাংস্কৃতিক জগতের তুখোড় কর্মী হয়ে ওঠার বাসনা।
ফলাফল উচ্চশিক্ষার ফাইনাল পরীক্ষায় নির্ঘাত ফেল, জীবন থেকে ঝরে যায় বেশ ক'টি অমূল্য বছর। এ ঝরে যাওয়া অমূল্য শিক্ষাজীবনের একরত্তি মূল্যও নেই আমার কাছে। কারণ আমি তখন নামকরা কবি, সংস্কৃতিসেবী, শহরের প্রিয়মুখ।
প্রেম না করলেও আমার এ কবি মনের মানসপটে একজন নায়িকা ঠিকই আছে। যেমন প্রিয়কবি জীবনানন্দ দাশের ছিলো, আমারও আছে।
প্রিয়কবির ভাষায় আমার নায়িকার চোখ হবে পাখির নীড়ের মতো, টানা টানা, গভীর সমুদ্রের আহ্বান থাকবে তাতে। মনে মনে বহু বছর ধরে এরকম একজনকে পাবার আশা পুষে রেখেছি বুকে। ব্যস্ত শহরে মানুষের ভীড়ে, সাংস্কৃতিক মিছিলে, অনুষ্ঠানের ফাঁকে সেরকম চোখ খুঁজি। কখনও কবিতা পড়ার ফাঁকে, কখনও অনুষ্ঠান উপস্থাপনার অবসরে দর্শকদের মাঝে তন্ন তন্ন করে খুঁজি সে স্বপ্নের নায়িকাকে। আর অপেক্ষায় থাকি আমার সেই মধুক্ষণের, মহামলিনের।
তার সাথে প্রথম দেখার দিনক্ষণ মনে আছে এখনও। ১৯৮৫ সালের একুশের রাতে, প্রভাত ফেরীতে। তার বড় ভাই ছিলেন সাংস্কুতিক জগতের বন্ধু। বন্ধু মানে কবিতায় আমার সিনিয়র সহযাত্রী। আমার বন্ধুর ভাগ্নীর বর ছিলেন তার খুব কাছের বন্ধু।
সেজন্য আমি তাকে মামু ডাকতাম। উনিও আমাকে মামু ডাকতেন একইভাবে। মনে পড়ে সেই মামু বন্ধু তার ছোট দু'বোনকে নিয়ে প্রভাতফেরীতে এলেন। একটু পড়ে শুরু হবে প্রভাতফেরী। প্রেসকাব থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
আমার বন্ধুর ছোট দু'বোন সারাহ ও ফারাহ রিক্সায় বসে। মাইক রেডি, মিছিল রেডি। সমবেত মিছিল এবং দু'বোনের কণ্ঠে বেজে উঠলো- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?
সমবেত মিছিলের সাথে আমিও গাই। সারাহ, ফারাহ দু'বোনের কণ্ঠ ভেসে আসে কানে। ওদের কণ্ঠসৃত সুর মর্ম ভেদ করে হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে আমার।
আমি আড়চোখে ওদের দেখার চেষ্টা করি। ওরা রিক্সায় বসে হারমোনিয়াম কোলে রেখে গান গায়। আর আমি তাদের পাশে পাশে থাকার চেষ্টায় মিছিল ঠেলে সামনে আগাই। সারাহ-ফারাহ দু'জনারই চোখ সুন্দর, টানা টানা। যাকে বলে ডাগর কালো হরিণী নয়ন।
তবে বয়সে ছোট ফারাহকে আমার বেশি ভালো লাগে। আমার প্রিয় কবির কবিতার উপমায় পাখির নীড়ের তুলনা খুঁজে পাই তার চোখে। আমি আমার ঈপ্সিত কিছু একটা খোঁজার চেষ্টায় থাকি সে চোখে। মিছিল এগিয়ে যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে।
শহীদ মিনারের বেদীমূলে সবাই ফুল দেয়।
আমিও দেই, ফারাহও দেয়। তবে আমার এ ফুলদানের একমাত্র উপলক্ষ্য আজ ফারাহ। যার চোখে আমি সাগরের গভীরতা দেখি। সবার অলক্ষ্যে ওর দিকে তাই বারবার তাকাই। মিছিল শেষে সবার সাথে আলাপ পরিচয় হয়।
সারাহ ফারাহর চেয়ে দু'বছরের বড়। সারাহ পড়ে ক্লাস নাইনে আর ফারাহ ক্লাস সেভেনে। ওদের বড় ভাই আমাকে নামকরা কবি বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। শুনে ফারাহ ফিক করে হাসে। আমার একটু লজ্জা লাগে, আবার খুব ভালোও লাগে।
বুকের মাঝে হদয়টাতে একটু ধাক্কা অনুভব করি ফারাহর জন্য। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই সারাহ-ফারাহদের বাড়িতে যাবো। যে করেই হোক ওদের সাথে ঘনিষ্ঠ হতেই হবে আমাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।