আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।
মানুষ আমি হতাম যদি তোমাদের মতো
তবে আমিও লিখতাম কবিতা;
কিন্তু আমি এক পাখি,
উড়ে চলি শব্দহীন
এই মেঘ হতে ওই মেঘ।
তোমরা জানো কি আমার আকাশ কত বড় ?
সে আকাশ তোমাদের আকাশের মতো নয়।
পাখি আমি একলা পাখি,
মানুষ হতে চাই;
আমাকে কি একটু মানুষ হবার যন্ত্রণা দেবে কেউ ?
লিফট ম্যান
বসে বসে সবার লেখা পড়ি। ভালই লাগে।
কত মানুষের কত রকম ভাবনা। কত মানুষ সুখে আছে। কত মানুষ আবার দুঃখ নিয়ে দিন যাপন করছে। নানা রঙে, নানা ঢঙে, মনে হয় যেন জীবনটা একটা লিফট। শুধু উপরে উঠে যায় আবার নেমে আসে।
এর মাঝে কতশত মানুষ আসে আর যায়। আমি শুধু লিফট ম্যান, লিফটে বসেই থাকি। যদি ভাবি নামবনা অথবা আর উঠবনা তবে ইলেক্ট্রিসিটি অফ করতে হবে কারন জীবন হচ্ছে লিফট আর মৃত্যু হচ্ছে তার থেমে যাওয়া। উঠা নামা বন্ধ করতে চাইলে ইলেক্ট্রিসিটি অফ থাকাই ভাল।
লিফট এর ভেতর এসি থাকতে হবে নতুবা গরীব লিফটে চরি না।
গরীব লিফটগুলো শুধু গর গর শব্দ করে। মানুষ পানের পিক ফেলে, নোংরা করে; খুব ঘৃণা লাগে তখন। তার চেয়ে বড় লোক লিফট যেখানে এসি আছে সেখানে মানুষ তার রূপ আর পারসোনালিটির কারনে পানের পিক ভয়েই গিলে ফেলে। আমি তখন হাসি ভীষণ মজা পাই। ভাগ্যিস লিফটে চরতে টিকেট কাটা লাগেনা।
কিন্তু যদি লাগত তাহলে লিফট ম্যান শুধু পানের পিক গিলে ফেলা দেখত।
ইলেক্ট্রিসিটি আছে কিন্তু লিফট এর দড়ি ছিরে হঠাত লিফট নিচে চলে গেল। এখানে হয়ত লিফট ঠিক করা যাবে কিন্তু এতে ভ্রমনে থাকা মানুষগুলো মরেও যেতে পারে আর লিফট ম্যানের চাকরি চলে যাবে কারন সে ঠিক মত লিফট মেইন টেইন করতে পারে নাই। যদি সে বেঁচে যায়; অতএব ঈশ্বর কে বলে দাও লিফট নয়, উঁচু ইমারত নয়; চাই একচালা টিনের ঘর যেখানে কোন রিস্ক নেই।
একটা ছোট্ট বাড়ি সাথে লাগোয়া বারান্দা।
হয়তো একটা ছোট্ট পুকুর। উঠোনে অনেকগুলো পায়রা। এক কোনে গাছের সাথে দোলনায় ছোট্ট শিশু। কোথাও ভেসে আসছে হাস্না হেনার সুগন্ধ। নট ব্যাড ।
বৃষ্টি এলে হুটোপুটি করে ভেজা। দারুন একটা লাইফ।
কিন্তু একদিন আইলা নামক ঝর অথবা বন্যায় ছোট একচালা টিনের চাল বাতাসে উড়ে যাবে আমরা সেই বন্যায় ডুবে যাব। পুকুরে অলসতার কারনে পদ্ম জমে নোংরা হবে পরিবেশ আর দোলনায় দুলতে দুলতে শিশুটি একদিন বড় হবে। ছোট ঘরের বদলে একটি বড় ঘরের দরকার হবে; চাহিদা বাড়বে।
তারচেয়ে বরং ঈশ্বর কে বলে দাও আমার কোন ঘর নয়, এক টুকরো মাটি নয় কারন সেখানেও ভাগাভাগির দন্দ আছে। তার চেয়ে বরং এক টুকরো মেঘ দাও। আমি শান্তিতে ঘুমাতে চাই একটু। অনেক দিন ঘুমাই না। এবার ঘুমাব।
মৃত্যুর আগে একবার মিশর যেতে চাই। দেবী আইসিসের মূর্তিটা একটিবার একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই। ভাবব ঈশ আমার জন্ম কেন ওই সময় হল না, কেন আমি আইসিস কে মূর্তি হিসেবেই ছুঁয়ে দেখছি ?
একদিন তোমার জন্য আমি রিক্সা নিয়ে অপেক্ষা করবো
আমি তোমার এলোমেলো মনের হবো প্রধান সঞ্চালক
তুমি দু হাত ভরে ভালোবাসা কিনে নেবে
আমি রক্ত দিয়ে শোধাব সেই দাম
আমি তোমার জন্য ব্যাকুল রবো
চিরকাল !!!
জোছনা বিলাস
স্থানঃ চায়ের দোকান, ঢাকা
সময়ঃ আনুমানিক রাত ৯ টা বেজে ১০ মিনিট, ০৬/২০১৩
কথা হচ্ছিল দোকানের মামার সাথে। আমরা সাধারনত চায়ের দোকান যিনি চালান তাকে মামা বলেই ডেকে থাকি। এমনকি পথে ঘাটে এমন অনেক কেই মামা বলি।
এতে করে আত্মার একটি সম্পর্ক স্থাপন হয়। নিজের আত্মীয়তার দাবী নিয়ে যদি অতিরিক্ত কোন সুযোগ নেয়া যায় সেই চেষ্টা থেকেই এমনটি করা কিনা ভেবে দেখা হয়নি। সবার মত আমিও একই রকম চর্চা করে অভ্যস্ত হয়ে পরেছি। তবে ইচ্ছে করেই অনেক সময় কাউকে কাউকে আবার চাচাও বলি। যাক এটা আমার পোস্টের মূল বিষয় বস্তু নয়।
মূল বিষয় বস্তু নিয়ে আলোচনায় আসা যাক।
দোকানটি আমাদের দেশের চির চেনা ছোট একটি টং দোকান। সেখানে ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত মামা শুধু চা আর সিগারেট বিক্রি করে। সাথে থাকে কলা আর বন রুটি। আমি দোকানের একজন নিয়মিত কাস্টমার।
মামার সাথে বসে থেকে জগত সংসার নিয়ে অনেক বিষয়ে আমার আলাপ হয়। সেদিনও এর ব্যতিক্রম হল না। তবে সেদিনকার বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ মর্মাহত হয়েছি।
মামার চরিত্রগত একটি দোষ রয়েছে। প্রায়ই সময় পেলে গোয়ালন্দ ঘাট চলে যায় মনের কুরুচিকর তৃপ্তি মেটাতে।
কিছুদিন আগেও গিয়েছিল। এবার ফিরে এসে পুরোপুরি আদর্শ গত জীবন যাপন শুরু করে দিয়েছে। জানতে চাইলাম এর পেছনের লুকিয়ে থাকা অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের কথা। মামাও নির্বিকার ভাবে আমাকে বলে চলল সেই কাহিনী।
স্থানঃ গোয়ালন্দ ঘাট
সময়ঃ আনুমানিক বিকেল ৫ টা বেজে ৪৫ মিনিট, ০৬/২০১৩
গোয়ালন্দ ঘাট, অল্প কিছু দূর এগুলেই পায়ে হাটা পথে নিষিদ্ধ পল্লী।
যেটাকে ইংরেজিতে ব্রোথেল বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এর পরিবেশ আর কাঁচাবাজারের পরিবেশ প্রায় একই রকম। এখানে ছোট ছোট ঘরের ভেতর বাস করছে শতশত কর্মী। এসব ঘরেই তারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে থাকে। ঘরের দরজায় দাড়িয়ে থেকে অপেক্ষায় থাকে কাস্টমারের জন্য।
কেউ সঠিক মূল্য দিলেই লেনদেন শুরু হয়ে যায়। তারপর সেই ঘরেই আবার সংসারের যাপিত জীবন নিয়ে নতুন ভোরের আগমন হয়।
এমনই একটি লেনদেনের জন্য প্রস্তুত মামা। ঠিক তখনই সামনে এলো একটি ৭ বছর বয়সের কিশোরী কন্যা। মায়ের আঁচল ধরে রেখেই মাটিতে পরে গেলো।
মা সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে মামার সাথেই ব্যবসায়িক লেনদেন মিটিয়ে নিতে ব্যাস্ত হয়ে রইল। কিন্তু মামার অবুঝ ভেতরে লুকিয়ে থাকা আদর্শ স্বত্বাটি সেই দৃশ্য কিছুতেই মেনে নিতে পারলনা। মামা সেখান থেকে চলে এলো সেদিনের মত।
স্থানঃ সালমার ঘর, গোয়ালন্দ ঘাট
সময়ঃ পরদিন সকাল ৬ টা বেজে ৩০ মিনিট, ০৬/২০১৩
মামা সেখান থেকে সেই বিকেলে ফিরে এলেও গোয়ালন্দ এলাকা থেকে তার আর ফিরে আসা হয়নি। রাতে একটি স্থানীয় হোটেলে থেকে গেলো।
হোটেলটি কোন আবাসিক হোটেল নয়। একটি সামান্য ছোট খাটো খাবারের রেস্তোরা। তার মনে কেবলই কিশোরী মেয়েটির প্রতি উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা চলল সারা রাত ধরেই।
খুব ভোরে সেই ঘরে যেয়ে উপস্থিত হল মামা। প্রথমটায় মামাকে দেখে খুসির সীমা রইলনা সালমার।
সেই বিকেলে কোন রোজগার হয়নি। এদিকে মেয়েটির গায়ে প্রচর জ্বর। আজ সারাদিন চলবে কি করে সেই দুশ্চিন্তার শেষ হল সকাল বেলাতেই মামার মত একজন কাস্টমার পেয়ে। কিন্তু মামার হাতে ওষুধপত্র দেখে সেই ভুল ভাঙল সালমার। মামা আলাপ চারিতার এক পর্যায়ে তার নাম জানতে পারল যে সালমা।
আর তার ৭ বছর বয়সের মেয়েটির নাম জোছনা। সালমার সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে বেরিয়ে এলো অনেক অব্যক্ত কাহিনী।
স্থানঃ চালাকচর, নরসিংদী
সময়ঃ মধ্য দুপুর, ২০০৫
চালাকচর, নরসিংদী জেলার একটি অজপারাগা। যেখানের মানুষ দারিদ্র সীমার অনেক নীচে জীবন যাপন করে থাকে। গ্রামের মানুষ সাধারনত অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করে থাকে।
ফসল ঠিক মত না ফলাতে পারলে অভাবেই কাটে বাকিটা দিনগুলো। এমনই এক চাষির মেয়ে ছিল সালমা। বাবা-মার তিন মেয়ের মধ্যে সেই বড়। অভাবের কারনে রাজধানীর পথে যাত্রা। গ্রামের ছেলে মজিদের প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনাই তার জীবনের করুন কাহিনী।
মজিদ তাকে নিয়ে এসে তুলে দেয় কিছু হায়নার হাতে। হায়নাগুলো সালমার করুন আকুতি অগ্রাহ্য করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ভোগ করে তার আত্মাকে। তারপর টাংগাইল জেলার এক নিষিদ্ধ পল্লীতে এমনই এক বাজারে এনে তাকে বিক্রি করে দেয়।
স্থানঃ টাংগাইল
সময়ঃ আনুমানিক রাত ৮ টা বেজে ৩০ মিনিট, ২০০৬
টাংগাইলের সেই বাজারে অমানবিক নির্যাতন চলে সালমার উপর। তাকে প্রতিনিয়ত মারধোর করা হত।
মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে নানা রকম ভয় ভীতি দেখিয়ে জোর পূর্বক তাকে দিয়ে ব্যবসা করিয়ে নেয়া হত। বহুবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে কিন্তু জীবন তাকে পালাতে দেয়নি। এরপর আর কখনো তার নিজ গ্রামে ফেরা হয়নি। সে জানেনা তার বাবা-মা কেমন আছে ? কেমন আছে তার ছোট দুটি বোন ?
এখানেই তার গর্ভে সন্তান আসে। অনেকেই বলেছিল পেটের সন্তানটি নষ্ট করে ফেলতে।
কিন্তু মায়ের বিবেগ তাকে বাঁধা দেয়। অবশেষে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে জন্ম হয় তার কন্যা সন্তান যার নাম সে রাখে জোছনা। তার অন্ধকার জীবনে আলোকিত করে চাঁদের মত রূপ নিয়ে যে সন্তানের জন্ম হয় তার নাম জোছনা ছাড়া আর কিইবা হতে পারে ! কিন্তু জোছনা আজও জানেনা তার বাবা কে ? সে শুধু জানে তার বাবা মারা গেছে। সালমার কাছেও এই সন্তানের বাবার পরিচয় রহস্যে ঘেরা। জোছনার জন্মের পর সেই বাজারের উপর বিরূপ প্রতক্রিয়া হতে পারে ভেবে বাজারের সরদারনী তাকে গোয়ালন্দ ঘাটের বাজারে পাঠিয়ে দেয়।
তারপর থেকে এখানেই তার জীবন যাপনের সময় অতিক্রম হয়েছে একটু একটু করে রোজ মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে।
স্থানঃ গোয়ালন্দ ঘাট
সময়ঃ আনুমানিক বিকেল ৪ টা বেজে ১০ মিনিট, ০৬/২০১৩
মামা এর মাঝে সালমার রান্না করা ভাত খেল তারই ঘরে বসে। ভাতের সাথে আলু ভর্তা আর কাঁচা মরিচ। তবু শুধু এতটুকু খাবারেই মনে হল যেন অমৃত কিছু খেল মামা। সালমা তার এই মেয়েটিকে কিছুইতেই এই নষ্ট পথে আসতে দিতে চায়না।
কিন্তু বাজারের সর্দারনীর চোখ পরেছে তার মেয়ের দিকে। এতটুকু মেয়েকে এখন থেকেই কাজে লাগিয়ে দিতে বলেছে। অনেক কাস্টমার নাকি এমন ছোট মেয়ে পেলে খুসিতে টাকা বেশী দিবে। রোজগার আরও বাড়বে তার।
এমনই নিদারুন কষ্টের জীবন যাপন করছে এই বাজারের আরও অনেক সালমারা।
তারপর একদিন বয়সের ভারে যখন ব্যবসায় ভাটা পরে তখন অনেকেই বেছে নেয় ভিক্ষা বৃত্তি আবার অনেকেই উন্মাদ হয়ে পথে পথে ঘুরে ফিরে।
স্থানঃ মামার চায়ের দোকান, ঢাকা
সময়ঃ আনুমানিক রাত ১০ টা বেজে ৩০ মিনিট, ০৬/২০১৩
মামা তার কাহিনী বলছে আর কখন যে আমার চোখের কোনে অশ্রু জমা হয়েছে বিন্দু বিন্দু করে টের পাইনি। একটি কিশোরী মেয়ে দৌড়ে দোকানের কাছে এলো। মামা বাসায় যাবানা ? আহ্লাদি কণ্ঠে তার আবদার। চল মামা অনেক রাত হইছে।
আমার ঘরের ভেতর একা একা ভালা লাগতাছেনা। মামা বলল হুম মা যাইতাছি। একটু দাড়া অপেক্ষা কর দোকান বন্ধ কইরা লই। মামা আমাকে বলল এর নাম জোছনা।
আমি জোছনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মনে হল স্বর্গীয় দ্যুতি ছড়াচ্ছে মেয়েটির চোখ থেকে। মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, আমি মনে মনে মামাকে স্যালুট দিয়ে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
ঘোর লেগে থাকা অমাবস্যার অন্ধকার ঢেকে দিয়ে রাতের আকাশে জোছনার দুত্যি ছড়িয়ে আছে। আমি দুহাতের মুঠো ভোরে জোছনা তুলে নিলাম। পুরো শরীরে মেখে নিয়ে কিছুটা হলেও সকল জ্বালা হতে একটু প্রতিত্রান পাব; শুধু এতটুকু আশা নিয়েই আমার জোছনা বিলাস।
স্বপ্ন সিন্দুকে বন্দী করে রেখেছি আজো
তোমার পায়ের নুপুরের নিক্কণ
আর সাথে সেতারের টুং টাং সুর।
জাফরান রঙের স্ফীত শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে থাকা
মহাকালের কাহিনী পড়েছি তোমার কণ্ঠে সেতো বহুবার।
চিক-চিক করে উঠা বেলাভূমিতে জমে থাকা বালুদের মতো
নাচের কোন অলসতা ছিলোনা কখনো তোমার পায়ে,
সে আমার ঢের জানা আছে।
অজানার মায়াডোরে তবু স্থাপিত রয়েছে
মন্দিরে মন্দিরে লাল গালিচার উপর দাড়িয়ে থাকা
তোমার নিম্নভাগের দুটি খোলা ক্ষুদ্র পায়ে
আমার মাথা ঠোকার চিহ্ন।
সূর্যস্নাত হৃদ্যতা গড়ে উঠুক বা নাই উঠুক
তবু আমার এই পূজা রবে চলমান,
তুমি তাদেখেনিও; ও আমার স্বপ্ন বিলাসী দেবী।
যে গানগুলো প্রায়ই মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠিঃ
# আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ – রবীন্দ্র সংগীত
# নীলাঞ্জনা – শেখ ইশতিয়াক
# তুমি আসবে বলে তাই – অঞ্জন দত্ত
# আয় খুকু আয় – হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
# পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা – মান্না দে
# ছেরনা ছেরনা হাত – অন্যায় অবিচার
# এলো মেলো বাতাসে – বেবি নাজনিন
# মায়াবী এই রাতে – সুমনা হক
# এই বৃষ্টি ভেজা রাতে – জনম জনম
# চলে গেলে – মাকসুদ
# তুমি আজ কথা দিয়েছো – দুই জীবন
# ঘুম ভাঙা শহরে – আইয়ুব বাচ্চু
# Hello – Lionel Richie
# Rders on the Storm – The Doors
# Still Loving You – Scorpions
# Careless Whisper – George Michael
# Self Control – Laura Branigan
# Unspeakable – Ace of Base
# Hazard – Richard Marx
# Strange Foreign Beauty – Michael Learns to Rock
# With Or Without You – U2
# Papa Don’t Preach – Madonna
# Love will Keep Us Alive – Eagles
# La-La-La – Zanna Friske
# Chingari Koi Varke – Amar Prem
প্রিয় কিছু কবিতাঃ
কভু মনে হয় পদ্ম কোরক
দেহ তরঙ্গে বিকশিত
শিশির উষার সুর্যের তাপে
যেন আশংকা বলসিত ।
ক্ষুধার্ত নদীর মতো তীব্র দুটি জলের আওয়াজ
তুলে মিশে যাই চলো অকর্ষিত উপত্যকায় ।
সোনার দিনার নেই , দেন মোহর চেয়ো না হরিনী
যদি নাও , দিতে পারি কাবিনহীন হাত দুটি
আত্মবিক্রয়ের স্বর্ন কোনকালে সঞ্চয় করিনি
আহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি ;
ছলনা জানিনা বলে আর কোন ব্যবসা শিখিনি ।
------- আল মাহমুদ
সোনালী কাবিন
হারিয়ে কানের সোনা এ-বিপাকে কাঁদো কি কাতরা?
বাইরে দারুন ঝড়ে নুরে পড়ে আনাজের ডাল,
তস্করের হাত থেকে জেয়র কি পাওয়া যায় ত্বরা –
সে কানেট পরে আছে হয়তো বা চোরের ছিনাল !
পোকায় ধরেছে আজ এ দেশের ললিত বিবেকে
মগজ বিকিয়ে দিয়ে পরিতৃপ্ত পন্ডিত সমাজ।
ভদ্রতার আবরণে কতদিন রাখা যায় ঢেকে
যখন আত্মায় কাঁদে কোনো দ্রোহী কবিতার কাজ?
ভেঙ্গোনা কাঁচের চুড়ি, ভরে দেবো কানের ছেঁদুর
এখনো আমার ঘরে পাওয়া যাবে চন্দনের শলা,
ধ্রুপদের আলাপনে অকস্মাৎ ধরেছি খেউড়
ক্ষমা করো হে অবলা, ক্ষিপ্ত এই কোকিলের গলা।
তোমার দুধের বাটি খেয়ে যাবে সোনার মেকুর
না দেখার ভান করে কতকাল দেখবে, চঞ্চলা?
অঘোর ঘুমের মধ্যে ছুঁয়ে গেছে মনসার কাল
লোহার বাসরে সতী কোন ফাঁকে ধুকেছে নাগিনী,
আর কোনদিন বলো দেখব কি নতুন সকাল?
উষ্ণতার অধীশ্বর যে গোলক ওঠে প্রতিদিনই।
বিষের আতপে নীল প্রাণাধার করে থরো থরো
আমারে উঠিয়ে নাও হে বেহুলা, শরীরে তোমার,
প্রবল বাহুতে বেঁধে এ-গতর ধরো, সতী ধরো,
তোমার ভাসানে শোবে দেবদ্রোহী ভাটির কুমার।
কুটিল কালের বিষে প্রাণ যদি শেষ হয়ে আসে,
মৃত্যুর পিঞ্জর ভেঙ্গে প্রাণপাখি ফিরুক তরাসে
জীবনের স্পর্ধা দেখে নত হোক প্রাণাহারী যম,
বসন বিদার করে নেচে ওঠো মরণের পাশে
নিটোল তোমার মুদ্রা পাল্টে দিক বাঁচার নিয়ম।
আজকের জীবনের এই টুকরো টুকরো মৃত্যু আর থাকত না:
থাকত না আজকের জীবনের টুকরো টুকরো সাধের ব্যর্থতা ও অন্ধকার;
আমি যদি বনহংস হতাম,
বনহংসী হতে যদি তুমি
------- জীবনানন্দ দাশ
ক্যাম্পে
এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি;
সারারাত দখিনা বাতাসে
আকাশের চাঁদের আলোয়
এক ঘাইহরিণীর ডাকে শুনি –
কাহারে সে ডাকে!
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
বনের ভিতরে আজ শিকারীরা আসিয়াছে,
আমিও তাদের ঘ্রাণ পাই যেন,
এইখানে বিছানায় শুয়ে শুয়ে
ঘুম আর আসে নাকো
বসন্তের রাতে।
চারি পাশে বনের বিস্ময়,
চৈত্রের বাতাস,
জোছনার শরীরের স্বাদ যেন্!
ঘাইমৃগী সারারাত ডাকে;
কোথাও অনেক বনে — যেইখানে জোছনা আর নাই
পুরুষহিরণ সব শুনিতেছে শব্দ তার;
তাহারা পেতেছে টের
আসিতেছে তার দিকে।
আজ এই বিস্ময়ের রাতে
তাহাদের প্রেমের সময় আসিয়াছে;
তাহাদের হৃদয়ের বোন
বনের আড়াল থেকে তাহাদের ডাকিতেছে
জোছনায় –
পিপাসার সন্ত্বনায় — অঘ্রাণে — আস্বাদে!
কোথাও বাঘের পাড়া বনে আজ নাই আর যেন!
মৃগদের বুকে আজ কোনো স্পষ্ট ভয় নাই,
সন্দেহের আবছায়া নাই কিছু;
কেবন পিপাসা আছে,
রোমহর্ষ আছে।
মৃগীর মুখের রূপে হয়তো চিতারও বুকে জেগেছে বিস্ময়!
লালসা — আকাঙক্ষা — সাধ — প্রেম স্বপ্ন স্ফুট হয়ে উঠিতেছে সব দিকে
আজ এই বসন্তের রাতে;
এই খানে আমার নক্টার্ন –|
একে একে হরিণেরা আসিতেছে গভীর বনের পথ ছেড়ে,
সকল জলের শব্দ পিছে ফেলে অন্য এক আশ্বাসের খোঁজে
দাঁতের — নখের কথা ভূলে গিয়ে তাদের বোনের কাছে অই
সুন্দরী গাছের নীচে — জোছনায়!
মানুষ যেমন করে ঘ্রাণ পেয়ে আসে তার নোনা মেয়েমানুষের কাছে
হরিণেরা আসিতেছে।
– তাদের পেতেছি আমি টের
অনেক পায়ের শব্দ শোনা যায়,
ঘাইমৃগী ডাকিতেছে জোছনায়।
ঘুমাতে পারি না আর;
শুয়ে শুয়ে থেকে
বন্দুকের শব্দ শুনি;
চাঁদের আলোয় ঘাইহরিণি আবার ডাকে;
এইখানে পড়ে থেকে একা একা
আমার হৃদয়ে এক অবসাদ জমে ওঠে
বন্দুকের শব্দ শুনে শুনে
হরিণীর ডাক শুনে শুনে।
কাল মৃগী আসিবে ফিরিয়া;
সকালে — আলোয় তারে দেখা যাবে –
পাশে তার মৃত সব প্রেমিকেরা পড়ে আছে।
মানুষেরা শিখায়ে দিয়েছে তারে এই সব।
আমার খাবার ডিশে হরিণের মাংসের ঘ্রাণ আমি পাব,
মাংস খাওয়া হল তবু শেষ?
কেন শেষ হবে?
কেন এই মৃগদের কথা ভেবে ব্যথা পেতে হবে
তাদের মতন নই আমিও কি?
কোনো এক বসন্তের রাতে
জীবনের কোনো এক বিস্ময়ের রাতে
আমারেও ডাকে নি কি কেউ এসে জোছনায় — দখিনা বাতাসে
অই ঘাইহরিণীর মতো?
আমার হৃদয় — এক পুরুষহরিণ –
পৃথিবীর সব হিংসা ভুলে গিয়ে
চিতার চোখের ভয় — চমকের কথা সব পিছে ফেলে রেখে
তোমারে কি চায় নাই ধরা দিতে?
আমার বুকের প্রেম ঐ মৃত মৃগদের মতো
যখন ধূলায় রক্তে মিশে গেছে
এই হরিণীর মতো তুমি বেঁচেছিল নাকি
জীবনের বিস্ময়ের রাতে
কোনো এক বসন্তের রাতে?
তুমিও কাহার কাছে শিখেছিলে!
মৃত পশুদের মতো আমাদের মাংস লয়ে আমারও পড়ে থাকি;
বিয়োগের — বিয়োগের — মরণের মুখে এসে পড়ে সব
ঐ মৃত মৃগদের মতো –
প্রেমের সাহস সাধ স্বপ্ন বেঁচে থেকে ব্যথা পাই, ঘৃণা মৃত্যু পাই;
পাই না কি?
দোনলার শব্দ শুনি।
ঘাইমৃগী ডেকে যায়,
আমার হৃদয়ে ঘুম আসে নাকো
একা একা শুয়ে থেকে;
বন্দুকের শব্দ তবু চুপে চুপে ভুলে যেতে হয়।
ক্যম্পের বিছানায় রাত তার অন্য এক কথা বলে;
যাহাদের দোনলার মুখে আজ হরিণেরা মরে যায়
হরিণের মাংস হাড় স্বাদ তৃপ্তি নিয়ে এল যাহাদের ডিশে
তাহারাও তোমার মতন –
ক্যাম্পের বিছানায় শুয়ে থেকে শুকাতেছে তাদের ও হৃদয়
কথা ভেবে — কথা ভেবে — ভেবে।
এই ব্যথা এই প্রেম সব দিকে রয়ে গেছে –
কোথাও ফড়িঙে — কীটে, মানুষের বুকের ভিতরে,
আমাদের সবের জীবনে।
বসন্তের জোছনায় অই মৃত মৃগদের মতো
আমরা সবাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।