বম ভোলানাথ ১২ জুন বেলভ্যু হাসপাতালে প্রথম অস্ত্রোপচারের ৮দিন পর সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরে আসার পর হুমায়ূন আহমেদকে কেন প্লাস্টিকের চেয়ারে বসানো হলেছিলো ? সেই চেয়ার থেকে তিনি কীভাবে পড়ে গেলেন, প্রচন্ড আঘাত পেলেন, সেলাই খুলে গেল এবং ইনফেকশন হলো ? কার অবহেলা, উদাসীনতা ছিলো ? চেয়ার থেকে পড়ে যাবার একদিন পর কেন তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেয়া হলো ?
চেয়ার থেকে পড়ার সাথে সাথেই তো প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলেন ? কেন তাকে সাথে সাথে হাসপাতালে নেয়া হলো না ? তিনি চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন ২০ জুন কিন্তু তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেয়া হয় ২১ জুন। কিন্তু কেন ? জ্যামাইকা হাসপাতালেইবা শাওন গেলেন না কেন ? মাজহার কেন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ঐ হাসপাতালে গেলেন? অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে হুমায়ূন আহমেদকে বেলভ্যু হাসপাতালে নেয়া হয় কেন ?
ওপরের লেখাটা আজ ফেসবুকে ঢুকে দেখি একজন লিখে রেখেছে। বেশ কয়েকজন লাইকও দিছে। নানান মাধ্যমে, নানান ভাষায় নানা জন হুমায়ূনের মৃত্যুতে নানান ধরনের লেখা প্রকাশ করে চলেছে। ওপরের লেখাটা দেখে আমারও শখ জাগল এইরকম একটি হটকেক বিষয়ের উপর কিছু লিখার।
প্রথমেই আমার নিজস্ব মনোভাব প্রকাশ করে নিই। ওপরের লিখাটা যারা সাপোর্ট করে তাদেরকে আমি হুমায়ুন প্রেমিক বা হুমায়ুনের লেখা প্রেমিক বলে মনে করিনা। আমি তাদেরকে হটকেক নিউজ-আইটেম বিশেষজ্ঞ বলে মনে করি। আমার মতামত জানার পরও বাকিটুকু পড়ার বাধ্যবাধকতা আমি আরোপ করতে চাইনা। ইচ্ছা করলে এখনই ব্যাক বাটনে চাপ দিতে পারেন।
অধিকাংশ হুমায়ূন ভক্তদের মত আমারও হুমায়ূনের সাথে সরাসরি কোন সাক্ষাৎ হয়নি। মৃত্যুর পর দেখার একটা সুযোগ তৈরী হলেও সে সুযোগ আর নিইনি। তবে এলাকার একটা প্রভাব অবশ্যই ছিলো। নেত্রকোনাকে অন্য বিষয়ে ময়মনসিংহের সাথে না মিলাতে চাইলেও হুমায়ূন প্রসঙ্গ আসলেই মনে হত "গ্রেটার ময়মনসিংহ না!"।
লেখার সাথে পরিচয় ক্লাস ৬/৭ এ।
বড় বোনেরা হুমায়ূন পড়ত, ইমদাদুল হক মিলন পড়ত। তবে বেশি পছন্দ করত ইমদাদুল। ব্র্যাকের গনকেন্দ্র পাঠাগার থেকে আনা বই গুলো লুকিয়ে পড়ে ফেলতাম। পরে নিজেই পাঠাগারের সদস্য হয়ে যাই। আর আবিষ্কার করি হুমায়ুনকে।
অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় লেখা বুদ্ধিমান লেখা।
পাঠক, রাগ করার কিছু নেই। আমি ধান ভান্তে শিবের গীত গাইছি না। ওটা এমনি এমনিই এসে যাচ্ছে। তবে আপনি ইচ্ছা করলে এসব স্কিপ করতে পারেন।
কারন আপনার যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, আমারও তাই। হানড্রেড পারসেন্ট শিওর।
যাক, প্রথম কোন উপন্যাস পড়ে চোখ ছলছল করেছে [আমার আবেগের সর্বোচ্চ স্তর। দেহে শক্ত পিটুনি না পড়লে পোড়া চোখে আমার জল আসত না। ] কোন লেখা পড়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, কোন লেখা পড়ে মনে হয়েছে ইশ, হুমায়ুনকে এখানে পেলে একটা সালাম দিয়ে নেয়া যেত, এসব লিখে পোস্ট বড় করার কোন মানে হয়না।
কাজের কথায় আসি।
প্রথমেই বলি সবচেয়ে বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে। শাওনকে বিয়ে করা। তাদের বয়সের ব্যবধান ছিলো অনেক। জানা সত্য।
কিন্তু দুজনের কেউ এ ব্যপারে কোন অভিযোগ তুলেনি।
আমার নিজস্ব মতামত হল, ব্যক্তিগত জীবনে কেউ যদি কাউকে নিয়ে সুখি হতে চায় এবং তা করার জন্য আইনসম্মত পথ ব্যবহার করে তবে তা নিয়ে কথা বলার অধিকার কারোর নেই। তবে যেহেতু হুমায়ূনের প্রভাব সারা দেশে এতই বিশাল যে, এটা নিয়ে কথা হয়েছে, হচ্ছে, এবং হবে এটাই বাস্তবতা।
এক্ষেত্রে শাওনকে দায়ী করার মধ্যযুগীয় একটা প্রবনতা আমাদের দেশে বিদ্যমান। এখানে এরকম একটা ধারনা দেয়া হয় যেন শাওন মধ্যযুগীয় কোন ডাইনী, গুলতেকিনের সোনার সংসার ছাই করার জন্য হুমায়ুনকে তুকতাক করে বশ করে ফেলেছে।
এটা আমাদের দেশেই সম্ভব। যদি হুমায়ূন বিশাল কোন শিল্পপতি হত, বড় কোন ফিল্ম-স্টার হত, বা বয়সে যুবক হত তাহলে মেনে নেয়া যেত যে শাওন হুমায়ূনের ধন-দৌলত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, যৌবন দেখে মজে গেছে এবং গুলতেকিনের সোনার সংসারে সে আগুন দিয়েছে। কিন্তু ওসবের কিছুই হুমায়ূনের নেই।
আর হুমায়ূনও এমন কোন বাচ্চা ছেলে বা উঠতি যুবক না যে শাওন তাকে রূপ-যৌবন দেখিয়ে হাত করে নেবে।
হুমায়ূন গুলতেকিনকে যে পরিমান ভালোবাসতেন তা প্রকাশ পায় তার লেখাগুলোতেই।
গুলতেকিনকে আমি সম্মান করি তার নারীসুলভ ব্যাক্তিত্বের জন্য। তিনি হুমায়ূনকে বলতে গেলে লেখক হয়ে ওঠার জন্য এক হাতে প্রেরণা দিয়ে গেছেন। কঠোর আর্থিক দুর্দিনে পাশে থেকেছেন। মোটকথা একজন আদর্শ সহধর্মিনি ছিলেন তিনি। আবার সেই তিনিই তার ভালোবাসার অপমান হতে দেননি।
ব্যাক্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অবলীলায় পাশ কাটাতে পেরেছেন ৩২ বছরের ভালোবাসার মানুষকে।
তবে এক্ষেত্রে আমরা পাঠক সমাজ একটু দ্বিধায় পরি। কাকে সাপোর্ট করব? একজনকে সাপোর্ট করতেই হবে। কাকে করব? শাওন নাকি গুলতেকিন? খালেদা নাকি হাসিনা? সাদ্দাম না বুশ?
কেন রে ভাই? গুলতেকিনের কাজ ভালো লাগলেই যে শাওন তোর ক্ষতি করেছে তা নিশ্চিত হলি কিভাবে? শাওনের পক্ষ নিয়েছিস বলেই গুলতেকিন যে তোর পাকা ধানে মই দিয়েছে তাওতো না।
আমার কথা হচ্ছে গুলতেকিনের ৩২ বছরের সংসার ভাঙ্গার জন্য কাউকে দায়ী করতে হলে হুমায়ূনকে করুন।
তবে হুমায়ূনের লেখাতো আর সেই অপরাধ করেনি।
যারা এতদিন হুমায়ূনের লেখা দেখলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেন, অখাদ্য ভাবতেন, তারাই এখন এসব আজেবাজে লেখা লিখে বেড়াচ্ছেন। আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমাদের বাংলা সাহিত্যের এমন একজনকে আমরা আমাদের সময়ে পেয়েছিলাম যার হাতে বাংলাদেশি বাংলা সাহিত্যের কাঠামো তৈরী হয়েছে। একটা উপন্যাস লিখতে যান, দেখবেন হুমায়ূন চলে আসছে আপনার উপন্যাসে। আমরা মিসির আলীর মত করে লজিক নিয়ে ভাবতে শিখেছি।
আর হিমুর মত নিয়ম অস্বীকার করার সুখও আমরা পেতে শিখেছি।
হুমায়ূনকে ধন্যবাদ আমাদের এত কিছু উপহার দেবার জন্য।
[একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। ] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।