আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনেকদিন বুক ধড়ফড় করে না.।.।.।.।.।.।.।.।.।তাহলে এই গল্পটা পড়ুন খনিক হলেও বুকটা কেঁপে উঠবে

ঝাকানাখা প্রতীক্ষা ফিদাতো মিশকা জজ কোয়াটার, শহীদ গেদু সড়ক। আমি দাঁড়িয়ে আছি। প্রচণ্ড রোদ । আমার গা দিয়ে দর দর করে ঘাম ঝরছে । একটার পর একটা রিকশা যাচ্ছে।

আমি রিকশা গুনছি। তিনশো বিশ,তিনশ একুশ ......। ক্লান্তি লাগছে ,পিপাসা পাচ্ছে ,কিন্তু এ জায়গা থেকে অন্য কোথায় যাওয়া যাবে না । পাশের ডাস্টবিন থেকে গন্ধ আসছে । কিন্তু এ গন্ধে আমার সমস্যা হচ্ছে না ,আমার অভ্যাস হয়ে গেছে ।

আমি রেবার কথা ভাবতে থাকি । রেবার সাথে আমার দেখা হয়েছিল একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে । গায়ে হলুদের রাতে হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে আমার মাথা ঘুরে যায়। কেন জানি বারবার মনে হতে থাকে এই মেয়েটাকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি, জনম জনমের পরিচিত। আমি ঘুরপাক খেতে খেতে নীলা ভাবিকে জিজ্ঞেস করি, আচ্ছা ভাবি, ঐ কোণায় বসা ফর্সা করে মেয়েটি কে ? ভাবী বলে, ও হচ্ছে আমার কাজিন সুপ্তির বান্ধবী রেবা,কি ব্যাপার মনে ধরল নাকি।

তবে ওকে লাইন দিয়ে লাভ নাই। ও ডাক্তার ছেলেদের একদম পছন্দ করে না। বলে এরা তো পড়তে পড়তে যন্ত্র হয়ে যায় আমায় সময়ই দিবে না। আমি বলি ,তাই নাকি!!! রেবা সে সময় ভারসিটি ভর্তির কোচিং করত। এ রাস্তা দিয়ে রেবা নিয়মিত যাতায়াত করত ।

আমার হোস্টেলে মন ঠিকত না। তিনটা বাজলেই আমি বেড়িয়ে পড়তাম । ঠিক এইখানে দাড়িয়ে থাকতাম । ওর রিকশার জন্য অপেক্ষা করতাম। চারটা বাজার ৫-১০ মিনিট আগে একটা রিকশা আসতো, আমার পাশ দিয়ে চলে যেত ।

বড়োজোর ৩০ সেকেন্ড । কি একটা শান্তিই না আমাকে ছুঁয়ে দিতো। এভাবে ৩ মাস চলে যায় । আমি প্রায়ই এখানে দাড়িয়ে থাকতাম। জজ কোয়াটারের আমগাছে কাকের চিৎকার, লোকজনের কোলাহল দেখতাম ,আর রিকশা গুনতাম ।

কোন রিকশাতে যখন কোন যুগল দেখতাম ,তখন কি এক শূন্যতা আমাকে ছুঁয়ে দিত। তবু ৩০ সেকেন্ড এর এক বিশাল শান্তি নিয়ে আমি ফিরতাম । আমি বরাবরই ভীতু ছিলাম । তাই জানতাম কখনো রেবার সামনে দাঁড়াতে পারব না। আর রেবা তো ডাক্তার ছেলেদের পছন্দ করেই না।

একদিন আমি প্রতিদিনকার মতো দাড়িয়ে ছিলাম । রেবার রিকশাটা হঠাৎ এসে আমার সামনে দাড়িয়ে যায় । আমি ওবাক দৃষ্টিতে দাড়িয়ে থাকি। রেবা নেমে এসে বলে , আপনি এখানে প্রতিদিন দাড়িয়ে কি করেন, আপনি কি ভাবেন যে আমি কিছু বুঝি না । মেয়েদের এক মাইলের মধ্যে তাঁদের আশেপাশে কেঊ তাঁদের দিকে তাকালে তাঁরা সেটা বুঝতে পারে ,আর আপনি এতদিন ধরে এরকম করবেন আর আমি বুঝব না, দীপ্ত ভাইয়া।

আমার অবাক লাগে রেবা আমার নাম জানে কীভাবে,আমি কথা বলতে পারিনা । চুপ করে থাকি । রেবা বলে ,আমি আপনাকে প্রথম থেকেই জানি, নীলা আপু আমাকে সব বলেছে ,কিন্তু জানতাম না আপনি এতোটা ত্যাঁদড়। মনের কথাটা বলতে হয় জনাব,আর আমি কিন্তু আপনি করে বলতে পারব না ,বূঝলা তুমি । আমি যেন সাত আসমান আমার হাতে পেয়ে যাই।

রেবা বলে যায়, শুধু রিকশা গুনলে হবে ?কাল তুমি আমার জন্য অনেকগুলো গোলাপ আর অপরাজিতা নিয়ে এসো আচ্ছা, আমরা রিকশা করে অনেকক্ষণ ঘুরে বেড়াব। রিকশাটা চলে যায়। এক অপার্থিব সুখে আমি ভাসতে থাকি । পরদিন আমি রাস্তায় দাড়িয়ে থাকি । কিন্তু কোন রিকশা আসে না।

সন্ধ্যার পর আমি চলে যাই । কষ্ট কি কষ্ট আমায় ঘিরে ধরে.....................। সেদিন কোচিং এ আসার পথে ট্রাক এর সাথে ধাক্কায় রিকশা ঊল্টে রেবার মৃত্যু হয় । রেবাকে আমি ভুলতে পারি না। তাই আজো মাঝে মাঝে এসে দাঁড়াই ,জজ কোয়াটার ,শহীদ গেদু সড়ক ,রিকশা গুনতে থাকি ।

রেবা আসবে। আমার প্রতীক্ষা শেষ হয় না.................................। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।