আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার সিংগাপুর ও মালেশিয়া ভ্রমন পর্ব(৪) বিদায় সিংগাপুর

........ আমার সিংগাপুর ও মালেশিয়া ভ্রমন পর্ব(১) আমার সিংগাপুর ও মালেশিয়া ভ্রমন পর্ব (২) মেরিনা বে এবং রিভারসাইড আমার সিংগাপুর ও মালেশিয়া ভ্রমন পর্ব (৩) ইউনিভারসেল স্টুডিও সিংগাপুর ভ্রমনে যেতে হলে আপনার দরকার হবে সাম্প্রতিক কালে তোলা, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ম্যাট পেপারে ২ কপি ছবি। সাথে আপনার ব্যবসার বা আপনার নিজের নামে থাকা ব্যাংক একাউন্ট স্টেটমেট লাস্ট ৬ মাসের। ট্রেড লাইসেন্সের একটা কপিও লাগতে পারে আর আপনার বিজনেস কার্ড (কার্ডটা আবশ্যিক না, থাকলে ভালো)। সাথে লাগবে একটা ইনভাইটেশান লেটার । পাসপোর্ট ত লাগবেই।

(পাসপোর্ট হাতে লিখা নাকি মেশিন রিডেবল এই ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। তাই হাতে লিখা পাসপোর্টও গ্রহনযোগ্য। ইনফ্যক্ট আমার পাসপোর্টও হাতে লিখা ছিলো) সিংগাপুর এমবাসি তাদের নিদ্দিষ্ট কিছু অথরাইজড এজেন্ট এর মাধ্যমে ভিসা আবেদন জমা নেয়। ঢাকায় ৮/১০ টা এজেন্ট আছে । এজেন্টদের নাম ঠিকানা জানার জন্য এই সাইটটা দেখতে পারেন।

যেহেতু ভিসার জন্য সিংগাপুর এমবাসি চার্জ নেয় ২০০০ টাকা তাই এজেন্টরা নিজেদের লাভ রেখে সর্বোচ্চ ৩৫০০ টাকার বিনিময়ে আপনাকে ভিসা করে দিতে পারে। এর বেশি কেউ চাইলে সেখান থেকে সরে পরা ভালো। মেইন ক্যাচাল হলো ইনভাইটেশান লেটারে। সাধারনত সিংগাপুর এয়ারলাইনের রিটার্ন টিকিট কমবেশি ৫৫/৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে অগ্রিম কাটলে তারা ইনভাইটেশান লেটাট দেয় বলে শুনেছি। ইনভাইটেশান লেটার টাইগার এয়ারও দেয় ।

তাদের রিটার্ন টিকিট ৩২০ থেকে ৩৫০ ডলারের বা ৩০ হাজারের মধ্যে। আপনার ভ্রমন বাজেট কম থাকলে আর একটু কষ্ট করার মানসিকতা থাকলে টাইগার এয়ারের টিকিট কাটতে পারেন। ভিসা হলে যদি টাইগারে না যেতে চান, তাই তাদের টিকিট বিক্রি কনফার্ম করার জন্য আগেই অগ্রিম বাবদ ২০ হাজার নেয়। যদি কোন কারনে ভিসা না পান, তাহলে ২০ হাজার টাকা ফেরত পাবেন। শুধুমাত্র ভিসা ফি বাবদ ৩ হাজার টাকা ফেরত পাবেন না।

ইউজুয়লি টাইগার চায় আপনার ভিসা হোক। কারন ওদের মাধ্যমে ভিসা করালে আপনি বাধ্য ওদের এয়ারে ভ্রমন করতে। এতে ওদেরই লাভ। সেটা ওয়ানওয়ে যাত্রা হলেও অসুবিধা নাই। যেমটা আমি করেছিলাম।

টাইগারের অফিস বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায়। নোভোএয়ার তাদের লোকাল পার্টনার। কিন্তু টাইগারে জার্নি আসলেই খুবই কষ্টকর। কারন তারা কোন খাবার দেয় না, ইভেন পানিও ১৫০/২০০ টাকায় আপনাকে কিনে খেতে হবে । সেটাও খুব সমস্যা নয় কারন তাদের ফ্লাইট থাকে মধ্যরাতে।

সে সময় সাধারনত কেউ কিছু খায় না। বিমানে উঠে এক ঘুম দিলেন ত সকাল বেলা সিংগাপুর চলে গেলেন। বাট , ঘুমাতে পারবেন কি না সেটাই সমস্যা। সিটগুলা অনেক কনজাস্টেড আর খাড়া, আমাদের ৬ নাম্বার বাসের মত। ৩টা করে ছয়টা সিট দু দিকে মাঝে একটা চিকন গলি।

গলিতে, সিটে কোথাও আপনি ঠিকমত নাড়াচাড়া করতে পারবেন না । এধরনের সিটে ১০/১৫ মিনিট বসা যায় কিন্তু ৫/৬ ঘন্টা সেটা খুবই কষ্টকর। এটা অলরেডি আমাদের আমাদের প্রবাসী ওয়ার্কার ভাইদের বিমান হয়ে গেছে। তারা বুঝে না বুঝে অনেক ঝামেলা পাকায় প্লেনের মদ্ধে। তাই এয়ার হোস্টেজগুলার ব্যাবহার মাস্টারন্নি টাইপের।

তারপরও ৩০০০০ হাজার টাকা বাঁচবে এটাও কম কি? সিংগাপুর এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে কিছুসময় অপেক্ষা করলে এয়ারপোর্টের বাস আপনাকে এম আর টি স্টেশানে নেমে দিবে ফ্রী। আপনি চাইলে ট্রাক্সি তেও শহরে যেতে পারবেন সেক্ষেত্রে ২২/২৫ সিংগা: ডলার গুনতে হবে। উল্লেখ্য এক সিংগাপুরিয়ার ডলার সমান ৬৬ টাকা। দেশ থেকে ইউ এস ডলার না নিয়ে ডিকেক্ট সিংগা: ডলার নেয়ার লাভ। এতে টাকা কম কনভারশন হবে।

এম আর টি স্টেশানে ১২ সিং ডলারে এম আর টি এর কার্ড পাওয়া যায় এটাতে ৬ ডলার ভাড়ার জন্য থাকে আর ৬ ডলার ৫ বছরের জন্য কার্ডের ডিপোজিট হিসাবে রাখে। মানে নেক্সট ভিটিটে আপনাকে আর ঐ কার্ড কিনতে হবে না। কার্ডের ভাড়ার টাকা শেষ হলে রিচার্জ করা যায়। যেহেতু আপনি বেড়াতে গেলে ৩/৪ দিন থাকবেন তাই সেই কার্ডটা কেনাই ভালো। যেদিন দেশে আসবেন ঐ কার্ড মেশিনে ঢুকালে ৬ ডলার পেয়ে যাবেন।

আর যদি আবার যাওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে রেখে দিবেন। আমি কার্ডটা রেখে দিয়েছি। কেউ যেতে চাইলে তাকে ধার দিতে পারি। সিংগাপুরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো রিভারসাইড কিন্তু ওখানে ৩০০ ডলারের নিচে কোন হোটেল পাবেন না। এইটাই একটা সমস্যা এ জায়গার।

খচর অনেক অনেক বেশি, তা ছারা সব একদম পারফেক্ট। তুলনামুলক কম খরচে থাকার জন্য বেষ্ট জায়গা হলো লিটিল ইন্ডিয়া এলাকা। এয়ারপোর্ট থেকে লিটিল ইন্ডিয়া যেতে আপনাকে দুটা এম আর টি বদল করতে হবে। (এম আর টি বদল মোটেও ঝামেলা নয়। যাষ্ট নামবেন আর উঠবেন।

) আমাদের জন্য থাকার আদর্শ জায়গা হলো লিটিল ইন্ডিয়ার বিখ্যাত মোস্তফা সেন্টারের আশেপাশে। কারন এইখানে আপনি হাজার হাজার বাংগালী ভাইদের পাবেন। আমরা ওখানে একটা মসজিদের পাশে (মসজিদএর নাম টা ভুলে গেছি) পেন্টা নামের এক হোটেলে ছিলাম। টুইন বেড ১০০ সিংগা : ডলার পার ডে। কোন ব্রেকফাস্ট নাই।

এটাই মোটামুটি সবচেয়ে সস্তা আর ভালোএবং সিকুয়র হোটেল । আর খাওয়ার জন্য ইন্ডিয়ান আর বাংগালী রেস্টুরেন্ট পাবেন। আমাদের ফকরুদ্দিন বাবুর্চির হোটেল ও ওখানে আছে। আমরা বাসমতি নামের এক রেস্টুরেন্ট এ খেতাম। ভরপেট খেতে সর্বোচ্চ ১০ সিংগা ডলার লাগবে।

পানির দাম ২ লিটার ২ ডলার। কোক ২.৫ লিটার ১.৫ ডলার। আর ক্যান ১ ডলার। তাই বেশি কোক কেনাই লাভ। একপ্যাক বেনসন সিগারেট ১২ ডলার।

সিগারেট খোররা দেশ থেকে ১০ এর এক কার্টুন নিয়ে যাবেন। এর বেশি এলাউড নাই। খাওয়ার জন্য এগুলা সবই পাবেন। এ ছাড়াও, সব রকম ভর্তা, মাছ, পায়া, নানরুটি সবই পাবেন। যেখানেই থাকেন ঘুরার জন্য এম আর টি বেষ্ট।

একটু আশেপাশে খুজলেই স্টেশান পাবেন। যদি বারো ডলারেড় কার্ডটা না কেনেন তাহলে। মেশিনে টাকা ঢুকিয়ে এলসিডিতে গন্তব্যস্হানের আইকনে হাত ছোয়ালে টেম্পোরারি কার্ড পাবেন। রিচার্জএবল এই কার্ডের মেয়াদ একদিন। যেখানে থাকবেন সেখান থেকে স্পর্টগুলার আশেপাশের স্টেশন এর নাম সেখান থেকে স্পর্ট এর ডিস্টেন্স কতদূর এগুলা নেটে গুগল করে জেনে নিতে পারেন বা বের হওয়ার সময় হোটেলে জেনে নিতে পারেন।

রাস্তায় বাংগালীদেরকে না প্রশ্ন করাই ভালো। তাদের লাইফ অনেক স্ট্রাগল। স্পর্টগুলা তারা ভালো জানেনা। এম আর টি স্টেশান। ট্যাক্সিতে ঘুরতে পারেন।

ভাড়ার আইডিয়া ত আগেই দিলাম। তবে শখ করে একবার বি এম ডব্লু বা মার্সিডিস বা আমাদের মত ক্রাইসলার এ চড়তে পারেন। ৫/৬ কোটি টাকা দামের এই গাড়ীটা দেশে কেনার সামর্থ্য নাই বলে কি রাইডের সু্যোগ মিস করবো? এমনিতে নরমাল ট্যাক্সিতে উঠলেই ৩ ডলার মাস্ট । আর এগুলায় উঠলে ৫ ডলার মাস্ট। মাত্র দুই ডলারের জন্য এ সু্যোগ হাতছাড়া করবেন? ডেস্টিনেশানগুলায় যেমন সেনটোসা ও ক্যাসিনোর সামনে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে লাইনে দাড়িয়ে ট্যাক্সি নিতে হয়।

নতুন পুরাতন যেটা ভাগে পরবে সেটায় উঠতে হবে। তবে আপনি চাইলে স্ট্যান্ডে ব্র্যান্ডের গাড়ীগুলাকে পাস করতে পারেন। সেনটোসার ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। আমাদেরকে অনেক বার ট্যাক্সিতে উঠতে হয়েছে। কারন ক্যসিনোর আসেপাশে কোন এম আর টি নাই ।

আর ক্যসিনোর থেকে বের হতে হতে ভোর ৪টা বেজে যেত। তখন এম আর টি চলে কিনা সন্দেহ আছে। সিংগাপুর হলো রাতের সিটি। সারারাত নির্ভয়ে চলতে পারবেন কোন সমস্যা নাই। আপনার যদি ওয়াইল্ড নাইট লাইফ দেখতে ইচ্ছা করে তাহলে অরচার্ড রোডে অরচার্ড টাওয়ার এ যেতে পারেন।

সেখানে ডিসকো মিসকো অনেক কিছুই আছে। রবিবার বিকেলে মোস্তফা সেন্টারের আশেপাশে বাংগালীদের মেলা লাগে। হাজার হাজার বাংগালী একে অপরের সাথে গ্রিটিংস এর জন্য এই জায়গাটায় জরো হয়। এক টুকরা বাংলাদেশ। ঝালমুরিও পাবেন ১ ডলারে প্রায় ২৫০ গ্রাম।

এখানে পান, ইভেন এক ডলারে আমাদের দেশের বিখ্যাত প্রোডাক্ট টাইগারও পাওয়া যায়। অনেক কে দেখলাম পান করতে। একটা জিনিসই খারাপ লাগলো সেটা হলো সেখানে ৯৮ ভাগ বাংগালীরা সাধারন মানের জব করছে। এই দোকানের কর্মচারী, রাস্তা মেরামত এ জাতীয় কাজ ই বেশি তবে তারা মালেশিয়ার ভাইদের চেয়ে ভালো আছে। সিংগাপুর হলো নিয়ম কানুনের জায়গা।

এখানে কেউ আইন কানুন ভাংগার কথা চিন্তাও করে না। শহর নোংরা হয় বলে তারা চুইংগাম ব্যান করেছে। বোঝেন তাহলে, তারা শহর পরিস্কার রাখতে কতটা সচেতন। যেখানে সেখানে ময়লা ইভেন সিগারেটের মোথাও ফেলা যায় না। রাস্তা পার হওয়ার জন্য জেব্রাক্রসে সিগনালের সুইস পুশ করে সবুজ আলো জ্বলা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নিদ্দিষ্ট সময়ে সবুজ আলো জ্বললে পার হন।

ভোর ৪ টায় একদম ফাকা মোড়ে আমাদের ট্যাক্সি ড্রাইভার সিগনাল ব্রেক করতে রাজি হয় নাই। পুরা সিটিটা সেমি ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলছে। সিংগাপুর ও মালেশিয়ায় ড্রাগ ক্যারি বা গ্রহন করার শাস্তি হলো সরাসরি "ডেথ পেলান্টি" সো বি কেয়ারফুল। এয়ারপোর্টে বা প্লেনে কারো কোন কিছু কোন অবস্থাতেই গ্রন করবেন না। ইভেন পানির বোতল ও।

ঘুরেফিরে দু বন্ধু ৭৫ সিংগা ডলারে বা মাথাপ্রতি ২৫০০ টাকার একটা অতি লাক্সারি বাসে ক্লান্ত শরীরে ঘুমাতে ঘুমাতে মালেশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। বলা বাহুল্যা সিংগাপুর ও মালেশিয়ার ল্যান্ড বর্ডারের ইমিগ্রেশান অবকাঠামো, আকাশ পথের ইমিগ্রেশান অবকাঠামোর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এখানেও কোন ঝামেলা ছাড়া ডিপার্টচার ও এরাইভাল করলাম। প্লেন ফেয়ার বাদে একটু হিসাব করে চললে ৭০/৮০ হাজারে সিংগাপুর ভ্রমন করা সম্ভব। ১ লাখ নিলে সিকুয়র থাকা যাবে।

আর সপিং এর চিন্তা মাথা থেকে বাদ দেন। সিংগাপুর সপিং এর জন্য খুব খ্রাপ। আমাদের বংগের জিনস সেখানে ১০০০০ টাকায় বিক্রি হয়। সো.............. এই তো মোটামুটি আমার সিংগাপুর এক্সপেরিয়েন্স। আমি আরও দুই এক বার সিংগাপুর যেতে চাই।

দেশটা আমার খুবই ভালো লেগেছে। আই লাভ সিংগাপুর। ধন্যবাদ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।