গত কয়েক সপ্তাহ কাজের চাপে আর বাড়িতে গেস্ট থাকাতে লেখা হয়ে ওঠেনি।
গত দু তিন দিন ধরে অনেক সময় পাচ্ছি...আগামী ১লা জুলাই থেকে পুরো মাসটা আর একদম সময় পাবো না। ভিয়েতনাম যাচ্ছি প্রায় ১ মাসের জন্য।
কলকাতা থেকে বন্ধু এসেছিলো গত মাসে। প্রায় ৭ বছর পরে দেখা হলো।
যোগাযোগ ছিল সবসময় ইমেইল এ। ওর মা আমার জন্য এচড়ের নিরামিষ, বুটের ডাল আর ছানা বানিয়ে পঠিয়ে দিয়েছিল ওর হাতে। এচড় আমার ভিষন প্রিয়। বুভুক্ষের মত তাই দিয়ে ভাত খেলাম। আমার বন্ধুটির নাম অদীতি।
অদীতিকে নিয়ে নতুন করে সিংগাপুরে টুুর করে বেড়ালাম। দুজন মিলে বার্ড পার্কে গেলাম .......
হেটে হেটে গল্প করলাম আর মাজার মজার ছবি তুললাম।
পখিগুলোকে কাধে বসিয়ে খাওয়ালাম। নানান রঙের টিয়ে দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। মজা লাগে ওদের রং দেখে।
পালকের রং যে এত লাল হয় আগে কখন দেখিনি।
আফরিকান কুড়ে ঘড় আর নানান রকম পাখির মাঝে আমাদের হাড়িয়ে যাওয়া ২/৩ ঘন্টার জন্য।
যদিও আমি আগে গেছি তবু আসাধারন লাগল অদীতির সাথে ঘুরতে।
প্রচুর ছবি তুললাম পাখিদের আর আমাদের দুজনের।
জানিনা আবার কবে দেখা হবে।
অদীতির খুব মিউজিয়াম প্রিতী আছে। ওকে নিয়ে গেমাল এশিয়ান সিভিলাইজেশন মিউজিয়ামে।
চমৎকার করে অরগানাইজ করা মিউজিয়ামটি। অসাধারন লাগম শত বছর আগের রাজা রানিদের জুয়েলারি, পোশাক আর জীবন যাপনের স্টাইল দেখে। কতরকমের কালচার আর জীবন প্রনালী পেরিয়ে আজ আমরা এখানে দাড়িয়ে।
পুরোনো দিনের সিংগাপুরের সাদা কালো ছবি গুলোর মাঝে আজকের সিংগাপুরকে খুজতে মজা লাগল।
ওদের একটা ছোট্ট দোকান আছে মিউজিয়ামটির নিচতলায়। ওখানে ওরা ইতিহাস ও মিউজিয়াম রিলেটেড জিনিস পত্র আর এ্যনটিক বিক্র করে। হঠাৎ করে চোখে পরলো আমার ডিজাইন করা একটা বইয়ের উপর। কয়েক বছর আগে আমি এশিয়ান সিভিলাজেশন মিউজিয়ামের একটা বই ডিজাইন করেছিলাম।
বইটি বিক্ষাত চাইনিজ পেইন্টং কালেকশনের উপর। বইটির নাম "The Xiang Xue Zhuang Collection" বইটি মিউজিয়াম সংরক্ষন ও বিক্র করছে। আমার ডিজাই করা একটি বই সিংগাপুরের এশিয়ান সিভিলািজেশন মিউজিয়াম সংরক্ষন ও বিক্রি করছে এই কথাটা ভাবতেই আমার সারা গা সিন সিন করে উঠলো। সেখনে আমার নাম পর্যন্ত লেখা আছে....আহ্ ভাবা যায়!!! আমার চখে পানি এসে যাবার মত ব্যপার। বইটি কিনে ফেললাম আর জানলাম ঐ পাবলিকেশনের শেষ বই ছিল ওটা সব শেষ হয়ে গেছে।
বইটি নিয়ে ক্লিফ আর অদীতিকে দেখালাম। ওরা দুজনেই অবাক হলো। ক্লিফ বললো "তুমিতো কখনো বলনো তুমি এত বড় একটা কাজ করেছ" ভাবলাম মনে মনে আরে দুর আমিকি নিজেও জানতাম আমি এত বড় একটা কাজ করছি যেটা যত্ন করে মিউজিয়াম সংরক্ষন করবে !!! ভাল লাগায় মন ভরে গেল। দেশের হয়ে খুব গর্ব বোধ করলাম এই ভেবে একজন বাংলীর কাজ সিংগাপুর এশিয়ান সিভিলাইজেশন মিউজিয়ামে রাখা হয়।
এর পর অদীতিকে নিয়ে গেলাম বিক্ষাত মালায়ন দেখাতে।
পথে পরল ডুরিয়ান বিলডিং যেখানে সিংগাপুরের থিয়েটার গুলো।
ওখান হয়ে বোটকি আর ক্লার্কির পুরোনো দিনের রংবেরং এর দোকান গুলো দেখাতে নিয়ে গেলাম যেখানে একসময় সওদাগড়রা ব্যবসা বানিজ্য করত ঘাটের পাশে নৌকা বেধে।
পানশালা, রক্ষিতা আর বারবনিতাদের আখড়া ছিল।
আজ সেখানে জমকালো বার, ক্লাব আর রেসটু্রেন্ট সেই একই বিলডিংএর উপর রেনোভেট করা।
আর তার পাশে গরে উঠেছে নতুন নতুন আকাশ ছোয়া দালান কোঠা নিয়ে নতুন সিংগাপুর!!
সিংগাপুর পুরোনো দিনের কোন ইতিহাস কে ভেংগে নতুন সিংাপুর গরে নি, বরং পুরনো গুলোকে একই রকম ভাবে সংরক্ষন করে তার পাশে নতুন আর আধুনিকতাকে গড়ে তুলেছে।
পথে দেখা হলো এক নব বিবাহিতা মালেয় দম্পতির সাথে ওদের বিয়ের পোশাকে।
অসাধারন লাগল নতুন করে সিংগাপুরকে দেখতে অদীতির সাথে।
১৫ দিন পর অদীতি চলে গেল। এয়ার পোর্টে গেলাম ওকে তুলে দিতে। দুজনেই কান্না লুকিয়ে দুজনকে বিদায় দিলাম মন খারাপ করবেনা এই কথা দিয়ে।
শেষটায় সেটা পারা গেল না। ভেউ ভেউ করে দুই বুড়ি এয়ার পোর্টে দাড়িয়ে কাদছে আর সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে....কি হাস্যকর ব্যপার!! বাড়ি ফেরার পথে বার বার গত ১৫ দিনের স্মৃতি নাড়া দিতে থাকল মনের ভেতর বিশাল এক শুন্যতা নিয়ে।
আপনাদের সাথে সিংগাপুর আর অদীতিকে শেয়ার করলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।