আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পশ্চিম বঙ্গের সাংবাদিকদের চোখে বাংলাদেশের ব্লগার

ধ্রুবা ঘোষ এর দ্বারা | Yahoo.IN.BN.news – সোম, ১৮ মার্চ, ২০১৩ কপি পেস্ট হলেও আশা করি লেখাটা আপনাদের ভালো লাগবে । এই লেখায় আপনাদের কথাই তুলে ধরা হয়েছে, তাই বলবো- জন্ম যদি তব বাংলাদেশে তবে পড়ো একবার । ইন্টারনেটে আপনি কি কি করেন? ইমেল দেখেন, ফেসবুকে যান, খানিকটা লিঙ্কড-ইন আর টুইটার, সঙ্গে ফ্লিক্‌রে ছবি আপলোড। গুগ্‌লে দরকার মত সার্চ করে অন্যান্য ওয়েবসাইটেও যান। এর সঙ্গে সিনেমা দেখা, গান শোনা, ট্রেন-প্লেন-বাস-হোটেলের বুকিং, আর ভাল দর পেলে ঘড়ি থেকে গাড়ি, যে কোন জিনিস কেনাকাটি।

মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা। কবিতা, গল্প, ছবি, খাওয়া-দাওয়া, ভ্রমণ, সিনেমা, রূপচর্চা – এসব আর কি। কিছু বাঙালির জীবনে এই দৈনন্দিন মেনুতে ঢুকে গেছে আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর সেটা হল অবিচার/কুশাসনের সোজাসুজি মোকাবিলা, প্রথমে ওয়েবদুনিয়ায়, তারপর দেশের রাজপথে। আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন।

ইতিহাস তৈরী করছেন ব্লগার, ফেসবুক ও ফোরাম অ্যাক্টিভিস্টরা। তিয়েন আন মেন স্কোয়ার যা করতে পারেনি, দিল্লীতে যে স্ফুলিঙ্গ ছাই চাপা পড়ে গেল, আরবে বা মিশরে যেখানে জনজোয়ারে মিশে যেতে পারল সুযোগসন্ধানী অপরাধীরা, সেখানে শাহবাগে প্রকৃতপক্ষেই গড়ে উঠেছে গণ আন্দোলন। মহিলা-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, ছাত্র-শিক্ষক, শ্রমিক-ব্যবসায়ী, চাষি-চাকুরেজীবি সবাই এগিয়ে আসছেন। লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন, শান্তি বজায় রেখে। সমাজের সর্বস্তরের এবং বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এগিয়ে এসেছেন নিজের কথাটা বলতে।

আর এই সব কিছু শুরু হয়েছে একদল ওয়েব অ্যাক্টিভিস্টের হাত ধরে। যুদ্ধপরাধীদের শাস্তি প্রায়শই হয়না, কারন তাদের ‘অপরাধী’ চিহ্নিত করে আদালতে পেশ করতে যে কোন সরকারেরই আপত্তি থাকে। রাজাকারদের নারকীয় হত্যালীলা, গণধর্ষণ, শিশুহত্যার সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান কখনোই নেওয়া সম্ভব হবে না। সেভাবে দেখতে গেলে আদৌ রাজাকার নেতাদের নামে মামলা হওয়াটাই এক ধরনের জয়। তাদের ফাঁসির দাবী তুলে যে লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন, তাও গণতন্ত্রের বিজয়ঘোষণা করছে।

কতজন ‘গণতান্ত্রিক’ দেশের নাগরিক পারবেন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক-ব্লগ-ফোরামের নিভৃত নিরাপত্তার বলয় ছেড়ে পথে নামতে? ভারচুয়াল দুনিয়া ছেড়ে বাস্তবে আছড়ে পড়তে? কিবোর্ড ছাপিয়ে মোমবাতি, পোস্টার, ঝান্ডা হাতে রাজপথে অবরোধ গড়ে তুলতে? বাংলাদেশের সহনাগরিকেরা পেরেছেন। বাঙালি বলে আমি গর্বিত। বাঙালি বলে আমি লজ্জিতও। পারলাম না কেন আমরা, এই ভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফেটে পড়তে? কেন পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের বাসিন্দা হয়েও পারছি না অন্যায়ের মোকাবিলা করতে? মিছিলে হাঁটতে লজ্জা করে কেন? জমায়েতের ভিড়ে মেশার সময় পকেটমারদের বা ইভটিজারদের ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতে হয় কেন? যখন দিল্লীর পুলিশ নিরীহ অরাজনৈতিক মানুষের মাথা ফাটিয়ে দিল লাঠি চার্জ করে, আমরা গর্জে উঠলাম না কেন? ঠিক যেমন মণিপুরে, জঙ্গলমহলে অথবা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে আমরা অন্যায় দেখেও দেখি না। হ্যাঁ, ফেসবুকে দু-একটা পোস্ট শেয়ার করা যেতেই পারে, কিম্বা মোমবাতি হাতে বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ায় এক চক্কর হেঁটে আসাই যায়।

দিল্লী, সিঙ্গুর, মণিপুর কিম্বা ঢাকা – সবই যে কলকাতা থেকে বড্ড দূরে। অতদূরে কিছু হলে আমাদের গায়ে আঁচ লাগবে কেন? আর তাছাড়া, আমরা তো ‘ভদ্র’, ওসব মিটিং-মিছিলে কি ‘পার্টির লোক’ ছাড়া আর কেউ যায়? সুনাগরিকত্বের পরিচয় তো দিয়েই দিয়েছি ‘লাইক’ বোতাম টিপে। ব্যস, দায় শেষ। বাংলাদেশের ব্লগারেরা আজ ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ শব্দের মানে বদলে দিয়েছেন। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া বা প্রাণ হাতে করে প্রতিবাদ করা আমাদের দেশের তরুণদের কাছে হয়ত অতটা ‘কুল’ নয়।

অতএব গ্যালারীতে বসেই নাহয় পাশের দেশের খেলা দেখি, আর হাততালি বা গালিগালাজ ছুঁড়ে দিই। সূত্র- এখানে ক্লিক করুন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.