আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পশ্চিম উপকূলের ডায়েরী। পর্ব১

যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে

১. পুরো মহাদেশের এমাথা ও মাথা জুড়ে মানচিত্রে জায়গা করে নেওয়া আমেরিকার পূর্ব উপকূল (ইস্ট কোস্ট) ঘেষে অতলান্তিক মহাসাগর (আটলান্টিক মহাসাগর) আর পশ্চিম উপকূল (ওয়েস্ট কোস্ট) ঘেষে প্রশান্ত। প্রশান্ত মহাসাগরের লাগোয়া বিশাল রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া। তার প্রধান শহর লস এ্যাঞ্জলেস। পুরো নাম এক সময়ে আদর করে রাখা হয়েছিলো, এল পুয়েবলো দে নুয়েস্ট্রা সেনোরা লা রেয়েনা দে লস এ্যাঞ্জেলেস দে পোরসিউচুলা। বাংলা করলে দাড়াতে পারে, "আমাদের বরণীয় মাতা, এ্যাঞ্জলদের রানীর এক টুকরো শহর।

" সংক্ষেপে এক সময় নাম হয়ে ওঠে লস এ্যাঞ্জেলেস। স্প্যানিসে লস মানে দি। এখন আরো সংক্ষেপ। এলএ। ২. লস এ্যাঞ্জেলেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে প্লেন থেকে নেমে ইমিগ্রেশনে পার হয়ে ব্যাগ ঠেলে ঠুলে যখন বাইরে আসি তখন মানুষ জনের ভিড়ে ক্যারোলিনকে ক্যামনে চিনবো ভাবছিলাম।

ক্যারোলিনের সাথে পরিচয় ইংরেজী ব্লগের খাতিরে। সে আর আমার প্রিয় স্পিরিচুয়াল শিক্ষক লুয়ালিন ভন লি, সালাম। বহুদিন আগে লুয়ালিন ভন লি-এর সম্পর্কে গুগল সার্চ করতে গিয়ে ক্যারোলিনের আমার সাইটের সাথে পরিচয়। দুই জনেই তখন লুয়ালিনের একই ডিসকোর্স (অডিও লেকচার) শুনছিলাম। সেই আগ্রহ থেকে পরিচয়।

লুয়ালিনের সাথে ক্যারোলিনের সম্পর্ক ক্লাসিক সুফি গুরু-শিষ্যের চেয়েও অনেক বেশি। লুয়ালিন সাধারনত ক্যারোলিনের স্বপ্নের ভিতরে এসে ইনসট্রাকশন দিয়ে থাকে, যা মূলত খুব সীমিত শিষ্যের কাছে প্রকাশিত হয়। ক্যারোলিন সেই বাছাই করা শিষ্যেদের একজন, যাকে মিস্টিসিজমের ভাষায় খুব ইভলভড সোল বলা হয়। ক্যারোলিন নিজেই বলে, সম্ভবত এই মানব জনম আমার শেষ জন্ম। এরপরে ঘরে ফেরা।

৩. কোন বিচিত্র কারনে (সম্ভবত লুয়ালিন আমারও প্রিয় সুফি মাস্টার বলে) ক্যারোলিনের আমার প্রতি স্নেহ অপরিসীম। সেই স্নেহ থেকেই ক্যারোলিনের কাজ থেকে ছুটি বের করে আমি আসবো তাই ক্যানসাস (যা একেবারেই মধ্য আমেরিকা, দূরত্ব অনেকখানি) থেকে লস এ্যাঞ্জেলেস চলে এসেছে। ওর এক মেয়ে কলেজে পড়ছে, ছেলে হাইস্কুলে। আমি ওর কাছে সন্তানসম, আবার বন্ধুও। সিঙ্গেল মা ক্যারোলিনের গল্প ফুরাবে না।

ক্রিশ্চান ট্রাডিশনে গার্ডিয়ান এ্যাঞ্জেল বলে একটা ধারনা আছে। ক্যারোলিনের ভূমিকা অনেকটা সেই গার্ডিয়ান এ্যাঞ্জেলের মতো আমার জন্য, যার কাজ হলো বিপদ আপদে অদৃশ্য থেকে রক্ষা করা। পার্থক্য হলো ক্যারোলিন এই এ্যাঞ্জেলের শহরে রক্তমাংশের গার্ডিয়ান এ্যাঞ্জেল হিসেবে হাজির। সেই মোটামুটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সাদিক নামের গরীব, অচেনা মুসাফিরকে নিজ হিফাজতে দেখভাল করবে। সেই নিয়তে নিজের কাজ রেখে মধ্য আমেরিকা থেকে হাজির পশ্চিম উপকূলে।

যারা সহজে মুদ্ধ হয় তাদের জীবনে সম্ভবত ধুমায়ে মুদ্ধ হওয়ার মতো ঘটনার ঘনঘটা আসতেই থাকে। আমার মুদ্ধ হওয়ার পর্ব এই শুরু। ৪. এয়ারপোর্টে যা ভয় করছিলাম যে মানুষের ভিড়ে ক্যারোলিনকে চিনবো কিভাবে? ভয় ভূল প্রমানিত করে দেখি একটু দূরেই ক্যারোলিন নিজের ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষা করছে। বেচারী পাক্কা ২ ঘন্টা আগে এসে পৌছেছে। ক্যারোলিন শুধু আমাকে রিসিভ করতেই আসে নি, ক্যালিফোর্নিয়ায় ওর এক পুরাতন বন্ধুর বাড়ির মেহমান রুমে থাকার বন্দোবস্থ করে এসেছে।

আধা ঘন্টা পরে আমরা শাটল (মাইক্রোবাসের মতো ট্যাক্সি)- এ বসে, লস এ্যাঞ্জেলেসের হাইওয়ে ধরে ক্লারেমন্ট নামের এক শহরের পথে। ক্লারেমন্টেই আপাতত আমার ঠিকানা যা ইউনিভার্সিটি থেকে মেলা দূরে! ক্ল্যারেমন্টে ক্যারোলিনের বান্ধবী শীলা (শেইলা)'র বাসায় যতদিন ঘর না পাচ্ছি থাকবো এমনটাই ঠিক করা। শিলার বাড়িতে পৌছতে পৌছতে রাত দশটা। এয়ারপোর্টে পৌছেছি সাড়ে ছয়টায়। পাক্কা চার ঘন্টা লাগলো ইমিগ্রেশন, রাস্তার জ্যাম ঠেলে আশ্রয়ে পৌছতে।

বেচারা ক্যারোলিনকে বলছিলাম তুমি সেই বিকাল ৪টায় আসছো, আমার ২ ঘন্টা আগে, আর ৬ ঘন্টা পরে বাড়ি পৌছাচ্ছি আমরা। তোমার অনেক কষ্ট হলো। প্রতি উত্তরে যা গার্ডিয়ান এ্যাঞ্জেলদেরই মানায় সেইরকম কিছুটা গার্ডিয়ান ভাব, কিছুটা এ্যাঞ্জলের হাসি ক্যারোলিনের মুখে। শাটল জ্যাম ছাড়িয়ে আসতেই সাইঁসাই করে গতি বাড়ায় ইন্টারস্টেট হাইওয়েতে। লস এ্যাঞ্জেলেসে রাত তখন ভালো মতোই কালো চাদর দিয়ে শহুরে আলোর সাথে অন্ধকার-আলোর প্রতিযোগিতায়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.