আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রামীণফোন ইস্যুতে কঠোর বিটিআরসি_কর্মীদের শান্ত রাখতে সিটে সিটে ধর্ণা সিইওর

মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণ জানতে চেয়ে পাঠানো চিঠির জবাব এরই মধ্যে বিটিআরসির হাতে পৌঁছেছে। সূত্র জানায়, চিঠি পর্যালোচনার পরই এ বিষয়ে করণীয় নির্দেশ করবে বিটিআরসি। এদিকে, অব্যাহত ছাঁটাইয়ের মুখে চাকরি রক্ষার জন্য কর্মীরা তাদের ঐক্য আরও জোরদার করছেন। আর তাদের শান্ত রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টরে জনসেন স্বয়ং।

প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, টরে জনসেন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে ঘুরে ঘুরে আন্দোলনরত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন, যাতে তারা শান্ত থাকেন। ব্যয় সংকোচনের কথা বলে দেশের বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে চলছে বৃহৎ ছাঁটাই প্রক্রিয়া। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে গ্রামীণফোনে অনেক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা শুরু হয়েছে। এর বড় টার্গেট পরিণত হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের নারীকর্মীরা। বিশেষ করে যারা অন্তঃসত্ত্বা কিংবা শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ।

‘কথিত চাকরি রক্ষার পরীক্ষা’র মাধ্যমে গ্রামীণফোন কর্মী ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৪৮০০ লোকবল রয়েছে। বিটিআরসি দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামীণফোনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিষয়টির দিকে কড়া নজরদারি রয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইনের কোনো ধরনের ব্যত্যয় পেলে, বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসি গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে। সূত্র জানায়, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই গ্রামীণফোন বৃহস্পতিবার কর্মী ছাঁটায়ের কারণ ব্যাখ্যা করে বিটিআরসির চিঠির জবাব দিয়েছে। তবে অফিস আওয়ারের শেষভাগে জবাব পৌঁছালে তা নিয়ে কোনো কাজ করা যায়নি। রোববার এ বিষয়ে বিটিআরসি কাজ করবে বলেই নিশ্চিত করেছে সূত্রটি। চিঠির উত্তর পুঙ্খানুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

এবিষয়ে কথা বলতে রোববার সকালে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে। তবে সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো নেতিবাচক পদক্ষেপ রোধে আরো কঠোর অবস্থানে যাবে বিটিআরসি। কারণ গ্রামীণফোনের এই কর্মকাণ্ড টেলিযোগাযোগ খাতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ বাংলানিউজকে আগেই তার মত দিয়ে বলেছিলেন, গ্রামীণফোনে চাকরির নিরাপত্তা নেই। তিনি বলেন, গ্রামীণফোনের কর্মী ছাঁইয়ের ঘটনা টেলিযোগাযোগ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে কর্মী ছাঁটাই প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন গ্রামীণফোনের কর্মীরা। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে তারা একটি অ্যাসোসিয়েশনও গঠন করেছেন। তবে এর পূর্ণ‍াঙ্গ কমিটি এখনো ঘোষণা করা হয়নি। অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, কমিটি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রকাশ্য হতে কিছুটা ভয় পাচ্ছেন। কমিটি চূড়ান্ত হলেই তারা প্রকাশ্যে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামবেন।

ওই কর্মী আরও বলেন, এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। বিগত ১৫ বছরে এ ধরনের সংগঠন করিনি। কিন্তু এখন নিজেদের চাকরি বাঁচাতে সংগঠিত হওয়ার বিকল্প কোনো নেই। জানা গেছে, কর্মীদের সংগঠিত হওয়া এবং ক্ষোভের ব্যাপারে গ্রামীণফোনের সিইও টরে জনসেনও অবহিত হয়েছেন। এ নিয়ে বিটিআরসি চিঠি দিয়েছে।

এসব মিলিয়ে এখন চাপে রয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে যাতে কোনো অস্থিরতা না তৈরি হয়, সেজন্য টরে জনসেন এখন প্রতিটি বিভাগ ঘুরছেন, সিটে সিটে গিয়ে কর্মীদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তাদেরকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। গ্রামীণফোনের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, টরে জনসেন এখন কর্মীদের শান্ত করতে উদ্যোগী হলেও তিনিই কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রধান হোতা। এর আগে মালয়েশিয়াতে থাকাকালে তিনি এ ধরনের ছাঁটাই কাজ করেছেন।

ওই কাজে প্রধান সহায়ক ছিলেন গ্রামীণফোনের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক হারুন ভাট্টি। যদিও সপ্তাহ খানেক আগে এক মাসের ছুটি নিয়ে কানাডায় চলে গেছেন হারুন। গ্রামীণ ফোনের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশে গ্রামীণফোন ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করলেও এখানকার মানুষের জন্য কোনো ভালোবাসা তৈরি হয়নি। শুধু অর্থ আয়ের জন্যই তারা এখানে এসেছে। গ্রামীণফোনের মূল কোম্পানি টেলিনর চাকরিচ্যুত কর্মীদের ৩৬ মাসের বেতন দিলেও এরা মাত্র ৬ থেকে ১২ মাসের বেতন দিচ্ছে-- এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে নেওয়ার পরেও এরা কর্মীদের চাকরিতে কাঁচি চালাচ্ছে, যা কোনো‍ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.