সুরেশ কুমার দাশ ঃ
বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরকে ধ্বংস করার জন্য একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। এটা আমরা শুনে আসছি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টসে নানা মাত্রার অ¯ি’রতা দেখা যায়। আমরা এও শুনে আসছি সংঘবদ্ধ দেশি বিদেশি সিন্ডিকেট এসব ঘটনায় জড়িত। দুঃখজনক বিষয় হ”েছ কোন সরকার এ যাবত গার্মেন্টস সেক্টরের এ অ¯ি’তিশীলতাকে শক্ত হাতে দমন করতে পারে নি।
আন্দোলনের নামে কোন অ¯ি’র পরি¯ি’তি তৈরি হবে না এরকম নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। শক্ত হাতে দমন না করার কারণে এমন ঘটনা বার বার ঘটছে। অর্থাৎ গার্মেন্টসে বেতনের নামে কোন অ¯ি’রতা দেখা দিবে না। কিংবা কোন ভাঙ্গচুর-জ্বালাপোড়াও- আন্দোলন হবেনা এমন আশাই মানুষ করে।
সরকার এটা শক্ত ভাবে দমন করতে না পারাটা একটা ব্যর্থতা।
এটা আবার সরকারের উদাসীনতাও নয়। আর কিছু একটা ব্যব¯’া নেয়ার পরও আবার গার্মেন্টসে আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও হ”েছ কেন। এ দুর্বলতাটাই ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা একা সরকারের নয়। এর জন্য দায়ী এ শিল্পের মালিকরাও।
পরি¯ি’তি বোঝার প্রধানত দায় তাদের। কোন কিছু ঘটার আগেই তা সামাল দেয়া। বা আন্দোলন তৈরি হবার আগেই বুঝতে পারা। তথাকথিত শ্রমিকদের নজরদারিতে রাখা। তাদের মোটিভ বোঝা।
তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা। আলাপ আলোচনা করা।
কিš‘ যখন বিশাল আকারে অ¯ি’র পরি¯ি’তি তৈরি হয়, উৎপাদন ব্যাহত হয় তখন মালিকদের হাউমাউ শুর“ হয়ে যায়। একটা কথা গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠনগুলোকে বুঝতে হবে অপর্যাপ্ত পুঁজি নিয়েই কেউ যাতে গার্মেন্টস ব্যবসা করার সুযোগ না পায়। যারা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারে না।
শ্রমিকদের শ্রম লুট করে যাতে কেউএ ব্যবসায় আসার সুযোগ না পায়। এদেশে গার্মেন্টস শিল্পটা এখন প্রতিষ্ঠিত ও প্রতিশ্র“তিশীল একটা শিল্প। এটাকে দু’ চারজন নামধারী গার্মেন্টস মালিকের কারণে কলঙ্কিত হতে দেয়া যায়না। দেশের সর্বনাশ করার সুযোগও তারা পেতে পারে না। তাই যারা এ শিল্প চালাতে অক্ষম বা যোগ্যতাহীন কিংবা শুধু পুঁজিই নয় কোন কৌশল ছাড়াই ব্যবসায় নেমেছে তাদের অবাধ গার্মেন্টস ব্যবসা করার সুযোগ বন্ধ করতে হবে।
একান্তই করতে ই”ছুক হলে গার্মেন্টস মালিক সমিতিকে এর দায় নিতে হবে। গার্মেন্টস ব্যবসায়িরা এ শিল্প প্রতিষ্ঠা করলেও এর সঙ্গে এখন দেশের মান ইজ্জত জড়িত। কারণ আমরা অর্থনৈতিক ভাবে যেমন লাভবান হ”িছ তেমনি আমরা প্রতিযোগিতাও তৈরি করেছি। এ প্রতিযোগিতা থেকে সিটকে পড়া মানে বাংলাদেশ ‘ব্যর্থ’ এমন একটা কথা আসবে। তখন ব্যক্তি গার্মেন্টস মালিক নয়, দেশের কথা আসবে।
যারা অনেক শ্রমে ও মেধায় এটাকে এতদূর টেনে নিয়ে এসেছে তাদের মান সম্মানও রক্ষা করতে হবে।
আমরা জানি ড্যান মজিনা এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে বার বার হুমকি দি”েছন। তিনি কখনও কখনও বাংলাদেশের ব্যাপারে উ”ছ¡াসও দেখান। মনে রাখতে হবে এদের এরা ‘বগলে ইট লুকিয়ে মুখে শেখ ফরিদ’ সাজে। আমরা যদি বুক চেতিয়ে পৃথিবীর সামনে দাঁড়াতে পারি এরা তখনই আমাদের স্যালুট করবে।
তার আগে নয়। কারণ ড্যান মজিনার জাত ভাইয়েরা বলেছিলেন এদেশ তলাবিহীন ঝুঁড়ি। গার্মেন্টস শিল্পের ব্যাপারেও এ ড্যান মজিনা বার বার হুমকি দি”েছ। কারণ আমরা লাভবান হ”িছ এটা স্বাভাবিক ভাবেই তাদের খারাপ লাগবে। তাই তাদের বিভ্রান্তির মধ্যেও আমাদের পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যেতে হবে।
যতবার গার্মেন্টসে অ¯ি’রতা তৈরি হয় ততবারই শুনি গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে এখনও ধ্বংস হয়নি। গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে এ কথা যেন আমরা বলাবলি না করি। কারণ এটাও এক ধরনের গুজব। আমাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করা।
সরকার শিল্প পুলিশ তৈরি করেছে। কত কিছু করল। কিছুতেই কিছু হ”েছ না। আমাদের মনে রাখতে হবে নিজের ঘর ঠিক থাকলে সবই ঠিক। তাই ড্যান মজিনা বা বাইরের কোন সিন্ডিকেট আমাদের ক্ষতি করতে পারবেনা।
ঘর ঠিক রাখার জন্যই আমাদের দেখা দরকার দেশের কারা মাঠে নেমে এসব ঘটনার জন্ম দি”েছ।
একটা কথা বলে রাখা দরকার সেটা হ”েছ রাস্তায় নেমে ভাঙ্গচুর করার লোক পাওয়া সহজ হয়ে গেলে ভাঙ্গচুর চালানোও সহজ হবে। আসলে এদেশে যারা গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে তাদেও ৯০ শতাংশই এসব তথাকথিত আন্দোলন সম্পর্কে কিছুই জানেনা। যারা গার্মেন্টসে কাজ করে তারা রাস্তায় নেমে ভাঙ্গচুর করার মত মানসিকতা ও সাহস অর্জন করেনি। এ কথা সরকার ও গার্মেন্টস মালিকদের জানার কথা।
হয়ত শ্রমিকরা কিছুটা সচেতন হয়েছে নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে। এটাই। তারা যেখান থেকে শ্রমের টাকা নিয়ে গ্রামে শত উপেক্ষা ও অপেক্ষায থাকা মা বাবার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য ব্যস্ত, গরিব মা বাবার মুখে ভাত তুলে দেয়ার জন্য শত ব্যস্ত সেখানে তারা এ ধরনের আন্দোলনে কখনও যেতে পারেনা। যে টাকায় তারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে সেই প্রতিষ্ঠানে তারা কখনও ভাঙ্গচুর চালাতে পারে না।
প্রায় ৮০ শতাংশ নারী শ্রমঘন প্রতিষ্ঠান হ”েছ বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প।
এখানে যারা কাজ করে সেইসব মেয়েদের পারিবারিক ও সামাজিক অব¯’া চিন্তা করতে হবে। তারা আন্দোলন করার জন্য কতটা মানসিকভাবে প্র¯‘ত। এদেশে দুই ধরনের মানুষরা প্রাণে বাঁচার জন্য হাজারও বাঁধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে টিকে আছে। তাদের একদল গরিব ঘরের মেয়েরা । যারা শুধুই বাঁচার স্বপ্নে গার্মেন্টসে এসেছে।
আর একদল গরিব মা বাবার সন্তানরা গেছে বিদেশে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খাটছে। যারা গার্মেন্টসে গেছে তারা এমন মা বাবার সন্তান যে মা বাবার কোন পুত্র সন্তান নেই। যারা এমন মা বাবার সন্তান যারা যাদেও এ চাকরি ছাড়া কোন অবলম্বন নেই। ঘর থেকে শত শত কিমিটার দূরে রাজধানী বা বিভাগীয় শহরে এসে গামেন্টসে কাজ করছে মা বাবাকে খাওয়ানোর জন্য। ও নিজে বাঁচার জন্য।
যাদের মা বাবা হয়ত নিজেদের উপজেলা সদরও চিনেনা।
সুতরাং এসব মানুষরা গার্মেন্টস ভাঙ্গচুরের মত কোন আন্দোলন করবে সেটা বিশ্বাস করা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য। কারণ আন্দোলন করার আগে তারা ভাববে আমরা কাল খাব কি?
আন্দোলনের নামে এভাবে দেশের স্বার্থ বিরোধী কারা জড়িত আছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি যত না মালিকের হবে তার চেয়ে বেশি হবে যারা ওখানে কাজ করছে তাদের। এরকম লাখ লাখ শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা অভূক্ত দিন কাটাবে।
গার্মেন্টস মালিকদেরও মনে রাখা দরকার । এবং তাদের সুদে- মহাজনী মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এবং মনে রাখা দরকার তাদের প্রতিষ্ঠানে যদি শ্রমিক স্বার্থ ও শ্রমিক অধিকারকে প্রধান্য দেয়া হয় তাহলে তাদেরই লাভ বেশি। আর তাদের লাভটা শুধু টাকা গোনার আঙ্গুল দিয়ে হিসাব করলে চলবে না। কারণ একজন শিল্পকলের মালিক কিংবা ব্যবসায়ির কাছে টাকাটাই মুখ্য হতে পারেনা।
ঠিকই আছে- তিনি অনেক মেধা ও কৌশল খাটিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখেন। কারণ যখন তিনি এমন একটা পর্যায়ে যান তখন তার দেশের ও সমাজের প্রতি দায় দায়িত্বও বেড়ে যায়। মানবতাবোধটুকুও সেভাবে লালন করা দরকার। এটা শ্রমিক অধিকারের কথা বাদ দিলেও তাদেও জন্য মানবিক বিষয়গুলো ভাবার আছে।
আর আজকে যারা শিল্পকলের মালিক হিসাবে সফল তাদের এ বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে দরিদ্র মানুষের সস্তা শ্রম না পেলে এদেশে গার্মেন্টস শিল্প কখনও মাথা তুলে দাঁড়াত পারত না।
এদের সস্তা শ্রম ছিল বলেই বাংলাদেশ আজ গার্মেন্টস ব্যবসা নিয়ে গর্ব করতে পারছে। আর যে ব্যবসায় শ্রমিকরাই প্রধান নিয়ামক তাদের বঞ্চিত করে ব্যবসা করার চিন্তা করা একজন মানুষ ও ব্যবসায়ি হিসাবে চিন্তা করা উচত নয়। আরও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় গেলে এ ধরনের সস্তা শ্রম তারা পাবে না। সুতরাং ব্যবসা করলে যার যা পাওনা তা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ব্যবসায়ি শুধু বাংলাদেশে টিকে থাকলে তো তার যোগ্যতার প্রমাণ হলো না।
ব্যবসায়িরা এটা বুঝলে গামেন্ট শ্রমিকদের অসন্তোষ প্রকাশের অজুহাত থাকবেনা।
আর একটা বিষয় - আরও দশ বা ১৫ বছর পর খোদ বাংলাদেশেই এ ধরনের সস্তা শ্রমিক পাওয়া যাবে কিনা ভাবতে হবে। তখন যদি বাইরের শ্রমিক দিয়ে কাজ করতে হয় তখন পরি¯ি’তি আরও খারাপ হবে। সুতরাং প্র¯‘তির বিষয়ও আছে।
তারপরও আমাদের শ্রমিকরা অধিকার সম্মত পাওনার দাবিতে আন্দোলন করে না।
যত আন্দোলনের কথা শোনা গেছে সবগুলো বকেয়া বেতনের নামে। বেতন বাড়ানোর জন্য আন্দোলন হয়েছে অনেক কম। তো যারা বেতন বাকী রাখছে তারা প্রতিষ্ঠান চালানোর যোগ্যতা সম্পন্ন কিনা। আর শ্রমিক অধিকারের কথা ও চাকরি নীতিমালার কথা আরও অনেক পরে আসবে। সুতরাং বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পমালিকদের আরও ভালো রকমের প্র¯‘তি দরকার।
শুধু ড্যান মজিনাদের হুমকি নয়। প্রকৃত অব¯’া কী হতে পারে-তাও ভাবতে হবে। দেশের শ্রমিক যারা সামাল দিতে পারছে না তারা বাইরের কর্মিদের সামাল দিবে কীভাবে। তখন ড্যান মজিনারা সংখ্যায় আরও বাড়বে।
এরপরও আন্দোলনকারীদের পক্ষে কোন কথা বলতে হলে একটা কথাই আসে।
সেটা হ”েছ আমাদের বা এদেশের বোধোদয় হয় তখনই যখন নেতিবাচক কোন পথে একটা ঝাঁকুনি আসে। এর আগে আইনি বা অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে কারো দেনা পাওনার বিষয়টা সুরাহা হয়না। আজকে যদি গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন করেও থাকে সেটা সেই অর্থে মঙ্গল। কারণ তারা তাদের অধিকারের কথা জানছেন। এবং বঞ্চিত হলে প্রতিরোধ করবে কিংবা আদায়ের ব্যাপারে সচেতন হবে।
এটাই হল শিল্পকলের মালিকদের অন্যের অধিকারের বিষয়ে আগেভাগে না ভাবার নেতিবাচক দিক। শ্রমিকদের তো নূন্যতম খেয়ে পরে বাঁচার অধিকার আছে। শুধু আছে তা নয় শ্রমিকের শারীরিক সার্মথ্য তথা শক্তি না থাকলে তাকে কাজেও লাগানো যাবেনা। অর্থাৎ অন্তত তার খেয়ে -পরে, গায়ে -গতরে বেঁচে নিশ্চয়তা পেতে হবে। কারণ কাজ করার শক্তি না থাকলে তো কারখানার মেশিন ঘুরবেনা।
শোষণ করা কিংবা হীনবল করা কিংবা তাদের দুর্বল করা গার্মেন্টসের উৎপাদন ব্যব¯’ার জন্যও ক্ষতিকর। এ দর্শনেও শিল্প চলতে পারেনা। সুতরাং তাদের গতরখাটানোর জন্যই নয়- তাদের জীবনমান নিশ্চিত করেই শ্রমিক, মালিক, শিল্প ৩ টাই টিকিয়ে রাখতে হবে।
বলছিলাম আমাদের সব ধরনের সচতেনতার বিষয়গুলো নেতিবাচকতার হাত ধরে আসে। একইভাবে শ্রমিকরা আজ আন্দোলন না করলেও তারা সেই শোষণের তিমিরেই থেকে যেত।
একটা কথা মনে রাখা দরকার শোষণ করে টিকি থাকা যায়না। কারণ এদেশে সামন্ত- প্রভুরা যুগ যুগ ধরে কৃষক ও খেটে খাওয়াদের শোষণ করলেও শেষপর্যন্ত তারাই নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এসব সত্যগুলোর দিকে তাকাতে হবে।
আরও কতগুলো বিষয় এখানে উল্লেখ করা দরকার। বিভিন্ন সময়ে যেসব শ্রমিক আন্দোলনের নামে যাদের গ্রেপ্তার - আটক করা হয় তাদের পরিচয়টা কী তা ভালোভাবে সরকারের বা সংশ্লিষ্টদের উচিত জনগণকে জানানো।
কারা এ আন্দোলনগুলো সংগঠিত করে। তাদের পরিচয়ও। তাহলে জনগণ জানতে পারবে আন্দোলনকারীরা গার্মেন্টেসের শ্রমিক কিনা। এতে জনমানুষের কাছে বিষয়টা পরিস্কার হবে। কারা আন্দোলনকারী ও ষড়যন্ত্রকারী।
কারণ রমজান মাস আসলেই গার্মেন্টসে অ¯ি’রতা শুর“ হয় বেশি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।