জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের প্রজন্ম হিসেবে আমরা প্রথম হুমায়ুন আহমেদের বই হাতে তুলে নেই। শুরু নন্দিত নরকে দিয়েই। তারপর শঙ্খনীল কারাগার। মাত্র এই দুটো বইই তাকে আমাদের কাছে প্রিয় লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
তবে তিনি নিজেকে সেই জায়গায় ধরে রাখেননি।
বার বার বদলেছেন। একটা সময় ছিল, যখন আমরা ইমদাদুল হক মিলন ও হুমায়ূন আহমেদের বই পাল্টাপাল্টি করে কিনতাম। কে ভালো লেখক সেটা নিয়ে তর্ক করতাম।
তারপর একে একে পড়েছি, অমানুষ, আকাশ জোড়া মেঘ, ইরা, আমার আছে জল, অচিনপুর, নবনী এবং আরো আরো অনেক অনেক উপন্যাস।
সেই সময়েই টের পেয়ে গিয়েছিলাম, হুমায়ূন আহমেদের লেখার বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য।
তিনি কেবল প্রেম ভালোবাসায় তার লেখাকে আটকে রাখেননি।
তার প্রথম সুপার হিট বই হল দেবী। রহস্যোপন্যাস হিসেবে অসাধারণ। দেবী, নিশীথিনী, বৃহন্নলা, অচিনপুর প্রভৃতি বইয়ে তার রহস্য ঘেরা একটা পরিবেশ তৈরি করেন তিনি। এই রহস্যোপন্যাস থেকেই তার মিসির আলী চরিত্র সৃষ্টি।
ময়ূরাক্ষী নামে একটা উপন্যাস দিয়ে তৈরি করলেন আরেকটা চরিত্র - হিমু। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র এই হিমু।
তার লেখার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল সহজ ভাষা, ছোট বাক্য এবং নির্মোহ বর্ণনা। ঘটনার ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই থাকে টুইস্ট। কনট্রাডিকশন।
তিনি শুরু করলেন টিভি নাটক এই সব দিনরাত্রি। অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেল সেই সিরিয়াল। তারপর বহুব্রীহি। হাসির নাটক এই রকম খুব কমই আমরা পেয়েছি। অয়োময় আরেক টিভি সিরিয়াল যা টিভি সিরিয়াল সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
কোথাও কেউ নেই একটা ঝড়ো হা্ওয়ার মতো মানুষের হৃদয় দখল করে নিল।
আগুনের পরশমণি দেখে বিপুলভাবে আলোড়িত হয়েছিলাম। পরের ছবি শ্রাবণ মেঘের দিন । সেই ছবিও অসাধারণ। শ্যামল ছায়া আরেকটা অসাধারণ সিনেমা।
সে তরুণ বয়সে তার বই পড়তে পড়তে লেখক হতে চেয়েছিলাম। তার টিভি নাটক দেখে নাট্যকার হতে চেয়েছিলাম। আর তার সিনেমা দেখে হতে চেয়েছিলাম ফিল্ম মেকার।
সত্যিকার অর্থে কেবল আমি নই, আমার প্রজন্মের একটা বড় অংশ তার লেখা, নাটক ও সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে বুঁদ হয়েছিল। তিনি যাই করতেন আমরা সেটা সাগ্রহে গ্রহণ করতাম।
কারণ বিশ্বাস ছিল তিনি আমাদের সুস্থ বিনোদনে ভাসাবেন। বাস্তবে হয়েছেও তাই। তার কোন সৃষ্টিকর্মে এমন কিছু পাইনি যেটা অশ্লীল বা ক্ষতিকর।
অনেকে তার লেখাকে সস্তা বলে। আমি সেটা মনে করি না।
আমাদের দেশে সব সময় শিল্পীদের অপমান করার একটা প্রবণতা আছে, এটা একটা অক্ষম ঈর্ষা থেকে করে থাকে অনেকে। আমার কাছে মনে হয় হুমায়ূন আহমেদ অনেকের অক্ষম ঈর্ষার শিকার।
এখনো তার বই হাতের কাছে পেলে গিলতে থাকি সাগ্রহে। তার নাটক এখনো টানে। তার চলচ্চিত্র এখনো আমাদের বিনোদন দেয়।
আজ আমার মানস গঠনে যা কিছু আছে তার অনেক খানি উনি নির্মাণ করে গেছেন। আজকে আমরা মানসিকভাবে যেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, সেই জায়গাটার অনেকটা নির্মাণ করেছেন হুমায়ূন আহমেদ।
এ জন্য তার কাছে আমার-আমাদের অনেক ঋণ। এই ঋণ কোন দিনও শোধ হওয়ার নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।