ছাত্র প্রতিপত্তি বা সম্পত্তির জন্য যুগে যুগে যুদ্ধ হয়েছে। যে কোন যুদ্ধই যে ক্ষতিকর তা প্রতিটি যুদ্ধের পর বারবার উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও যুদ্ধ থেমে থাকেনি। যুদ্ধে বেশি বিপদের মুখে পড়েন শিশু ও মহিলারা। এর সাথে ঘঠে যায় ইতিহাসের অপূরনীয় ক্ষতি।
যা কখনোই পূরন হয়না। যেমন অতি সম্প্রতি বাগদাদ থেকে চুরি হয়ে গেছে অনেক মূল্যবান জিনিষ। যেগুলো হয়তো আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না।
এখনো যুদ্ধ চলছে ইরাকে এবং আফগানিস্তানে। প্রতিদিন মিডিয়াতে এই যুদ্ধের খবর আসছে।
এখন এই ঘঠনাগুলোকে নিয়ে মুভি ডিরেক্টররা তৈরি করছেন মুভি। এ মুভিগুলো আলোচিত এবং সমালোচিত হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। মুভির ফলে মানুষ বিনোদনের সাথে বাস্তবে কি হচ্ছে তা দেখতে পাচ্ছে। ২০০৯ সালেও ইরাক এবং আফগানিস্তানের ঘঠনাগুলোর উপর তৈরি হয়েছে মুভি। সমালোচনার পাশপাশি এগুলো মুভি এওয়ার্ড কম্পটিশনেও চলে আসছে।
এরই মধ্য আফগানিস্তানের উপর চমৎকার একটি মুভি হলো ব্রাদার্স।
মুভিটি এই প্রথম তৈরি হয়নি। ২০০৪ সালের সুসান বেয়ার এর ডেনিশ মুভি ব্রাদার্স এর রিমেক, যেটি আফগানিস্তান এবং ডেনমার্কে শুটিং করা হয়েছিলো। তবে উভয় মুভি তৈরির ক্ষেত্রে হোমারের কাব্য দি অডেসি ইন্সপিরেশন হিসেবে কাজ করেছে। মুভিটির স্টোরি ধারাবাহিকভাবে এগিয়েছে।
তাই মুভিটি দেখে ভালো লাগবে। আর যারা আফগানিস্তানের যুদ্ধের খবরাখবর রাখনে তারাও মুভিটির সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন আসলে মুভিটি কেমন করেছে। তবে মুভিটি গল্ডেন গ্লোবে দুটি নমিনেশন পেয়েছিলো। একটি হলো বেস্ট অ্যাক্টর। এবং অন্যটি হলো বেস্ট অরিজিনাল স্কোর।
অতএব বোঝা যাচ্ছে মুভিটি ডিরেক্টর যত্ন নিয়েই তৈরি করেছেন।
আফগানিস্তানে তালেবানদের হঠানোর জন্য আমেরিকা সৈন্য পাঠায়। এখানে অনেক আমেরিকান সৈন্যর সাথে আসে মেরিন স্যাম চাহিল। স্যাম বিবাহিত। দুটি মেয়ে আছে।
বাব-মা তার প্রতি গর্বিত। কারন সে নিজের দেশ আমেরিকাকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করছে। কিন্তু তার ভাই টমি চাহিলের উপর তার বাবা-মা বিরক্ত। কারন সে অশ্র লুট করতে গিয়ে জেল খেঠেছে। স্যাম আফগানিস্তানে যাওয়ার কিছুদিন পূর্বে টমি জেল থেকে ছাড়া পায়।
স্যাম নিজেই তার ভাই টমিকে জেল থেকে নিয়ে আসে। স্যাম আফগানিস্তানে যাওয়ার সময় টমিকে তার পরিবারের খুজ খবর নিতে অনুরোধ করেছিলো।
স্যাম আফগানিস্তানে যাওয়ার কিছুদিন পরই খবর আসে স্যাম বিমান দূর্ঘঠনায় মারা গেছে। এবং তাদের সংগি সবাই মারা গেছে। স্যামের ওয়াইফ গ্রেসকে এই খবর দিতে যখন আর্মির লোক আসে তখন গ্রেস ঠিকই বুঝে যায় তার জীবনে কি অপূরনীয় ক্ষতিটা হয়ে গেছে।
অনেকেই বুঝবেন যে কোন মৃত্যুই যে একটি পরিবারে দুখের কারন হতে পারে। তাই বারবার যুদ্ধের নামে নিরীহ মানুষ হত্যার প্রতিবাদ উঠেছে। এখানে মুভির দৃশ্যটা খুবই শক্তিশালী হয়েছে। এমন একটি দৃশ্যের সৃষ্টি হয় যা সবাইকে আবেগাপ্লুত করবে। অথচ এখনে ডায়ালগ খুবই কম।
আসলে মুভির এটাই ক্ষমতা।
স্যাম আসলে মারা যায়নি। তাদের প্লেনটি ক্র্যশ করেছিলো ঠিকই। কিন্তু স্যাম এবং তার কলিগ ভাগ্যক্রমে বেচে যায়। এখন তারা বেচে গিয়ে আরো বেশি বিপদের মধ্যে পড়ে যায়।
কারন তারা ধরা পড়ে যায় তালেবানদের হাতে। তদের প্রতিটি মূহুর্ত এখন এক অজানা শংকায় কাটতে থাকে। তাদের দ্বারা জোরপূর্বক ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়। এদিকে স্যামকে বাধ্য করা হয় তারই কলিগকে নিজ হাতে পিঠিয়ে মেরে ফেলার জন্য। স্যাম সমস্যার মধ্যে থাকলেও তার ওয়াইফ গ্রেস ও তার মেয়েরা এখন ভালোই আছে।
তারা স্যামের অভাব আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছে। যদিও তাদের প্রথম দিন গুলো খুবই বাজে ছিলো। গ্রেস এবং তার মেয়েরা এখন টমির সাথে বাইরে ঘুরতে যায়। মেয়েরা প্রথমে টমিকে সহ্য করতে না পারলেও পরে তাদের মধ্যে বন্ধুত্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। টমি এবং গ্রেসের মধ্যে গড়ে উঠে যৌন সম্পর্ক।
একদিন হঠাৎ স্যাম আফগানিস্তান থেকে উদ্ধার হয়ে ফিরে আসে তার পরিবারের কাছে। এখন স্যাম ফিরে আসার পর শুরু হয় নতুন সমস্যা। স্যাম ভুগতে থাকে মানসিক সমস্যায়। সে কিছুতেই ভুলতে পারেনা তার কলিগকে নিজ হাতে হত্যা করার ঘঠনা। সে বিচিত্র সব কান্ড করতে থাকে।
কারো সাথে ভালোভাবে মিশতে পারেনা, এমনকি কথা বলতে পারেনা। নিজের ওয়াইফকে পর্যন্ত অবিশ্বাশ করতে থাকে। স্যাম জানতে চায় তার এবং টমির মধ্যে কোন অবৈধ সম্পর্ক ছিলো কিনা? এবং এগুলো নিয়ে তাদের মধ্যে চলতে থাকে অশান্তি ঝড়। এসবই যে দুসহ যুদ্ধের কারনে হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এতে করে স্পষ্ট হয় যুদ্ধ কখনোই মানুষকে শান্তি এনে দিতে পারেনা।
মুভিটি এখনে যুদ্ধের আগে একটি পরিবারের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। এবং যুদ্ধের পরের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। এর প্রধান উদ্দেশ্যই হলো যুদ্ধের ফলে আমাদের পরিবার এবং সমাজে কি প্রভাব ফেলতে পারে তা দেখানো। মুভির শেষ দিকে দেখা যায় স্যাম মানসিকভাবে ভেংগে পড়ে। আসলে যুদ্ধের ফলে আমাদের পারিবারিক এমনকি সামাজিক জীবনে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে তাই দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
স্যামের শেষ কথাটা খুবই মুল্যবান। অনেককেই নাড়া দিবে একথাটি। স্যাম প্রশ্ন করে তার জীবনে যা ঘঠে গেল তা থেকে বেরিয়ে এসে সে কি একটি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে?
মুভিটি রিলিজ হওয়ার পর কৃটিকদের কাছ থেকে পজিটিভ রিভিউ এসেছে বেশি। তাই বলা যায় মুভিটি ভালো লাগবে। ২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর রিলিজ পাওয়া ড্রামা, থ্রীলার ও অয়ার নির্ভর মুভিটির ডিরেক্টর জিম শেরিডান।
অভিনয় করেছেন জ্যাক গিলেনহাল এবং নাটালি পোর্টম্যানসহ আরো অনেকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।