বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... মাথার উপর বিশাল একটা সুর্য নিয়ে মধ্যদুপুরে হেটে চলেছি, গন্তব্য ঠিক নেই। কাকরাইল মোড় থেকে মালিবাগ যাওয়া যায় কি? না ওই দিকটায় এখন জ্যাম, তারচেয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়া যাক। মাথার উপর প্রচন্ড রোদ নিয়ে হেটে চলেছি। রমনা পার্কের পাশ দিয়ে হেটে চলেছি। এটা ভিআইপি রোড তাই গাড়িঘোড়া কম।
হেটে চলেছি মাথার উপর পিচগলা রোদ, সুর্য তার সমস্ত তেজ ঢেলে দিচ্ছে। রমনা পার্কের গেটের কাছে আসতেই এক মধ্যবয়সী লোক আমার সামনে এসে দাড়ায়। গায়ে সাদা কাপড় জড়ানো। অদ্ভুদ ভাবে আমাকে নজরদারী করছে লোকটা। দ্বিধাদ্বন্দের মাঝে হয়তো লোকটা কিছু ভাবছে।
আমি সামনের দিকে হাটতে শুরু করতেই লোকটি আমার সামনে এসে দাড়ায়। আমি কিছু বলার আগেই তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন
'ছোকরা তুমি কে?'
'হিমু, হিমালয়'
'পাগলের মত কথা বলছো কেন'
'জগতে সবাই পাগল, আপনিও একজন পাগল, আমিও পাগল, আপনি হয়তো একটু কম আর আমি হয়তো একটু বেশী। আর মানুষের মধ্যে পাগলামী কিছুটা থাকবেই এটা দোষের কিছু না'
চায়ের প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছে। আমি ফুটপাতের একটা চায়ের দোকানের দিকে এগিয়ে যেতেই তিনি আমার কাছ ঘেষে এসে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন
'হিমু বেঁচে নেই, তুমি হিমু নও'
তার অদ্ভুদ কথা শুনে বিস্মিত হলেও আমি সেটা চেপে গেলাম। এই লোকটির সামনে বিস্ময় প্রকাশ করা ঠিক হবে।
আমার বাবা এই ব্যাপারে একটা বলেছেন 'হিমালয় বাবা জগতটা বড়ই রহস্যময়, চোখের সামনে অনেক রহস্যময়, বিস্ময়কর বস্তুর সন্ধান পাইবে কিন্তু তা প্রকাশ করিবে না। ' আমি বিস্মিত না হবার ভান করে হাটতে থাকি। পেছন থেকে তার কয়েকটি কথা আমার কানে এসে লাগে। 'হিমু চলে যাও, চলে যাও। ' আমি দ্রুত ফুটপাত ঘেষে গজিয়ে ওঠা চায়ের দোকানের সামনে এসে দাড়াই।
চায়ের দোকানদার সোলেমান বলে ওঠে
'আরে হিমু ভাই যে, অনেকদিন পর আসলেন, বসেন বসেন' সোলেমান কাজের ছেলেটাকে হাক মারে
'এই হিমু ভাইজান আসছেন, ভালো কইরা এক কাপ চা দে'
আমি নড়বড়ে চায়ের দোকানের বেঞ্চটায় বসি। কানে বারবার একটা কথা বেজেই চলেছে 'হিমু চলে যাও চলে যাও' আশ্চর্য আমি কোথায় যাবো?
'হিমু ভাইজানের শরীর কি খারাপ? ভাইজান সেই যে আপনি গেলেন আর আপনের দেখা নাই, আপনারে লোক পাঠাইয়াও খুঁজছি, আমার মাইয়াডার অসুখ তো সাইরা গেছে'
'অসুখ হয়েছিলো, সেটা সেরে যাবে'
'না ভাইজান, আপনি বলছেন তাই সারছে, কত কবিরাজে ডাক্তারে দ্যাখছে, কেউ চিকিত্সা দিতে পারে নাই'
এইসব কাকতালীয় ব্যাপারে আমি অভ্যস্ত। সোলেমানের কাজের ছেলে পরিস্কাল গেলাসে চা দেয়। চায়ে চুমুক দিয়ে বড়ই তৃপ্তি পেলাম। চা খেয়ে চলে আসতেই সোলেমান জোর করে তার বাসায় খেতে বলে।
আমি আর একদিন খাওয়ার কথা বলে চলে আসি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাবো কিনা ভাবছি। মাথার ভেতর ওই একটি কথাই ঘুরঘুর করছে। না এইসব চিন্তাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবেনা। পার্থিব মায়ার উর্ধ্বে থাকতে হয় হিমুদের।
কথার মায়ায় আটকে গেলে চলবে না। হিমুরা কখনোই প্রস্হান করে না। এটাই নিয়ম। করার কিছু নেই। করার কিছু নেই।
আমি হেটে চলেছি ভিআইপি রোড ধরে। বিকেলে বাদলদের বাসায় যেতে হবে, কয়েকদিন ধরে মেসে এসে খোঁজ করে যাচ্ছে ছেলেটা। মাজেদা খালার বাসায়ও ঢুঁ মারতে হবে একবার কিছু টাকা দরকার। বিসমিল্লাহ হোটেলে বেশকিছু বাকি পড়েছে। হাঁটতে প্রেসক্লাবের দিকে চলে এসেছি।
ফুটপাত দিয়ে একটি সুশ্রী তরুনী হেটে যাচ্ছে। আরে ওটা রূপা না, হ্যাঁ তাইতো। মাথায় স্কার্ফ দিয়েছে নিশ্চই রৌদ্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে। আরো সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে ওর মুখে। আমি উল্টাপথ হাঁটা ধরলাম।
মাথায় সেই একই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। না, তারচেয়ে বুড়িগঙ্গার দিকে যাই, চলন্ত একটি লোকাল বাসে লাফ মেরে উঠে পড়ি।
পরিশিষ্ট: হিমুদের মৃত্যু নেই। এভাবেই তারা হেটে যাবে নগরের একপ্রান্ত থেকে অন্ত প্রান্ত। হিমু বেঁচে থাকবে আমাদের লেখনীতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।