"ও কারিগর, দয়ার সাগর, ওগো দয়াময়
চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়"
যাদুর কাঠির ছোয়ায় গত চার দশক বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য পাঠক।
"মেঘ বলেছে যাব যাব
রাত বলেছে যাই
সাগর বলে কূল মেলেছে
কিনারা তার নাই..."
স্কুলে সম্ভবত এইটে পড়ি। মনে পড়ছে না কীভাবে বইটি হাতে এসেছিলো। সম্ভবত "অনন্ত অম্বরে"- এক পাতা, দু পাতা ...কখনও ঠোটের কোনে এক চিলতে বাকা হাসি, আবার কখনও সে কাচা বয়সে গাল বেয়ে অশ্রুধারা... এভাবেই শুরু। তারপর এ উপন্যাস সে উপন্যাস... কখনও নিজেকে হিমু ভাবতে ভালবাসতাম, কখনও বা হাসান (মেঘ বলছে যাব যাব) কিংবা হাল আমলে মিশির আলী।
শুরু এভাবে - তার পর আস্তে আস্তে চারদিকে চোখ মেলে তাকানো...
" ...আমি চোখ মেলিলুম আকাশে জ্বলে উঠলো আলো পুবে- পশ্চিমে। "
মনে হতো যদি শ্রীকান্তের ইন্দ্র হতে পারতাম কিংবা থাকতো আমার একটা দিদি (শ্রীকান্ত)...., যোগাযোগের কুমুর জন্য কী মায়া.., কতদিন ভাবনার আকশজুড়ে উড়াউড়ি করছে দীপাবলী (সাতকাহন)।
"...বাইরের আকাশের শীতে
নক্ষত্রের হইতেছে ক্ষয়
নক্ষত্রের মত হৃদয়
পড়িতেছে ঝড়ে
ক্লান্ত হয়ে শিশিরের মত শব্দ করে। "
হুমায়ূন বাস করতেন ধানমন্ডীর "দখিন হাওয়া" । ঢাকার অদূরে গাজীপুরের স্থাপিত বাগান বাড়ী নূহাশ পল্লীতে কাটত তার বেশির ভাগ সময়।
তিনি রসিকতা প্রিয় মজলিশী মানুষ ছিলেন। নিরবে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি ও আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করা ছিল তার শখ। এ প্রসঙ্গে তার একটি বইয়ের উৎসর্গ স্মরণ করা যায়। ডা: এজাজ সম্পর্কে লিখেছেন- হাসির কোন প্রসঙ্গে সে আড়ালে গিয়ে হেসে গম্ভির মুখে পুনরায় মজলিসে যোগদান করতেন।
"দীপ জ্বেলে দীর্ঘ ছায়া নিয়ে
বসে আছো সন্ধায় কজনা,
হয়তোবা কাছে আসি, হয়তোবা দূরে বসি
সে সবই ইচ্ছাহীন দৈবের ঘটনা।
..."
স্বল্পবাক লাজুক প্রকৃতির এ মানুষ সাহিত্য পরিমণ্ডলের সঙ্কীর্ণ রাজনীতি বা দলাদলিতে থেকে সবসময় দূরেই ছিলেন। বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তিনি অন্তরাল জীবন-যাপনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তিনি ভালবাসতেন ছবি আকতে। বাংলাদেশে তাঁর প্রভাব তীব্র ও গভীর; জাতীয় বিষয়ে কিংবা সঙ্কটে প্রায়ই তাঁর বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হতো।
পৃথিবীটা কী অদ্ভুত।
মানুষ কত শত জটিল অসুস্থতা নিয়ে ১০ বছর ২০ বছর.... অথচ হুমায়ূন ১ বছরও থাকলেন না.....
"ফিরিয়া মৃত্যুর পিছে, ফিরে পেতে নাহি মিছে
সে কী আমাদের
পলেক বিচ্ছেদ হায়, তখনই তো বুঝা যায়
সে যে অন্তরের। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।