শায়েস্তা খাঁ ছিলেন তৎকালীন বাংলায় নিয়োজিত সুবাদার। তিনি ছিলেন পুণ্যবান বাদশাহ হযরত আলমগীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুযোগ্য গভর্নর বা সুবাদার। মুঘল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মারাঠা, মগ, পর্তুগীজ দস্যুদের তিনি বিতাড়ন করেছিলেন। এসব সন্ত্রাসীদের শক্ত হস্তে দমন করতে পেরেছিলেন বলেই উনার শাসনামলে বাংলার মানুষ অত্যন্ত শান্তিতে ছিল। যালিম, লুটেরা দস্যু কাফিরদের দমন করার ফলে অর্থনৈতিক কর্মকা- নির্ঝঞ্ঝাট হওয়ায় বাংলায় উনার শাসনামলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়ার কিংবদন্তী রচিত হয়েছে।
মুঘল গভর্নর হিসেবে শায়েস্তা খাঁ উনার বিদায়পর্ব ছিল গৌরবব্যঞ্জক। বাংলার বিপুল জনতা মিছিলের মাধ্যমে উনাকে বিদায় জানিয়েছিল।
উনাকে জীবনে এজন্য ত্যাগও স্বীকার করতে হয়েছে প্রচুর। দস্যু মারাঠারা ছিল অত্যাচারী, কিন্তু কাপুরুষ। মারাঠাদের বিরুদ্ধে অভিযান শেষে একরাতে শায়েস্তা খাঁ উনার শয়নকক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
বিশ্রামরত নিরস্ত্র শায়েস্তা খাঁ উনাকে কাপুরুষের মতো অতর্কিতে আক্রমণ করল মারাঠা দস্যুসর্দার শিবাজী। শায়েস্তা খাঁ জানালা ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। কিন্তু তার অল্পবয়স্ক পুত্র দুর্ঘটনাবশত ঘরেই থেকে যায়। উনার নিষ্পাপ পুত্রকে শিবাজী একা পেয়ে কেটে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করল। এই ঘটনাটি ঘটে ১৬৬৩ ঈসায়ী সনের এপ্রিল মাসে।
(সূত্র: চেপে রাখা ইতিহাস, ১৭৯ পৃষ্ঠা)
পুণ্যবান বাদশাহ হযরত আলমগীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সুযোগ্য সুবাদার হিসেবে তৎকালীন বাংলায় তিনি ইংরেজ ও মারাঠা দস্যুদের উত্থানকে রোধ করেছিলেন। ফলে পরবর্তীতে ইংরেজ ও তাদের দোসর ইতিহাসকে বিকৃত করে। ভারতীয় পাঠ্যপুস্তকে এসব খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু বর্তমানে এর রেশ পড়েছে ভারতে ছাপা হওয়া এদেশের পাঠ্যপুস্তকেও। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা ২০১২ সালে “বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়” নামে যে বই ছেপেছে সেখানে বেনামি এক ইংরেজ ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, “সুবাদার শায়েস্তা খানের আমলে বিভিন্ন জিনিসপত্রের সস্তা দামের কথা আমরা শুনি। কিন্তু তখন সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তাদের ক্রয়ক্ষমতা বলে আসলে কিছুই ছিল না।
তাই চালসহ নিত্য ব্যবহার্য জিনিস বা গরু-ছাগলের দাম অবিশ্বাস্য রকম কম হলেও তা প্রজাদের কোনো উপকারে আসেনি। শায়েস্তা খাঁ ছিলেন অর্থলিপ্সু ও শোষক। শায়েস্তা খানের নিজের অর্থলিপ্সা এত প্রচ- ছিল যে এক ইংরেজ ব্যবসায়ী ১৬৭৬ সালে লিখেছে, শায়েস্তা খানের কর্মচারীরা সাধারণ মানুষকে এমন শোষণ করত যে, এমনকি পশুখাদ্যে (মূলত ঘাস) ব্যবসাও তাদের একচেটিয়া ছিল। ” (নাউযুবিল্লাহ!) (সূত্র: উক্ত বইয়ের পৃষ্ঠা ৩)
“বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়” ৮ম শ্রেণীর বইটি শুরুই হয়েছে বিভিন্ন মুসলিম শাসককে হেয় করে। বিপরীতে লুটেরা ব্রিটিশ ও তাদের দোসরদের মহৎভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তক রচয়িতারা ভুলে যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এখানে ভারতের মতো ইতিহাসবিকৃত করে পুণ্যবান মুসলিম শাসকগণ উনাদেরকে হেয় করাটা দেশের সাধারণ মানুষ কখনোই সহ্য করবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।