I am Bangladesh supporter
মাইক্রোসফটের ইমাজিন কাপ ২০১২-এর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া দল "টিম ইঞ্জিন" (অ্যাপ্লিকেশন: অন্নপূর্ণা) দেশে এবং বিদেশে যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তার উপর আরো কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যদিও বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট, এআইইউবি, এনএসইউ-এর সদস্যরা মিলে তৈরি করেছে "টিম ইঞ্জিন", কিন্তু এটা আদতে এআইইউবি (অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ)-এর দল।
দলের সদস্যরা হলেন - খালিদ মাহমুদ, জুনায়েদ হাসান, আইমান কাদের সিদ্দীক, মেহনাজ চৌধুরী, এবং তাদের মেন্টর ইমরোজ মোরসালিন। এদের ভেতর খালিদ মাহমুদ আসলে এআইইউবি-এর শিক্ষক। এবং একই সাথে তিনি বুয়েটে কম্পিউটার বিজ্ঞানে মাষ্টার্স করছেন।
সেই হিসেবে তিনি নিজেকে ছাত্র হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন। মাহেনাজ চৌধুরী নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ'র ছাত্রী। মূল দলে তিনি ছিলেন না, পরবর্তীতে তাকে শুধুমাত্র প্রজেন্টেশন দেয়ার জন্য ঢুকানো হয়েছে।
খালিদ মাহমুদ বিতর্ক:
"টিম ইঞ্জিন"-এর মূল সদস্য খালিদ মাহমুদ নিজে এআইইউবি'র ফুল টাইম শিক্ষক হওয়ার পরও বুয়েটের ছাত্র হিসেবে দলে যোগদান করাকে কেন্দ্র করে পুরো বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
এই বিষয়ে বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক লতিফুল হক সায়ীদ প্রিয়.কম-কে জানান যে, খালিদ এই ধরনের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে, এবং সেখানে বুয়েটকে প্রতিনিধিত্ব করছে সেই বিষয়ে তাকে কিংবা বিভাগের কাউকে খালিদ অবহিত করেননি।
তবে খালিদ মাহমুদ বিদেশে যাবেন, এবং তার ভিসা আবেদনের জন্য বুয়েটের একটি সার্টিফিকেট প্রয়োজন বলে জানিয়েছিলেন। এবং সেভাবেই বিভাগীয় প্রধানের কাছ থেকে একটি সার্টিফিকেট নিয়ে গিয়েছিলেন। বুয়েটের সিএসই বিভাগ ভিসার আবেদনের জন্য তাকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করেছিল। কিন্তু এই দূর্ঘটনার আগ পর্যন্ত বুয়েটের কাছে কোনও তথ্যই ছিল না যে, খালিদ মাহমুদ ইমাজিন কাপে এআইইউবি'র হয়ে বুয়েটকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন।
এই ধরনের গোপনীতার আশ্রয় নেয়াটা সহজভাবে নিচ্ছে না বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গণিত অলিম্পিয়াড, এসিএম প্রোগ্রামিং সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দল অংশগ্রহন করে থাকে। এবং এখন পর্যন্ত কোনও আন্তর্জাতিক দলে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। খালিদ মাহমুদ এবং এআইইউবি বুয়েটের সাথে বসেই তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারতেন। এখানে কোনও আইন ভঙ্গ হয়নি, তবে প্রথাগত নিয়ম এটি নয়। এবং দলটির ক্ষমতাকে ছোট করে দেখার সুযোগ তৈরী হয়েছে।
একইভাবে মাহেনাজ চৌধুরীকে দলে অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়ে অনেকের ভেতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুরো দলটি যেখানে পরিচালনা করছে এআইইউবি, সেখানে শুধুমাত্র প্রেজেন্টেশন দেয়ার জন্য নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন একজনকে অন্তর্ভূক্ত করা হলো? এআইইউবি'র কোন ছাত্র/ছাত্রী কি এই কাজটি করতে পারতেন না?
টিম ইঞ্জিন দলে গন্ডগোল:
ইমাজিন কাপ বাংলাদেশ শুরু হয় এবং শুরু হবার অনেক পরে "টিম ইঞ্জিন" দলের মধ্যে গণ্ডগোল লেগে যায়। যেই পরিধিতে পরিকল্পনা করা হচ্ছিলো, তাতে ৪ জন কাজ করলে হয়তো প্রকল্পটি সফলতার সাথে তৈরি করা যেতো, কিন্তু টিম লিডার ও শিক্ষক খালেদ নিজে কাজ না করে ছাত্রদের দিয়ে কাজ করায় বলে প্রচার আছে। আর মাহেনাজকে যেহেতু নেয়া হয়েছিলো উপস্থাপনার জন্য (!) সে তো আর প্রকল্পে কাজ করতে পারবে না।
কিন্তু প্রকল্প সফল করতে হলেতো কাজ করতে হবে, তাই দলের বাহিরে তিনজন ছাত্রকে নিয়োগ দিলেন খালেদ মাহমুদ।
পরের তিনজন যখন জনাতে পারলো যে তারা এই কাজের জন্য কোনো ক্রেডিট পাবেনা, তখন শুরু হয় ঝামেলা। কিন্তু ততক্ষণ এত দেরী হয়ে গিয়েছিল যে, দলে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব ছিল না। শোনা যায় রীতিমত ভয় দেখিয়ে একজন সদস্যের ইউজারনেম/পাসওয়ার্ড নিয়ে তাকে বাদ দিয়ে জুনায়েদকে ঢোকানো হয় দলে। আর ইমরোজকে বানানো হলো মেন্টর। কিন্তু তারপরেও একজন বাকী রয়ে যায়।
কাজের কোনো মূল্যায়ন না পেলেও পুরস্কার পেলে সেটার ভাগ পাবেন বলে সমঝোতা করা হয় তার সাথে। দলের সব সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায় উপরের ছবিটিতে - http://on.fb.me/MeDHxj চকলেট রঙের টিশার্ট পরিহিত ছেলেটি (তার নাম অর্ক) কাজ করছে, কিন্তু কোনো মূল্যায়ন পায়নি।
পুরো প্রতিযোগিতার সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছে এআইইউবি। "টিম ইঞ্জিন" এবং অন্নপূর্ণা - সবই তাদের। প্রতিযোগিতার জন্য ভোট চাওয়া এবং পুরো প্রক্রিয়াটিকেই পরিচালনা করেছে তারা।
এবং ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে এটাকে ডিফেন্ডও করছে এআইইউবি। বুয়েট কিংবা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এটাতে কোনভাবেই জড়িত নয়।
এমনকি জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা শেষ হবার পরেও অনেকে দাবী করেন যে অন্নপূর্ণা আসলে ইঞ্জিনের বর্তমান সদস্যদের মস্তিষ্কের সন্তান (Brainchild) না এবং যাদের মাথা থেকে এই ধারণা এসেছিলো, দলনেতা খালেদ তাদের এক বিন্দু মূল্যায়ন করেনি।
পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড-এর জন্য ভোট চাওয়া:
বরাবরের মতন এবারও ইমাজিন কাপে পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হলে ইঞ্জিন দল ভোট চাইতে এআইইউবিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং সেখানে পার্টনার/স্পন্সরদেরও ভোট চাওয়ার জন্য দাওয়াত করা হয়।
অনুষ্ঠানের পরে অনেক ছাত্রদের মধ্যে হতাশা দেখা যায়।
তারা বলে, “খালেদ স্যার বুয়েটের হয়ে অংশগ্রহণ করেছেন, কিন্তু সমস্ত সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বুয়েট তাকে কি দিয়েছে! আমরা তার ক্লাস করি, কিন্তু নিজে একবার আমাদের বলেননি ভোট দিতে। এটা খুবই দুঃখজনক। ”
ধারণা করা হচ্ছে ইঞ্জিন দলের পূর্বপরিকল্পনা ছিলো রোবট দিয়ে ভোট জালিয়াতি করার। এই রোবট গুগল ক্রোম ব্রাউজারের মধ্যমে প্রতি আধাঘণ্টা পর পর নিজেই ভোট দেবে।
ইমাজিন কাপের নিয়মাবলীতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে “one vote per video per person per day.” কাজেই ভোট আধা ঘণ্টা পরপর মানুষ দিক আর বট দিক - বিষয়টা সঠিক চর্চা নয়। আর বট জিনিষটা নিজেও অবৈধ।
মাইক্রোসফটের বক্তব্য:
বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার জন্য মাইক্রোসফটের সাথে যোগাযোগ করে প্রিয়.কম। মাইক্রোসফটের স্টুডেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক আশ্বিন কারুহাট্টি প্রিয়.কম-কে জানান যে, ইমাজিন কাপের মূল উদ্দেশ্যই হলো পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে পারে এমন সব আইডিয়া নিয়ে কাজ করা। তবে সেখানে ক্রিয়েটিভিটি এবং ইনোভেশনের সাথে সাথে সততা ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের কোনও বিকল্প নেই।
আমরা সব সময় আশা করি, যারাই ইমাজিন কাপে অংশ নেবে, তারা সবাই এই দর্শনটিতে বিশ্বাস করবে। আমরা প্রতিযোগিতাগুলো খুবই কাছ থেকে মনিটর করি। এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে স্কোরবোর্ড রিফ্রেশ করা হয়। কোনও ভিন্ন উপায়ে কেউ ভোট প্রদান করে থাকলে সেই ভোট বাতিল করার যাবতীয় অধিকার মাইক্রোসফট রাখে। এবং প্রতিযোগিতার যেকোনও পর্যায়ে এটা হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের একজন জানিয়েছেন যে, গত ৭ তারিখে মাইক্রোসফট বিষয়টা টের পায়, কারণ দ্বিতীয় দলের সাথে প্রথম দলের ভোটের পার্থক্য প্রায় দ্বিগুণ। যা কি-না হয়েছে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে। সাথে সাথে কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার বাদে অন্য সবগুলি ব্রাউজারকে ব্লক করে দেয়, কারণ ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে এরকম বট ব্যবহার করা কঠিন। কিন্তু তাতে ফলাফল ঠিক হবেনা, এজন্য তারা সিদ্ধান্ত নেয় একই আইপি থেকে ১২ ঘণ্টার নিচে আসা ভোট তারা বাদ দেবে এবং বাংলাদেশের সকল আইপি তারা ভোটের জন্য নিষিদ্ধ করে দেবে। এতে করে শুধু বাংলাদেশ না, বাংলাদেশের পেছনে থাকা দল রোমানিয়াও পেছনে পড়ে যায় এবং এগিয়ে আসে ভারত।
মাইক্রোসফটের অপর কর্মকর্তা অ্যান্ড্রিয়া হ্যারিসন প্রিয়.কম-কে জানান যে, মাইক্রোসফট এই প্রতিযোগিতা খুবই কাছ থেকে প্রতি মুহুর্তে মনিটর করেছে। এবং এটাই নিয়ম। এবং বাংলাদেশ থেকে অযাচিত ভোট (যেকোনও কোনও মানুষের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়) এসেছে, এবং মাইক্রোসফট সেই ভোটগুলোকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। তবে, শেষের দিকে সারা বিশ্ব থেকেই ভোট আসতে শুরু করে। এবং পৃথিবীর কোথাও কোথাও ভোট দিতে সমস্যা হতে পারে।
সেটার সাথে বাংলাদেশের কোনও সম্পর্ক নেই।
বাংলাদেশের ইমেজে ক্ষতি:
প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে পড়ে ইঞ্জিন দল। এবং ইঞ্জিন দলের হয়ে যারা এই কাজ করেছেন, তাদের নুন্যতম ধারণা নেই যে তারা দেশের কী ক্ষতি করেছেন! একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করলে, সেখানে কী ধরনের প্রফেশনাল ব্যবহার দেখাতে হয়, কোন ধরনের আচরন গ্রহনযোগ্য আর কোনটা গ্রহনযোগ্য নয় - সে বিষয়ে তারা সম্মক ধারনা রাখেন না। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুতোষ যুক্তি এবং ব্যবহার প্রদর্শণ করে যাচ্ছেন।
এআইইউবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ইঞ্জিন দলের সদস্যরা আলাদাভাবে শুধু দলনেতার গাফিলতিকে দোষারোপ করছেন।
তারা বলছে, “খালেদ স্যার হুকুম না করে যদি নিজে একটু কাজ কর্ম দেখতেন, তাহলে এত বড় দুর্ঘটনা আজকে হতোনা। ” শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খালেদ মাহমুদের দল পরিচালনা নিয়ে অনেক কথা এখন বেরিয়ে আসছে যা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা একটি দলের জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়।
সবার শুধু এটুকু মনে রাখাটা জরুরী, যে কোনও উপায়ে বিজয় আনাটাই বড় কথা নয়, কিভাবে বিজয় অর্জিত হয়েছে সেটাও বিবেচ্য। আমরা বাংলাদেশীরা যেভাবে চিন্তা করি, পৃথিবীর অনেক দেশই সেভাবে চিন্তা করে না, কিংবা বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করে না। আশা করা যায় এই দুর্ঘটনা থেকে আগামীর দলগুলি শিক্ষা নেবে এবং সুগঠিত দল নিয়ে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতায় লড়াই করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।