তাবলীগী নেসাব ফাযায়েলে আমাল বইয়ের এই কথাগুলোকে অনেকে শিরক বলেন।
“ক্ষুধার্থ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে খাদ্যের আবেদন করে ঘুমিয়ে পড়লেন। সেই অবস্থায় তার নিকট রুটি আসল, ঘুমন্ত অবস্থায় ঐ ব্যক্তি অর্ধেক রুটি খাওয়ার পর জাগ্রত হয়ে বাকী অর্ধেক রুটি খেলেন। ” ফাযায়েলে হ্জ্জ, পৃ:১৫৫-১৫৬।
২) জনৈক মহিলা ত জন খাদেম কর্তৃক মার খাওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করলে, আওয়াজ আসল ধৈর্য ধর, ফল পাবে।
এর পরেই অত্যাচারী খাদেমগণ মারা গেল। ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ: ১৫৯।
৩) অর্থাভাবে বিপন্ন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে হাজির হয়ে সাহায্যের প্রার্থনা করায় তা কবুল হল। লোকটি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখতে পেল যে, তার হাতে অনেকগুলো দিরহাম। ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ: ১৬২-৬৩।
৪) মদীনার মসজিদে আযান দেয়া অবস্থায় এক খাদেম মুয়াজ্জেমকে প্রহার করায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করল। প্রার্থনার তিনদিন পরই ঐ খাদেম মরা গেল। ফাযায়েলে হ্জ্জ, পৃ:১৬২-৬৩।
৫) জনৈক অসুস্থ ব্যক্তি চিকিৎসায় ব্যর্থ হওয়ায় ঐ ব্যক্তির আত্মীয় (করডোভার এক মন্ত্রী) রোগ্যের আবেদন করে হুজুরের (সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবরে পাঠ কার জন্য অসুস্থ ব্যক্তিকে পত্রসহ মদীনায় প্রেরণ করে। কবরের পার্শ্বে পত্র পাঠ করার পরেই রোগীর আরোগ্য লাভ হয়ে যায়।
ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ: ১৬৭।
৬) কোন ব্যক্তি হুজুরের রওজায় আরজ করায় রওজা হতে হুজুরের হস্ত মোবারক বের হয়ে আসলে উহা চুম্বন করে সে ধন্য হল। নব্বই হাজার লোক উহা দেখতে পেল।
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
উল্লেখিত ঘটনা এবং এছাড়া নবীজী সাঃ এর দরবারে আবেদন করা বিভিন্ন ঘটনা কথিত আহলে হাদীস গোষ্ঠির অস্বিকার করা এবং শিরক বলার মূল কারণ হল একটি আক্বিদার ক্ষেত্রে তাদের ভ্রান্ত ধারণা। সেই ভ্রান্ত আক্বিদা হল-নবীজী সাঃ রওজায়ে আতহারে মৃত।
জীবিত নয়। কিন্তু আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা হল নবীজী সাঃ কবরে জীবিত। তবে দুনিয়াবী জীবনের মত নয়। তথা পানাহার করা, চলাফেরা করা ইত্যাদি করার ক্ষমতা নেই। বরং জীবিত থাকার অনেক বৈশিষ্ট তাদের মাঝে রয়েছে, যেমন-সালাম দিলে তা শ্রবণ করেন।
রওজার সামনে দুরুদ পড়লে তা শুনতে পান। আর দূর থেকে দুরুদ পড়লে ফেরেস্তাদের মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছলে তা তিনি জানতে পারেন। কবরে তিনি ইবাদতে নিমগ্ন আছেন। এ জীবনটা হল কবরের জগতে বিশেষ জীবন। দুনিয়াবী জীবন থেকে তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন একথা মানা আবশ্যক।
কিন্তু কবরের জীবনে তিনি বিশেষ জীবিত। যেমন শহীদরা বিশেষ অবস্থায় জীবিত। যে জীবন দুনিয়াবী জীবনের মত নয়।
এ হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা। আর ওদের আক্বিদা হল-নবীগণ কবরে একদম মৃত।
জীবিত মানুষের কোন বৈশিষ্টই তাদের মাঝে নেই।
এ আক্বিদার ভ্রান্তিতার কারণে ওরা নবীজী সাঃ এর কবরের সামনে কথা বলা বা কিছু আবেদন করাকে শিরক বলে থাকে। যা উপরে উল্লেখিত সকল ঘটনায় স্পষ্ট।
সুতরাং আমরা যেহেতু বিশ্বাস করি যে, রাসূল সাঃ কবরে বিশেষ অবস্থায় জীবিত আছেন, তাই উল্লেখিত ব্যক্তিদের নবীজী সাঃ এর রওজায় গিয়ে এমন কোন কিছু চাওয়া, যা জীবিত মানুষের কাছে চাওয়া যায়, তা চাওয়াতে শিরক হয়নি। তবে এমন কোন বিষয় যদি চাওয়া হতো, যা জীবিত মানুষের কাছে চাওয়া যায় না, সেসব বস্তু চাইলে তা শিরকী কথা হতো।
অথচ এরকম কোন বস্তু উক্ত ঘটনাবলীতে চাওয়া হয়নি, যা জীবিত মানুষের কাছে চাওয়া জায়েজ নয়। যেমন-সন্তান চাওয়া ইত্যাদি।
উল্লেখিত ঘটনার দু’ একটিতে রুটি বা খাদ্য চাওয়া হয়েছে, দু’একটিতে বিচার চাওয়া হয়েছে, একটিতে চিকিৎসা করার জন্য অষুধ দিতে চাওয়া হয়েছে। এসবই জীবিত মানুষের কাছে চাওয়া শিরক নয়। সুতরাং রাসূল সাঃ যেহেতু কবরে বিশেষ হালাতে জীবিত, তাই তার কবরে গিয়ে এসব চাওয়াটাও শিরক হয়নি।
কিন্তু অন্য মানুষের কবরে তা চাইলে শিরক হবে। যেহেতু নবী ছাড়া অন্যরা মৃত থাকে কবরে।
নবীজী সাঃ এর কবরের জগতে বিশেষ হালাতে জীবিত থাকার এসব সুষ্পষ্ট প্রমাণবাহী ঘটনাকে কথিত আহলে হাদীস গোষ্ঠি নিতান্তই ঘারত্যামী করে অস্বিকার করছে। আর শিরকের অপবাদ আরোপ করছে এসব আল্লাহওয়ালা বুযুর্গদের উপর।
বিঃদ্রঃ নবীজী সাঃ এর কবরে এভাবে চাওয়াটা ঠিক নয়।
কেননা এতে বাহ্যিকভাবে মানুষের মাঝে এ সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে যে, নবীজী সাঃ ও আল্লাহর মত সব কিছু করতে পারেন। তাই এভাবে চাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে কেউ যদি নবীর প্রেমে পাগল হয়ে এমনটি করে তাহলে তা ভিন্ন ব্যাপার। কারণ পাগলের উপর কোন বিধান নেই। যেমনটি ঘটেছে উক্ত বর্ণিত ঘটনাবলীতে।
নবীগণ কবরে জীবিত হওয়ার প্রমাণ
১-
وَلاَ تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ (سورة البقرة-154)
আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয় তাদের তোমরা মৃত বল না। বরং তারা জীবিত। তবে তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না। {সূরা বাকারা-১৫৪}
উক্ত আয়াতের স্পষ্ট ভাষ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শহীদগণ কবরে জীবিত। আর ইংগিতের সাথে একথাও বুঝাচ্ছে যে, নবীগণও কবরে জীবিত।
কেননা নবীগণের মর্যাদা শহীদদের তুলনায় অনেক উর্দ্ধে। সুতরাং শহীদগণ যদি কবরে জীবিত থাকেন, তাহলে নবীগণ কেন হবেন মৃত? তারা অবশ্যই জীবিত।
২-
عَن أَنَس ؛ أَن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : الأنبياء أحياء في قبورهم يصلون (مسند البزار-مسند أبي حمزة أنس بن مالك رضي الله عنه، رقم الحديث-6888)
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নবীরা কবরে জীবিত। আর তারা সেখানে নামায পড়েন।
{মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৮৮৮, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫, সহীহ কুনুযুস সুন্নাতির নববিয়্যাহ, হাদীস নং-২২}
৩-
عن أبي الدرداء قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( أكثروا الصلاة علي يوم الجمعة . فإنه مشهود تشهده الملائكة . وإن أحدا لن يصلي علي إلا عرضت علي صلاته حتى يفرغ منها ) قال قلت وبعد الموت ؟ قال ( وبعد الموت . إن الله حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء (سنن ابن ماجه، كتاب الجنائز، باب ذكر وفاته صلى الله عليه و سلم، رقم الحديث-1637)
হযরত আবু দারদা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা জুমআর দিন বেশি বেশি করে দুরুদ পড়। নিশ্চয় ফেরেস্তারা এর উপর স্বাক্ষ্যি থাকে। আর যখন কেউ আমার উপর দুরুদ পড়ে তখনই তা আমার নিকট পেশ করা হয়। আবু দারদা রাঃ বলেন-আমি জিজ্ঞাসা করলাম-মৃত্যুর পরেও কি তা পেশ করা হবে? উত্তরে তিনি বললেন-হ্যাঁ!, কেননা আল্লাহ তায়ালা জমিনের জন্য নবীদের দেহ ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন।
{ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৬৩৭, ১৬৩৬, সুনানুস সাগীর লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৪৬৯, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৭৮০, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৫৭২, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৪৮৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৭৫৯}
এ হাদীস সুষ্পষ্ট প্রমাণ করে যে, নবীগণ কবরে জীবিত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।